২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে ঝোলাপিঠে পঁচিশ দিনের একাকী ভ্রমণে গেছিলাম মধ্যপ্রদেশে। গোয়ালিয়র কেল্লায় আলাপ হল বিশালের সঙ্গে। নামের সাথে মানানসই ছ’ফুটিয়া পেটানো চেহারা। বিশ বছর সেনাবাহিনীতে কাটিয়ে উনচল্লিশে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত। এখনও অবিবাহিত। তারও একাকী ভ্রমণ পছন্দ শুনে শুধোই,
— কেন?
— যেখানে ইচ্ছা যাওয়া যায়, যদ্দিন খুশি থাকা যায়, কারও সঙ্গে নো ঝিকঝিক।
— একা লাগে না?
— নাঃ, পথে কারও সঙ্গে ক্ষণিকের আলাপ হয় ওই ঢের। তবে কখনও মনে হয়েছে সঙ্গে একজন কেউ থাকলে ভালো হত।
— যেমন?
— বছর চারেক আগে যোশীমঠ থেকে হেঁটে আউলি (Auli) গেছিলাম। আন্দাজ পাঁচ কিমি পথ। শেষে অন্ধকার হয়ে এল। সেদিন ঐ জঙ্গুলে পথে একটু অস্বস্তি হচ্ছিল।
— আপনি সৈনিক, এমন সুন্দর স্বাস্থ্য, বয়সও বেশি নয়। তাও অস্বস্তি?
— দেখুন আমি কমান্ডো ট্রেনিং পেয়েছি। ক্যারাটে জানি। খালি হাতেও দু’চার জনকে শুইয়ে দিতে পারি। কিন্তু সেদিন সঙ্গে টর্চ, হান্টিং নাইফ নেই, মোবাইল ব্যাটারি ডাউন। তখনই মনে পড়ল যোশীমঠ ইউনিটের একজনের সাবধানবাণী— ওই পথে সন্ধ্যার পর কখনও ভালুক নামে। তিনি জাপটে ধরলে কমান্ডো ট্রেনিং ফেল।
— তারপর?
— না, অঘটন কিছু হয়নি। তাই আজ আপনার সঙ্গে সেই গল্প করছি। আসলে বেশ চড়াই, ভাবিনি অতক্ষণ লাগবে। পৌঁছতে প্রায় সাতটা বেজে গেল।
— সেদিন সঙ্গে কেউ থাকলে কী হত?
— অন্যান্য জানোয়ার সচরাচর মানুষকে এড়িয়ে চলে। ভালুক গোঁয়ার প্রাণী, উল্টে তেড়ে আসে। বাঘকেও ভয় পায় না। দুজনেও খালি হাতে ভালুকের মোকাবিলা করা অসম্ভব। তবু সঙ্গে কেউ থাকলে একটু মানসিক ভরসা হয়।

২০১৯-এর মে মাসে গেছি উত্তরাখণ্ডে পঁয়ত্রিশ দিনের একাকী ভ্রমণে। চারধাম যাত্রার মরশুমে রুটের অনেক বাস, সুমো ঐ যাত্রায় রিজার্ভে চলছে। ফলে জন-বাহনের স্বল্পতায় বেশ ভুগতে হচ্ছে। নাহলে গলাকাটা দামে গাড়ি রিজার্ভ করে যাওয়া যায়। সেটা আমার লো-বাজেট ভ্রমণপন্থার পরিপন্থী। লোকে লোকারণ্য দেখে কেদার-বদ্রী দর্শনের ইচ্ছা উবে গেল। চলে গেলাম যাত্রাপথের বাইরে গোপেশ্বরে।
তিনদিন ওখানে ফাঁকায় কাটিয়ে যোশীমঠে এসে ভিড়ভাট্টায় আবার ছন্দপতন। হিন্দুধর্ম প্রসারের জন্য অষ্টম শতকে শঙ্করাচার্য ভারতে চারটি জ্যোতির্মঠ নির্মাণ করেন। উত্তরে যোশীমঠ, দক্ষিণে শ্রীঙ্গেরী, পূর্বে পুরী ও পশ্চিমে দ্বারকা। লোয়ার বাজারে নৃসিংহ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। বাসস্ট্যান্ডের ওপরে ২৪০০ বছরের প্রাচীন কল্পবৃক্ষতলে তিনি পাঁচ বছর তপস্যা করেন। পাশেই জগৎগুরুর প্রাচীন গদ্দি। মনোরম আশ্রমিক পরিবেশ।

নৃসিংহ মন্দিরের পাশে শঙ্করাচার্য আশ্রমে কিছু আবাসিক ছাত্র শাস্ত্রচর্চার শিক্ষা নেয়। আশ্রমের মামুলি যাত্রীনিবাসের ভাড়াও তখন সাতশো। তরুণ আশ্রম-সচিব দীপকের কাছে আশ্রমের ছাদে তাঁবু পাতার অনুমতি চাইলাম। বিনম্র নিবেদনে (হয়তো ব্রাহ্মণ বলেও) তিনি আমায় আদিশঙ্করার স্মৃতিমন্দিরে থাকতে দিলেন, নিখরচায়! একাকী ভ্রমণে বহুবার অচেনা মানুষের এমন সহৃদয়তায় ধন্য হয়েছি।
রৌপ্যসিংহাসনে শোভিত আদিশঙ্করার তৈলচিত্র। মেঝেয় মোটা শতরঞ্চি। তাতে ফোমম্যাট পেতে তেরাত্তির দিব্যি কাটল আদিগুরুর পদতলে। প্রথমদিন যোশীমঠে কাটিয়ে পরদিন কল্পেশ্বর ঘুরে এসে মনে পড়ল বিশালের কথা। গেলে হয় না, পায়ে পায়ে আউলি? রাস্তায় তিন স্থানীয় ছোকরার জটলায় জিগাই, আউলি জানে কা প্যায়দল মার্গ কিধর? ওরা বলে, প্যায়দল মত যাইয়ে আংকল, চড়াই বহুত হ্যায়, থক জায়েঙ্গে। এগিয়ে এক বয়স্কজনকে শুধোই। তিনি রাস্তা বুঝিয়ে বলেন, চড়াই ভালোই, তবে, হাঁটুতে ব্যথা আর দমের টান না থাকলে, ইচ্ছে যখন হয়েছে, ঘুরে আসুন। অসুবিধে হলে ফিরে আসবেন। ভাবি, এই হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ। বলি, ও পথে কি ভালুকের ভয় আছে? উনি বলেন, ওটা স্থানীয়দের শর্টকাট পাকদণ্ডী, লোক চলাচল কম বলে নির্জন। তবে দিনের বেলা কোনও ভয় নেই। সন্ধ্যায় দীপককে মনোবাঞ্ছা জানাই। বলেন, ঘুরে আসুন, ভালো লাগবে। তবে দুটো স্যাক নিয়ে কষ্ট হবে। ফিরবেন তো এখানেই, বড়টা রেখে যান। ওখানে হনুমান মন্দিরে থাকবেন। হোটেলের রেট ওখানে গলাকাটা।

যোশীমঠ থেকে আউলি গাড়িপথে ১৬, দড়িপথে ৪ কিমি। মনোবাঞ্ছার সঙ্গে মালাইচাকির সঙ্গতে ৫কিমি পথে দুহাজার ফুট চড়াই ভাঙার আনন্দ অনন্য। অরণ্যময় পথে উচ্চতার সঙ্গে ক্রমশ বদলায় দৃশ্যপট। পথে বিশালের কথার প্রতিধ্বনি শুনি। রাতে এ পথে একাকী চলা অনুচিত। পিঠে ন্যাপস্যাক, কাঁধের ঝোলায় স্লিপিংব্যাগ। আধা উঠেই ঘেমে একসা। আধঘণ্টা বসে ক্লান্তি কাটাতে মোবাইলে বই পড়ি। ততক্ষণ ও পথে আর কেউ যায় না।

ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি বরফাবৃত স্কি রিসর্ট আউলির রূপ চোখ ঝলসানো। তখন ওখানে চলে স্কি প্রশিক্ষণ, প্রতিযোগিতা। অন্য সময় হাজার ফুট ঢালে ৩ কিমি আউলি বুগিয়াল সবুজ মখমল। সঞ্জীবনী টিলার টঙে দীপক-বর্ণিত হনুমান মন্দির। নীচে GMVN ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। অনেকটা সিঁড়ি উঠে মন্দির। পাথরের দেওয়াল, গোলাপি টিনের ছাদ। বড় হল। মেঝেয় ফোমম্যাটের ওপর পাতলা কার্পেট। ঝকঝকে পরিস্কার। বেদিতে অধিষ্ঠিত হনুমানজী। হলের দুপাশে কয়েকসার কাচের জানলা। মন্দিরে কেউ নেই। বাঁদিকে অল্প দূরেই রোপওয়ে চেঞ্জ স্টেশন। যোশীমঠ থেকে কেবলকারে এসে ওখানে নেমে হাজার ফুট ওপরে স্কি স্টার্টিং পয়েন্টে যেতে ওখান থেকে বসতে হয় চেয়ারলিফ্টে। স্কি-পয়েন্ট থেকে পাঁচশো ফুট চড়াই ভেঙে ১ কিমি দক্ষিণে গরসন বুগিয়াল অবধি যাওয়া যায়। ওপথে শীতের বরফ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

মন্দির পরিসর থেকে নন্দাদেবী, দুনাগিরি, বারমাল, হাতি, ঘোড়া ইত্যাদি শিখর দৃশ্যমান। অনেক পাহাড়ি শহরেই অপরিকল্পিত নির্মাণ দৃশ্যদূষণ ঘটায়। আউলির পুব ঢালে ITBP’র পরিকল্পিত হলুদ-সবুজ স্কি অ্যান্ড মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট ও সংলগ্ন বাড়িগুলি তার সুন্দর ব্যতিক্রম। ধীরেসুস্থে হেঁটে তিন ঘণ্টায় বারোটা নাগাদ এসে গেছি। চাইলে ফিরে যাওয়া যায়। কিন্তু নতুন কোনও জায়গায় সন্ধ্যা ও সকাল না দেখলে আমার তৃপ্তি হয় না। চড়াই ভাঙার ক্লান্তিতে নিস্তব্ধ মন্দিরের কোণে শুয়ে তন্দ্রা এসে গেছিল। চটকা ভাঙে একদল গুজরাটি পর্যটকের কলরোলে। চারটে বাজে। নীচের দোকান থেকে ম্যাগি চা খেয়ে আসি। মন্দির চত্বর থেকে দৃশ্যমান বিস্তৃত প্যানোরামা। দলটা চলে যেতে মন্দির পরিসর আবার ডুবে যায় নির্জনতায়।
পাঁচটা নাগাদ পূজারীজী এসে মাইকে মৃদু ভল্যুমে হরিহরণের কণ্ঠে ‘জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর’ ভজন চালালেন। বহু জায়গায় শুনেছি এই সুমধুর হনুমানবন্দনা। দীপ, ধূপ জ্বালিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। বলি, রাতটা মন্দিরে থাকতে পারি? উনি বলেন, থেকে যান, অসুবিধে নেই। নীচে আদিশঙ্করার আশীর্বাদ, এখানে হনুমানজীর কৃপায় কৃতার্থ হই।

সূর্যাস্তে মুগ্ধ হয়ে দেখছি নন্দাদেবীর শরীরে অস্তরাগের অপূর্ব মাধুরী। পরিসরের গেট খুলে ঢুকলেন প্রায় চল্লিশের এক সুঠাম পুরুষ। পিছনে মধ্যতিরিশের এক মহিলা ও বছর দশেকের বালিকা।
আদর্শ ছোট পরিবারের ছবি। দুজনে আমায় হাত তুলে নমস্কার করেন। জিগর প্যাটেল বরোদা নিবাসী নিউরোসার্জন। শান্ত, মৃদুভাষী। এসেছেন ঐ গুজরাটি দলের সাথে, তবে হৈচৈ অপছন্দ বলে কখনও একটু আলাদা হয়ে নিরালা খোঁজেন। আমার একাকী ভ্রমণের প্যাশন শুনে বলেন, আমারও খুব ইচ্ছে করে একা বেরিয়ে পড়তে। আপনাকে দেখে ইচ্ছেটা জোরালো হোলো। শুনলাম জিগরের স্ত্রী হিনালও বেড়াতে খুব ভালোবাসেন। কথায় কথায় জানতে পারলাম, বছর দুই আগে আউলি বেড়াতে এসে গরসন বুগিয়াল হয়ে ছত্রকুণ্ড অবধি হেঁটে গেছিল দুজনে।

পূজারীজী এসে ভজন বন্ধ করে চলে যাওয়ার সময় বলেন, আপনি তো থাকছেন, আমি আর আসব না। আটটার পর আর কেউ আসে না, তখন গেট বন্ধ করে দেবেন। পূজারীজী চলে যেতে হিনাল বলেন, আপনি রাতে এখানেই থাকবেন নাকি? বলি, হ্যাঁ। কেন? জায়গাটা ভালো না? হিনাল বলে, জায়গাটা ভালোই, ঢাকা হল, ঠান্ডা লাগবে না। তবে কেউ নেই, ভয় করবে না? বলি, অচেনা জায়গায় রাতে একলা থাকতে অস্বস্তি হয় বৈকি। তবে এটা তো মন্দির, সেটাই ভরসা।
মনে পড়ে ৮৮ তে দুই বন্ধুর হর-কি-দুন ট্রেকের কথা। সন্ধ্যায় পৌঁছেছি নৈটয়ার। সেদিন দশেরা। বনবাংলো তালাবন্ধ। চৌকিদার বেপাত্তা। রাতটা দুজনে বাংলোর খোলা বারান্দায় শুয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। সেদিন একা থাকলে অস্বস্তি হত। জিগর বলেন, চিন্তার কিছু নেই। এটা ITBP এলাকা। তবু আমার নম্বর রাখুন, আমার ফোন হামেশা অন থাকে। কোনও অসুবিধা হলে ফোন করবেন। চলে আসব। নীচে GMVN লজেই আছি আমরা।
সদ্যপরিচিত জিগরের আন্তরিকতা স্পর্শ করে। মেয়েটি বাবার মতোই শান্ত। আমরা কথা বলছিলাম, ও নিজের মনে আশপাশে ঘুরে দেখছিল। যাওয়ার সময় আমায় টা-টা করে। আমি নির্জনতাপ্রিয়, তবু সেই সন্ধ্যায় জনহীন পরিবেশে অচেনা সাহচর্যের ক্ষণিকের উষ্ণতা ভালো লেগেছিল। এসবই পথের প্রাপ্তি। বিশালও এমন কথাই বলেছিল।

পরশু ছিল পূর্ণিমা। সেদিন চাঁদ উঠবে একটু দেরিতে। অন্ধকারে দূরে ITBP এলাকায় কিছু আলোর বিন্দু। নীচে GMVN লজে পর্দাটানা আলোকিত জানলার অন্তরালে উষ্ণ স্বাচ্ছন্দ্যে তৃপ্ত ভ্রামণিক। আটটায় গেট বন্ধ করে মুড়ি, কড়াইশুঁটি, বাদাম পাটালি দিয়ে হালকা ডিনার সারি। ক্রমশ বাড়ে হাওয়ার দাপট। টিনের ছাদের সাথে পাইনের ডালের ঝাপটায় চলে অবোধ্য ধাতব সংলাপ। হলের আলো নিভিয়ে দিয়েছি। রাত বাড়ে। কাচের জানলা দিয়ে ঝকঝকে জোৎস্না এসে লুটোয় মেঝেয়। অন্যত্র ফিকে ছায়া। বেদিতে দীপের মৃদু আলো ও বিচ্ছুরিত জোৎস্নার আলোছায়ায় গদা, গন্ধমাদন হাতে মারুতিনন্দনকে লাগে অপার্থিব। গভীর নির্জনতায় মৃদু অস্বস্তি হলেও সেই পরিবেশে মনুষ্য উপস্থিতির সম্ভাবনাও লাগে অবাঞ্ছিত। দশটা নাগাদ শুয়ে পড়ি। জাগ্ৰত চেতনা ক্রমে লুপ্ত হয়ে আসে প্রাকৃতিক নিয়মে।
সকালে কয়েকজন ITBP’র জওয়ান দৌড়তে বেরিয়ে মন্দিরে এসে হনুমানজীর সামনে প্রণত হন। আমায় ম্যাট গোটাতে দেখে অবাক হয়ে তাকান। তবে কিছু না বলে আবার দৌড়তে চলে যান। সকালের উদ্ভাসিত আলোয় নন্দাদেবী, গরসন, আউলি বুগিয়াল ঝলমল করছে। গতকাল নন্দাদেবীর শরীরের ভাঁজে গোধূলির আলোয় যে হেঁয়ালি দেখেছি, তখন তা উধাও। হয়তো আর কখনও আসা হবে না এখানে। শেষবারের মতো মনের ব্লটিংয়ে সেই দিগন্তবিস্তারি দৃশ্যপট শুষে নামতে থাকি। পথের ধারে বিশাল পাথরে ITBP সৈনিকরা দড়িদড়া লাগিয়ে শৈলারোহণ অভ্যাস করছেন। গতকাল মধ্যাহ্নে দেখা অরণ্যপথের দৃশ্য এখন অন্যরকম লাগছে। তাই তো ছিলাম রাতে, সকালের নরম আলোয় কেমন লাগে চারপাশ দেখতে। বিশাল না বললে হয়তো আসাই হত না এভাবে পায়ে পায়ে আউলি। মনে মনে বিশালকে ধন্যবাদ জানিয়ে জঙ্গুলে পাকদণ্ডী ধরে নামতে থাকি যোশীমঠের দিকে।
অবসরপ্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ভারতে কয়েকটি প্রদেশে নির্মাণ প্রকল্পে কর্মসূত্রে বসবাস ও ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। অল্পখরচে, ব্যাকপ্যাকার শৈলীতে দীর্ঘ একাকী ভ্রমণে স্বচ্ছন্দ। অপেক্ষাকৃত পর্যটকবিরল স্থানে ভ্রমণে বিশেষ আগ্রহী।