কলকাতায় আজকাল আর বড় কিছু হয় না, এমন একটা কথা খুবই শোনা যায়। কথাটা খুব ভুল নয়। তবে পুরোপুরি ঠিকও নয়। কলকাতায় এখনও কিছু কিছু ভাল জিনিস হয়। তেমন একটি ভাল জিনিসই শুরু হবে এই রবিবার, ৪ নভেম্বর। তার নাম বিজ্ঞান সমাগম। এটি একটি বিজ্ঞান বিষয়ক প্রদর্শনী। সায়েন্স সিটিতে চলবে দু’মাস ধরে, বছরের শেষ দিন পর্যন্ত। ২০১৯ সালটা কলকাতার খুব ভাল কেটেছে এমন কথা বলা যাবে না। কিন্তু অন্তত এটুকু বলা যাবে যে, কলকাতা ’১৯ বিজ্ঞানেন সমাপয়েৎ। কম কী?
এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের পারমাণবিক শক্তি মন্ত্রক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক এবং ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়মস। দেশের চারটি শহরে এই প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে। কলকাতা তালিকায় তিন নম্বর। এর আগে মুম্বই ও বেঙ্গালুরুতে এটি হয়ে গেছে। এর পরে হবে দিল্লিতে।
কী থাকবে এই প্রদর্শনীতে? প্রধানত, কয়েকটি বড় বিজ্ঞান প্রকল্পের সারাৎসার। দুনিয়ার নানা গবেষণাগারে রূপায়িত অথবা পরিকল্পিত সেই সব প্রকল্প বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় বড় রকমের সাড়া ফেলেছে। তাদের মধ্যে আছে ইউরোপের সার্ন-এ লার্জ হেড্রন কলাইডার, যেখানে প্রচণ্ড গতিতে পরমাণুর সংঘাত ঘটিয়ে হিগস-বোসন পার্টিকল-এর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে— যার জনপ্রিয় নাম ‘ঈশ্বরকণা’। আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘থার্টি মিটার টেলিস্কোপ’ নিয়ে প্রদর্শনী। হাওয়াইয়ে প্রস্তাবিত এই টেলিস্কোপটি কেবল বড় নয়, অস্বাভাবিক রকমের বড়, যা আগে কেউ কল্পনাও করেনি। আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ উদ্যোগে পরিকল্পিত স্কোয়ার কিলোমিটার অ্যারে নামক অতি শক্তিশালী রেডিয়ো টেলিস্কোপ। হ্যাঁ, ভারতও আছে সেই তালিকায়— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ভারত সরকার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ বা মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ বিষয়ক অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্য পরিকল্পনা করেছেন একটি অত্যাধুনিক প্রকল্পের, তা রূপায়ণের প্রস্তুতি চলছে। তবে কেবল এই প্রকল্পটি নয়, প্রদর্শনীর অন্যান্য প্রকল্পগুলিতেও ভারতের বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের বড় রকমের অবদান ও ভূমিকা আছে। প্রদর্শনীতে সেই ভূমিকার ওপরেও বিশেষ জোর দেওয়া হবে।
সচরাচর বিজ্ঞান প্রদর্শনী বলতে যা বোঝায়, এটি তার থেকে কিছুটা আলাদা। নিছক আবিষ্কারের মহিমা দেখিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করাই এর একমাত্র লক্ষ্য নয়। তার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল দর্শকদের বোঝানো— গবেষণা কোন পথে কী ভাবে এগিয়ে চলেছে, এবং কী তার সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনার বৈজ্ঞানিক দিকটির পাশাপাশি ব্যবহারিক দিকটিও তুলে ধরবেন আয়োজকরা। বিশেষ করে ছাত্র শিক্ষক গবেষকরা জানতে পারবেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ধরনের গবেষণা ও কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে আজকের পৃথিবীতে। এই প্রদর্শনীর অভিমুখ ভবিষ্যতের দিকে। সম্ভাবনার দিকে।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে এখন সেটা খুব জরুরি
 
								 
								 
								 
											 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								