এক দিকে যখন বিশ্ব জুড়ে প্রবল আকার ধারণা করেছে উষ্ণায়নের সমস্যা, তখনই সম্ভাব্য খাদ্য সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রসংঘের সদ্য প্রকাশিত একটি রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, অবিলম্বে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে খাদ্য সংকট। সম্ভাব্য ওই বিপর্যয় রুখতে কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে, তার হদিশও দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট।
সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে আর্ন্তজাতিক মহলে। রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ প্যানেল বা আইপিসিসি বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ, অবৈজ্ঞানিক ভাবে জমির ব্যবহার এবং বিপুল পরিমাণে অরণ্য ধ্বংসের জন্য খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে চলেছে পৃথিবী।
সহস্রাধিক পাতার ওই রিপোর্টে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অরণ্য রক্ষার বিষয়ে। বিশেষত, ক্রান্তীয় ও নিরক্ষীয় অরণ্য যে কোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাস বিপুল পরিমাণে বাতাসে মিশছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
অবৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে বলে জানানো হয়েছে এই রিপোর্টে। বৈজ্ঞানিক ও কৃষিবিদেরা জানিয়েছেন, অবৈজ্ঞানিক এবং পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর পদ্ধতিতে কৃষিকাজের জন্য কমে যাচ্ছে মাটির উৎপাদনশীলতা। পাশাপাশি তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ জায়গাতেই জমির সম্পূর্ণ ব্যবহার করা হচ্ছে না। বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ফুড চেন এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ভুল পদ্ধতিতে চাষ করছে এই সংস্থাগুলি। এর ফলে মাটির উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে।
রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে এই মূহুর্তে মোটা হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন প্রায় ২০০ কোটি মানুষ। পাশাপাশি প্রায় ৮২ কোটি মানুষ ভুগছেন অপুষ্টির সমস্যায়। এই পরিস্থিতি আগামী দিনে আরও উদ্বেগজনক হতে চলেছে। রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে, প্রতি দিন বিশ্ব জুড়ে বিপুল পরিমাণ খাবার নষ্ট হয়। সম্ভাব্য খাদ্য সংকট রুখতে অবিলম্বে এই অপচয় বন্ধ করতে হবে।
বেশ কিছু মুখরোচক খাবার তৈরিতে অতিরিক্ত পরিমাণে জল প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট কিছু ফসলের জন্য প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত জমি। রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে, এই ধরনের খাদ্যের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটের হাত থেকে রেহাই মিলবে না।
খাবার নষ্ট বন্ধের জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই প্রচার চালাচ্ছে একাধিক আর্ন্তজাতিক সংস্থা। রাষ্ট্রসংঘও এই নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে আরও এক বার সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। রিপোর্ট অনুযায়ী, খাদ্য সংকটের গ্রাসে প্রথমে তৃতীয় বিশ্বের বা উন্নয়নশীল দেশগুলি পড়বে ঠিকই, কিন্তু প্রথম বিশ্বেরও রেহাই মিলবে না। ফলে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা বাড়বেই।
স্বতন্ত্র‚ চমকপ্রদ ও মন ভালো করা খবর পেশ করার চেষ্টা করি আমরা | প্রতিবেদন বিষয়ে আপনাদের মতামত জানান 'কমেন্ট' বক্সে | আপডেট পেতে ফলো করুন https://www.facebook.com/banglaliveofficial/