Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

গাটার অ্যান্ড হপার টু হোম ডেলিভারি

কৌশিক মজুমদার

অক্টোবর ৩, ২০২০

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

১৭৫৭ সালে আচমকা বঙ্গবিজয় করে আনন্দে উদ্বাহু ক্লাইভ এই জয় স্বয়ং ঈশ্বরকে উৎসর্গ করতে চাইলেন। কিন্তু কী আফসোস, কলকাতাকে আলিনগর বানানোর সঙ্গে সঙ্গে সিরাজ নাকি কলকাতার একমাত্র গির্জাটাও ধ্বংস করে দেন। সেই বিপদ থেকে ক্লাইভকে উদ্ধার করেন তাঁর ফারসি শিক্ষক নবকৃষ্ণ দেব। তিনিই ক্লাইভকে বলেন এ বিজয় মা দুর্গাকে উৎসর্গ করতে। ক্লাইভ রাজি হলে নবকৃষ্ণ সুতানটির শোভাবাজারে নিজের বাড়িতে ইংরেজদের বিজয় উদযাপন করতে এক দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। এ পুজো তাই অনেকদিন পর্যন্ত ‘কোম্পানির পুজো’ নামে খ্যাত ছিল।

এ ইতিহাসের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত আছে। তবে কয়েকটা ঘটনা একেবারে সত্যি। ইংরেজ রাজপুরুষরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন রীতিমতো সপরিবার। পুজো শুরুর আগে রাজা রানির নামে জয়ধ্বনিও করা হত। শুধু তাই নয়, ইংরেজকে খুশি রাখতে পুজো শুরুর আগে সুর করে গাওয়া হত-

“ভারত-কমলা স্বভাব চঞ্চল
ক্লাইবের বলে হইলা নিশ্চল
পুরনারী যথা স্বামীর আদেশ
সতত কর‍য়ে পালন।”

পুজোর মরশুম এলেই ইংরেজদের পোয়াবারো। তাঁদের সবচেয়ে বিক্রিত পত্রিকা ইংলিশম্যানের পাতায় পাতায় লেখা থাকত এ বছর কোন কোন পুজো সবচেয়ে ” স্পেন্ডিড” হতে পারে, তার বিবরণ। কোথায় কোন বাই আসছে, কোন বাড়ি কেমন করে সাজানো হচ্ছে, তার গল্পেই গোটা কাগজ ভরা থাকত। মুসলিমরাও ইংরেজদের খুশি রাখতে একবার এসে দেবীকে সেলাম করে যেতেন।

[the_ad id=”266918″]

এদিকে অন্য এক নেটিভ পুজোর গল্প বলি, যশোহর নিবাসি জগৎরাম মুখোপাধ্যায় সুখেই ঘরকন্না করছিলেন। বয়স তখন তিরিশ হবে, আকস্মিক মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু শ্মশানঘাটে হঠাৎই আবার প্রাণ ফিরে পান। এই অদ্ভুত ঘটনায় বাড়ির লোক খুশি হয়েছিলেন হয়তো, কিন্তু তৎকালীন সামাজিক আচারবিচারের জন্য তাঁর আর ঘরে ফেরা হয়নি। অগত্যা গঙ্গার এ পারে এসে বেহালা চত্বরে বসবাস শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে অযোধ্যা হালদারের মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়। ১৭৭০ সাল। জগৎরামের চার ছেলে ও একমাত্র কন্যা জগত্তারিণী প্রত্যেকবারের মতো সে বছরও গেছে মামার বাড়ির দুর্গাপুজোয়। কিন্তু আদরিণী মেয়ের মনে হল তাঁকে যেন কিছুটা অবহেলা করা হচ্ছে সেখানে। অভিমান করে বাড়ি ফিরেই বাবাকে জানাল সেও বাড়িতে দুর্গাপুজো করবে। তাও আবার এই বছরেই। সে দিন ছিল অষ্টমী। মেয়ের জেদের কাছে নতি স্বীকার করে পর দিনই ঘটে-পটে পুজো করলেন জগৎরাম। মায়ের ভোগ ছিল খিচুড়ি আর কলাই ডাল। পুজোর সেই শুরু।

পুজোর সঙ্গে একেবারে জড়িয়ে আছে পুজোর ভোগ। বছরে এই তো ক’টা দিন মা আসবেন, তাঁকে খাইয়েদাইয়ে যত্নআত্তি না করলে হয় নাকি? বারোজন ইয়ার মিলে বারোয়ারি পুজোর চল তখনও আসেনি। অভিজাত জেন্টুদের বাড়িতেই পুজো সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সেখানে বড়লোকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। ফ্যানি পার্কস লিখছেন “পুজোমন্ডপের পাশেই একটি বড় মাপের ঘর। নানা জাতের উপাদেয়, উৎকৃষ্ট খাবার-দাবার থরে থরে সাজানো। সে সবই বাবুর ইউরোপীয় অতিথিদের জন্য। এসব খাবার দাবার সরবরাহ করে একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান, মেসার্স গাটার এন্ড হপার।”

[the_ad id=”266919″]

কিন্তু সাধারণ মানুষদের জন্য অন্য ব্যবস্থা। কলকাতা থেকে এই পুজো গাঁয়ের জমিদার বাড়িগুলোতেও ছড়িয়ে গেলে রায়তরাই জমির চাল, ডাল, সবজি বা পুকুরের মাছ এনে দিত পুজোতে। কুটনো কুটত বাড়ির বউ ঝি-রা। মাছ কোটার দায়িত্ব ছিল জেলে বউদের হাতে। বদলে দু’বেলা পেট পুরে খাওয়া। তবে সে খাওয়ার বৈচিত্র্য খুব বেশি ছিল না। খিচুড়ি, লাবড়া, আলুরদম, চালতা বা আমড়ার অম্বল, বোঁদে – মোটামুটি এই রকম। মহেন্দ্রনাথ দত্ত লিখছেন “তখনকার দিনে দুর্গাপুজো হলে দশজনকে পাত পাড়াতে হত। ব্রাহ্মণের বাটী হলে ভাত, পাঁচ তরকারী, দই, পায়েস। শাক্ত ব্রাহ্মণ হইলে মাছ চলিত। কায়স্থ হইলে লুচি চলিত। যাহোক সাদামাটা খাওয়ান হইলেও সকলকে খাওয়ান চাই। তবে বামুন বাটীতে শাকের ঘণ্ট, মোচার ঘণ্ট যা হইত অতি উপাদেয় হইত, কারণ বাড়ির মেয়েরা রাঁধিত। সন্ধ্যার সময় ঝি, চাকর, ছেলেমেয়েদের বেড়াতে নিয়ে গেলে এক সরা করে জলপান দেবার প্রথা ছিল। যা হোক দুর্গাপুজোর সময় সকলকে মিষ্টিমুখ করানো হত।”

পুজোর সঙ্গে একেবারে জড়িয়ে আছে পুজোর ভোগ। বছরে এই তো ক’টা দিন মা আসবেন, তাঁকে খাইয়েদাইয়ে যত্নআত্তি না করলে হয় নাকি? বারোজন ইয়ার মিলে বারোয়ারি পুজোর চল তখনও আসেনি।

তবে মায়ের সামনে সাজিয়ে দেওয়া হত নানা রকম ভোগ। কখনও ভাতের ভোগ, কখনও লুচির ভোগ, কখনও ফলের প্রসাদ। কোথাও দেবীকে ইলিশের ভোগ নিবেদন করা হত। কোথাও বা আবার ক্ষীর সন্দেশ। অষ্টমীতে খাওয়ানো হয় ঘিয়ের লুচি। কখনও আবার পোলাও। পোলাওয়ের সঙ্গে থাকে আলুর দম, পনির, ধোঁকা। ভাত প্রসাদের সঙ্গে থাকে পাঁচমিশালি তরকারি, পায়েস, সুক্তো আর লুচির সঙ্গে দেওয়া হয় সুজি, পাঁচরকম ভাজা যা সন্ধ্যেবেলা পরিবেশন করা হয়। ভোগের তরকারি আগে আলুনি রাখা হত। কারণ নুন বিদেশি জিনিস। দিলে শুদ্ধতা নষ্ট হবে। পরে অবশ্য সৈন্ধব লবনের প্রচলন হয়। সেই প্রথা এখনও অনেক বনেদী বাড়িতে চলছে। খিচুড়ি প্রসাদে যেমন আর যেই ডাল হোক না কেন, মুসুর ডাল হবে না, সেটি আমিষ। খিচুড়ির সঙ্গে পরিবেশন করা হয় পাঁচ রকম ভাজা, চাটনি পাঁপড়, মিষ্টি।

[the_ad id=”270084″]

বাঙালির প্রিয় এই খিচুড়ি খাদ্যবস্তুটির প্রচলন সেই প্রাচীন যুগ থেকে। এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় বেদে, ক্ষীরিকা নামে, যা হলো চাল ও ডালের একটা সহজপক্ব খাদ্য। সংস্কৃতে খিচুড়ির আরও একটা নাম হলো খিচ্ছা, যার অর্থ হল চাল আর ডাল দিয়ে বানানো খাবার। আবার প্রাচীন গ্রন্থগুলোয় এর উল্লেখ থাকে কখনো কৃষারান্ন নামে; অর্থাৎ চালের সঙ্গে মুগ ডাল, দই, আর তিল মিশিয়ে ঘি দিয়ে রান্না করা অন্ন। মহাভারতের গল্পে আমরা পাই যে, এক কণা অন্ন ভক্ষণ করে কৃষ্ণ উদ্গার করেছিলেন— যার দ্বারা ঋষি দুর্বাসার উদর পূর্ণ হয়ে যায় এবং দ্রৌপদী তাঁর ক্রোধ থেকে উদ্ধার পান। সেটাও কিন্তু ছিল চাল আর ডালের মিশ্রিত অন্ন—অর্থাৎ খিচুড়ি। কৃষ্ণ-সুদামার উপাখ্যানে আমরা দেখি যে, কৃষ্ণর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় সুদামা সঙ্গে নিয়েছিলেন দু’টো হাঁড়ি, যার একটাতে ছিল খিচুড়ি (যেটা রাস্তায় বাঁদরে কেড়ে নেয়) আর অন্যটায় ছিল ভাজা ছোলা (যেটা কৃষ্ণ উপহারস্বরূপ পান তাঁর বন্ধুর কাছ থেকে)। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতানুযায়ী, ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতের উপমহাদেশে চাল ও ডাল (ছোলার ডাল, মটর ডাল, মটরশুঁটি ও মুসুর ডাল) একসঙ্গে খাওয়ার রীতি ছিল; আবার চাল আর ডাল আলাদা করে খাওয়ারও প্রচলন ছিল।

তখনকার দিনে দুর্গাপুজো হলে দশজনকে পাত পাড়াতে হত। ব্রাহ্মণের বাটী হলে ভাত, পাঁচ তরকারী, দই, পায়েস। শাক্ত ব্রাহ্মণ হইলে মাছ চলিত। কায়স্থ হইলে লুচি চলিত। যাহোক সাদামাটা খাওয়ান হইলেও সকলকে খাওয়ান চাই। তবে বামুন বাটীতে শাকের ঘণ্ট, মোচার ঘণ্ট যা হইত অতি উপাদেয় হইত, কারণ বাড়ির মেয়েরা রাঁধিত।

২০১৫ সালে মহারাষ্ট্রের ‘তের’ গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় পাওয়া যায় দু’টো হাঁড়িভর্তি পোড়া চালের সঙ্গে মুগ ডাল মেশানো খিচুড়ি, যা রান্না হয়েছিল প্রথম খ্রিস্টাব্দে। অর্থাৎ সামনে হাজির ২০০০ বছরের পুরনো খিচুড়ি, অবশ্য যিনি রান্না করেছিলেন, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তিনি সেটা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন।

[the_ad id=”270085″]

কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গা, বৈষ্ণবী হিসেবে পূজিতা হন। শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোয় অন্নভোগ থাকে না। গোটা, শুকনো ফল মিষ্টি দেওয়া হয়। খাজা গজা মোতিচুর, নানা ধরনের মিষ্টি দেবীকে সাজিয়ে দেওয়া হয়। সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পুজোতে অষ্টমী এবং নবমী তিথিতে একটি বিশেষ পুজো হয়। একে বলা হয় মাংস ভক্ত বলি। মাটিতে মাসকলাই মাখিয়ে দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। আজও আছে মোট তিনবার অন্নভোগ দেওয়ার প্রথা। প্রথমে সকালে লুচি ভোগ, তারপর সাদা ভোগ ও খিচুড়ি ভোগ। ভোগে থাকে পোলাও, সাদা ভাত, খিচুড়ি, চচ্চড়ি, মাছ, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি। সন্ধিপুজোয় ল্যাটা মাছ পুড়িয়ে তা ভোগে দেওয়া হয়। দশমীর দিন দেওয়া হয় পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, কচুর শাক। তিন দিন বাপের বাড়িতে নানা ব্যঞ্জন খাবার কথা স্বামীর থেকে গোপন রাখতেই নাকি শেষ দিন দেবী কচুর শাক আর পান্তা খান। স্বামী ‘কী দিয়ে খেয়ে এলে?’ জিজ্ঞেস করলে যেন বলতে পারেন দরিদ্র পিতা এর বেশি কিছু খাওয়াতে পারেননি। চোরবাগান চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আবার বৈশিষ্ট্য হল, এই বাড়িতে ভোগ রান্না করেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। খিচুড়ি, নানান রকমের ভাজা, শুক্তনি, চিংড়িমাছের মালাইকারি, ভেটকি মাছের ঘণ্ট, লাউচিংড়ি, চাটনি, পায়েস, পান্তুয়া ইত্যাদি নানা রকমের ভোগ রান্না করে দেবীকে নিবেদন করা হয়।

কৃষ্ণ-সুদামার উপাখ্যানে আমরা দেখি যে, কৃষ্ণর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় সুদামা সঙ্গে নিয়েছিলেন দু’টো হাঁড়ি, যার একটাতে ছিল খিচুড়ি (যেটা রাস্তায় বাঁদরে কেড়ে নেয়) আর অন্যটায় ছিল ভাজা ছোলা (যেটা কৃষ্ণ উপহারস্বরূপ পান তাঁর বন্ধুর কাছ থেকে)।

শাক্তমতে পুজোতে ছাগ ও মহিষ বলি হত বহু পরিবারে। এমনও আছে যেখানে সপ্তমীতে সাতটি, অষ্টমীতে আটটি আর নবমীতে নয়টি ছাগবলি হত। চিনারি সাহেবের আঁকা এক ছবিতে এই ছাগবলির ছবিও দেখতে পাই। কিন্তু বলিপ্রথা এখন আর নেই বললেই চলে। বদলে দেবীর ভোগ আয়োজনে থাকে দু-তিন রকমের মাছ। সবই রান্না হয় পেঁয়াজ রসুন বাদ দিয়ে। মা দুর্গা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসেন, অসময়ে যদি খিদে পায় তাই নিবেদন করা হয় “রচনা”। পাঁচটি মাটির সরায় মুড়কি নাড়ু তক্তি সাজিয়ে, ঢেকে প্রতিমার পাশে রেখে দেওয়া হয়।  রঘুনাথগঞ্জের জোতকমলে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কোদাখাকি দুর্গাপুজো আবার একদিক থেকে অনন্য। এখানে কোনও মুসলিম পরিবারের দেওয়া ভোগ প্রথমে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। তার পর অন্যেরা ভোগ উৎসর্গ করেন।

[the_ad id=”270086″]

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর লেখায় বাংলার হারিয়ে যাওয়া কিছু ভোগের পদের লিস্টি দিয়েছেন। তাতে সাদা ধবধবে ঘি ভাত, আমআদা দিয়ে সোনামুগের ডাল, বেগুন বাসন্তী (লম্বা করে কাটা ল্যাজওয়ালা বেগুনের ওপর ঝাল-ঝাল সাদা সরষে এবং মিষ্টি-মিষ্টি নারকোল কোরার পরত মাখানো), নিরামিষ কচুর লতি থেকে নারকেল কোরা, ঘি গরমমশলা সহযোগে মোচার ঘণ্টের নাম আছে। শেষের পদটি বাদ যাবার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন “অত মোচা কুটবে ক’জনে, এই প্রশ্নটির জন্যই বোধহয় বর্তমানে ভোগের পদ থেকে মোচার নাম কাটা গিয়েছে।”

পুজোর ভোগে মিষ্টির কথা না বললে কি চলে? মহেন্দ্রনাথ দত্ত শুধু বিজয়ার নারকেলের ছাবার কথা বললেও ধনী পরিবারে এই পুজোর কটা দিন ভিয়েন বসত। এখনও বেশ কিছু বাড়িতে বসে। শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোতে দেবীকে অর্পণ করা হয় ২৫ রকমের মিষ্টি, যেগুলো তৈরি হয় রাজবাড়ির হেঁসেলেই। মিষ্টি তৈরি করতে আসেন বাঁধা-ধরা ময়রারা। মিষ্টির মধ্যে প্যারাকী, মিষ্টি গজা, দরবেশ, খাজা, পান্তুয়া, জিলিপি, নারকেল নাড়ু, মুগের নাড়ু, সুজির নাড়ু, বোঁদের নাড়ু থেকে শুরু করে হালুয়া, ক্ষীর, জিবেগজা, পদ্ম নিমকি, আরও কত কী! “রসবড়া, লবঙ্গলতিকা, নারকোল ও তিলের নাড়ু, মুড়ি ও চিঁড়ের মোয়ার সঙ্গে তৈরি হত পূর্ণচন্দ্রপুলির মতো সাবেক মিষ্টি। এটা আর কিছুই নয়, দু’টি চন্দ্রপুলিকে ব্যাস বরাবর জুড়ে দিলে যে বৃত্তাকার মিষ্টিটি তৈরি হয়, সেটাই।”

চোরবাগান চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আবার বৈশিষ্ট্য হল, এই বাড়িতে ভোগ রান্না করেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। খিচুড়ি, নানান রকমের ভাজা, শুক্তনি, চিংড়িমাছের মালাইকারি, ভেটকি মাছের ঘণ্ট, লাউচিংড়ি, চাটনি, পায়েস, পান্তুয়া ইত্যাদি নানা রকমের ভোগ রান্না করে দেবীকে নিবেদন করা হয়।

তবে এতসব ভোগের জৌলুস নেই পাড়ার বারোয়ারি পুজোতে। সেখানে ভোগের জন্য আলাদা সেক্রেটারি থাকেন। একটু বড় ক্লাবে পুজোর চারদিন পাত পেড়ে আর অন্য ক্লাবে নবমীর দিন ভোগের ব্যবস্থা। আগে খিচুড়ি ছাড়া ভাবাই যেত না। ইদানীং ডাল অমূল্য হওয়াতে জায়গা করে নিয়েছে শুকনো ফ্রায়েড রাইস আর আলুর দম, বড়জোর পনিরের ডালনা। শেষ পাতে পায়েসের জায়গায় কাপ আইসক্রিম। কোথাও আবার রোজের ভোগের ঝামেলা না রেখে শেষে একেবারে বিজয়া সম্মিলনী করে ঢালাও মাংস ভাত হতেও দেখেছি।

[the_ad id=”270088″]

তবে এই বছর বোধকরি ভোগে কিছুটা ভাঁটা পড়বে। করোনাকালে মুখে মাস্ক আর হাতে স্যানিটাইজারের বোতল নিয়ে ভোগের দিকে “ভীরু ভীরু চোখে চেয়ে চেয়ে” দেখা ছাড়া উপায় নেই। তবে শুনলাম নিউ নরমালে নাকি এসে গেছে একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ। সেই অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন বারোয়ারি কিংবা বনেদি বাড়ির পুজোর ভোগ বাড়িতে বসেই অর্ডার করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। নিজের বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী ৩-৪ কিলোমিটার পরিধি বিশিষ্ট এলাকার মধ্যে যেসব বারোয়ারি এবং বনেদি পুজো ভোগ করছে তাদের নাম দেখতে পাওয়া যাবে। উৎসাহীরা তাঁদের পছন্দমতো পুজো কমিটির ভোগ অর্ডার করতে পারবেন। ব্যাস! আর কী চাই?

তথ্যসূত্র-

১। কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা- মহেন্দ্রনাথ দত্ত
২। নোলা- কৌশিক মজুমদার
৩। হারিয়ে যাওয়া পুজোর ভোগের রান্না- রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়

Author Kaushik Majumdar

জন্ম ১৯৮১-তে কলকাতায়। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি-তে স্বর্ণপদক। নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কারক। ধান্য গবেষণা কেন্দ্র, চুঁচুড়ায় বৈজ্ঞানিক পদে কর্মরত। জার্মানি থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা গবেষণাগ্রন্থ Discovering Friendly Bacteria: A Quest (২০১২)। তাঁর লেখা ‘কমিকস ইতিবৃত্ত’ (২০১৫), 'হোমসনামা' (২০১৮),'মগজাস্ত্র' (২০১৮), ' জেমস বন্ড জমজমাট'(২০১৯), ' তোপসের নোটবুক' (২০১৯), 'কুড়িয়ে বাড়িয়ে' (২০১৯) 'নোলা' (২০২০) এবং সূর্যতামসী (২০২০) সুধীজনের প্রশংসাধন্য। সম্পাদনা করেছেন ‘সিদ্ধার্থ ঘোষ প্রবন্ধ সংগ্রহ’ (২০১৭, ২০১৮)'ফুড কাহিনি '(২০১৯) ও 'কলকাতার রাত্রি রহস্য' (২০২০)।

Picture of কৌশিক মজুমদার

কৌশিক মজুমদার

জন্ম ১৯৮১-তে কলকাতায়। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি-তে স্বর্ণপদক। নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কারক। ধান্য গবেষণা কেন্দ্র, চুঁচুড়ায় বৈজ্ঞানিক পদে কর্মরত। জার্মানি থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা গবেষণাগ্রন্থ Discovering Friendly Bacteria: A Quest (২০১২)। তাঁর লেখা ‘কমিকস ইতিবৃত্ত’ (২০১৫), 'হোমসনামা' (২০১৮),'মগজাস্ত্র' (২০১৮), ' জেমস বন্ড জমজমাট'(২০১৯), ' তোপসের নোটবুক' (২০১৯), 'কুড়িয়ে বাড়িয়ে' (২০১৯) 'নোলা' (২০২০) এবং সূর্যতামসী (২০২০) সুধীজনের প্রশংসাধন্য। সম্পাদনা করেছেন ‘সিদ্ধার্থ ঘোষ প্রবন্ধ সংগ্রহ’ (২০১৭, ২০১৮)'ফুড কাহিনি '(২০১৯) ও 'কলকাতার রাত্রি রহস্য' (২০২০)।
Picture of কৌশিক মজুমদার

কৌশিক মজুমদার

জন্ম ১৯৮১-তে কলকাতায়। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি-তে স্বর্ণপদক। নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কারক। ধান্য গবেষণা কেন্দ্র, চুঁচুড়ায় বৈজ্ঞানিক পদে কর্মরত। জার্মানি থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা গবেষণাগ্রন্থ Discovering Friendly Bacteria: A Quest (২০১২)। তাঁর লেখা ‘কমিকস ইতিবৃত্ত’ (২০১৫), 'হোমসনামা' (২০১৮),'মগজাস্ত্র' (২০১৮), ' জেমস বন্ড জমজমাট'(২০১৯), ' তোপসের নোটবুক' (২০১৯), 'কুড়িয়ে বাড়িয়ে' (২০১৯) 'নোলা' (২০২০) এবং সূর্যতামসী (২০২০) সুধীজনের প্রশংসাধন্য। সম্পাদনা করেছেন ‘সিদ্ধার্থ ঘোষ প্রবন্ধ সংগ্রহ’ (২০১৭, ২০১৮)'ফুড কাহিনি '(২০১৯) ও 'কলকাতার রাত্রি রহস্য' (২০২০)।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস