জঙ্গলের পাঠশালা
অচেনা ঝরনার কাছে অবহেলে হেঁটে যাওয়া খুব সহজ নয়। মাতাল জঙ্গুলে গন্ধ তীব্র এক পিছুডাক ছড়িয়ে রাখে। ব্যস্ত সড়কপথ রহস্য রাখে না। সে বড় সোজাসাপটা খোলামেলা, তাই তাকে পড়ে নেওয়া সহজ। কিন্তু ইতস্তত সবুজ আলোয়ান গায়ে জঙ্গুলে সুঁড়িপথে হঠাৎ আ্যালার্ম কল, কিম্বা গাড়ি বিগড়ে গিয়ে বিশাল ঘাসের জমিতে চিতল হরিণের সঙ্গে অনর্গল বৃষ্টিভেজা আলাভোলা সবুজের কাহিনি প্রলম্বিত রেশ রাখে।
সেই কোন ছোটবেলা থেকে বিভুতিভূষণ, বুদ্ধদেব গুহর জঙ্গলময় পাঠশালায় আমার নাম লেখানো। ওঁদের হাত ধরে আচমকা জঙ্গল সফর হাতেকলমে শিক্ষা বৈ তো নয়!! নিঃস্বার্থভাবে শুধুমাত্র জঙ্গল আর বন্যপ্রাণি ভালবেসে তাদেরই রাজপাটে ক’টাদিন কাটানো। আমাদের যত রকমারি জঙ্গুলে বন্ধু আছে, যারা বেড়ানো বলতে কেবল জঙ্গলই বোঝে, তাদেরও চমক দেবার জন্যই এই অরণ্য বি.আর.হিলস-কে ঘিরেই এবারকার কিসসা। প্রথমে উড়ালপথে ব্যাঙ্গালুরু, তারপর গাড়িতে মাইসোর হয়ে ১৭৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দিতে গনগনে গরমের মধ্যে দিয়ে ধুলো খেতে খেতে যাচ্ছিলাম। আমাদের ড্রাইভার সাহেব ধবধবে সাদা উর্দির ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছেন, অতি সজ্জন মানুষ। তবে হালকা তালকানা আছেন বলে রাস্তা গুলিয়ে গাড়ি এপাশে-ওপাশে নাচিয়ে খেতের পাড় ধরে ধুলো ওড়াতে ওড়াতে একেবারে ডাঁই করা আখের সামনে এসে দাঁড় করিয়েছেন। সেই সুযোগে আখ চাখাও হল, রাস্তার হদিসও পাওয়া গেল।
গরমকাল। জানলা দিয়ে ভারী, শুকনো লু বইছে। মনের সুখে দু’পাত্তর মিষ্টি আখের রস পেটে পড়া মাত্রই দু’চোখে দিবানিদ্রা একেবারে ঝুপ করে নেমে এল। সেই সুখনিদ্রা ভাঙতে ভাঙতে রাস্তার দু‘ধারে কাবেরী নদীর জল নিয়ে আদালতের রায়ে অখুশি মানুষের মিছিল টপকে, রুক্ষ সবুজ প্রকৃতিকে ধুলো ধোঁয়া মাখিয়ে বিলিগিরিরঙ্গনাবেট্টা (বি.আর.হিলস) পাহাড়ের মধ্যে ঢুকে গেলাম। এখানে বলা প্রয়োজন, নদী কাবেরী নয়। আমাদের গন্তব্য কাবেরীরই এক শাখানদী কাব্যময়ী কাবিনীর আশ্রয়জাত অরণ্য। আমরা হলাম গিয়ে শহুরে লোক, সামাজিক গৃহপালিত। জঙ্গলের বর্গীয় জ নিয়ে যাদের কোনও ধারণাই নেই, তারাও পরিষ্কার বুঝতে পারলাম কী করে একটা সটান রাস্তা ফস করে জঙ্গল হয়ে গেল।

ডাইনে বাঁয়ে যতদূর চোখ যায় পাহাড়ের ওপর থেকে নীচ অবধি ঘন সবুজের বল্লরী ওম। বেলাশেষের সোনালি রোদ জরির নকশা বুনছে ওই শ্যামল অঙ্গবাসে। বাঁ দিকের নদীর ভগ্নাংশে একটা বাইসন জল খাচ্ছে। তার একটু বিলম্বিত ধ্যাবড়ানো ছায়া পড়েছে জলে। ওই তো ফরেস্ট লজে ঢোকার রাস্তায় দুটো ময়ূর কী সুন্দর র্যাম্পে পিকক ওয়াক করছে! ময়ূর থেকে চোখ সরাতে না সরাতেই ঝোপের আড়াল থেকে কয়েকটা স্পটেড ডিয়ার বেরিয়ে বিদ্যুৎবেগে ভ্যানিশ হয়ে গেল। আমি বিড়বিড় করে বললাম ‘ব্যাম্বি।‘ ড্রাইভারজি সবেগে উত্তর দিলেন ‘বাম্বু নহি ম্যাডাম, ডিয়র হ্যায় ডিয়র!”
আমি যামিনী তুমি শশী হে…
ঘোঁৎ! যেদিকে তাকাচ্ছি সে দিকেই অজস্র দাঁতাল— বুনো শুয়োর আজগুবি সব শব্দ করতে করতে ঘোরাঘুরি করছে। সান্ধ্যকালীন চায়ের আসরে এসেছি গোলঘরে। কিছু শুয়োরের চেহারা দেখলেই মনে হয় তাদের জন্মই হয়েছে গৃহস্বামীর টেবিলে সসেজিত অবস্থায় পৌঁছনোর জন্য। কিন্তু এখানে যাদের দেখছি তাদের শরীর রীতিমতো ব্যায়াম করা। গায়ের ওপর ছাই ছাই রঙের নিপুণ কেশ বিন্যাস। ডাইনিং কাম গোলঘরটাও ঠিক ঘর নয়। আকাশের নীচে নৈশভোজ করার জন্য একটা খুঁটির ওপর চারদিকে কাঠামো খাড়া করে পাখি আর বাঁদরের উৎপাত থেকে বাঁচার জন্য তার মাথার ওপর লোহার জালের শক্ত একটা নেট দেওয়া। এ বাদে গৃহপালিত আর বন্যজন্তুর জন্য অন্তত নৈশভোজের সময়টুকুতে আর বিশেষ কোনও বেড়া নেই।
আপাতত ভরা জঙ্গলে গোলঘরের একধারে কাঠের ওপর কাঠ চাপিয়ে বনফায়ারের ব্যাবস্থা হয়েছে। কফি ফলের গন্ধে এখানে সন্ধ্যে নামছে পা টিপে টিপে। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা একটা হালকা ভেজা ঠান্ডা বাতাস রকিং চেয়ারে আধশোয়া আমাকে জঙ্গুল ঋজুদা, পৃথু, উত্তরবঙ্গের অর্জুনের কথা মনে করাচ্ছে। জঙ্গলের মহাকাব্যে স্বয়ং বুদ্ধদেব গুহ মনের গভীরে বাসা বেঁধে রয়েছেন। আসলে আমি তো ওঁর চরিত্রদের সঙ্গেই জঙ্গলে আসতে চাই বারবার। কিন্তু বনের পরে বন, তারও ওপারের বন অন্য কথামালা সাজায়।

দূরে গেস্টহাউস থেকে টেবিল টেনিস খেলার শব্দ ভেসে আসছে। মৃদু হলুদ আলোয় ঠান্ডা বিয়ারের বোতল বুদবুদ কাটছে। গোলঘরের পেছনে ঝিঁঝিঁর ডাক, মাথার ওপরকার নীলাভ চাঁদ আকাশে বিরামহীন যাত্রাপথে লক্ষ তারার চুমকি দিয়ে ক্যানভাস এঁকেছে। অন্ধকারের প্রাগৈতিহাসিক গন্ধ আমায় আমূল নাড়িয়ে প্রাকৃতিক রোম্যান্টিকতার অতলের শেষ ধাপে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মনের কোনও আগল নেই, শাসন নেই। গোলঘর থেকে একটা কাঁচা রাস্তা এঁকে বেঁকে আমাদের লগহাটের দিকে চলে গেছে। একটু গা ছমছম করা রাস্তার দু‘ধারের গাছে গাছে ঝোলানো নিবু নিবু লণ্ঠনের আলো পথ দেখাচ্ছে। নৈশভোজ আর প্রকৃতির সঙ্গে তুমুল রোম্যান্স শেষ করে ঘোর বাস্তবের পথ ধরে লগহাটের দিকে হাঁটা লাগালাম।

এই একটুখানি সিম্পল রাস্তার মধ্যে কোনও অ্যাডভেঞ্চার থাকবে না, এমন একটা ধারণা নিয়েই অন্ধকার খাড়াই ধরে কিছুটা গিয়েছি মাত্র, কেমন একটা খসমস শব্দ শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম। অন্ধকারে চোখ ধাতস্থ হতে দেখি এক ব্যাটা দাঁতাল তার প্রাইভেট প্রপার্টি রক্ষা করার ভঙ্গিতে তেরিয়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেগতিক দেখে পশ্চাদপসারণ করতে যাচ্ছি, দেখি জঙ্গল লজের একটা লোক ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছে। স্পষ্ট বাংলায় বললেন, “আরে আরে আপনারা করেন কী, এই অন্ধকারে এমন করে যেতে আছে? বুনো শুয়োর খেপে গেলে বাঘ অবধি মেরে টাগ করে দেয়। আপনারা তো কোন ছার!” আমাদের বিপরীতমুখী সমস্বরের পুলকিত জিজ্ঞাসা, “আপনি বাঙালি! বাঃ!”
ফরেস্ট মডেলচন্দ্র
আমাদের মতো টুরিস্টদের মনে মনেও একটা চোরা কমপিটিশন থাকে, যা অস্বীকার করার উপায় নেই। এখানে এসে ওইটা দেখতে হবে, ওমুকটা বাদ গেল। ইশ!! কী করে মিসেস দেবরায় কে বলব সারা দিনমান চক্কর কেটেও আস্ত বাঘ কেন, একটু হলুদ কুচিও দেখতে পাইনি। তাই স্বভাবতই ওই রিপুদোষেই আমরাও বাঘ দর্শনের জন্য হন্যে হয়ে গেলাম। সেই ভোরবেলার জঙ্গল সাইটিংয়ে শুরু থেকে একগাদা সম্বর হরিণ, জায়েন্ট স্কুইরেল, বার্কিং ডিয়ার, লেঙ্গুর, হাতির পাল, ময়ূর, এক লক্ষ পাখি দেখে টেখে একদম ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে গোলঘরে চা আর টা খাচ্ছি। কিন্তু মন বেচারা খুব ঝুলে আছে। “তোমার দেখা নাই রে মামা তোমার দেখা নাই!”
হঠাৎ এক নববিবাহিত যুগলের আবির্ভাব। হাই হ্যালো ইত্যাদি কুশল বিনিময়ের পরে কী কী জন্তু দেখলেন, সেই অমোঘ প্রশ্ন করলেন তারা। আমাদের উত্তর শুনে চোখ কপালে তুলে বললেন ‘সেকী, আপনারা এখনও বাঘ দেখেননি?” আমি আশ্চর্য হবার সময়টুকুও পেলাম না! কী বলে এরা? বাঘ কি শপিং মলের জিনিস? ইচ্ছে হলেই দেখা যায়, দরদাম করা যায়! ওঁরা এমন ভাব করলেন যেন মনে হল চিড়িয়াখানা থেকে বাঘ দেখে ফিরব। পরে হাতড়ে পাতড়ে জানা গেল নববর কার্তিকের বাড়ি “শিকারি ফ্যামিলি।” তাই তাঁদের এত বোলবোলাও আর কী! তবু মনটা একটু খিঁচড়ে গেল। যাইহোক, বাইরে বেরিয়েই দেখি বোর্ডে লেখা, বিকেল বেলাতেই আর একটা টাইগার সাইটিং হবে। বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না।

এবার অন্য বুদ্ধি পাকড়াও করলাম। লজের সব স্টাফদের পুছতাছ করে জানা গেল, এখানে বাঘ দেখানোর দারুণ লোক আছেন “থাপা সাহেব।” এই থাপা সাহেবের সঙ্গে বড়ে বেড়ালদের দোস্তি কিঞ্চিৎ বেশি। লজের পেছন দিকটায় ওঁর কোয়ার্টার। গুটি গুটি পায়ে হাজির হয়ে নক করলাম। উনি “কৌন হ্যায়” বলে বেরিয়ে এলেন। বেশ শক্তপোক্ত চেহারা থাপা সাহেবের। তবে নাকের নীচে গোঁফজোড়ার বিস্তার দেখে মনে হল এই ভদ্রলোককে দেখে বাঘও বোধ হয় মুচকি হাসে! “গোঁফের আমি গোঁফের তুমি গোঁফ দিয়ে যায় চেনা” এই বাংলা পদ্যটা ওঁর জানা নেই বলে একটু দুঃখ হল।
মহিলা টুরিস্ট হিসেবে অ্যাডভান্টেজ নিয়ে আমিও কান এঁটো করা হাসি দিয়ে সোজা ওঁর সঙ্গে হ্যান্ডশেক। ওই শেক অবস্থাতেই আবদারটি পেড়ে ফেললাম। একটু ন্যাকা গলায় বললাম ওঁর সঙ্গে বাঘ দেখতে যেতে চাই। উনি রসিক মানুষ, ধরে ফেললেন। পরে শুনলাম আমার আবদারটা নাকি অনেকটা প্রথম দর্শনেই ‘আপনার সঙ্গে কবাডি খেলতে যাব’ গোত্রের হয়েছিল। কারণ খোলা জঙ্গলে ফেস টু ফেস বাঘ দেখা তো সহজ কম্ম নয়!! প্রথম জঙ্গল ভেঞ্চারে যদি একটা আস্ত বাঘের দেখা কপালে থাকে তবে তার কেতাই আলাদা। যাইহোক, নিন্দুকদের কথায় কান দিতে নেই। থাপা সাহেব জানালেন, বয়সজনিত কারণে উনি সাইটিং করান না এখন। তবু আমাদের অনুরোধের পর উনিও শর্ত দিলেন, বাঘ যেখানে থাকে সেখানে আর কেউ থাকে না। হয় বাঘ দেখতে পাবেন নইলে কিছুই পাবেন না— রাজি? যা বোঝার বুঝে গেলাম। তিনি দেখা না দিলে সম্বর বা বাইসন কেন, একটা বেঙুরেরও দেখা পাব না। তবে খেলতে যখন নেমেছি ময়দান ছেড়ে ভাগব না।

অবশেষে রওনা দিলাম দুগ্গা বলে। ওঁর গাড়ি প্রথমে কিছুটা গিয়েই পিচের রাস্তা ছেড়ে কাদারাস্তায় নামল, তারপর ঘাসের রাস্তায়। শেষে রাস্তা বলে আর কিছুই রইল না। থাপা সাহেব দুঃখ করলেন, আাগে উনি গাড়ি নিয়ে বেরলেই গোটা দুই বাঘ অন্তত দেখা দেবার সংকল্প নিয়ে চলে আসত। আর এখন— ছোঃ! এসব শুনতে শুনতে বহুদূরে চলে এসেছি। গায়ের ওপর সূক্ষ্ম ধুলোর একটা আস্তরণ তৈরি হয়েছে। হঠাৎ থাপা সাহেব জিপটা থামিয়ে মুখের ওপর আঙুল রেখে বললেন “শশশ!” কোথাও কোনও শব্দ নেই, বাঘ দেখে বাঁদরের পালিয়ে যাওয়া নেই, শ্বাপদের গন্ধে জঙ্গলের মধ্যে থেকে হরিণের ডাক নেই— সেই অসম্ভব নিস্তব্ধতার মধ্যে শুধু চোখে একটা বাইনোকুলার লাগিয়ে থাপাজির আঙুল ফলো করলাম— বাঘ!
জলার ঠিক উল্টোদিকে সে রাজাগজার মতো এলিয়ে পড়ে আছে এক কাত হয়ে। দেখে মনে হচ্ছে যেন সামনের ঘাসের জমিতে পায়চারি করতে বের হবে, তাই রিল্যাক্সড মুড। থাপা সাহেব গাড়িটা আরও একটু এগিয়ে নিলেন ইঞ্জিন বন্ধ করে। মিনিট পাঁচেক দমবন্ধ অবস্থায় কেটে গেল (বলার সময় অবশ্য বাড়িয়ে মিনিট পনেরো বলেছিলাম)— ব্যাটা হঠাৎ বোধ করি মানুষের গন্ধ পেয়ে গোল করে ঘুরে উঠে দাঁড়াল। বাইনোকুলার ছাড়া খালি চোখে ভাল দেখা যাচ্ছে বাঘমামাকে। মনে হল জলা থাকলেও যদি মামা হঠাৎ ছুটতে শুরু করে তা হলে এক কাণ্ড হবে। ফরেস্ট মডেল বাঘারুচন্দ্র সটান আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর একটুও পাত্তা না দিয়ে দুলকি চালে গাছপালার মধ্যে ঢুকে গেল। গেল তো গেল, আর এল না। থাপাজির মুখ উত্তেজনায় লাল হয়ে গেছে, আমার স্পন্ডিলাইটিসওলা কাঁধে এক চাপড় মেরে বললেন— “ক্যায়া বোলা থা না, হামনে,ক্যায়া?”
সে চাপড়ের বোঝা এখনও কাঁধ থেকে নামাতে পারিনি। সেই দিন ফিরে এসে আমাদের নামের পাশে বোর্ডে টাইগার সাইটিং-এর ঢ্যারা পড়ল। আমরা বড় মুখ করে রাজা উজির মারলাম। সেই শিকারি কাপল বেরিয়ে এসে বলল ” আমরা নাকি দারুণ লাকি!” সেই রাতের ডিনারের আগে এক পশলা ব্লু লেগুন মাতিয়ে দিল। মনটা পুরো ফুরফুরে বিন্দাস।

পরদিন লগহাট ছেড়ে নেমে আসছি, হ্যামকে শেষ বার চড়তে গিয়েও হাত ছেড়ে আসছে। কাবিনী যাবার পথে বরাদ্দ দেড়দিনে এই অরণ্য প্রথম পাঠে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। ক্রমাগত পাহাড় ডিঙোনো মনকে আরণ্যক নির্জনতায় ভিজিয়ে সতেজ করে দিয়েছে। কটেজের রাস্তার দিশারি লণ্ঠনগুলো খুলে নিয়ে গেছে কেউ। লগহাটের ঠিক সামনেই একটা বেগুনি ফুলের গাছ। ঝেঁপে ফুল হয়ে আছে। এসে থেকে ভাবছি ভাল করে দেখব, ছোঁব, কথা বলব! তা আর হয়ে উঠল কই! ওই বেগুনি ফুলের নীচে আমাদের সেই সাদা উর্দি পরা তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। ফরেস্টবাংলোর লাইব্রেরি থেকে সেলিম আলির বইটা নিয়েছিলাম “দা ফল অফ আ স্প্যারো।” সেটা রাখতে গোলঘরে গিয়ে দেখি সকালের সাফারির জিপটা জাস্ট বেরিয়ে গেল।
টেবিল থেকে এখনও কড়া দুধেলা কফির গন্ধ মুছে যায়নি। টেনিস টেবিলের ওপর কে যেন একটা ছাতা রেখে গেছে! কী মনে হতে ওদের স্টোর থেকে একটা জ্যাকেট কিনলাম। খয়েরির ওপর সাদা সুতো দিয়ে “জঙ্গল রির্সট” লেখা। মনটা খারাপ করব না ভেবেও হয়ে যায় কেমন যেন! সবাই আমরা এভাবেই একটা নতুন জায়গা ছেড়ে আর একটা নতুন পাওয়ার আশাতে যাই। গাড়িতে ওঠার সময় লজের লোকজন বলল, এ তো বি.আর.হিলস দেখলেন, কাবিনী যান কাবিনী। বললাম, কাবিনীই তো যাব, এইটা তো কাবিনীর বাফার এরিয়া— বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ। গাড়িতে উঠেই বলি “ড্রাইভার জি কাবিনী চলিয়ে।”
সব ছবি লেখকের তোলা
মেঘনা রায় সবুজ শহর কল্যাণীর বাসিন্দা। ২০০৩ সালে পিন্ডারি হিমবাহ দিয়ে ট্রেকিংয়ের হাতেখড়ি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ ছাড়াও বেশ কিছু বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা রয়েছে সঞ্চয়ের ঝুলিতে। জীবনের প্রথম প্যাশন নাচ এবং দ্বিতীয় ভ্রমণ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। ২০১৭ সালে কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে প্রথম কাব্যগ্রন্থ"অমলতাস।"
One Response
ধন্যবাদ। লেখাটি অসাধারণ।