পৃথিবীর আদিমতম পেশা। চলছে। চলবে। তাকে ‘জীবীকা’ হিসেবে স্বীকৃত করতে এখনও সামাজিক আর আইনি লড়াই লড়ছেন ওঁরা। ওঁরা, যাঁরা রোজ রাতে শরীর বিক্রি করে ভাতের থালা ভরান, সন্তানের মুখে জল-মেশানো দুধের গেলাস ধরেন। নিয়মিত পুলিশি হাজিরার হাসিমুখ মোকাবিলা, ঘুষ দিয়ে কিম্বা বিনে পয়সায় শান্তিরক্ষকদের ফূর্তির ব্যবস্থা করে দিয়ে নিজেদের পেশা চালানোর লাইসেন্সটুকু আদায় করা… এসব ওঁদের রোজকার কাজের অঙ্গ।
পাশাপাশি রয়েছে আরও এক দল। যারা দিনে ওঁদের দেখলে নাক কুঁচকোয়, হাতের ছোঁয়া দূরে ঠেলে। আর রাতে সেই ছোঁয়া না-হলে তাদের মৌতাত জমে না। ওঁদের শরীর চিবিয়ে নিংড়ে দেহরস পান না-করলে তাদের রাতের ঘুম নিশ্ছিদ্র হয় না। এরাই আদতে টিঁকিয়ে রেখেছে এই মাংশাসি পেশা। দেহপসারিনীদের ঘৃণাবস্তু করে তুলে, প্রান্তিকতায় ঠেলে দিয়ে এরা সগর্বে বাস করে সমাজের মূলস্রোতে। আর রাত হলেই মূলস্রোতের খোলস ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিনে-অচ্ছুত শরীরগুলোর ওপর। এরা কি শাস্তিযোগ্য নয়? এদের শাস্তি কী?
সম্প্রতি এই মৌলিক প্রশ্নের জবাব অংশত মিলেছে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের একটি মামলার রায়ে। বেশ্যালয়ে যাওয়ার অপরাধে তিন ব্যক্তিকে তিন বছরের জেল হাজতের সাজা শোনানো হয়েছে। অবৈধ পাচার প্রতিরোধ আইন (১৯৫৬)-এর পাঁচের এক (ডি) ধারায় বীরেন সামন্ত, খোকন মণ্ডল এবং বাপি দাস নামে ওই তিন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। বেশ্যালয়ের মালিক শেখ পচা এবং ম্যানেজার সহদেব মাইতিকেও দশ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে জরিমানা। বেশ্যালয়ের বাকি পাঁচ কর্মীর কপালে জুটেছে জরিমানা-সহ সাত বছরের কারাদণ্ড।
কিন্তু কিসের উপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত? কী বলা আছে পাচার প্রতিরোধ আইনের ওই ধারায়? বলা আছে, যে কোনও ব্যক্তিকে দেহব্যবসায় প্ররোচনা দেওয়া বা দেহব্যবসার কারণ হওয়া আইনত দণ্ডনীয়। এই ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করেই এই নজিরবিহীন রায় ঘোষণা করেছেন হলদিয়া আদালতের বিচারকেরা। মামলার সরকারি কৌঁশুলি দিলীপ শী জানান, ২০০৯ সালে সিআইডি হলদিয়ার একটি গণিকালয়ে হানা দিয়ে ১৫ জনকে উদ্ধার করে, যার মধ্যে ১২ জন নাবালিকা। অধিকাংশই নেপালের বাসিন্দা। এদের মধ্যে দু’জন আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ দেয়। ২০১৪ সালে এদের সকলকে নেপালের একটি হোমে ফেরত পাঠানো হয়। সেই মামলারই নিষ্পত্তি হল এতদিনে।
পাচার-বিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা এই রায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং বলছেন, সম্ভবত গোটা দেশে এই ধরনের রায় এই প্রথম। তাঁদের দাবি, এই রায় নাবালিকাদের দেহ ব্যবসায় নামানোর অতি প্রাচীন প্রথার মূলোচ্ছেদের প্রথম ধাপ হিসেবে কাজ করবে। ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন (IJM) নামে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যারা মূলত নারী ও শিশু পাচার নিয়ে কাজ করে, তার ডিরেক্টর সাজি ফিলিপের কথায়, “আশা রাখি এই রায় শুধু ভারতের নয়, সারা দুনিয়ার আইনরক্ষদের চোখ খুলে দেবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের মামলায় এই রায়কে নজির হিসেবে তুলে ধরলে ন্যায়বিচার পেতে সুবিধে হবে।“ তিনি আরও জানান, এর আগে ভারতের একাধিক হাইকোর্ট (কর্ণাটক, গুজরাত ইত্যাদি) বেশ্যালয়ে গমনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে চায়নি। সেখানকার বিচারকেরা স্পষ্ট বলেছেন, যদিও গণিকালয়ের খদ্দেররা দেহব্যবসায় প্রত্যক্ষ ভাবেই প্ররোচনা দেন, তথাপি অবৈধ পাচার প্রতিরোধ আইনের ৩,৪, ৫ এবং ৭ ধারায় যে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে তা এদের শাস্তি দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। IJM-এর কর্মীদের দাবি, হলদিয়ার এই রায় অন্যান্য হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করার রাস্তা সুগম করে দিল।
লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!