(Bani Basu)
১৯৮১ সালে দেশ এবং আনন্দমেলা-য় প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর দুটি লেখা। আমাদের প্রজন্ম তখন কোথায়? একুশে পা দিতে তখনও কয়েক দশক বাকি। ৯০-এর শেষের দিকে আমরা সবে ভূমিতে পা দিয়েছি! আর যিনি সেই ১৯৮১-তে নিজের লেখকজীবন শুরু করলেন, তিনি এরপর কাটিয়ে দেবেন কয়েক দশক। ১৯৮৭-তে প্রথম প্রকাশ পেল একটি উপন্যাস, জন্মভূমি মাতৃভূমি। আনন্দলোক-এর পাতায় প্রকাশ পেয়েছিল সেই উপন্যাস যার পিছনে মেঘনাদের মতন উপস্থিত ছিলেন সাগরময় ঘোষ। সেই প্রকাশের পর আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে কয়েক দশক নিজের কলমের জোরকে সোচ্চার করে তুলবেন তিনি। এতক্ষণে নাম না করলেও অনেকেই বুঝে ফেলেছেন, বাণী বসুর কথাই বলছি। (Bani Basu)
আরও পড়ুন: প্রকাশগলির ভিতর দিয়ে
নিজের সাহিত্য জীবন শুরু হয়েছে সেই আটের দশকেই। তারপর নয় নয় করে পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। সাহিত্য জীবনের প্রথম পর্বে নিজের আদর্শ হিসেবে বাণী বসু বেছে নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব বসুকে। তবে কেবল বুদ্ধদেব নন, পছন্দের তালিকায় ছিলেন সমরেশ বসু, সুবোধ ঘোষ, নগেন্দ্রনাথ মিত্ররাও। নিজের জীবনে সেই প্রভাব কিছুটা কাজ করেছিল এই বর্ষীয়ান সাহিত্যিকের। একের পর এক যেভাবে জনপ্রিয় এবং গভীর বিষয়কে নিয়ে কথাসাহিত্যের ভাঁড়ার পরিপূর্ণ করেছেন, তাতে পাঠক হিসেবে তিনি যে কত সমৃদ্ধ ছিলেন তা বলা বাহুল্য! (Bani Basu)
বাণী বসুর লেখার প্রসঙ্গে আসব, তবে একটি বিষয় ঘুরেফিরে চলে আসে বারবার; বাণী বসু মহিলা লেখক। এই ‘মহিলা’ তকমাটি কখনও কখনও ছাপিয়ে যায় তাঁর লেখক সত্তাকে। নিজে যদিও সেই বিষয়ে একেবারেই আমল দিতে রাজি নন। হবেনই বা কেন? একজন সাহিত্যিকের কি কোনও ‘Gender Identity’ হতে পারে? তিনি পাঠকের কাছে নিজের লেখার সুবাদেই পরিচিত হবেন, যেমনটা হয়ে এসেছেন বারবার! তবে ‘Gender Equality’-র এই সময়ে দাঁড়িয়ে বাণী বসুকেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। অবলীলায় সেসব ভেদ-বিভাজনকে পরোয়া করেননি। বাংলা সাহিত্যে একের পর কালজয়ী রচনা করে গেছেন। (Bani Basu)
আরও পড়ুন: বিবাহ রন্ধন: ‘যদি কাগজে লেখো নাম’
আমাদের তখন ১৯ বা ২০ বছর বয়স। সদ্য কলেজে পা দেওয়ার কিছু আগে একটি বইয়ের প্রচ্ছদ খুব ভাল লেগেছিল। প্রচ্ছদশিল্পীকে তখনও চিনি না কিন্তু ওই প্রচ্ছদের টানেই কিনে ফেলেছিলাম বইটি! নামকরা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত সেই বইটির নাম একুশে পা। সেই প্রথম বাণী বসুর সঙ্গে আলাপ, লেখনীর সূত্র ধরে। যে বইয়ের এমন প্রচ্ছদ হতে পারে সেই বইয়ের লেখা নিয়ে বাড়তি কথা বলা বাতুলতা, তবু সেই অধ্যায়ের শিরোনামটুকু বলতেই হবে, “তাকে খুব মন দিয়ে পথ চলতে হবে…এবং…এবং”। ইমন, ভেঙ্কটেশ, ঋতু, মিঠুদের যাঁরা পড়েছেন, ভুলতে পারবেন না সহজে; ঠিক যেমন ভুলতে পারবেন না মৈত্রেয় জাতক, খনামিহিরের ঢিপি বা অষ্টম গর্ভ-কে! কলমের জোর যে বরাবর তরবারির থেকে বেশি, তার পরিচয় দেওয়ার জন্য এই ক’টি লেখাই যথেষ্ট। (Bani Basu)
একসময় কবিতা দিয়ে শুরু করেছিলেন নিজের লেখকজীবন যাপন। সেখান থেকে বড়গল্প, উপন্যাস, মহাভারতের মতন বিবিধ বিষয়ে নিজের পরিধিকে বড় করে তুলেছেন। পরিধি থেকে ‘বৃত্তের বাইরে’ পা দেওয়ার বিপুল বৈচিত্র্য এক বিস্ময়!
অনেকে বলেন বয়স একটা সংখ্যামাত্র। এই কথাটিই যেন বাণী বসুর জীবনের ধ্রব সত্য! কোথাও গিয়ে থামতে হয়, এই কথাটিকে ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিতে পেরেছেন তিনি। একসময় কবিতা দিয়ে শুরু করেছিলেন নিজের লেখকজীবন যাপন। সেখান থেকে বড়গল্প, উপন্যাস, মহাভারতের মতন বিবিধ বিষয়ে নিজের পরিধিকে বড় করে তুলেছেন। পরিধি থেকে ‘বৃত্তের বাইরে’ পা দেওয়ার বিপুল বৈচিত্র্য এক বিস্ময়! ১৯৩৯-এর অবিভক্ত ভারতে এমনই কোনও ১১মার্চ তিনি জন্মেছিলেন। শিক্ষাজীবন কেটেছে ইংরেজি সাহিত্যে, প্রথমে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ ও পরবর্তীতে স্কটিশ চার্চ কলেজে। বহু ২১ পেরিয়ে ৮৫-তে পা দিতে চলেছেন বাণী বসু। তারাশঙ্কর পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার, ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণপদক, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার-এর মতন স্বীকৃতি এক জীবনে পাওয়া প্রায় বিরল! এ জীবনে এর বেশি আর কীই-বা দেওয়ার আছে? (Bani Basu)
বিতান দে, বাংলা সাহিত্যের ছাত্র, অনুরাগী ও পাঠক। খাদ্য সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি ভালোবাসেন সিনেমা দেখতে ও খেলাধূলার চর্চা করতে। প্রকাশনা এবং কপি এডিটের নেশাকে পেশায় রূপদানের চেষ্টায় আছেন।