একটু ইতিহাস
দার্জিলিং যখন প্রথম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নজরে পড়ে তখন দার্জিলিং একটি ছোট্ট গ্রাম এবং সেখানে বসবাস করে লেপচা প্রজাতির মানুষেরা, ছোট্ট একটি জনবসতি তাতে অল্প কিছু মানুষ।
Treaty of Titaliya (১৮১৭) স্বাক্ষর হয়ে যাওয়ার পর কোম্পানি বাহাদুরের একদল সৈন্য যখন সিকিম যাচ্ছিল তখন তারা দার্জিলিংয়ের ব্যাপারে জানতে পারে আর আগ্রহবশত দার্জিলিংয়ের পথে রওয়ানা হয়। দার্জিলিং দেখে তারা মুগ্ধ হয়ে যায়, আর তখন শুরু হয় তাদের হাহুতাশ। এই অসাধারণ জায়গাটি Treaty of Titaliya তে লিখে সিকিমকে দিয়ে দিতে মোটেও রাজি নয় তারা। এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিকিমের রাজাকে নানাভাবে বুঝিয়ে অল্প টাকার বিনিময় দার্জিলিং ফেরত নিয়ে নেয়। মাত্র ৩০০০ টাকা মাসিক আয়ের বিনিময় সিকিমের রাজা কোম্পানি বাহাদুরের হাতে দার্জিলিং তুলে দিলেন। এই টাকার পরিমাণ পরে বাড়িয়ে ৬০০০/- করা হয়েছিলো। দার্জিলিং-এর নামকরণ হয়েছিল Dorjeling থেকে। Dorje শব্দটির মানে বজ্রবিদ্যুৎ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এত চিন্তা-ভাবনা, আদানপ্রদানের পেছনে কারণ ছিল একটাই। ভারতবর্ষের উত্তরপূর্ব অঞ্চল যেন কোনওভাবে গোর্খাদের কবলে না চলে যায়। তাই এই ভাঙাগড়ার খেলা চলতে থাকল।

এবার আসি চায়ের কথায়
কলকাতার সব নামকরা চায়ের রেস্টুরেন্টে ‘ফার্স্ট ফ্লাশ দার্জিলিং’ বললে খুব সুন্দর সুন্দর টি-পটে চা এনে দেয়। তারপর টি টাইমার দিয়ে সেই চা বানানোর বিজ্ঞানও বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু সব নিয়ম, সব বিজ্ঞান বোঝার পরেও কিন্তু চাগুলো বেশিরভাগ সময় বেশ খারাপ খেতে হয় এবং দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশের সেই আয়েশি ফ্লেভারটা কোনওভাবে তৈরি করানো যায় না। ফার্স্ট ফ্লাশকে বলা হয় Champagne of teas. তার একটা বিশেষ কারণ আছে। Champagne যেমন ফুরফুরে খেতে লাগে আর সোনালি রঙের, তেমনই ফার্স্ট ফ্লাশের চাতেও theanine বলে একটি রাসায়নিক দ্রব্য থাকে যা খেলে শরীরে ইমিউনিটি বাড়ে, শরীর ও মন বেশ চনমনে হয়ে যায়। চা নিয়ে যারা চর্চা করেন তাঁরাই এই তথ্য প্রমাণ করে এই নামকরণ করেছেন। একটি কুঁড়ি ও দুটি পাতা, চা গাছের প্রথম চা যেটা বসন্ত ঋতুতে তোলা হয় এবং সেই চা-কে কম জারানো(oxidation) হয়। কিন্তু এই চা একদম সঠিকভাবে না বানালে জলের মতন খেতে লাগে। এই ব্যাপারটা অবশ্য আমি আগের পর্বেই বলেছি।
তাই এবার যেটা বলব সেটা হল এই ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের সঙ্গে কী ধরনের খাবার খেলে সেটা চায়ের সঙ্গে ‘টা’-এর স্বাদে মানানসই হয়।
চা এবং টা
ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের সঙ্গে এই খাবারগুলো খাওয়া যায়:
- মাখন দিয়ে বানানো কেক
- গাজরের কেক (carrot cake)
- হাল্কা স্বাদের পেস্ট্রি
- চিজ ও মাছের হালকা নোনতা খাবার
- হাল্কা স্বাদের পাফ পেস্ট্রি

আজকে লিখছি চায়ের সঙ্গে খাওয়ার উপযোগ্য
চিজ ও মাছের নোনতা রোলের রেসিপি:
উপকরণ: Chedar চিজ- ঝুরো ঝুরো করে এক ছোট থালা।
ভেটকি অথবা বাসা মাছের পাতলা করে কাটা stripes। মানে এক ইঞ্চি লম্বা ও পাঁচ ইঞ্চি চওড়া এক একটা ফিতের মতন কেটে তাতে নুন, গোলমরিচ ও লেবুর রস মাখিয়ে আর হালকা হাতে একটু মাখনের প্রলেপ দিয়ে রাখতে হবে।
মাখন– ২টেবিল চামচ
চেরি টমেটো– ৬পিস
গোলমরিচ– ১/২ চা চামচ
নুন– ১/২ চা চামচ
প্রণালী: আধাঘণ্টার পরে এক একটা মাছের ফিতের মধ্যে ঝুরো চিজ ও একটুকরো চেরি টমেটো দিয়ে গোল করে টুথপিক দিয়ে আটকে দিতে হবে।
একটি নন স্টিক ফ্রাইপ্যান এ অল্প মাখন দিয়ে গোলগুলোকে একটার পর একটা বসিয়ে ১০ মিনিট হাল্কা আঁচে ঢেকে ভাজতে হবে। তারপর আবার ১০ মিনিট একটু উল্টেপাল্টে ভাজতে হবে। গরম গরম ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
আশা করি সবার ভালো লাগবে। আর ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের সঙ্গে তো জমবেই এই ‘টা’।
ছবি সৌজন্য: Wikimedia Commons, Istock,
মহুয়া এক কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত কাউন্সিলর। ভ্রমণ এবং নতুন নতুন খাদ্য-সংস্কৃতি সম্বন্ধে তাঁর অসীম আগ্রহ।
One Response
Amazing article.Very informative and beautifully penned.