গুন্টার ব্রুনো ফুকস ( ১৯২৮-১৯৭৭) জার্মান কবি, ছোটগল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য গ্রাফিক আর্টিস্ট। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের কবিই বলা চলে তাঁকে। তাঁর কবিতাগুলি ছোট ছোট, অনেকটা ইম্প্রেশনিজমের স্পর্শ চলে আসে। অস্তিত্ববাদের সঙ্গে মিস্টিসিজমের এক জগতের কথা তিনি বলেন। স্মৃতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের বিষয় থাকলেও, গুন্টার (Günter Bruno Fuchs) যুদ্ধ-পরবর্তী আধুনিক সময়ের কবি। শিল্পী হিসেবেও স্বনামধন্য।

মহৎ লোকটি
হাতের সিগারটিকে ঝাড়তে ঝাড়তে
মহৎ লোকটি
ক্রমশ বুড়ো হয়ে যাচ্ছে
আর শরীর এলিয়ে দিচ্ছে
তার ব্যবসার গায়ে
গা এলিয়ে দিয়েছে
তার
সেরা
সিগার বাক্সের গায়ে
আর অপেক্ষা করছে
মহৎ
ধূমপায়ীটির জন্য
চোখ
সে তাকিয়ে আছে
যেমন তাকিয়ে থাকে
একটা বৃষ্টিভেজা সকাল
বন্ধ জানলার দিকে
সে তাকিয়ে আছে
যেমন
গীতিকবিতা তাকিয়ে থাকে
কবিতার দিকে

পাথর
যা কিছু গড়িয়ে পড়ছে
কিছুই কোথাও
কোনওদিন
বোবা হয়ে ছিল না ততদিন
যতদিন তাদের
প্রাণহীন ভেবে
টুকরো টুকরো করার চেষ্টা করেছে
মানুষ
গান
আমি রং ছড়িয়ে দিলাম
ক্যানভাস
মিশে গেল
ক্যানভাসের বাইরে
বরফের টুকরো
আমার মৃত্যুর কথা ভেবে কোনওদিন বরফ পড়ে না
লোকমুখে শুনেছি এখানে কেউ কেউ
আসে
একা, গান শোনানোর জন্য
তাদের মৃত্যুর কথা ভেবে কেউ কখনও
দীর্ঘশ্বাস ফেলে না
বরফ জমতে থাকে
একদিন গলে যাবে বলে
ছোট পাখি
আমিও তোমার মতো উড়ে যাব একদিন ভাবি
উড়তে উড়তেই আমার জন্ম হবে
প্রেমে পড়ব
প্রেম ভেঙে যাবে
ছোঁ মেরে আমায় নিয়ে চলে যাবে
কোনও শিকারী পাখি
আমিও তোমার মতো একদিন ডানা ঝাড়ব
এই পৃথিবীতে

মেঘের ডাক
দূরে, ধোঁয়ার মতো, আমাদের ফেলে আসা জীবন
তোমাকে ঈর্ষা করি না
কারণ তুমিই আমার ভাই
তুমিই আমার বোন
তুমিই আমার সেই শিশু
যে তার মায়ের কাছে
ঘুমিয়ে পড়েছিল কিছু না চেয়েই।
দূরে ধোঁয়ার মতো
কেন এত মনখারাপ, বুঝি না আমি
শুধু মনে হয়
আমাকেও কি কেউ
সেই ধোঁয়ার মতোই ভাবছে কোথাও?
দু চোখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি পড়ছে
শিল্প এবং বস্তু
আমি যে তোমার রূপ এঁকে যাচ্ছি পাথরের উপর
পাথর তা নিয়ে খুব একটা আগ্রহী বলে
মনে হয় না
মনে হয় না তুমিও তোমার রূপ নিয়ে
আশাবাদী হয়ে তাকিয়ে রয়েছ
তবে কেন আঁকছি তোমায়? কেন?
কেন তোমার কাছে গিয়ে বলতে পারছি না
ভালোবাসি। শুধু, ভালোবাসি?
আমার ছবি, পাথরের গায়ে পড়ে আছে, নির্জনে

নন্দনতত্ত্ব
তোমার রক্ত দিয়ে আমার রং তৈরি হয় না
ছেনি বাটালির মধ্যে শিল্পী নেই
এমনকি আমিও চিনি না তাকে
শুধু বুঝি
কেউ এসে আমার ভিতর থেকে তাকে টেনে নিয়ে যায়
আমার রক্ত ঠিক তবু রঙের মতো নয়
ভাষা
তোমাকে কী নামে ডাকব
কী এসে যায়
আমি পাথর ভাঙি, কাঠ কাটি
আমি কাগজ ছিঁড়ে উড়িয়ে দিই বাতাসে
আমি জল মাপি
মাটি তুলে আনি মাটি থেকে
তার পর একদিন
সবকিছুই ফিরে যায়
অন্য কোনও শিল্পীর জন্য
ধুলো
যা কিছু আমার শরীর, আর যা কিছু আমার শরীর নয়,
এ সব কিছুই শিল্প হয়ে রয়েছে
এই মাঠের উপর
আমার ভাঙা ঘরে
যেখানে নিঃসঙ্গ জানলায় মুখ বাড়িয়ে আছে
এক আদিম মানব
যেখানে পাখি আসে, বিমান আসে না
এপিটাফ
বুঝি, আমিও, যে রক্ত দিয়ে তুমি আমাকে তৈরি করেছ
তার কিছুই আমি জানি না
তাই যাকে এঁকে চলেছি
সে আমায় প্রার্থনা করছে ঈশ্বরের মতো
আমি তোমায়
*কবিতাগুলি অনুদিত হয়েছে মূল জার্মান ভাষা থেকে…
তথ্যসূত্র—
১) জার্মান পোয়েট্রি ১৯১০-১৯৭৫ (সম্পা- মাইকেল হ্যামবার্গার)
২) https://www.goodreads.com/author/show/1045397.Karl_Mickel
৩) https://www.jstor.org/stable/487696?seq=1
৪) https://www.goethe.de/ins/in/lp/prj/ptp/mag/en14937144.htm
৫) https://www.amazon.com/Law-Disorder-Gunter-Bruno-FUCHS/dp/B00385TRDK
৬) https://books.google.co.in/books/about/Die_Meisengeige.html?id=qfpJAAAAMAAJ&redir_esc=y
*ছবি সৌজন্য: লেখক, Wallpaperflare, Wikidata
হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা লেখার শুরু নয়ের দশকে। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দুইই পেয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে। মোংপো লামার গল্প, সব গল্প কাল্পনিক, রুদ্রবীণা বাজো, বিপন্ন বিস্ময়গুলি, এসো ছুঁয়ে থাকি এই লেখকের কিছু পূর্বপ্রকাশিত বই।