Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বাহিরে অন্তরে (১০): ধর্মানুভূতি নয়, এ ধূর্তদের কৌশল  

তসলিমা নাসরিন

মে ৩১, ২০২৪

Taslima Nasrin column on secularism, democracy cover
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

পড়ুন:

________________________________________________________________

বাংলাদেশ (Bangladesh) বদলে যাচ্ছে।  ধর্মনিরপেক্ষতা, (Secularism) অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র (Democracy) ,  বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের (Socialism) মন্ত্র নিয়ে যে-দেশটির যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে-দেশটিতে এখন ইসলামের জয়জয়কার। সে-দেশটিতে বিস্ময়কর প্রতিভা নিয়ে একদা জন্মেছিলেন  ফকির লালন শাহ। মানুষকে জাত ধর্মের ঊর্ধ্বে শুধু মানুষ হিসেবেই দেখতেন। তাঁর অসাম্প্রদায়িকতাকে আজও, এই একবিংশ শতাব্দির মানুষও  গ্রহণ করতে পারেনি। লালনের উদারতার সামনে তারা বড়  ক্ষুদ্র , বড় নগণ্য। 

ফকির লালন শাহ

‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত  দিলে আঘাতকারীকে  শাস্তি দেওয়া হবে’,    ধর্মীয় রাজনীতির এই  আওয়াজটি  দিন দিন ভয়াবহ রকম বাড়ছে বাংলাদেশে।  এই  রাজনীতির সশস্ত্র সৈন্যরা বা কর্মীরা  স্বাধীন  বাংলাদেশের মাটিতে অভিজিৎ, নিলয়, অনন্ত, ওয়াশিকুর, রাজীব, দীপনের মতো প্রতিভাবান মুক্তচিন্তকদের নৃশংস ভাবে  হত্যা করেছে,  অসংখ্য  অসাম্প্রদায়িক ব্লগারকে দেশান্তরী করেছে। এই ধর্মীয় রাজনীতিতে শুধু মূর্খ ধর্মান্ধই নয়, চতুর প্রভাবশালীও যুক্ত।  ধর্মানূভূতিতে আঘাত করা  শাসকরাও   সহ্য করেন   না। তাঁরা নানা রকম আইন তৈরি করেছেন তথাকথিত আঘাতকারীকে  শাস্তি দেওয়ার জন্য। ধর্মান্ধদের মতোই শাসকরাও যাঁরা  মুক্তচিন্তায় এবং বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস  করেন, তাঁদের বরদাস্ত করেন না।  সাধারণত যাঁদের কথায় ও কাজে মৌলবাদীরা অভিযোগ করে, যে, তাদের  ধর্মানুভূতিতে আঘাত লেগেছে, তাঁরা মুক্তচিন্তায় এবং বাকস্বাধীনতায়  বিশ্বাস করেন। তাঁরা  ধর্মান্ধতা এবং সাম্প্রদায়িকতার  সমালোচনা করেন। ধর্মান্ধদের মতোই শাসকরাও এই সমালোচকদের টুঁটি টিপে ধরতে চান।    মানবতাবাদী   দার্শনিক লালন ফকিরের ভাস্কর্য যারা ভেঙে টুকরো করেছে, লালনের ধর্ম-গোত্র-বর্ণ বা জাতপাতের ঊর্ধ্বে ওঠা মানবিক গান শুনলে তাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগা স্বাভাবিক।

জাতের ঊর্ধ্বে মানুষকে উঠতে উৎসাহ দেওয়ার অর্থই কোনও  ক্ষুদ্র সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে যেন মানুষ নিজেকে আবদ্ধ না রাখে। লালনের   দর্শন আমাদের মনকে অন্ধকারের কামড় থেকে  মুক্ত করে আলোর পথ দেখায়। আলোকে কাদের এত ভয়? কাদের ভয় সে আমরা জানি।

কিন্তু প্রশাসনের কোন অনুভূতিতে লালনের অসাম্প্রদায়িকতা  আঘাত লাগে? প্রশাসনের তো অসাম্প্রদায়িক হওয়া  উচিত।  কেউ কেউ হয়তো বলবে প্রশাসনেরও  ধর্মীয় অনুভূতি আছে, যেহেতু রাষ্ট্রের একটি ধর্ম আছে, প্রশাসনেরও ধর্ম আছে, আর ধর্ম থাকলেই তার অনুভূতি থাকে। কিন্তু আমরা যারা সেক্যুলারিজমে (Secularism) , সমতায়, সমানাধিকারে, এবং সভ্যতায়  বিশ্বাস করি, তারা তো রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম থাকুক  চাই না, প্রশাসন কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সেবা করুক  চাই না! বাংলাদেশে যেহেতু হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান, প্রকৃতিধর্ম  এবং মানবধর্মে বা মানববাদে বিশ্বাসী মানুষের বাস, সেহেতু  রাষ্ট্রের কর্তব্য আস্তিক নাস্তিক, এবং নানা ধর্মে এবং দর্শনে বিশ্বাসী সবাইকে সমান চোখে দেখা, রাষ্ট্রের কর্তব্য গণতন্ত্রে বিশ্বাস করা। সংখ্যাগুরুকে মান্য করা, এবং সংখ্যালঘুকে অপদস্থ করা কোনও গণতন্ত্রের কাজ নয়। গণতন্ত্রে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু – সকলের অধিকার সমান। 

কিছুদিন আগে শরিয়তপুরের স্বর্ণকার  সঞ্জয় রক্ষিতকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। কী দোষ ছিল সঞ্জয় রক্ষিতের? দোষ নিশ্চয়ই  গুরুতর। তাঁর দোষ, তিনি লালনের তুমুল জনপ্রিয় ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’ গানের দুটো চরণ ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন।  

‘সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, 

নারীর তবে কী হয় বিধান?’  

এই প্রশ্নটি তো আমাদের সবার। পুরুষকে দেখলে তার ধর্ম কী  জানা যায়।  নারীর শরীরে যেহেতু  ধর্মের কোনও চিহ্ন থাকে না,  সেহেতু  শরীর দেখে  জানার উপায় নেই নারী কোন ধর্মে জন্মেছে ।  পুরুষ-ব্রাহ্মণকে  পৈতে ব্যবহার করতে হয়, নারী-ব্রাহ্মণের পৈতে ব্যবহার নিষিদ্ধ। একজন পুরুষ যে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের, সেটা পৈতে দেখে মানুষ বুঝতে পারে, কিন্তু একজন নারী ব্রাহ্মণ কি না, সেটা বোঝার উপায় নেই। ‘বামন চিনি পৈতে প্রমাণ, বামনী চিনি কিসে রে?’ এই জিজ্ঞাসাই কিন্তু জাতপাত নিয়ে  সংশয়ের জন্ম দেয়। জাতের ঊর্ধ্বে মানুষকে উঠতে উৎসাহ দেওয়ার অর্থই কোনও  ক্ষুদ্র সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে যেন মানুষ নিজেকে আবদ্ধ না রাখে। লালনের   দর্শন আমাদের মনকে অন্ধকারের কামড় থেকে  মুক্ত করে আলোর পথ দেখায়। আলোকে কাদের এত ভয়? কাদের ভয় সে আমরা জানি। কেউ কেউ বলছেন সঞ্জয় রক্ষিত যদি ‘সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারীর তবে কী হয় বিধান?’ চরণদুটোর বদলে  ‘বামন চিনি পৈতে প্রমাণ, বামনী চিনি কিসে রে?’ পোস্ট করতেন, তাহলে হয়তো  তাঁর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতো না, তাঁকে গ্রেফতার করতেও  আসতো না পুলিশ। তার মানে কি এই যে হিন্দুর ঘরে জন্ম নিলে মুসলমান শব্দটি আছে এমন কোনও গানের চরণও উল্লেখ করা যাবে না! কোথায় কোন অতলে নেমেছে আমার দেশ!   

লালন আজ থেকে আড়াইশো বছর আগে জন্মেছেন। জাতপ্রথা আর বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে নিজের মত প্রকাশ  করেছেন সেই কত আগে!  মানুষের চিন্তার খোরাক জুগিয়েছিলেন তিনি।  বোধবুদ্ধি হওয়ার পর  শিক্ষিত মানুষেরা  আইন করে  জাতপ্রথা আর বর্ণপ্রথা নিষিদ্ধ করেছেন। আজ এই একবিংশ শতাব্দিতে প্রতিক্রিয়াশীল শাসকেরা  লালনকে কাঠগড়ায় ওঠাচ্ছে। বাউল কবি  লালন শাহের ভাস্কর্য আজ ভূলুন্ঠিত। তাঁর গান গাইলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।  লালনের গানের কথা প্রকাশ করা আজ অপরাধ।  মানবিক  লালনের মানবতা আজ কাঠগড়ায়।  এ সমাজে মানবতার মূল্য নেই। এ সমাজ  দখল করে নিয়েছে  বর্বর ধর্মান্ধ আর কুচক্রী  সাম্প্রদায়িক চক্র। পুলিশ বলেছে সঞ্জয় রক্ষিতের পোস্টের কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল,  সে কারণে সঞ্জয় রক্ষিতকে তারা গ্রেফতার করেছে। বিশৃঙ্খলা যারা সৃষ্টি করেছিল,  তাদের গ্রেফতার না করে গ্রেফতার করা হয়েছে যে মানবতার গান গেয়েছিল, তাকে। দীর্ঘকাল যাবৎ বাংলাদেশে  ভয়ংকর কাণ্ডকারখানা  চলছে। 

আরও পড়ুন: শব্দের ঘরে নিঃশব্দের কুঁড়ে

যারা ভাল কাজ করছে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত, কারণ খারাপ লোকেরা ভাল কাজ পছন্দ করছে না, ভাল কাজ দেখলে বা শুনলে তাদের ‘অনুভূতি’তে আঘাত লাগছে। খারাপ লোকদের বর্বরতাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব কেন সরকার নিয়েছে? তাদের ধর্মীয় রাজনীতিকে জল সার দিয়ে তরতাজা করার দায়িত্ব সরকারকে কে দিয়েছে? যে বিশৃঙ্খলাসৃষ্টিকারীরা দাঙ্গাহাঙ্গামা   বাঁধায়,  অন্যের অনিষ্ট করে, জনজীবন দুর্বিষহ করে  – তারা আজ  জানলো যে তারা আরও অবাধে আরও বিশৃঙ্খলা  সৃষ্টি করলেও দোষ তাদের হবে না, গায়ে তাদের টোকা পর্যন্ত কেউ দেবে না।  তারা এখন জানলো যে   তারা যে কোনও মানবতাবাদীর বিরুদ্ধে, যে কোনও  সমাজ-সংস্কারকের বিরুদ্ধে, যে কোনও বুদ্ধিদীপ্ত দার্শনিকের বিরুদ্ধে, যে কোনও  জ্ঞানী-গুণীর বিরুদ্ধে   অভিযোগ করতে পারে যে  তাঁদের  কথা এবং কাজ তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে; অমনি প্রশাসন ছুটে আসবে লাফাঙ্গাদের অনুভূতি রক্ষা করতে। সমাজের সত্যিকার উন্নতি যাঁরা করতে চান, তাঁদের পেটে দড়ি বেঁধে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে  তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতে টেনে নিয়ে যাবে  থানায়। পেছনে অট্টহাসি হাসবে হিংস্র বর্বর সম্প্রদায়। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য।   ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে’– এই চারটে শব্দ তারা ব্যবহার করে সরকারকে দিয়ে নিজের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য। 

কিন্তু আমরা যারা সেক্যুলারিজমে, সমতায়, সমানাধিকারে, এবং সভ্যতায়  বিশ্বাস করি, তারা তো রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম থাকুক  চাই না, প্রশাসন কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সেবা করুক  চাই না! বাংলাদেশে যেহেতু হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান, প্রকৃতিধর্ম  এবং মানবধর্মে বা মানববাদে বিশ্বাসী মানুষের বাস, সেহেতু  রাষ্ট্রের কর্তব্য আস্তিক নাস্তিক, এবং নানা ধর্মে এবং দর্শনে বিশ্বাসী সবাইকে সমান চোখে দেখা, রাষ্ট্রের কর্তব্য গণতন্ত্রে বিশ্বাস করা।

সরকার কাদের পাশে দাঁড়িয়ে আজ জাতির সর্বনাশ করছে? কাদের মিথ্যে অনুভূতিকে মূল্য দিয়ে বিবেকবর্জিত  মূর্খ অসভ্য লোকদের দুধ কলা দিয়ে বড় করতে চাইছে? অসভ্যের সংখ্যা বেশি বলে অসভ্যের পক্ষ নিতে হবে, তাদের বর্বরতাকে সম্মান করতে হবে আর সভ্যদের সংখ্যা কম বলে তাদের হাতকড়া পরিয়ে শায়েস্তা করতে হবে, তাদের দিয়ে অঙ্গীকারপত্রে সই করাতে হবে যে তাঁরা তাঁদের বিবেককে ঘুম পাড়িয়ে রাখবেন, তাঁরা রসাতলে যাওয়া সমাজকে সুস্থ সুন্দর করে গড়ে তোলার  কথা মোটেও ভাববেন না, তাঁরা মানবিকতা, উদারতা, বিদগ্ধতা, সৃজনশীলতা  সব কিছুকে বিসর্জন দিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে, কলম বন্ধ করে , তুলি ছুঁড়ে ফেলে জড়বস্তুর জীবন যাপন করবেন?  সরকার কি এটিই চাইছে?  চাইছে ধর্মানুভূতির অভিযোগ করা ধূর্তদের  নিয়ে দেশ গড়তে?  উন্নয়নের নামে রাস্তাঘাট আর উঁচু উঁচু দালান নির্মাণ করতে?  সত্যিকার উন্নয়ন চাইলে ধর্ম-ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করা  হতো, ধর্মের নামে যারা সর্বত্র অধর্ম করে বেড়াচ্ছে তাদের সাবধান করা হতো,  নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা হতো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অসাম্প্রদায়িকতার  শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হতো,  বাকস্বাধীনতাকে মূল্য দেওয়া হতো। তা তো হচ্ছেই না, বরং মহাসমারোহে বিপরীতটিই  উদযাপিত  হচ্ছে। 

নারীকে নারী হওয়ার অপরাধে নির্যাতন করা হলে, তাদের কোনও অনুভূতিতেই কোনও আঘাত লাগে না

লালনের সত্য উচ্চারণ শুনলে, তাঁর   শুভ্রসুন্দর স্বপ্নের কথা শুনলে   যাদের ধর্মীয়  অনুভূতিতে আঘাত লাগে ,  মাদ্রাসায়  ছাত্রদের জঘন্যভাবে পেটানো হলে,  বলাৎকার করা হলে,  বলাৎকার করতে করতে মেরে ফেলা হলে কিন্তু তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে না। গ্রামে গঞ্জে শহরে বন্দরে  নারীকে যৌনহেনস্থা করা হলে, নারীকে নারী হওয়ার অপরাধে নির্যাতন করা হলে, ধর্মীয় এবং নানা শ্রেণীর সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করা হলে, দরিদ্রদের প্রতারিত করা হলে,  তাদের কোনও অনুভূতিতেই কোনও আঘাত লাগে না। এই  দুর্বৃত্তদের ধর্মীয় অনুভূতি কিন্তু ভুয়ো, মিথ্যে। এই অনুভূতির কথা বলে তারা কিন্তু গোটা দেশের লোকদের বোকা বানাচ্ছে। প্রশাসনকে বোকা বানাচ্ছে। সরকারের উচিত নয় এদের অনুভূতির সামান্যও মূল্য দেওয়া। বরং অনুভূতির ধূর্ত কৌশল   কাজে লাগিয়ে যখনই  তারা জনগণের জীবন দুর্বিষহ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে,  তখনই যেন তাদের বিচার হয়। বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে  দেড়শো বছরের পুরোনো ব্রিটিশ আইনটিকে  ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার সময় অনেক আগেই হয়ে গেছে। এই অত্যন্ত জরুরি কাজটি সরকার আজও করছে না। লেখক শিল্পীদের আর   মুক্তচিন্তকদের নির্যাতন করার জন্যই কি ঔপনিবেশিক আইনটিকে দুধ কলা খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে? নতুন সাইবার আইনও তো বানানো হয়েছে বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। সেগুলোকেও আস্তাকুঁড়ে ফেলার সময় অনেক আগেই হয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে, মানবাধিকারে বিশ্বাসী মানুষের বিশেষ করে মুক্তচিন্তকদের বাকস্বাধীনতা সভ্য সমাজ গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অসভ্যরা সভ্যদের বিরুদ্ধে  বহুকাল থেকে সরব। সরকারকে যে কোনও একটি  পক্ষ নিতে হবে। সরকার জ্ঞানকে সমর্থন করবে নাকি  অজ্ঞানকে, সচেতনতাকে নাকি অসচেতনতাকে,  হিংস্রতাকে, অনুদারতাকে, ধূর্ততাকে, সাম্প্রদায়িকতাকে, ধর্মান্ধতাকে, অসভ্যতাকে  পুরস্কার দেবে নাকি উদারতা, মানবিকতা, সভ্যতা, সমতাকে দেবে পুরস্কার–সেটি ঠিক করতে হবে।   

বাউল কবি  লালন শাহের ভাস্কর্য

সাধারণ মানুষেরা সঞ্জয় রক্ষিতকে  হেনস্থা করার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছেন। এখন পর্যন্ত অবশ্য গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী গোষ্ঠীর  প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। এখন পর্যন্ত দেশের  প্রতিষ্ঠিত শিল্পী সাহিত্যিকদের প্রতিবাদ চোখে পড়েনি, লালন বিশারদদের প্রতিবাদও চোখে পড়েনি। নানা রকম সরকারি পুরস্কার আর পদক পাওয়াদের প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। 

লালন যে প্রশ্নটি করেছেন তা একটি  সহজ স্বাভাবিক প্রশ্ন, যে প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রশাসনের লোকেরাও অপারগ। সঞ্জয় রক্ষিতকে মুচলেকা লিখে থানা থেকে মুক্তি পেতে হয়েছে। কী ছিল সেই মুচলেকায়? সেই অঙ্গীকারপত্রে?  আর কোনওদিন যেন তিনি  লালনের গান না গান!  আর কোনওদিন তিনি যেন লালনগীতির কোনও চরণ ফেসবুকে না লেখেন!  যাঁরাই দেশ ও দশের সত্যিকার উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ  কথা বলতে চান, সমাজকে স্থিতাবস্থা থেকে উদ্ধার করতে চান, সমাজের ইতিবাচক  বিবর্তন চান, তাঁদের জন্মের মতো বোবা বানাতে  চায় রাষ্ট্রযন্ত্র। মৌলবাদিরা কত আর ভয়াবহ, তার চেয়ে বেশি ভয়াবহ রাষ্ট্রযন্ত্র। 

সঞ্জয় রক্ষিত এখন কী করবেন? বেশ অনুমান করতে পারি, তিনি  এখন ভয়ে তটস্থ।   সম্ভবত তিনি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করবেন।  আঘাত করতে করতে বাকস্বাধীনতাকে ছিবড়ে বানিয়ে ছেড়েছে মৌলবাদি গোষ্ঠী, যে গোষ্ঠীতে, শুধু ধর্মের চুনোপুঁটিরাই নয়, রাষ্ট্রের রুই কাতলারাও  আছে। আছে বলেই দেশে মৌলবাদীরা বিজয় ডঙ্কা বাজাচ্ছে আর ওদিকে   মৌলবাদ-বিরোধী মুক্তচিন্তকরা হয়  মৃত, নয় নির্যাতিত অথবা  নির্বাসিত।

*পরবর্তী কলাম প্রকাশ পাবে ১০ই জুন, ২০২৪ 

ছবি সৌজন্য: Wikipedia

বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন। বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক। গদ্য ও কবিতার সব শাখাতেই অনায়াস বিচরণ তসলিমার। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি তাঁকে আমরা চিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ও নারীবাদী একজন চিন্তাশীল হিসেবেও। নারীর অধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানববাদ, বিজ্ঞান ও সহনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি তাঁর বিশ্বব্যাপী উদার ও মুক্তচিন্তার জন্য দেশে-বিদেশে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননায়। 'নির্বাচিত কলাম' ও আত্মজীবনী গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দু'দুবার আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের শাখারভ পুরস্কার। ফ্রান্স সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। লিখেছেন 'ফেরা', 'লজ্জা', 'ফরাসি প্রেমিক'-এর মতো অসামান্য উপন্যাস; বেশ কিছু ছোটগল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ।

Picture of তসলিমা নাসরিন

তসলিমা নাসরিন

বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন। বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক। গদ্য ও কবিতার সব শাখাতেই অনায়াস বিচরণ তসলিমার। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি তাঁকে আমরা চিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ও নারীবাদী একজন চিন্তাশীল হিসেবেও। নারীর অধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানববাদ, বিজ্ঞান ও সহনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি তাঁর বিশ্বব্যাপী উদার ও মুক্তচিন্তার জন্য দেশে-বিদেশে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননায়। 'নির্বাচিত কলাম' ও আত্মজীবনী গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দু'দুবার আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের শাখারভ পুরস্কার। ফ্রান্স সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। লিখেছেন 'ফেরা', 'লজ্জা', 'ফরাসি প্রেমিক'-এর মতো অসামান্য উপন্যাস; বেশ কিছু ছোটগল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ।
Picture of তসলিমা নাসরিন

তসলিমা নাসরিন

বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন। বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক। গদ্য ও কবিতার সব শাখাতেই অনায়াস বিচরণ তসলিমার। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি তাঁকে আমরা চিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ও নারীবাদী একজন চিন্তাশীল হিসেবেও। নারীর অধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানববাদ, বিজ্ঞান ও সহনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি তাঁর বিশ্বব্যাপী উদার ও মুক্তচিন্তার জন্য দেশে-বিদেশে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননায়। 'নির্বাচিত কলাম' ও আত্মজীবনী গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দু'দুবার আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের শাখারভ পুরস্কার। ফ্রান্স সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। লিখেছেন 'ফেরা', 'লজ্জা', 'ফরাসি প্রেমিক'-এর মতো অসামান্য উপন্যাস; বেশ কিছু ছোটগল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com