ব্লাইন্ডফোল্ড
বসন্তের উদোম হাওয়ায় পাতা উড়ে গেলে
শীতবেলা তড়িঘড়ি শতরঞ্চি গুটিয়ে নিলে;
জেনে যেও, আবার সার্জারি হয়েছে আমার।
একমাত্র বর্ষার সঙ্গেই বোধহয় সম্পর্ক নেই চোখের;
ছাতার বাঁকানো হাত আঁকশি-হয়ে আটকে থাকে কোথাও
গরম ফুলুরির গন্ধে রক্ত-ঝরে টপটপ…
ভরা শ্রাবণ এমনই দুশমন
তার চোখের আলোয় থইথই-করে পথঘাট
অক্ষির-বাহির-দিয়ে জল উপচে উঠে যায় বিপদসীমারও উর্দ্ধে—
আর ভিতরে, শিরা-উপশিরা অতিসূক্ষ্ম জালিকা পার-হয়ে
অনেক গভীরে কুণ্ডের গর্ভে টগবগ-ফুটছে লাভা
কোনওদিন অশ্রু ছিল যারা:
তারপর সময় ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী
দ্রুত বদলে নিয়েছে নিজেদের;
জেনো, চোখের জলও অত সস্তা নয় আর…

ফলোয়ার
লোকাল ট্রেনের চাপচাপ ভিড় শক্ত দুহাতে ছিঁড়ে, দাঙ্গা আর আগুনের
পাশের নির্জন-রাস্তায় সাবধানী জটলাকে পিছনে ফেলে, দৌড়তে-দৌড়তে,
মূর্তি-ভাঙা-অসভ্যতা আর হামলা-হাঙ্গামার পাশ কাটিয়ে, ক্যাম্পাসের
হৈ-হল্লার ঠিক উল্টোমুখী রোগা গলি-ধ’রে, মিছিলের মধ্যে-দিয়ে
‘স্পেস’ ক’রে এগিয়ে যেতে-যেতে, পাবলিক-ইউরিন্যালে পেচ্ছাপ আর
পানের পিক-আঁকা হলুদ দেয়াল টপকে, উঁচু কাচবসানো প্রাচীরে
হাতের কালো রক্ত-রেখে, টুইটারে হিন্দি ছবির হিরোর পিছু নিতে-নিতে,
ফেসবুকে ইমোজি-স্টিকার আর সাড়ে চারহাজার লাইকের আদিখ্যেতা
ডিঙিয়ে, আত্মপরিচয়ের সব নথি, সব দলিল-পরচা কুচিয়ে, দলা-ক’রে
চার লাথে উড়িয়ে, ছুটতে-ছুটতে, হাঁফাতে-হাঁফাতে, থুতু ফেলতে-
ফেলতে, লেজ নাড়াতে-নাড়াতে দুদ্দাড়-ক’রে
এগিয়ে আসছি, হ্যাঁ,
আমার কাছেই
অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৭৬ সালে। এখন রিষড়ার বাসিন্দা। মূলত কবি হলেও ছড়া এবং গদ্যসাহিত্যেও সমান আগ্রহ। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৯৫-তে ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম কবিতার বই ২০০০ সালে। ভারত সরকারের সংস্কৃতি-মন্ত্রকের অধীনে ‘জুনিয়ার ফেলোশিপ’ নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলা কবিতা নিয়ে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত, সম্পাদনাও করেছেন। কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা নয়। পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরস্কার, তুষার রায় সম্মাননা।