Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বনজ কুসুম: পর্ব – ২

Village food article by Amrita Bhattacharya
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

উত্তরের আকাশে নাকি মেঘের ছায়া পড়েছে। (Village food) সে ছায়া কি কেবলই অপসৃয়মান! আষাঢ় এলো, তবু তো বৃষ্টির দেখা নেই।  মানুষেরা আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে মেঘের কথা ভাবে। ফেলে আসা মেঘলাদিনের কথা ভাবে। হয়তো বা ভাবতে ভাবতে তারা একখণ্ড নরম ঘাসের জাজিম পেরিয়ে ওই দূরে মেঘে ঢাকা প্রান্তরে হারিয়ে যেতে চায়। বিলাতি আমড়ার ডাল ওর কচি পাতার ছায়া দুলিয়ে দিতে চায় রোদে তেতে পুড়ে আসা মানুষের গায়ে মাথায়। ও তো কথা বলতে পারে না মানুষের ভাষায়! নইলে পাটি পেতে বসতে বলত। তালের পাটালি ভেঙে জলের গেলাস এগিয়ে দিত।

আরও পড়ুন: বনজ কুসুম: পর্ব – ১

গাছেদের ভিতরে ভিতরে যেন কবেকার কোন আদিম শুশ্রূষার সুরে বেজেই চলেছে। তাই না ওরা আপাদমস্তক বৃষ্টিতে ভেজে আজও! আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে ওদের রামগিরি না থাক মাটির আশ্রয় আছে। সে আশ্রয়ে আছে জলের আশ্বাস, শিকড়ের প্রবাহ। ওরা কি তার কথা ভেবে ভেবেই এমন বৃষ্টিহীন দিনেও ফুল ফোটায়? মেলে দেয় নরম পাতার করতল? সেসব ছায়াদের কথা ভেবে একেকদিন মাঠের প্রান্তে তেঁতুল গাছেদের ছায়ায় গিয়ে বসি। পেলব হলদে ফুলে ভরে গেছে তেঁতুলের ডাল।

তেঁতুলের ফুল

তারা ওই দূরে জনমানবশূন্য মাঠের দিকে চেয়ে চেয়ে কাকে যেন খুঁজছে। এইসব হলুদ হলুদ তেঁতুলের ফুল যেন কার হারিয়ে যাওয়া নাকফুলের মতো, ভারি বিষন্ন, ভারি একা। এত এত ফুল তবু তারা একা হয় কেমন করে বলুন! মানুষের ভিড়ে একা মানুষটির মতো তারাও কি দুপুরের রোদ্দুরে জলসত্রের পাশটিতে গিয়ে বসতে চায়? জিরেন চায় খানিক? নিমের পাকা পাকা ফলেরা টুপটুপিয়ে খসে পড়ে। পাখিরা এসব দেখছে সেই কবে থেকে। ছেলেপিলের দল, তারাও তো দেখছে!

কিন্তু গাছগাছালির সেসব সঞ্চয়ী শখ বেমানান। তারা তাই মেঘের জলে লীনতাপটুকু ধুয়ে ফেলতে চায় কেবল। আমি তাই হাওয়া অপিসের দেরাজখানা বন্ধ করে রান্নাঘরের পাশটিতে গিয়ে বসি। সেই যেখানে একখানা কামিনী গাছ আছে না! বৃষ্টির সন্ধ্যায় সব পাপড়ি ঝরিয়েও গন্ধে ভরে ওঠে শরীর। সে গন্ধ কি ফুলের? কক্ষনো না, সে গন্ধ বর্ষার।

শৈশব আসলে একেকটি গাছের মতো। ছায়া দেয়, ছায়া খোঁজে। লম্বা একখানা আঁকশি নিয়ে সেই কাক ভোরে মাঠে মাঠে খেজুর পাড়ে ওরা। কোঁচড় ভরে উঠলে আলপথ বেয়ে বাড়ি ফেরে। বাড়ির পাশটিতে গাছেদের ভিড়। ওখানে বসে বসে ওরা এখন গুলি খেলবে, বোতলে বালি ভরবে। ভাতের গন্ধে ওদের বুঝি এখনও মৌতাত লাগেনি! শ্রমের স্বাদ ওরা পায়নি এখনও। না পাক। আম জাম কাঁঠালের বনে তবে কে বলো গরম হাওয়ায় ঘুরে ঘুরে এমন করে বসন্ত দিনের খুশি বিলি করবে! নীল মাছিরা ওদের হাওয়ায় ওড়া  ফ্রকের প্রান্তটিতে বসে বসে কাঁঠালের গন্ধ পাবে অকাতর। এই নিয়েই তো জ্যোষ্টিদিনের অরণ্য সপ্তাহ! আতাগাছের নীচু ডালে কী আশ্চর্য সবুজ ছায়া! মানুষের এই মেঘ কাতরতা কি ওদের স্পর্শ করে না এতটুকু?

পিপুল পাতা

যেখানে ছায়া আরো খানিক গাঢ়, সেই ছায়ায় বেড়ে উঠেছে পিপুলের শরীর। আষাঢ়ের আশ্বাসে ওর লতানো ডাল ছড়িয়ে পড়ছে মাটির পৃথিবীর কোলে। ছায়া দিয়ে ঘেরা পাতার আকাশ ওর। চিলতে রোদে ওর ভয় কী! তবু কে না জানে, মাটির পৃথিবীও আকাশের দিকে চায় জলের প্রত্যাশায়। আম কাঁঠালের বনে বনে নরম হয়ে আসা ফল পাকুড়ের এখন মাটিতে ঝরে পড়বারই মরশুম। এমন দিনে মানুষেরা ভাত খেতে ভুলে যায়। ফলের দিনে বেবুক ছাড়া ভাত খেয়ে পেট ভরায় কে! অনেক দূরে সেই আমাদের খিড়কির পুকুর পেরিয়ে উঠোন পেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে চাইলে একখানা নিভু আঁচের উনোন দেখতে পাই।

কাঁঠাল দানা

কড়াইতে দুধ বসানো আছে। আম কাঁঠালের রস দিয়ে মুড়ি খাবে মানুষেরা। অরণ্য ষষ্ঠীর সকালে তালপাতার পাখায় আম দুব্বা সাজিয়ে ভোরের শান্ত জলে পুকুরে ডুব দেবে। জলের ভিতরে তখন ধুয়ে যাবে এই পার্থিব শরীরের লীনতাপ যত। এই মাটির পৃথিবী, এই ডালপালা মেলা গাছেদের পৃথিবীও মেঘের জলে শরীরের লীনতাপ ধুয়ে নিতে চায় আষাঢ়ের জলে। এটুকুই শুধু। যে মেয়ে নাইতে গিয়ে নাকফুলখানা হারিয়ে ফেলেছে, সে কি তেঁতুলের ফুল দেখে দেখে পার্থিব দুঃখ ভোলে? ভোলে না, ভুলতে পারে না। মানুষের মনই যে অমন। কিন্তু গাছগাছালির সেসব সঞ্চয়ী শখ বেমানান। তারা তাই মেঘের জলে লীনতাপটুকু ধুয়ে ফেলতে চায় কেবল। আমি তাই হাওয়া অপিসের দেরাজখানা বন্ধ করে রান্নাঘরের পাশটিতে গিয়ে বসি। সেই যেখানে একখানা কামিনী গাছ আছে না!

বৃষ্টির সন্ধ্যায় সব পাপড়ি ঝরিয়েও গন্ধে ভরে ওঠে শরীর। সে গন্ধ কি ফুলের? কক্ষনো না, সে গন্ধ বর্ষার।

কাঁঠাল দানার ডাল

কাঁঠাল দানার ডাল

উপকরণ: কাঁঠালের বীজ, জিরে, সর্ষের তেল, তেজপাতা, হলুদ, শুকনো লঙ্কা, ছোটো এলাচ,দারচিনি, কাঁচা লঙ্কা, আদাবাটা(সামান্য)।

প্রণালী: কাঁঠালের বীজের উপরের আবরণটি ফেলে সামান্য নুন দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ দানার উপরের লাল খোসাটি ছাড়িয়ে নিন। এবারে, সেদ্ধ দানা শিলে বেটে নিন। শিলপাটা না থাকলে বড় হামানদিস্তা বা মিক্সি ব্যবহার করুন। বাটা বীজের মণ্ড সামান্য নুন হলুদ জল ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ বসান। কিছুক্ষণ ভালো করে ফুটিয়ে নিন। আলাদা একটি পাত্রে জিরে, তেজপাতা, শুকনোলঙ্কা , সামান্য এলাচ, সামান্য দারচিনি ফোড়ন দিন। এই ফোড়ন ফুটন্ত ডালে ঢেলে দিন। সামান্য আদা দিন। অল্প চিনি দিন। ডালের ঘনত্ব ঠিক মতো এসে গেলে রান্না শেষ করুন।

পিপুল পাতা দিয়ে পুঁটি মাছের ঝোল

পিপুল পাতা দিয়ে পুঁটি মাছের ঝোল

উপকরণ: পুঁটি মাছ (না পেলে মৌরলা বা ছোটো মাছ), পিপুল পাতা, কাঁচা লঙ্কা, রাঁধুনি, সর্ষের তেল, নুন, হলুদ।

প্রণালী: পুঁটি মাছ নুন হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিন। সামান্য তেল থাকবে, এমন অবস্থায় কড়াইয়ে  পরিমাণ মতো নুন, হলুদ, কাঁচালঙ্কা (স্বাদ অনুযায়ী) দিয়ে ফুটতে দিন। ফুটে স্টক তৈরি হয়ে গেলে ভাজা মাছ দিন, পিপুল শাক কুচিয়ে দিন। ঝোল প্রয়োজনের বেশি ফোটানোর দরকার নেই। এবারে অন্য একটি পাত্রে সর্ষের তেলে রাঁধুনি ফোড়ন দিন। ফোড়নের সুঘ্রাণ বেরোলে ঝোলের উপরে ঢেলে চাপা দিন। গরম ভাতে বর্ষার দিনে পিপুলের ঝোল পরিবেশন করুন। অত্যন্ত উপকারী একটি গাছ এই পিপুল।

ছবি সৌজন্য: লেখক, flickr

Author Amrita Bhattacharya

অমৃতা ভট্টাচার্য (জ.১৯৮৪-) শান্তিনিকেতনের জল হাওয়ায় বড়ো হয়েছেন। পাঠভবনে তাঁর পড়াশোনা। পরে বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা উপন্যাসে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে গবেষণা করেছেন। পড়িয়েছেন জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে এবং পরে চারুচন্দ্র কলেজে। বর্তমানে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের দেশজ রান্না নিয়ে কাজ করছেন। স্বপ্ন দেখেন পুঁজির প্রতাপের বাইরে অন্যরকম জীবনের, খানিকটা যাপনও করেন তা। যে হাতে শব্দ বোনেন সেই হাতেই বোনেন ধান, ফলান সব্‌জি। দেশ-বিদেশের নানা-মানুষের অন্যরকম জীবন দেখতে ভালোবাসেন। তাঁর লেখা স্মৃতিগ্রন্থ ‘বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ ’ এবং 'রেখেছি পত্রপুটে' পাঠকের সুসমাদর পেয়েছে।

Picture of অমৃতা ভট্টাচার্য

অমৃতা ভট্টাচার্য

অমৃতা ভট্টাচার্য (জ.১৯৮৪-) শান্তিনিকেতনের জল হাওয়ায় বড়ো হয়েছেন। পাঠভবনে তাঁর পড়াশোনা। পরে বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা উপন্যাসে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে গবেষণা করেছেন। পড়িয়েছেন জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে এবং পরে চারুচন্দ্র কলেজে। বর্তমানে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের দেশজ রান্না নিয়ে কাজ করছেন। স্বপ্ন দেখেন পুঁজির প্রতাপের বাইরে অন্যরকম জীবনের, খানিকটা যাপনও করেন তা। যে হাতে শব্দ বোনেন সেই হাতেই বোনেন ধান, ফলান সব্‌জি। দেশ-বিদেশের নানা-মানুষের অন্যরকম জীবন দেখতে ভালোবাসেন। তাঁর লেখা স্মৃতিগ্রন্থ ‘বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ ’ এবং 'রেখেছি পত্রপুটে' পাঠকের সুসমাদর পেয়েছে।
Picture of অমৃতা ভট্টাচার্য

অমৃতা ভট্টাচার্য

অমৃতা ভট্টাচার্য (জ.১৯৮৪-) শান্তিনিকেতনের জল হাওয়ায় বড়ো হয়েছেন। পাঠভবনে তাঁর পড়াশোনা। পরে বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা উপন্যাসে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে গবেষণা করেছেন। পড়িয়েছেন জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে এবং পরে চারুচন্দ্র কলেজে। বর্তমানে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের দেশজ রান্না নিয়ে কাজ করছেন। স্বপ্ন দেখেন পুঁজির প্রতাপের বাইরে অন্যরকম জীবনের, খানিকটা যাপনও করেন তা। যে হাতে শব্দ বোনেন সেই হাতেই বোনেন ধান, ফলান সব্‌জি। দেশ-বিদেশের নানা-মানুষের অন্যরকম জীবন দেখতে ভালোবাসেন। তাঁর লেখা স্মৃতিগ্রন্থ ‘বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ ’ এবং 'রেখেছি পত্রপুটে' পাঠকের সুসমাদর পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস