Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

কবিতার সঙ্গে বসবাস: লিটল ম্যাগ থেকে…

জয় গোস্বামী

অক্টোবর ১৭, ২০২২

Abstration in poetry
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

কবিতার সঙ্গে বসবাস – কবিতাসত্য, কবিতাচিন্তা
কবিতার সঙ্গে বসবাস – জয়দীপ রাউতের কবিতা- ১
কবিতার সঙ্গে বসবাস – জয়দীপ রাউতের কবিতা – শেষ পর্ব
কবিতার সঙ্গে বসবাস – লিটল ম্যাগাজিন থেকে
কবিতার সঙ্গে বসবাস – বর্ণালী কোলের কবিতা

এর আগে যে-কবির রচনা নিয়ে কথা বলেছি, তুষার বিশ্বাস, আমার ধারণা, একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের দ্বিতীয় বছরে তিনি প্রথম তাঁর কবিতা প্রকাশ করলেন। সে-কারণে তুষার বিশ্বাসকে আমরা দ্বিতীয় দশকের কবি বলে অভিহিত করতে পারি। এর আগে, আমি এই ‘কবিতার সঙ্গে বসবাস’ নামক কলামে প্রধানত একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে যাঁরা লিখতে এসেছেন তাঁদের কবিতা নিয়েই দু’-চার কথা বলার চেষ্টা চালিয়েছি। এখন আবারো ফিরে যাব প্রথম দশকের এক কবির রচনার কাছে। এই কবির নাম সুমন ঘোষ। এঁর কবিতা আমি গত এগারো বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত পড়ছি– কিন্তু এঁর কোনও পূর্ণাঙ্গ কাব্যগ্রন্থ এখনো খুঁজে পাইনি, তা সম্ভবত আমারই সন্ধানের দুর্বলতা।  

খুবই সম্প্রতি সুমন ঘোষের লেখায় লক্ষণীয় বদল চোখে পড়েছে। ভাষার বদল। তিনি ছন্দ ও মিল ব্যবহারে পটু তার প্রমাণ দিয়ে আসছেন প্রথম থেকেই। বাংলা কবিতায় দুটি প্রধান ধারা দেখা যায়। একটি ধারা বিবরণধর্মী, অন্যটি সংকেতধর্মী। বাংলায় এমন সব চিরস্মরণীয় কবিরা এসেছেন, যাঁরা কখনও লিখেছেন বিবরণধর্মী কবিতা– কখনো আবার সেই একই কবির হাতে আমরা পেয়েছি সংকেতময় কাব্যউপচার। যেমন প্রথমেই নাম করতে হয় শঙ্খ ঘোষের। শঙ্খ ঘোষ কখনও লিখছেন ‘কেউ কারো মতো নয়, সমস্ত নিঃশব্দ নিজে আলো’– এরকম বাচ্যার্থ পেরিয়ে যাওয়া লাইন। আবার কখনও লিখেছেন ‘পুলিশ কখনো কোনও অন্যায় করে না তারা যতক্ষন আমার পুলিশ’। একেবারে প্রত্যক্ষ আঘাত। এই দু’ধরনের কবিতা আমরা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রচনাধারার মধ্যেও দেখতে পাব। কখনও সুভাষ লিখেছেন ‘যত দূরেই যাই’-এর মতো সংকেতস্নিগ্ধ কবিতা, যেখানে ব্যয় করা হচ্ছে অল্প কয়েকটি মাত্র শব্দ, যেখানে স্পেস ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিচ্ছে। আবার পরিণত বয়সে লিখেছেন ‘টানা ভগতের প্রার্থনা’-র মতো দীর্ঘ কবিতা, যা রাস্তার মজুরদের জীবনে ঢুকে পড়েছে, তুলে এনেছে তাদের শ্রমসময়ে ব্যবহৃত মুখের চিৎকারকে, তবু সে কবিতার মধ্যে কোনও স্লোগান-স্বর আসেনি। কবিতা হয়ে উঠেছে ইশারাপ্রধান। সেই সুভাষ মুখোপাধ্যায় আবার লিখেছেন ‘মেজাজ’ নামক কবিতা, কাহিনিমূলক আঙ্গিক ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে। অবশ্য শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু এবং আলোক সরকার সারা জীবন সংকেতধর্মী কবিতাই লিখে গেছেন। অন্যদিকে বিনয় মজুমদার তাঁর প্রথম জীবনে ‘ফিরে এসো, চাকা’ কাব্যগ্রন্থে সংকেতধর্ম পুরোপুরি আশ্রয় করেছেন। ‘অঘ্রাণের অনুভূতিমালা’ কাব্যেও সংকেতধর্ম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সেই বিনয় মজুমদার জীবনপ্রান্তে পৌঁছে যে-কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন সেই ‘হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ’ বইটি ছিল সম্পূর্ণই বিবরণধর্মী আঙ্গিকে রচিত। বলা বাহুল্য, দুই ধরনের কাব্যই বিনয় মজুমদারের প্রতিভাবলে উপযুক্ত সার্থকতা লাভ করেছিল।

subhash-mukhopadhyay
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় স্পেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রথম দশকের যে-তরুণ কবির লেখা প্রসঙ্গে বাংলা কাব্যের এই দুটি ধারার উল্লেখ করলাম, সেই কবি, সুমন ঘোষ, সম্প্রতি তাঁর কবিতাকে সংকেতের গতিপথে চালনা করতে শুরু করেছেন। একাধিক লিটল ম্যাগাজিনে সেসব কবিতা পড়ার পর মনের ভিতরে অনেক সময় ধরে চিন্তা-সঞ্চালন ঘটছে আমার। এই সুমন ঘোষের কয়েকটি কবিতা পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি আজ। যেমন একটি কবিতা এই রকম:

বামা

কতবার ডাকিনী বলেছি তাকে। বলেছি রাক্ষসী। 

প্রতিবার ইচ্ছে করে নিজেকে উলঙ্গ করে তার কাছে বসি।

মাত্র দু’ লাইনের কবিতা। নিখুঁত ছন্দ-মিলে গাঁথা। কিন্তু কবিতার বিষয়বস্ত এতই রহস্যময়, যে মনের মধ্যে এ কবিতা কেবল ঘুরতেই থাকে। কবিতার নামকরণটি যেন তীরবিদ্ধ করে। ‘বামা’ এক অর্থে কোনও নারী। এই শব্দের আরো একটি অর্থস্তর দেবী কালীকেও ছুঁয়ে আসছে। আসছে যে, তার প্রমাণ ‘ডাকিনী’ শব্দের ব্যবহারে পরিস্ফুট। কেননা কালীপূজার সময় আমরা মন্ডপে বিশাল কালীমূর্তির আশেপাশে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ডাকিনীমূর্তিও দেখতে পাই। ডাকিনী বলার পরক্ষণে ‘রাক্ষসী’ বলায় দেবীর রুদ্রমূর্তি যেমন চোখের সামনে আসে, অন্যদিকে ‘রাক্ষসী’ বললে কোনও নারীকে তিরস্কার করা হচ্ছে এমন ভাবনাও আমাদের মনে উঁকি দেয় না তা নয়। কিন্তু কবিতার দ্বিতীয় তথা শেষ লাইনটিতে পৌঁছে আমরা আবার দু’দিকে এর অর্থস্তরের গমনপথ দেখতে পাই। ‘প্রতিবার ইচ্ছে করে নিজেকে উলঙ্গ করে তার কাছে বসি’। তাহলে কি দেবীর সামনে নিজের সমস্ত বহিরঙ্গ আবরণ খুলে ফেলে সবটুকু সমর্পণ করতে চাইছেন এই কবিতার কথক? এইখানে বামাক্ষ্যাপার মিথটিকে ছুঁয়ে যাচ্ছে এ কবিতা। কবিতার নামকরণ কত গুরুত্বপূর্ণ তা আরো একবার প্রমাণ করছে। 

আবার এ কবিতা একটি আদ্যন্ত প্রেমের কবিতা রূপেও নিজেকে প্রকাশ করছে, এমন মনে হওয়াও অসম্ভব নয়। কবিতার শেষ তিনটি শব্দ বিশেষভাবে মনোযোগ দাবি করে– ‘তার কাছে বসি’। নিজেকে উলঙ্গ করার পর কোনও রমণীর কাছে যে-আশ্লেষাকাঙ্খা নিয়ে যেতে পারে কোনও পুরুষ– তা কিন্তু এই শেষ তিনটি শব্দে প্রকাশিত হচ্ছে না। কেবল কিছুক্ষণ বসে থাকা, কিছুক্ষণের শান্তি। নিজেকে নগ্ন করে তার কাছে বসা, এটুকু বাসনামাত্রই সঞ্চিত আছে এই কবিতার কথকের। কার কাছে? যাকে তিনি ‘ডাকিনী’ বলছেন, বলছেন এমনকী ‘রাক্ষসী’– তার কাছেই দু’দন্ডের শান্তি পেতে বসা?

কখনও কখনও এক যুগের কবিদের সঙ্গে অন্য যুগের কবিদের সংলাপও চলে। যদি মনে করি: ‘থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’– তাহলে কী হয়? সেই কবিতার শেষ লাইনের সঙ্গে যেন সংলাপ চালাচ্ছে অনেক অনেক পরবর্তী যুগে লিখতে আসা এক কবির রচনা। ‘বনলতা সেন’ নামক চিরজীবী কবিতার কিছুমাত্র প্রভাব সুমন ঘোষের এই কবিতায় নেই। জীবনানন্দের যুগের তুলনায় বাংলা কবিতার ভাষা এখন অনেক বদলে গেছে। কিন্তু আরো একবার ‘বামা’ নামক কবিতার শেষ তিনটি শব্দ পড়ে দেখুন। মনে হবে ‘বনলতা সেন’ কবিতার শেষ লাইনটির সঙ্গে যেন সংলাপ চালাচ্ছে এই কবিতার শেষ তিনটি শব্দ। চল্লিশের দশকে কবি অমিয় চক্রবর্তী তাঁর ‘চিরদিন’ কবিতাটি শুরু করেছিলেন এমন দুটি লাইন ব্যবহার করে: ‘আমি যেন বলি আর তুমি যেন শোনো/ জীবনে-জীবনে তার শেষ নেই কোনও।’ এই কবির ‘পারাপার’ নামক কাব্যগ্রন্থে পাওয়া যাবে এই দুটি লাইন। আবার ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত এক কাব্যগ্রন্থকে সমাপ্ত হতে দেখছি আমরা একটি দু’লাইনের কবিতা দিয়ে। কিরকম সেই লাইন দুটি?

‘কে তোমার কথা শোনে? তুমিও বা শোনো কার কথা?
তোমার আমার মধ্যে দু-মহাদেশের নীরবতা।’ 

কবিতাটি সম্পূর্ণ হয়ে গেল এই দুই লাইনে পৌঁছেই। সে-বইয়ের নাম কী? ‘শবের উপর শামিয়ানা।’ লেখক কে? শঙ্খ ঘোষ। অর্থাৎ ৫০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে এসে শঙ্খ ঘোষ সংলাপ-সম্পর্কে যুক্ত হলেন কবি অমিয় চক্রবর্তীর ‘পারাপার’ বইয়ের একটি কবিতার সূচনা-পঙক্তির সঙ্গে– অথচ মনে রাখা দরকার অমিয় চক্রবর্তী প্রয়াত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ এই লাইন দুটি রচনা করার ষোলো বছর আগে। অর্থাৎ কবির প্রয়াণে কিছু এসে যায় না। কবিতা তো জীবিত থাকে। তাই এক যুগের কবি অনেক পূর্ববর্তী যুগের কোনও কবির সঙ্গে বার্তা-বিনিময় করতে পারেন। সুমন ঘোষের ছোট্ট এই কবিতাকণিকা যেন বাংলার শ্রুতকীর্তি এক কবিতার সামনে বসে তার সঙ্গে কথা বলা। এভাবেও দেখা যায়।

Sankha-Ghosh
৫০ বছর পার করে কবিতা-সংলাপে যুক্ত হলেন শঙ্খ ঘোষ ও অমিয় চক্রবর্তী।

এই কবির আরো একটি কবিতার দিকে দৃষ্টি ফেরাই:

নাম

শতেক অনিচ্ছা শিস জোয়ারের জলে
নামখানি মিশে আছে স্মিতহাস্য অর্পনের আগে–
বলেছ উপেক্ষা ভরে ধন্য সাহসিনী
‘কার লেখা মনে নেই। তবে এই কবিতাটি চিনি।’

আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি এই কবিতাটি পড়ে। মাত্রই চারটি লাইন। এও এক প্রেমেরই কবিতা। প্রথম লাইন থেকে কোনও প্রত্যক্ষ অর্থ দিয়ে স্পর্শ করা যাচ্ছে না। আর সেইটাই লাইনটির সৌন্দর্য। কেননা একবার পড়ে যদি সম্পূর্ণ অর্থ বোধগম্য হয়ে যায়, তাহলে সে-কবিতা মন থেকে দ্রুত ফুরিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু যে-লাইন একবার পাঠের পরেও সম্পূর্ণ অর্থকে খুলে না দিয়ে তার অন্তর্গত রহস্যকে গোপন করে রাখে, সে-কবিতার কাছে বারবার ফিরে যায় মন। যেমন ধরা যাক জীবনানন্দের আয়ুষ্কালের শেষ দিকে লিখিত তাঁর একটি কবিতার তিনটি লাইন এরকম: 

‘… ভোরের কি বিকেলের কাকজ্যোৎস্না ছায়ার ভিতরে
আহত নগরীগুলি মৃত পৃথিবীর
নিহত জিনিস বলে মনে হয়।’

এই কবিতা জীবনানন্দ যখন লিখছেন, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গেছে। লন্ডনের বাড়িগুলি বোমাবর্ষণে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রথমে। তারপর জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর দুটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে পরমাণু বোমার আঘাতে। সেই কারণেই, ‘আহত নগরীগুলি মৃত পৃথিবীর/ নিহত জিনিস বলে মনে হয়’– এই কথাটির অর্থ বড় ভয়ানকভাবে মনকে বিদ্ধ করে। কিন্তু তার ঠিক আগের লাইনটি? যেখানে এক ‘ছায়ার ভিতরে’ জীবনানন্দ দেখতে পাচ্ছেন ‘আহত নগরীগুলি’-কে? সেই ছায়া কীরকম? আবারো বলছি লাইনটি: ‘ভোরের কি বিকেলের কাকজ্যোৎস্না ছায়ার ভিতরে…’। ভোরের আলো, সেও ছায়া ছায়া, কারণ সূর্য তখন সবে উদিত হচ্ছে। আর বিকেলের কথা তো বোঝাই যাচ্ছে, অস্তে চলেছেন সূর্য। দিনের আরম্ভ আর দিনের সমাপ্তি সময়– ঠিক আছে। কিন্তু এর মধ্যে ‘কাকজ্যোৎস্না’ শব্দটি এল কী করে? ‘কাকজ্যোৎস্না ছায়ার ভিতরে’? কী বলছে এই ‘কাকজ্যোৎস্না ছায়া’ কথাটি?

সেকথা বোঝা শক্ত। কিন্তু লাইনটি যে মনে গেঁথে গেছে! ‘কাকজ্যোৎস্না’ কাকে বলে? যখন মধ্যরাতে এতই প্রবল জ্যোৎস্নার জন্ম দেয় পূর্ণ চাঁদ, যে বৃক্ষশাখায় ঘুমন্ত কাক মনে করে বুঝি ভোর হয়ে গেল! তাই সেই কাক ডেকে ওঠে জ্যোৎস্নাকে ভোরের আলো মনে করে। এই হল কাকজ্যোৎস্না। তাহলে জীবনানন্দ তাঁর এই বিশেষ লাইনটি – ‘ভোরের কি বিকেলের কাকজ্যোৎস্না ছায়ার ভিতরে’– এর দ্বারা কী তৈরি করলেন? এমন এক রহস্যময় ছায়া বা আলো সৃষ্টি করলেন, যা দিন ও রাত্রির তিনটি ভিন্ন ভিন্ন প্রহরকে একটিই লাইনে ধারণ করতে পারল। কোন তিনটি প্রহর? ‘ভোরের কি বিকেলের’– এখানে দুটি প্রহর পাচ্ছি আমরা– কিন্তু ‘কাকজ্যোৎস্না ছায়ার ভিতরে’ যেই এল, অমনি মধ্যরাত্রিও অবতীর্ণ হল কবিতায়। জ্যোৎস্না, এমনকী প্রবল জ্যোৎস্না ঠিক আলো তো নয়! ছায়ামন্ডিত আলো। সেই ছায়ামন্ডিত আলোর ভিতর দিয়ে আহত নগরীগুলি দেখা যাচ্ছে, যা আসলে মৃত পৃথিবীর নিহত জিনিস বলে মনে হয়। এখানে ‘মনে হয়’ কথাটিকে আমরা ‘ভ্রম হয়’ অর্থেও ধরে নেওয়ার সংকেত পাচ্ছি। অর্থাৎ যে-কবিতার লাইন যত সংকেতধর্মী হবে, সে-লেখা ততই বেশিদিন ধরে পাঠককে আলোড়িত করে চলবে। 

আমাদের এই তরুণ কবি, একবিংশ শতকের প্রথম দশক থেকে যাঁর লেখার আরম্ভ– তিনি লিখলেন: ‘শতেক অনিচ্ছা শিস জোয়ারের জলে’। শিস কে দেয়? সাধারণত পাখি। কবিতাটির প্রথমে পাখির অনিচ্ছা শিস জোয়ারের জলে ভেসে যাচ্ছে বা মিশে যাচ্ছে এমন অনুমান করে নিতে পারি হয়তো। কিন্তু, নিখুঁত সংযমের পরিচয় দিয়ে, এই কবি, সুমন ঘোষ, শতেক শিস জোয়ারের জলে ভেসে যাচ্ছে বা মিশে যাচ্ছে, এমন কথা লিখে বসেননি। তাহলে কবিতাপঙক্তির সংহত গঠন ভেঙে পড়ত। সবটুকু যে বলে দিতে নেই কবিতার মধ্যে, সেই কথাটা অনেক কবিই বুঝতে চান না, অধিকতর পাঠক সংগ্রহের লোভে পা দিয়ে। পাখির অনিচ্ছা শিস, একটি নয়, অনেক অনিচ্ছা শিস জোয়ারের জলে ভেসে চলেছে। এখানে কবি, অত্যন্ত সাহস করে, একটি পুরনো শব্দ ব্যবহার করেছেন। কী সেই শব্দ? শতেক। এখন আর এই শব্দ প্রয়োগ করার কথা ভাবেন না কোনও কবিতালেখক। পুরনো যে! কিন্তু এই পুরনো শব্দটিই এক আশ্চর্য সংকেতচিহ্ন হয়ে উঠল সুমন ঘোষের কবিতার প্রথম লাইনে। 

দ্বিতীয় লাইনে আমরা কবিতার শীর্ষকটির উপস্থিতি পাচ্ছি: ‘নামখানি মিশে আছে স্মিতহাস্য অর্পণের আগে’। এই লাইনও তার প্রত্যক্ষ অর্থ উন্মোচন করছে না। অর্থাৎ পরপর দুটি লাইন কবি ব্যবহার করলেন, যা প্রত্যক্ষ অর্থের আয়ত্তের বাইরে থেকে গেল। ষাট দশকের শ্রেষ্ঠ কবি, বাংলা ভাষার এক সম্পদ, ভাস্কর চক্রবর্তী তাঁর একটি কবিতা সম্পূর্ণ করেছিলেন এই রকম দুটি লাইন লিখে: ‘বেঁচে থাকবার মতো নির্জন সাহস দেখা দিলে/ দেখা যায় শান্ত পথ শান্ত দিন শান্ত বাড়ি শান্ত সন্ধ্যেবেলা।’ ভাস্কর চক্রবর্তীর এই লাইন দুটি আচমকা বললাম কেন? বললাম দুটি কারণে। এক, ‘নির্জন সাহস’ শব্দটির জন্য। দুই, ‘শান্ত পথ শান্ত দিন শান্ত বাড়ি শান্ত সন্ধ্যেবেলা’– কথাগুলিও রয়েছে তো এখানে, তাই।

Suman Ghosh
কবি সুমন ঘোষ।

সুমন ঘোষের এই চার লাইনের কবিতা, যা দ্বিতীয় লাইনেও প্রত্যক্ষ অর্থের দিকে যাচ্ছে না– মাত্র চার লাইনে যে কবিতা নিজেকে সম্পূর্ণ করছে– এইটেকেই বলে ‘নির্জন সাহস’। তৃতীয় লাইনে পৌঁছে আমরা একটি আভাস পেলাম, যা এই লেখাকে প্রেমের কবিতার দিকে টানতে শুরু করল। কী সেই লাইন? ‘বলেছ উপেক্ষা ভরে ধন্য সাহসিনী’– এসে পড়ল এক নারী, যে উপেক্ষাভরে কিছু বলেছে, এবং কবি তাকে কিছু দুঃখ মিশিয়েই সম্বোধন করছেন ‘ধন্য সাহসিনী’ এই অভিধায়। কী কথা শোনা গেছে সেই সাহসিনীর কাছে? শেষ লাইনটি জানিয়ে দিল সাহসিনীর উক্তি: ‘কার লেখা মনে নেই। তবে এই কবিতাটি চিনি।’ ব্যস। কবিতা সম্পূর্ণ। কোনও অতিরিক্ত কথা নেই লেখাটিতে। এখন ধরা যাচ্ছে ওই যে পাখির শিস, সে পাখি আসলে কবির প্রার্থিতা কোনও নারী। ওই যে ‘স্মিত হাস্য অর্পণের আগে’ পেলাম তো আমরা! ওই ‘স্মিত হাস্য’ মিশে আছে এই বাক্যে: ‘কার লেখা মনে নেই। তবে এই কবিতাটি চিনি।’ 

অনেক প্রাচীন কবিতা আছে, সে-সব কবিতা কে লিখেছেন তা জানা যায় না। পল গ্রেভ সম্পাদিত অতি বিখ্যাত ইংরেজি কবিতা সংকলন ‘গোল্ডেন ট্রেজারি’ গ্রন্থেও দেখা যায় প্রবল খ্যাতিমান কবিদের কবিতার সঙ্গে এমন কবিতাও স্থান পেয়েছে যার রচনাকারের নামের জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় ‘অ্যানন’ কথাটি। অর্থাৎ অ্যানোনিমাস। তার মানে দাঁড়ায় কবিতাটি বেঁচে আছে শতাব্দী পেরিয়ে, কিন্তু কবির নাম হারিয়ে গেছে। সেই শতাব্দী শতাব্দী ধরে থেকে যাওয়া ‘অ্যানোনিমাস’ কবিদের সঙ্গে নিজের অস্তিত্ব মিলিয়ে দিলেন সুমন ঘোষ। চার লাইনের এই ক্ষুদ্র কবিতা দ্বারা সম্ভব হল একই সঙ্গে একটি ‘নিরাশাকরোজ্জ্বল’ প্রেমের কবিতার জন্ম এবং চিরদিন যাঁরা ‘অ্যানোনিমাস’ থেকে গেছেন এমন সব কবিদের সঙ্গে একই দুঃখ আনন্দের অংশ ভাগ করে নেওয়ার সার্থকতায় পৌঁছনো। 

‘নিরাশাকরোজ্জ্বল’ নামক যে শব্দটি এইমাত্র ব্যবহার করেছি, অভিজ্ঞ পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন শব্দটি জীবনানন্দের প্রবন্ধ থেকে তুলে আনলাম আমি। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জীবনানন্দ জানিয়েছিলেন: ‘তিনি (সুধীন্দ্রনাথ) আধুনিক বাংলা কাব্যের সবচেয়ে বেশি নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনা।’ অ্যানোনিমাস কবিদের সত্তার সঙ্গে নিজের দুঃখ আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার সার্থকতার কথা বলছি কী কারণে? কেননা কবির নাম মনে নেই কারো, সে এক দুঃখ। কিন্তু কবিতাটি মনে আছে– আনন্দের উৎস হল সেইটি। সুমন ঘোষের কবিতায় আমরা দেখি, কবিকথক যাকে ‘ধন্য সাহসিনী’ বলছেন তার উক্তিটি অ্যানোনিমাস কবিদের প্রসঙ্গ যেন স্পর্শ করেই জানিয়ে দিচ্ছে ‘কার লেখা মনে নেই। তবে এই কবিতাটি চিনি।’  

‘নাম’ কবিতাটি অতিক্রম করে আমরা এবার এগিয়ে যেতে পারি এমন এক কবিতার দিকে, যার শিরোনাম হল ‘পদবী’। এ লেখাও মাত্র চার লাইনেই ধারণ করেছে নিজের অনুভূতিপুঞ্জ। কবিতাটি দেখা যাক:

পদবী

বিশ্বাসঘাতিনী নাম। সে-কারণে তাকে ছেড়ে পদবীটি একা ভেসে আসে।
যে-ঘাটে কবির গন্ধ রজকিনী হাসে
সে-হাসি তোরণ গড়ে– বহু বর্ষ পার, কলঙ্ক ঘটায় জনে জনে
জলকুন্ড পড়ে থাকে স্বপ্নছুট কালাধিকরণে! 

এই কবিতার মধ্যেও এক নারীর উপস্থিতি আছে। প্রথম শব্দটিই, যা অনুযোগপ্রবণ, জানিয়ে দিচ্ছে সেই নারী-অস্তিত্বের কথা। ‘বিশ্বাসঘাতিনী নাম।’ তার মানে এই নারী কারও বিশ্বাসভঙ্গ করেছে। কবিকথকের বিশ্বাস কি? তা যদি নাও হয় তবু ‘বিশ্বাসঘাতিনী নাম’ শব্দটি দ্বারা অভিযুক্ত হচ্ছে সেই নারী। পাঠককে মেনে নিতেই হবে ‘বিশ্বাসঘাতিনী নাম’ কবিতার প্রথমেই আট মাত্রার মধ্যে ধরে দিয়ে কবি তাঁর রচনাশক্তির পরিচয় রেখেছেন। নামটি কী, তা বলছেন না একবারও পুরো কবিতায়। কিন্তু নামটি যে-নারী বহন করছে তার কৃতকর্ম কবিকথকের চোখে কীরকম, সেকথা প্রকাশ পাচ্ছে অবলীলাক্রমে। প্রথম আট মাত্রার পরেই একটি আশ্চর্যের আবির্ভাব দেখা দিচ্ছে, কবিতার প্রথম লাইনেই। ‘সে-কারণে তাকে ছেড়ে পদবীটি একা ভেসে আসে’। প্রথম আট মাত্রার পরেই এই দ্বিতীয় অংশটির ভাবনা খুব নতুন। আমি কি কখনো কোনও কবিতায় এর আগে পড়েছি যে নামকে ছেড়ে ‘পদবীটি’ একা একা কোনও কবির কাছে এল? না, পড়িনি। এই রকম প্রয়োগ, আমার ধারণায়, বাংলা কবিতায় এই প্রথম ঘটল। 

Water and Woman
তাকে ছেড়ে পদবীটি একা ভেসে আসে…

এখানে ভেবে দেখা যায়, কেন নামকে ত্যাগ করে পদবীটি একা একা এল। সেই নারীকে, যে বিশ্বাসঘাতিনী বলা হয়েছে কবিতার একেবারে প্রথমেই, সে কি এই জন্য যে নারীটি কবিকে ছেড়ে অন্যত্র বিবাহিতা হয়েছে? বিবাহের কথা মনে এল, কারণ যদিও অনেক নারী বিগত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহের পর নিজেদের পদবী বদল করেন না– কিন্তু সাধারণত বিয়ের পর মেয়েদের পদবী বদলে যাওয়ার একটি প্রথা অনেক জায়গাতেই এখনও চালু আছে। অথবা এমন হতে পারে কি, যে-নারীটি কবির সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন বলে কবি মনে করছেন, সেই নারী-ই নয়, কিন্তু একই নামের অন্য কোনও মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে কবির? যার প্রথম নামটি কবিকে ছেড়ে যাওয়া নারীটির নামের সঙ্গে অবিকল এক? কিন্তু পদবী আলাদা? সেই কারণেই কি পদবীটি একা একা ভেসে এল কবির কাছে? 

‘ভেসে’ কথাটি থাকায় জল বা পুষ্করিণীর অনুসঙ্গ অবধারিতভাবে মনে পড়ে। পাঠকের এই অনুমান যে ভুল নয়, সেকথা প্রমাণ হয়ে যায় দ্বিতীয় লাইনের প্রথমেই যখন আমরা ‘ঘাট’ শব্দটি দেখতে পাই। ঘাট থাকলে জল থাকবেই। সেখানেই ‘কবির গন্ধ রজকিনী হাসে’। রজকিনী অর্থাৎ প্রাচীন কবি ও তাঁর প্রণয়িনীর সূত্র নিয়ে এল কবিতাটি এবার। রজকিনীর হাসি তোরণ তৈরি করল তৃতীয় লাইনে পৌঁছে। এবং সেই কবি, চন্ডীদাস, এই রজকিনীর সঙ্গে প্রণয়ে সংযুক্ত হওয়ায় লোকালয়ে যে কলঙ্ক রটে, সেকথা আমরা জানি। কারণ রজকিনী রামী বাল্যবিধবা ছিলেন। আমাদের আজকের কবি যে-নারীর নামকে বিশ্বাসঘাতিনী আখ্যা দিয়েছেন, তার পদবীটির প্রতিই যেন প্রণয়াসক্ত হচ্ছেন বলে আভাস দিচ্ছে কবিতাটি– সে-প্রণয়াসক্তি ঘটুক না ঘটুক– এইটুকু বলছে কবিতার শেষ লাইন যে: ‘জলকুণ্ড পড়ে থাকে স্বপ্নছুট কালাধিকরণে!’

‘জলকুণ্ড’– এই শব্দ দু’রকম অর্থের ইশারা দিচ্ছে। এক, কোনও বড় পুষ্করিণী। না, নদী নয়– কারণ নদী বোঝাতে চাইলে কবিকথক জলের সঙ্গে ‘কুণ্ড’ কথাটি যুক্ত করতেন না। অতএব নদী নয়। কিন্তু ঘাট শব্দটি পেয়েছি আমরা কবিতার দ্বিতীয় লাইনেই। ঘাটে রজকিনীর হাসিও পেয়েছি, যে-ঘাটে কবির গন্ধ। ‘জলকুণ্ড’ শব্দটি পুষ্কর ব্যতীত আরো একটি অর্থের দিকে ইঙ্গিত করে– গাগরি, ঘট বা কলস। সেই কবেকার, কতকাল আগের কবি ও রজকিনীর প্রেমকথা যেন আজকের দিনেও একটি ঘাটে একা পড়ে থাকা একটি ‘জলকুণ্ড’ অর্থাৎ কলস বা ঘট নিজের মধ্যে ধরে রেখে দিয়েছে, তার কলঙ্ক রটনার উপকথাটিও সঙ্গে রেখেছে। ‘কালাধিকরণে’ শব্দটি ব্যকরণের কথা কিন্তু মনে করাল না– ব্যকরনপুঁথি পার হয়ে সে চলে গেল এক প্রণয়পুঁথির চিরস্থায়িত্বে। সত্যিই এমন কবিতা পড়লে মন কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকে। কোনও নারীকে দায়ী করে এখন বাংলায় বা ভারতবর্ষে কবিতা লেখার রেওয়াজ আর নেই। কেননা সকল কবিই মনে মনে ভয় পান এমন লিখলে নারীবাদীদের হাতে তিরস্কার জুটবে তাঁর লেখার ভাগ্যে।

woman and mirror
ভালোবেসে আগে মেনে নাও, পরে তর্ক কোরো…

কিন্তু ভেবে দেখতে গেলে বিশ্বাসঘাতকতা তো মানুষই করে। নারীও তো মানুষ। তাই পুরুষের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতার প্রবণতা পিতৃতন্ত্রের দীর্ঘ সময়ব্যাপী আধিপত্যের কারণে সংখ্যায় অনেকগুণ বেশি দেখা গেলেও নারীও যেহেতু মানুষ, মানবপ্রবৃত্তির বশেই নারীর দ্বারাও বিশ্বাসভঙ্গ সম্ভব। কবিতার প্রথম শব্দটি ‘বিশ্বাসঘাতিনী নাম’– সেই কারণেই যে আমাদের ধাক্কা দেয় তা নয়। শব্দদুটির উদ্ভাবন ও প্রয়োগ যে একজন শক্তিমান কবির হাতেই সম্ভব, একথা আমাদের মানতে হয়। তর্ক চলতে পারে, কিন্তু কবিত্বশক্তিকে আগে স্বীকার করে নিয়ে তবে চালাতে হবে প্রশ্ন-প্রতিপ্রশ্ন। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, আজ থেকে ৫৪ বছর আগে প্রকাশিত তাঁর ‘রক্তাক্ত ঝরোখা’ নামক সুবিখ্যাত কাব্যগ্রন্থে একটি কবিতা কীভাবে শুরু করেছিলেন,  তার প্রথম কয়েকটি লাইন বলছি এখানে:

ভালোবেসে আগে মেনে নাও, পরে তর্ক কোরো
তাহলে তর্কে ঝরবে রৌদ্র, মানবিকতা
হিংসা হবে না, এ ওর মণীষা শ্রদ্ধা করে
দাঁড়িয়ে উঠবে থরে থরে শত সূর্যমুখী…

অলোকরঞ্জনের কবিতাটি ছয় মাত্রার মাত্রাবৃত্তে রচিত। ছয়/ ছয়/ পাঁচ– এই হল কবিতাটির ছন্দচলন। যাঁরা ছন্দের বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাঁরা সকলেই বুঝবেন এই অসামান্য বিষয়বস্তুটি কী ছন্দমহিমায় যুক্ত হয়ে এত অনুপম হয়ে উঠল। যুক্তাক্ষরের বিতরণ কী গতি আনল কবিতায়! যাঁরা ছন্দ না জেনেই কবিতা লিখে চলেছেন, তাঁদের কবিতা হয়তো ভালো হচ্ছে, মুদ্রণযোগ্যতাও পাচ্ছে বিভিন্ন কবিতা-পত্রিকায়– কিন্তু বাংলা কবিতার হাজার বছরের ইতিহাসে চার ভাগের তিনভাগ কবিতাই যে কোনও না কোনও ছন্দকে আশ্রয় করে লেখা! তাহলে, যাঁরা ছন্দকে কবিতায় ব্যবহারযোগ্য মনে করছেন না, কিন্তু কবিতাকে মুদ্রণযোগ্য অবস্থায় উন্নীত করে কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ ছাপিয়ে চলেছেন, তাঁদেরও ব্যক্তিগত কবি পরিচিতি ভালোভাবেই ঘটছে সমাজে। তবে ছন্দ-বিজ্ঞান না-জানার কারণে, তাঁরা নিজেরা যে বঞ্চিত হচ্ছেন কত কত অসামান্য ছন্দ-সৌন্দর্যের উপভোগ থেকে, সেকথা কি একবার তাঁরা ভেবে দেখতে পারেন না? আমি লিখব, লেখা ছাপাব, কিন্তু পাঠক হিসেবে নিজেকে সুশিক্ষিত করে তুলব না? কী জানি, যে যুগের যা যুগলক্ষণ, তাকে তো আমাদের মতো বৃদ্ধদের মুখ বুজে স্বীকার করে নিতেই হবে! 

এরপরে সুমন ঘোষের যে-কবিতাটির দিকে আমি অগ্রসর হতে চাইছি, সে কবিতাও একটি প্রেমেরই কবিতা। কবিতাটি আগে পড়তে দিই পাঠকদের। 

চুম্বন

সিঁড়িতে নেমেছ দ্রুত পিছু পিছু আমি।
সারা বাড়ি ঘুমে ঢাকা সারা মন রহস্যসন্ধানী–
প্রথমে উদ্ধার করে কালজয়ী সেই ক্ষতস্থান

উদ্ভিদের গমনাগমন কিছু সূচবিদ্ধ কদম্ববাগান
বাগানের স্ফীত ফল
স্থাণু যার চলাচল অতীত গহ্বরে

ধাক্কা খায় আতঙ্কিত প্রায়ান্ধ অধরে
তখনই বিলীন আমি সিঁড়িভাঙা পথে 

তুমি ডেকেছিলে তাই
আহত হয়েছি আমি ভিন্ন ভিন্ন মতে।  

প্রেমের কবিতাও যে সংকেতধর্মী হতে পারে, বাংলা কবিতায় তার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। তবে গত ৩২ বছরে লিখতে আসা কবিদের ক্ষেত্রে সংকেতধর্মের দিকে ঝোঁক খুবই কমে এসেছে। হয়তো সংকেতধর্মী কবিতা রচনার জন্য মনের যে নির্জনতা দরকার, সেরকম নির্জন মন আর পাওয়া যায় না সাম্প্রতিক সময়ের প্রবল মেসেজ বিনিময়, ফোন ব্যবহার এবং সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকার তাগিদে। কিন্তু বাংলা কবিতার অগ্রজ কবিদের কবিতাবলির মধ্যে সংকেতধর্ম অবস্থান করছে এখনও– সেই সূত্রেই হয়তো এই সময়ের কারো কারো রচনায় ইশারা ও অন্তর্গূঢ় বাচন কাজ করতে পারছে আজও। 

Kadam Flower
উদ্ভিদের গমনাগমন কিছু সূচবিদ্ধ কদম্ববাগান/ বাগানের স্ফীত ফল

এই কবিতাটির আরম্ভে দেখা যায় এক নারী দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলেছে, এক তরুণীই নিশ্চয়, তাকে অনুসরণ করছে এক যুবক। বাংলা গল্প-উপন্যাসে সিঁড়ির অন্তরালে অথবা সিঁড়ি ওঠানামার পথে যুবক-যুবতীর চুম্বন-ঘটনা আমরা বহুবার খুঁজে পেয়েছি। জীবনের মধ্যে কোনও প্রণয়ীযুগলের আকস্মিক অবকাশ সিঁড়ির ওঠানামায় পেয়ে যাওয়া আশ্চর্য কিছু নয়। হ্যাঁ, চুম্বন-অবকাশ। এখানেও তেমনই ঘটছে। কখন? যখন সারা বাড়ি ঘুমে ঢাকা। অর্থাৎ অন্য সবাই ঘুমন্ত। রাত্রি কি? বলা হয়নি কবিতায়। নিঃঝুম দুপুর কি? স্পষ্ট করা হয়নি তাও। তবে মন রহস্যসন্ধানী। নারী দেহের রহস্য কি? হতে পারে। ‘কালজয়ী সেই ক্ষতস্থান’ আদরের পূর্বতন চিহ্ন ধরে রাখাও বোঝাচ্ছে কি? বিনয় মজুমদার তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন: ‘এতটা বয়সে নারী, ক্ষত হয়নি কি কোনোকালে?’ আর এই কবিতা বলছে: ‘কালজয়ী সেই ক্ষতস্থান’। তাহলে কি সেই আদরের পীড়ন-দাগ প্রেমিকের মনে চিরদিনের জন্য এক জীবিত মুহূর্তের স্মৃতি হয়ে জেগে রয়েছে? 

এই সব জিজ্ঞাসার মুখে আমাকে রেখে দিয়ে কবিতাটি তার প্রথম স্তবক সম্পূর্ণ করে। আসে দ্বিতীয় স্তবক। দ্বিতীয় স্তবকও কিন্তু সংকেত ও রহস্যে আবৃত। কেবল নানা দিকে ইশারা দেখায়। এমন কবিতা, যা সব কথা দিনের আলোয় খুলে ধরে না, অর্ধস্ফুট জ্যোৎস্নাপাতের ছায়ায় রেখে দেয়, আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই সব কবিতাকেই নিজের মনের মধ্যে বারবার ঘুরে আসতে দেখি। ভুলতে পারি না। আবার সোজাসুজি ধরে ফেলতেও পারি না। তবু কী এক আগ্রহ যেন বারংবার সেই বোঝা-না-বোঝা কবিতাটির দিকে আমায় নিয়ে চলে। এই দ্বিতীয় স্তবকে পাই ‘সূচবিদ্ধ কদম্ববাগান’ কথাটি। কদম্ব শব্দে স্তনের গঠন মনে আসে– অন্যদিকে ‘সূচবিদ্ধ’ কথাটি দু’দিকে ইশারা পাঠায়। এক, সূঁচের মতো স্তনবৃন্তের জেগে থাকা। দুই, ওই স্তন আদরে বিদ্ধ। দাঁতের দাগ কি আছে? সারা বাড়ি যখন ঘুমে ঢাকা তখন এমন আশ্লেষের অবকাশ এই প্রথম যে এসেছে, তা নাও হতে পারে। তারপরেই স্তনের উপস্থিতি এই কবিতায় আরো একটু স্পষ্ট হয় যখন শেষে পাই ‘বাগানের স্ফীত ফল’। বিনয় মজুমদার লিখেছিলেন ‘ফিরে এসো, চাকা’ কবিতাগুচ্ছের একটি লেখায়:

খেতে দেবে অন্ধকারে সকলের এই অভিলাষ
কে জানে কী ফল কিংবা মিষ্টদ্রব্য কোনও
বয়স্কা, অনূঢ়া, স্ফীত–

তাহলে বিনয়ের এই কবিতার মধ্যে আমরা দেখছি ফলের উল্লেখ। সে-ফল কেমন? ‘বয়স্কা, অনূঢ়া, স্ফীত–’ অর্থাৎ স্পষ্টই নারীর স্তনের আকার বলা হচ্ছে ইশারায়। আর এই সময়ের, অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের কবি সুমন ঘোষ তাঁর ‘চুম্বন’ শীর্ষক কবিতাটির মধ্যে ‘বাগানের স্ফীত ফল’ কথাটি নিয়ে এলেন– এর আগে ‘কদম্ববাগান’ শব্দটিও স্তনের ইঙ্গিত এনেছে। কিন্তু দ্বিতীয় স্তবকের তৃতীয় তথা শেষ লাইনে এই কবিতাটি আশ্লেষ-উত্তেজনা থেকে ধীরে ধীরে নিষ্ফল বিষাদমুখীনতার দিকে নিজের গতিপথ ফিরিয়ে নিচ্ছে দেখতে পাই। কেননা প্রথম লাইনে যে দ্রুতশ্বাস রোমাঞ্চের আগমন ঘটেছিল, এইবার তা নির্বাপিত হতে চলেছে। কী করে তা ধরা যায়? ‘স্থাণু যার চলাচল অতীত গহ্বরে’। তাহলে কি এই ‘সিঁড়িতে নেমেছ দ্রুত পিছু পিছু আমি’ লাইনটির মধ্যে দুই যুবক-যুবতীর যে স্পর্শক্রীড়াদ্যুতি আবির্ভূত হয়েছিল, কবিতাটি দ্বিতীয় স্তবকের শেষে এসে পাঠককে জানিয়ে দিতে চাইল তার চলাচল কিন্তু স্থাণু এবং সবটাই অতীত গহ্বরে?

Love Lost
কবি ব’নে গেছে আর লিখেছে সুন্দর/ দোষারোপ করে…

এই কবির শব্দপ্রয়োগ বিষয়ে অভিনবত্ব আবিষ্কৃত হয় যখন আমরা দেখতে পাই, এক চলাচলকে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘স্থাণু’ বলে। এও কি সম্ভব? একইসঙ্গে যাকে ‘চলাচল’ বলা হচ্ছে, তাকেই আবার বলা হচ্ছে ‘স্থাণু’? ‘চলাচল’ যদি হয়, তবে তা ‘স্থাণু’ কীভাবে হবে? কবিকথক তাঁর চাবিকাঠি দিয়ে দিচ্ছেন লাইনের শেষ শব্দ দুটির মধ্যে: ‘অতীত গহ্বরে’। যেহেতু ওই চলাচল অতীত, তাই স্মৃতির মধ্যেই এখন তার অবস্থান। সেই চলাচল, মেয়েটির সঙ্গে যুবকটির শরীর-স্পর্শের অভিজ্ঞতা আজ অতীত হয়ে স্মৃতির ভিতর স্থির। স্থাণু। স্মৃতি কী বলছে? বলছে সেই চলাচলের কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে তা আর বাস্তবে ঘটছে না। ওই চলাচল-মুহূর্ত মনের মধ্যে অতীত গহ্বরে স্থাণু হয়ে আছে।

আবার নতুন স্তবকে পৌঁছলাম আমরা। এই কবিতা রচিত হয়েছে দুটি তিন লাইনের স্তবক এবং দুটি দুই লাইনের স্তবক অনুসরণ করে। এর মধ্যে দ্বিতীয় স্তবক, যা তিন লাইনে গঠিত, সেখানে দুই মাত্রা কম রাখা আছে। কেন ওখানে দু’মাত্রা কম রাখা হল? কারণ পরের লাইনেই আমরা বুঝতে পারব কবিতাটির প্রথম পঙক্তির সেই দ্রুত চলাচল এখন স্থাণু হয়ে অতীতের গর্তে নির্বাসিত হয়েছে। সে প্রণয়স্পর্শ তো পূর্ণতা পায়নি– তাই দুই মাত্রা কম রাখা হল। জীবনে যা কম পড়েছে, কবিতার মাত্রা সন্নিবেশেও তা কমই রইল। কবির কারুকৃতির বোধ আমাদের বিস্ময়ে অভিভূত করে। 

এবার আমরা এসে পড়েছি কবিতাটি কীভাবে গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে, সেই পথরেখাটির চলনে। দুই লাইনের দুইটি স্তবক কবিতাটিকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে। প্রথম যে দুই লাইনের স্তবকটি আসছে সেখানেই ওই যুবক-যুবতীর মধ্যে বিচ্ছেদ সূচিত হচ্ছে– অবশ্যই সাংকেতিক ধারায়: ‘ধাক্কা খায় আতঙ্কিত প্রায়ান্ধ অধরে/ তখনই বিলীন আমি সিঁড়িভাঙা পথে’। চুম্বন-আশ্লেষ-স্পর্শ-পীড়ন সম্পূর্ণ হল না, সার্থক হল না। কোনও বাধা পেল। কোথায় বাধা পেল? প্রায়ান্ধ অধরে। এখন, প্রশ্ন উঠতে পারে, অধর কিভাবে প্রায়ান্ধ? আসলে এমন অনুমান হয় প্রথমে নারীটির দিক থেকে সাড়া পাওয়া গেলেও তারপর তরুণীটি নিজেকে আটকে দিল। নিজেকে আটকে দিতে হলে যুবকটিকেও আটকে দিতে হয়! তাই অধর প্রত্যুত্তর দেওয়া বন্ধ করল চুম্বনরত যুবকটিকে। এমন কোনও নারী বা পুরুষ প্রায় নেই-ই বলা যায় যাদের জীবনে এই রকম অভিজ্ঞতা হয়নি কখনও না কখনও। তাহলে প্রত্যাহত যুবকটির কী হল? ‘তখনই বিলীন আমি সিঁড়িভাঙা পথে’। সিঁড়ি দিয়ে সে-যুবক নেমে চলে গেল। ‘সিঁড়িভাঙা পথে’ কথাটির মধ্যে সিঁড়ি ভেঙে নেমে যাওয়ার বর্ণনা স্পষ্টভাবে আছে। কিন্তু আরো কিছু আছে সেই সঙ্গে। আদর, আশ্লেষ, চুম্বন, শরীরস্পর্শ– এই সবই তো সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে উঠে চরমে পৌঁছায়। এই কবিতাটির ক্ষেত্রে ‘সিঁড়ি’র পর ‘ভাঙা’ কথাটি রাখা হল এই কারণেও যে ওদের ওই চুম্বন-আশ্লেষ মাঝপথে ভেঙে গেল। তাই সিঁড়ি ভেঙে নেমে যাওয়া প্রণয়পথটি আসলে প্রণয়পথ ভেঙে যাওয়ার দিকেও অর্থবিদ্যুৎ পাঠিয়ে দেয়। আমরা আগের স্তবকে একথা জানতে পেরেছি, যে সেই চুম্বনস্পর্শের চলাচল আজ স্থাণু হয়ে কেবল স্মৃতির মধ্যেই নিহিত রয়েছে। 

Stairs
তখনই বিলীন আমি সিঁড়িভাঙা পথে

এইবার শেষ স্তবক। কবিতার গন্তব্য এসে পৌঁছল অবশেষে। ‘তুমি ডেকেছিলে তাই/ আহত হয়েছি আমি ভিন্ন ভিন্ন মতে।’ একথা বোঝা যায়, তুমিই ডেকেছিলে, তাই আমি বারবার গেছি। বারবার কথাটি তো কবিতায় ব্যবহার করা হয়নি! তবে আমি এই বারবার ডাকার প্রসঙ্গ আনছি কোন যুক্তিতে? আসলে কবিতার শেষ লাইনটি বলে: ‘আহত হয়েছি আমি ভিন্ন ভিন্ন মতে’। অর্থাৎ এই কবি, শব্দপ্রয়োগে এত বিচক্ষণ যে ‘ভিন্ন ভিন্ন মতে’ এই তিনটি কথা কবিতার একেবারে শেষে বসালেন। ‘তুমি ডেকেছিলে তাই’– চতুর্থ স্তবকের এই প্রথম লাইনটিও কিন্তু দু’মাত্রা কম রেখেছে। কেন? তুমি ডেকেছিলে, ঠিকই, কিন্তু তার ফল কী দাঁড়িয়েছে? ‘আহত হয়েছি আমি ভিন্ন ভিন্ন মতে।’ তাহলে তোমার ডাকে আমি আহতই হয়েছি! একবার নয়, ‘ভিন্ন ভিন্ন মতে’– অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে। তাই তো দু’মাত্রা কম ‘তোমার ডাক দেওয়া’-র পঙক্তিটির মধ্যে। সেই ডাক বা আহ্বান তো আমার জীবনে প্রেমের প্রত্যাশা পূর্ণ করেনি। অপূর্ণ রেখেছে। সেই সূত্রে কবিতার লাইনটিও ছন্দের ক্ষেত্রেও প্রত্যাশিত দু’মাত্রা আনল না। ‘ভিন্ন ভিন্ন মতে’ কথাটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, তোমার ডাক একবার আসেনি। বারবার এসেছে। বারবারই আমি আহত হয়েছি। 

শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর একটি দীর্ঘ কাব্যনাট্যে ‘জনৈকা’ নামক এক চরিত্রের মুখে বসিয়েছিলেন এই উক্তি:

কবি ব’নে গেছে আর লিখেছে সুন্দর
দোষারোপ করে
কিন্তু আমি কীসে দোষী? আপনারা বলুন

সুমন ঘোষের ‘চুম্বন’ নামক কবিতাটির মধ্যেও একটি সুন্দর দোষারোপ আছে। তরুণীর দিক থেকে কিছু বলার ছিল কিনা, সেকথা আমাদের অগোচরেই থেকে যায়। তবে, নবীন এই কবি, স্তবকবন্ধ অনুসরণ করে যেভাবে স্তরে স্তরে কবিতাটিকে নিয়ে অগ্রসর হয়েছেন, সেই পদ্ধতিটি দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। মুগ্ধ করেছে লুকিয়ে রাখা অন্ত্যমিলের ব্যবহার। অন্ত্যমিলগুলি দূরে দূরে স্থাপন করে কবি তাঁর সংযমের পরিচয় রেখেছেন বড় সুন্দরভাবে। একটি স্তবক শেষ হওয়ার পর নতুন স্তবক এসেছে পূর্ব স্তবকের শেষ লাইনটির সঙ্গে পরবর্তী স্তবকের প্রথম লাইনটিকে মিত্রাক্ষর দ্বারা যুক্ত করে। কেবল শেষ স্তবকটির ক্ষেত্রে লেখক এই অনুসরণের ক্রম নিজেই ছেড়ে বেরিয়ে এসে একেবারে অন্তিম লাইনে অন্ত্যমিল বসিয়ে কবিতাটি সম্পূর্ণ করেছেন। করণকৌশলের দিক দিয়েও কবি ছন্দ রেখে, অন্ত্যমিল রেখে, তাকে গোপন করার সামর্থ্যও অর্জন করেছেন, যা তাঁর কবিতাকে ঘন ঘন অন্ত্যমিল প্রয়োগের দ্বারা ব্যতিব্যস্ত করেনি, বরং মিল যে আসলে মিলন– সেই কথাটিই প্রমাণ করেছে।

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখছিলাম সুমন ঘোষের কবিতা। তিনি চার লাইনের স্তবকবন্ধ রেখে রেখে, ক/খ, ক/খ মিলবিন্যাস অনুসরণ করে কিছু কবিতা প্রকাশ করছিলেন। সে-সব রচনার অনুশীলন এখন এই সব কবিতায় সার্থকতা লাভ করল। আমি এইবার সুমন ঘোষের একটি সংহত, মিল ও ছন্দে বিন্যস্ত কবিতা তুলে দিচ্ছি পাঠকদের জন্য– যে কবিতাটি বিষয়ে আমি আর কোনও আলোচনার মধ্যে ঢুকছি না। কেননা, আমি প্রথম থেকেই সাধারণ পাঠকদের দিকে তাকিয়ে কবিতা বিষয়ে দু’-চার কথা বলে আসছি আজ আঠাশ বছর হল। যাঁরা নিজেরা কবিতা লেখেন সেই সব পাঠকরা আমার লক্ষ্য নন। কিন্তু যাঁরা কবিতালেখক নন, অথচ কবিতা ভালোবাসেন, কবিতা বুঝতে চান, কেবল তাঁদের সঙ্গেই আমার পড়াটুকু ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছি। সুমন ঘোষের একটি ছোট সাংকেতিক, চিত্রসমন্বিত কবিতা এইবার তুলে দিই:

চঞ্চু

অঙ্গুলি হেলনে থাকো। বিনিময়ে সিদ্ধান্তসকল
স্থগিত রেখেছ কিছুকাল
মুকুরে যে-গৃহস্বামী সে-ই আজ অবসাদে চিরবিতাড়িত
রমণীটি লোকচক্ষু পার হয়ে উদয়াস্ত হাঁটে
কাঁচা ধান ঝড়ে পোড়া। চক্ষুমতী তাকে রোজ অসংশয়ে কাটে।

 

*পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ২ নভেম্বর ২০২২
*ছবি সৌজন্য: Saatchi Art, সহজিয়া 

Author Joy Goswami

জয় গোস্বামীর জন্ম ১৯৫৪ সালে, কলকাতায়। শৈশব কৈশোর কেটেছে রানাঘাটে। দেশ পত্রিকাতে চাকরি করেছেন বহু বছর। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দু'বার - ১৯৯০ সালে 'ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা?' কাব্যগ্রন্থের জন্য। ১৯৯৮ সালে 'যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল' কাব্যোপন্যাসের জন্য। ১৯৯৭ সালে পেয়েছেন বাংলা আকাদেমি পুরস্কার। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন কবিতার সাহচর্যে। ২০১৫ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি.লিট পেয়েছেন।

Picture of জয় গোস্বামী

জয় গোস্বামী

জয় গোস্বামীর জন্ম ১৯৫৪ সালে, কলকাতায়। শৈশব কৈশোর কেটেছে রানাঘাটে। দেশ পত্রিকাতে চাকরি করেছেন বহু বছর। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দু'বার - ১৯৯০ সালে 'ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা?' কাব্যগ্রন্থের জন্য। ১৯৯৮ সালে 'যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল' কাব্যোপন্যাসের জন্য। ১৯৯৭ সালে পেয়েছেন বাংলা আকাদেমি পুরস্কার। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন কবিতার সাহচর্যে। ২০১৫ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি.লিট পেয়েছেন।
Picture of জয় গোস্বামী

জয় গোস্বামী

জয় গোস্বামীর জন্ম ১৯৫৪ সালে, কলকাতায়। শৈশব কৈশোর কেটেছে রানাঘাটে। দেশ পত্রিকাতে চাকরি করেছেন বহু বছর। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দু'বার - ১৯৯০ সালে 'ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা?' কাব্যগ্রন্থের জন্য। ১৯৯৮ সালে 'যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল' কাব্যোপন্যাসের জন্য। ১৯৯৭ সালে পেয়েছেন বাংলা আকাদেমি পুরস্কার। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন কবিতার সাহচর্যে। ২০১৫ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি.লিট পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com