শূন্য হিসেব
একটাই মৃত্যু। নিশ্চিত মরণ।
তবু কত ভয়? দ্বিধা সংকোচ,
আশঙ্কা, উদ্বেগ, হাহাকার।
সব কিছু ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হয়।
একলা এখানে আসা, একলাই চলে যেতে হয়।
পড়ে থাকে স্মৃতি। কিছু প্রেম, কিছু ভালবাসা
পৃথিবীর ভূমিতলে একটু পায়ের ছাপ,
নবজাতকের জন্য সামান্য সহজ উপহার।
বাকী সব অর্থহীন। হিসাবের খাতায় ছড়ানো ছেটানো
কত আঁকিবুকি রেখা, আদানপ্রদান।
দেনা-পাওনার কত না মেলা গণিত। সেইসব
পড়ে থাকে। শুরুতে শূন্য ছিল, শূন্যই শেষ হিসেব।
অগাধ শূন্য দেশে অসংখ্য অভ্যাস পড়ে থাকে,
নূতন প্রজন্ম সেইখানে বেঁচে থাকে।
খুঁজে পায় জীবনের শ্বাস।

শাশ্বত শান্তি মিছিল
একটা শরীর দু’টো হাত।
একটা শরীর আর একখানা মাথা।
দু’টো হাত থেকে হয় দশখানা হাত,
কখনও বা বিশ খানা হাত।
এক মাথা থেকে হয় পাঁচ জোড়া মাথা।
সে কোনও দানব চেহারা নাকি ঐশ্বরিক তেজ
বরাভয়, পরাক্রম না কি ক্ষমতার ভাষা।
অথবা অর্থহীন কল্প বিলাসিতা।
আমি এক ছা’পোষা মধ্যবিত্ত। রজ্জু দেখে সর্পভয়ে ভীত,
দশহাত, বিশহাত চেহারা দেখে সন্ত্রস্ত, মাথানত।
হঠাৎ তাকিয়ে দেখি আমারই মাথার পাশে
জড়ো হয় দশ মাথা বিশ মাথা, হাজার হাজার মাথা
সারি সারি মাথা। আমারই শরীরে আচম্বিতে
জুড়ে গেছে এক হাজার দশ হাজার হাত।
ক্ষমতার হাত নয়, দম্ভের মাথা নয়, দুঃখ কান্না কিংবা
ক্রোধ হিংসা নয়, অত্যাচার প্রতিবাদী হাত নয়
একসাথে জড়ো হওয়া একহাজার ছাপোষা মানুষ মাথা।
এক হাজার করতল। নরম সাজানো দীপশিখা।
এক হাজার আলো হাতে, মস্তক উন্নত রেখে
যুগ থেকে যুগান্তর কাল মানবিক গৌরবে
পৃথিবীর পৃষ্ঠে ওরা টান টান হেঁটে চলে।
শাশ্বত সম্ভ্রমে শান্তির বেহালা বাজায়।
রবীন চক্রবর্তী পেশায় ডাক্তার। স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। ইংল্যান্ডে ছিলেন বহুদিন। কর্মসূত্রে প্রায়ই ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, কোরিয়াতে যাতায়াত। হার্ট স্পেশালিষ্ট হিসেবে রবীন চক্রবর্তীর অবস্থান আন্তর্জাতিক স্তরে। দ্য বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রির হেলথ কমিটির অ্যাডভাইসার। ইন্ডিয়ান কলেজ অফ কার্ডিওলজির পাস্ট প্রেসিডেন্ট। দুটি মেডিক্যাল জার্নাল এবং একটি বাংলা সাহিত্য ম্যাগাজিনের সম্পাদক কমিটির সদস্য। গ্লাসগো রয়াল কলেজ অফ ফিজিসিয়ানের আন্তর্জাতিক সদস্য। দিল্লির ন্যাশনাল বোর্ড হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষক। প্রথমজীবনে একটু আধটু সাহিত্য চর্চা করতেন। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্নেহ এবং আশীর্বাদ পেয়েছেন।
মানুষ হিসেবে রবীন চক্রবর্তী বড় অনুভবী। সেই অনুভবের তাগিদে সৃষ্টি হয় তাঁর কবিতা, ছোট গল্প, নিবন্ধ। ভালবাসেন ফুটবল, ক্রিকেট। পড়েন নানারকম বই আর আছে অনুভবী রচনার স্বচ্ছন্দ কলমচর্চা। এছাড়া আছে চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক লেখালেখি। স্ত্রী ক্যান্সার বিশষজ্ঞ। ২০০৩-এ রবীন চক্রবর্তী রাষ্ট্রীয় রত্ন শিরোমণি পুরস্কারে ভূষিত হন এবং পরবর্তী বছর ডাঃ চক্রবর্তী চিকিৎসাশাস্ত্র এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে ম্যান অফ দি ইয়ার স্বীকৃতি লাভ করে স্বর্ণ পদক অর্জন করেন। ২০২১ -এ আইএমএ কার্ডিওলজি এক্সলেন্স অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২২-এ ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লিগ রবীনকে শ্রেষ্ট ক্লিনিকাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সম্প্রতি বং সিনেমাটিক সংগঠন তাঁকে বঙ্গ কৃতিত্ব সম্মানে ভূষিত করেছেন।