সেই বড় কাঠের বাক্সটাকে মনে পড়ে? যার সামনের দিকের ডালাটা দু’দিকে সরিয়ে দিলে মাঝে একটা কাচের পর্দা বেরিয়ে পড়ত? তারপর এত্তবড় বড় গোল গোল নব ঘুরিয়ে দিলে প্রথমে অস্পষ্ট ঝিরঝিরে, তারপর ক্রমে স্পষ্ট হওয়া সাদা কালো চলন্ত ছবি দেখা যেত? ছাদের এককোণে টাঙানো থাকত একখানা এলুমিনিয়মের কাঠির আগায় লাগানো আরও কয়েকটা আড়াআড়ি কাঠি? অ্যান্টেনা নামক সেই বিলুপ্তপ্রায় জিনিসটির উপর মহানন্দে বসে দোল খেত কাক শালিক চড়ুইয়ের দল!
চ্যানেল বদলানো ব্যাপারটা আবিষ্কারই হয়নি কারণ শিবরাত্তিরের সলতে একটি মাত্র চ্যানেল। তাতে সকাল দুপুর বিকেল বাংলা অনুষ্ঠান আর রাত হলে দিল্লি থেকে সরাসরি সম্প্রচার হিন্দিতে। হ্যাঁ, সেটাকেই সকলে বলত টেলিভিশন। আরও কদিন পর ছোট করে টিভি বলা শুরু হল। তারও কিছুদিন পর সাদাকালো পর্দায় এল রঙের ছোপ। মহল্লার একটি বা দু’টি রঙিন টিভিকে কেন্দ্র করে জমে উঠত পাড়ার মা-মাসিমা-জেঠিমা-কাকিমাদের সন্ধের আড্ডা। কোনওদিন উত্তম সুচিত্রা তো কোনওদিন রাজ কাপুর-নার্গিস… বিনোদনের আগাপাশতলা।
২১ নভেম্বর সেই টেলিভিশনকে উদযাপনের দিন। বিশ্ব টেলিভিশন দিবস। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ১৯৯৬ সাল থেকে এই দিনটিকে মান্যতা দিয়েছে। কারণ ওই বছরে এই বিশেষ দিনটিতেই শুরু হয়েছিল বিশ্ব টেলিভিশন ফোরামের অনুষ্ঠান। সেই থেকেই উদযাপনের সূচনা। এই দিনটিতে সম্প্রচার মাধ্যমের গুরুত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশ্বায়নে তার সদর্থক ভূমিকা নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানা আলোচনা সভা-অনুষ্ঠান ইত্যাদি হয়। সম্প্রচার মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে নানা বিষয়ে সচেতনতা প্রচার করা যায় প্রত্যন্ত থেকে প্রত্যন্ততম এলাকায়, উঠে আসে সেই বিষয়টিও।
কিন্তু এই সব কিছুর সঙ্গে সঙ্গে নতুন শতাব্দির দ্বিতীয় দশকে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে আরেকটি প্রশ্নও। সত্যিই কি এখনও সেই প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে পেরেছে টেলিভিশন? আজ, যখন মোবাইলের সাড়ে ছ’ইঞ্চি স্ক্রিনেই ঢুকে পড়েছে গোটা দুনিয়া, বিনোদনের সমস্ত উপকরণ যখন হাতের তালুতে মজুত, তখন সত্যিই কি টেলিভিশনের প্রয়োজনীয়তা আর বজায় আছে? আপাতদৃষ্টিতে না মনে হলেও রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, এখনও, এই ২০১৯-এও বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিও কনজাম্পশনের উৎস হচ্ছে টেলিভিশন। এবং তার সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৭-তে যেখানে সারা পৃথিবীতে টেলিভিশনওলা পরিবারের সংখ্যা ছিল ১.৬৩ মিলিয়ন, ২০২৩ এর মধ্যে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াবে ১.৭৪ বিলিয়নে। তাদের মতে, জনমত গড়ে তোলাই হোক বা বিশ্ব-রাজনীতিতে প্রভাব খাটানো… আজও টেলিভিশন বিনে গতি নেই। কাজেই বিশ্ব টেলিভিশন দিবসে আরও একবার নতুন করে তার ভূমিকার কথা আমাদের অবশ্য-স্মরণীয়!
লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!