(Column)
হাততালি দিতেই ইতালি- [১], [২], [৩]
সাতখোল গেছিলাম প্রায় চার বছর আগে। কোভিডের প্রথম ঝড় শেষ হয়েছে। একটু একটু করে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছে। এতগুলো বছর, অনেকটা সময় কেটে গেছে তারপর কিন্তু এখনও নৈনিতালের সেই ছোট্ট গ্রামে থাকার স্মৃতি কোনওদিন ভুলব না। আজও মনটা শান্ত হয়ে যায় সেই ছোট্ট মাটির দোতলা ঘরটার কথা ভাবলে, যেখানে আমি থাকতাম। (Column)
কথালয়া – কথার জন্ম হয় যেখানে : মধুজা বন্দ্যোপাধ্যায়
মনে পড়ে বইভরা কাচের ঘরটার কথা যেখানে দূর থেকে ভেসে আসে বাড়িতে বানানো মাফিনের মিঠে পোড়া গন্ধ। ভীষণ আনন্দ হয় পাথর কেটে বানানো লম্বা বসার জায়গাটার কথা ভেবে— যেখানে বসলে পায়ে লেগে থাকে শরতের শিশির আর দূরে দেখা যায় নন্দাদেবী আর ত্রিশূল পাহাড়। চোখে ভেসে আসে ল্যাভেন্ডার গাছের সারি, কসমস ফুল আর তাকে ঘুরে ঘুরে প্রজাপতির আসা-যাওয়া। ভাবি নরম ঘাসে খালি পায়ে বসে আছি, কানে হেডফোনে বাজছে আহির ভৈরব— নরমরোদে গায়ে মেখে ভুলে গেছি এক পৃথিবী দুঃখ বেদনা। এমনই এক ম্যাজিকের নাম সাতখোল। (Column)

না সাতখোলে কোনও রেসোর্ট বা হোমস্টেতে থাকিনি। যদিও মুক্তেশ্বর আর আলমোড়ার মাঝে এই নিশুতি জায়গাতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে উঠছে বেশ কিছু থাকার আস্তানা। কিন্তু সে সব জায়গায় ছুটি কাটাতে যাইনি। গেছিলাম Himalayan Writing Retreat-এ। এখন প্রায় পনেরো বছর হতে চলল এই Retreat-এর। চেতন মহাজন আর বন্দিতা দুবের তৈরি স্বপ্নের নাম Himalayan Writing Retreat. গদ্য, পদ্য, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, চিত্রনাট্য, কেজো Blog বা একান্ত নিজের জন্য লেখা— এই সব নানা ধরণের লেখা লিখতে শেখার কর্মশালা আয়োজন করে এই Retreat. কখনও খোলা আকাশের নীচে গাছের ছায়ায় দূরে যেখানে পাহাড় দেখা যায়, আর কখনও বা এক মস্ত কাচের ঘরে সারিসারি বইয়ের মাঝে চলে লেখার ক্লাস। যতক্ষণ আলো থাকে Workshop চলে ততক্ষণ— তারপর যখন হঠাৎ ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে আসে, পাহাড়ের কোলে একটা-দুটো করে আলো জ্বলে ওঠে তখন শুরু হয় Campfire, গল্প, গান, আড্ডা। এ এক অন্যজীবন। যে জীবন আমরা বিদেশি সিনেমায় দেখি বা বইতে পড়ি। ২০১৭-১৮-এ ফেসবুক দেখে গাড়োয়ালের কোলে এমন এক আশ্চর্য আস্তানার খবর পাই। ২০১৭-তেই অনলাইনে বুক করেছিলাম সেখানে যাব বলে। জীবন তখন অনেক সহজ ছিল। তবু শেষ মুহূর্তে যাওয়া হয়নি। বুঝেছিলাম ডাক আসেনি। তখন আমি কলকাতায় থাকতাম। (Column)

ছেলের বয়স ছয়, বিয়ের বয়স সাড়ে তেরো আর চাকরির বয়স এগারো ছুঁতে যাবে। জীবন ঠিক যে পথে বইলে সব কিছু মসৃণ হয়, একদম সেই খাতেই বয়ে চলেছে। বাচ্চাকে আগলে রাখার লোকও কম নেই। তবু যাওয়া হয়নি। টিকিট কাটা, ফর্ম ভরা, দিল্লির হোটেল, কাঠগোদাম পর্যন্ত ট্রেন আর তার পর থেকে গাড়ি— সব ঠিক হয়ে আছে। তাও কেন যেতে পারলাম না? (Column)
আপনাকে এই জানা : শেকড়ের ডানা আর ডানার শেকড় : মধুজা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছেলের সারপ্রাইজ টেস্ট-এ হতচকিত হয়ে! জুজু তখন ক্লাস ওয়ান। পড়ে শহরের এক প্রথম সারির স্কুলে। অ্যাডমিশন পাওয়া শক্ত ছিল। তাই একবার যখন পেয়েছে তখন নিজের অজান্তেই কেমন একটা ইঁদুর দৌড়ে পৌঁছে গেলাম। টেলিভিশন চ্যানেলে কাজের সূত্রে প্রতি বৃহস্পতিবার T.R.P নামক জুজু রিপোর্ট কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ক’ঘণ্টায় কত লাখ লোক হাসছে, কাঁদছে অফিসে সারা দিন চলে তার হিসেব-নিকেষ। তার ওপর কোলেস্টেরল, বি.এম.আই আর ওজন কমানোর টার্গেট তো আছেই। এই সবের সঙ্গে জুড়ে গেল নতুন টার্গেট ছেলের Surprise Test. তার Grade-এ সারা বছর কে কেমন পড়ল— হবে সেই জমা-খরচের হিসেব-নিকেষ। এসব চাপের কারণে আমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা ‘আদর্শ মা’ প্রকট হল— আর আমি সাতখোল গিয়ে উঠতে পারলাম না। সে সময় মনে হত ‘আমায় ছাড়া সব কী করে চলবে?’ অনেক পরে বুঝেছি সবই চলে— জীবন ঠিকই চলে তার নিজের গতিতে। (Column)

এই বোধটা যখন হল– ছোট-বড় খোলামকুচির মতো ছোট-বড় মায়ায় জড়িয়ে পড়া আমি ঠিক করলাম আবার নতুন কোনও মায়ায় জড়াব। ক্লাস থ্রি-তে পড়া জুজু ট্যাঁকে নিয়ে পাড়ি দিলাম মায়ানগরী মুম্বই— ন্যাশনাল চ্যানেলে কাজ করব বলে। আরব সাগরের নোনা হাওয়া, কাঁকুড়ে মাটি, বর্ষার জলকাদা পেরিয়ে সবে শহরটাকে একটু একটু করে আবিষ্কার করছি এমন সময় এল কোভিড। মুম্বই তখন আমার ন’মাসের চেনা। ন’বছরের জুজুকে নিয়ে একা আমি অজানা শহরে বসে আছি অনন্ত নির্বাসনে। অনলাইন মিটিং, অনলাইন শপিং, অনলাইন ক্লাস— সব অনলাইনে প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত তখন একটু একটু করে লকডাউন খুলল। জুজু তার বাবাকে দেখল প্রায় ছ’মাস পর। আমি দেখলাম আবার খুলেছে সাতখোলের দরজা। (Column)
জুজুর পুজোর ছুটি। বাবার সঙ্গে ওকে কলকাতা পাঠিয়ে আমি পাড়ি দিলাম সাতখোলের রাস্তায়। দিল্লি থেকে শতাব্দী চড়ে কাঠগোদাম যাওয়ার পথে একটা মন ভয়ের চোটে বলছিল নেমে চল, কিন্তু আর একটা মন বলল এগিয়ে চল, ভয় নেই।
Himalayan Writing Retreat-এ আবার শুরু হতে চলেছে Writing For Self-এর Workshop. এখন চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। জুজু দু’ক্লাস উঁচুতে, আমি বাংলা থেকে হিন্দি টেলিভিশনে— ঘরে-বাইরে সবটাই একা সামলিয়ে কাজের চাপ দু’গুণ আর প্রাণটা তাই একমুঠো খোলা আকাশ দেখার জন্য ছটফটাতে লাগল। জুজুর পুজোর ছুটি। বাবার সঙ্গে ওকে কলকাতা পাঠিয়ে আমি পাড়ি দিলাম সাতখোলের রাস্তায়। দিল্লি থেকে শতাব্দী চড়ে কাঠগোদাম যাওয়ার পথে একটা মন ভয়ের চোটে বলছিল নেমে চল, কিন্তু আর একটা মন বলল এগিয়ে চল, ভয় নেই। এই সব দোটানার মাঝে দুরন্ত গতিতে শতাব্দী ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে পৌঁছে দিল কাঠগোদাম। (Column)
এতক্ষণে Whatsapp Group-এ জানা গেল আরও একজন আমার সঙ্গে রওনা হবে। ছোট্ট স্টেশন কাঠগোদাম। মেয়েটিকে খুঁজে পেতে অসুবিধে হল না। গ্রুপে লেখা আছে, সাতখোল আসার পথে এক রেস্তোরাঁ আছে— নাম বেলপত্র। সেখানে চমৎকার পাহাড়ি খাবার পাওয়া যায়। আমরা ঠিক করলাম সেখানেই যাব। আমার সঙ্গের মেয়েটি শুদ্ধ শাকাহারি। গাড়োওয়ালি খাবার খেল সে। বোর্ডে লেখা মেনুতে ট্রাউট মাছের গ্রিল দেখে আমি আর লোভ সামলাতে পারলাম না। সঙ্গে হাল্কা সেঁকা সবজি আর তুলতুলে নরম লোকাল বেকারির রুটি। পেটভরে খেয়ে পাকদণ্ডী রাস্তা ধরে গাড়ি চলল সাতখোলের পথে। গাড়োয়ালের রাস্তা ঘন জঙ্গল। এক সময় প্রচুর বাঘের বসতি ছিল— জিম করবেটের রোমহর্ষক সব গল্প এখানকার জঙ্গলকে ঘিরেই। সঙ্গের মেয়েটির সঙ্গে কখনও প্রকৃতি আর কখনও দুজনের জীবন আর কাজের গল্প করতে করতে প্রায় দুপুর তিনটেয় আমরা সাতখোলে পৌঁছলাম। (Column)
গাড়ি আমাদের ছেড়ে দিল এক ছোট্ট বসতির সামনে। জনা সাত-আট ঘর সেখানে। ছোট ছোট সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখি দু’টো পোষা নেড়ি নিয়ে বন্দিতা দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের জন্য। বাগানের দরজা ঠেলে ডান দিকে তাকিয়ে কাচের ঘর দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল।
গাড়ি আমাদের ছেড়ে দিল এক ছোট্ট বসতির সামনে। জনা সাত-আট ঘর সেখানে। ছোট ছোট সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখি দু’টো পোষা নেড়ি নিয়ে বন্দিতা দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের জন্য। বাগানের দরজা ঠেলে ডান দিকে তাকিয়ে কাচের ঘর দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। সেখান থেকে ভেসে আসছে টাটকা কফির গন্ধ। সেই আশ্চর্য ঘরের থেকে আর একটু গেলেই দেখা যায় ল্যাভেন্ডার ফুলের সারি। খুব সাজানো বাগান নয়— এলোমেলাভাবে এক স্বাভাবিক সুন্দর ফুলের বাগান। আর সেই বাগান পেরিয়ে দোতলা মাটির বাড়ির সারি। এখানেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা। মাটির বাড়ি, কিন্তু Wifi থেকে Electricity সবই আছে সেখানে। পালিশ ছাড়া পাহাড়ি কাঠের খাট, আলমারি, ছোট পড়ার টেবিল। টেবিলে একটুকরো জংলি ফুল সাজানো। আর সামনে দেখা যায় নীল পাহাড়ের সারি। (Column)

ঘরে নিজেদের জিনিস রেখে আমরা ফিরে এলাম সেই আশ্চর্য কাচের ঘরে— যার একটা দেওয়াল ভরা সারি সারি বইয়ের তাক— সেখান থেকে বই নিয়ে বসে কাটিয়ে দেওয়া যায় সারাদিন। ঘরের একধারে চা-কফি বানানোর জায়গা আর মাঝখানে এক অদ্ভুত চিমনির মতো জিনিস— জানলাম ওটা একরকমের রুম হিটার। যাতে পুরো কাচেরঘরটায় এক আরামের গরম ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের Workshop-এ জনাছয়েক যোগ দিতে এসেছেন। কোভিডের ভয় কাটিয়ে যে অন্তত ছ’জন এসেছে এতদূরের পাহাড়তলীতে— তাই বা কম কি! অল্প আলাপ, পরিচয়ের পর গরম গরম ডাল রুটি পাহাড়ি আচার খেয়ে যে যার পছন্দমতো বই নিয়ে ঘুমোতে চলে গেল। সবাইকে একটা করে কাচের বোতলে গরম জল দেওয়া হল— বন্দিতা বললেন কম্বলের মধ্যে এটা রেখে শুলে আর ঠান্ডা লাগবে না। হিটারেরও দরকার হবে না। মাটির ঘরে সত্যি দেখলাম খুব আরাম—এক ফোঁটা ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগল না। ঘুম এল ভালই। তবে মাঝরাতে হনুমানের ধপধপ আওয়াজে একটু ঘুমটা বিগড়ে গিয়েছিল। (Column)
সকাল আটটায় কাচের ঘরে যেতেই বন্দিতা, চেতন জানতে চাইলেন সবাই ভাল ঘুমিয়েছে কী না! বললাম বাঁদর লাফের কথা! শুনে খুব নির্লিপ্তভাবে বন্দিতা বললেন বাঁদর নয় ওগুলো বেড়ালের থেকে বড় আর বাঘের থেকে ছোট চারপেয়ে জন্তুবিশেষ।
সকাল আটটায় কাচের ঘরে যেতেই বন্দিতা, চেতন জানতে চাইলেন সবাই ভাল ঘুমিয়েছে কী না! বললাম বাঁদর লাফের কথা! শুনে খুব নির্লিপ্তভাবে বন্দিতা বললেন বাঁদর নয় ওগুলো বেড়ালের থেকে বড় আর বাঘের থেকে ছোট চারপেয়ে জন্তুবিশেষ। চেতন বললেন— মাঝেমাঝেই শিকারের খোঁজে ওরা রাতে বসতিতে ঘোরে— এক চাল থেকে অন্য চালে লাফিয়ে বেড়ায়। দিনের শুরুটাই হল ভয় দিয়ে। (Column)

কিন্তু Workshop শুরু হতে সবই ভুলে গেলাম। সামনে এক ছোট্ট সমতল— দু’তিনটে পাথর দিয়ে বানানো ছড়ানো ছিটোনো বসার জায়গা। সামনে ত্রিশূল আর নন্দাদেবী পাহাড়। সেই পাহাড় চোখ ভরে দেখতে বললেন বন্দিতা। তারপর বললেন ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ে আকাশ দেখতে। ওপরে শরতের ঝকঝকে আকাশ— মনে পড়ে গেল শেষ হয়তো সেই ছোটাবেলায় এভাবে আমি আকাশ দেখেছি। সেই আকাশের তলায় শিশির ভেজা ঘাসের ওপরে হল আমাদের প্রথম মেডিটেশন সেশন। সেই প্রথম শুনলাম Progressive Muscle Relaxation Meditation এর কথা। বন্দিতা আমাদের আস্তে আস্তে শরীরের বিভিন্ন অংশে মন দিতে বললেন। (Column)
পায়ের প্রতিটি আঙুল থেকে চোখের পাতা, কপাল, ভুরু— শরীরে প্রতিটি অংশে মন বসিয়ে Meditate করালেন। উদ্দেশ্য শরীরের প্রতিটি অংশকে আরাম দেওয়া— Muscle-গুলোকে Relax করানোর মধ্য দিয়ে মনকেও শান্ত করা।
পায়ের প্রতিটি আঙুল থেকে চোখের পাতা, কপাল, ভুরু— শরীরে প্রতিটি অংশে মন বসিয়ে Meditate করালেন। উদ্দেশ্য শরীরের প্রতিটি অংশকে আরাম দেওয়া— Muscle-গুলোকে Relax করানোর মধ্য দিয়ে মনকেও শান্ত করা। সত্যি মনে হচ্ছিল আরামে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু তখন দিনের শুরু, জানতাম না আর কী কী নতুন আশ্চর্য সব অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে আমার জন্য। Meditation থেকে উঠে বন্দিতা বললেন ওই দূরে ত্রিশূল আর নন্দাদেবী পাহাড় দেখে কী মনে হয় তা ভেবে একটা কবিতা লেখ। হায় রে! আমিও হয়তো সেই বিরল বাঙালি যে কোনওদিন কবিতা লেখেনি। লিখতে হবে তাও আবার ইংরেজিতে। (Column)

এইসব পরিস্থিতিতে সত্যি মনে হয় ভাগ্যিস আধুনিক কবিতা আছে। ছন্দ না হাতড়িয়ে দু-চার লাইনে কাজ সারব। বন্দিতা বললেন এক্ষুনি লিখবে না— আগে মন দিয়ে দেখবে, তারপর! শরতের নীল আকাশ, কলকাতায় তখন চতুর্থী। আমি কোনও বিশিষ্ট ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। তবুও দূরের পাহাড় চূড়া দেখে মনে হল সত্যিই হয়তো শিব আর পার্বতী বসে আছেন।
তাঁদের আসন একত্র নয়— তাঁরা স্বতন্ত্র। দুই পাহাড়ের মাঝের উপত্যকা তাঁদের সংসার। আসন ছেড়ে মাঝে মাঝে তাঁরা নেমে আসেন— সংসার করেন, আবার চলে যান স্ব স্ব ক্ষেত্রে। এ এক অদ্ভুত দাম্পত্য- যেন দুই আধুনিক মানুষের Long Distance Relationship-এর মতো। (Column)
কবিতা চার লাইন ছেড়ে হয়ে গেল আট-দশ লাইন। বাগবাজারের বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়া আমি কোনও দিন কী ভেবেছিলাম পাহাড়তলীর এই অদ্ভুত গ্রামে সবুজ ঘাসে, শরতের রোদ গায়ে মেখে ইংরেজি কবিতা লিখব!
কবিতা চার লাইন ছেড়ে হয়ে গেল আট-দশ লাইন। বাগবাজারের বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়া আমি কোনও দিন কী ভেবেছিলাম পাহাড়তলীর এই অদ্ভুত গ্রামে সবুজ ঘাসে, শরতের রোদ গায়ে মেখে ইংরেজি কবিতা লিখব! আমাদর সবার কবিতা একে একে পড়া হল— দেখা গেল একই পাহাড় তবে প্রত্যেকের দৃষ্টিতে, কল্পনায় তা আলাদা হয়ে ধরা পড়েছে। মানুষের মনও এরকম। একই ঘটনা এক এক মানুষের মনে আলাদা আলাদা ভাবে রেখাপাত করে। এবার আমাদের কবিতার এক এক লাইন বন্দিতা বললেন কেটে কেটে একটা বাটিতে রাখতে। ছ’জনের কবিতা জনা তিরিশ লাইন, তারপর সবাই মিলে বসে সাজিয়ে একসঙ্গে করা হল। সেটাও আবার একটা নতুন কবিতার আকার নিল। এও মানুষের প্রবৃত্তির মতো। মানুষের সচেতন চেষ্টায় কেমন সে দলবদ্ধ হয়ে সভ্যতার সেই শুরুর সময় থেকে বানিয়েছে কত কী। পুরোটাই তার কল্পনা দিয়ে। (Column)

ভাবছি হয়তো এভাবেই অনেক কবিতা গল্প লিখে মনের দরজাগুলো আরও আরও লেখার জন্য খুলে যাবে, তখনই বন্দিতা বললেন— ‘তোমার হয়তো বুঝতে কোথাও ভুল হয়েছে’, Writing For Self মানে নিজে নিজের অতীতের রাস্তায় হেঁটে, বর্তমানের জমিতে দাঁড়িয়ে নিজের ভবিষ্যতের রাস্তা নিজে তৈরি করা!’ সেরকম আবার করা যায় নাকি! নিজেকে নিয়ে তিন-চারদিন ধরে ভাবতে হবে? এ তো রাতবিরেতে বাঘরোলের ধপধপ আওয়াজ শোনার চেয়েও জটিল! ‘কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!’ হৃদয়ের খনন কার্য কেমন চলল তা জানাবে পরের কিস্তিতে। (Column)
প্রচ্ছদ – মধুজা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছাত্রী ইতিহাসের আর চাকরি গণমাধ্যমে। তাতে কী! নেশা কিন্তু আঁকা এবং লেখা। বিশেষত নকশা। নোটবুক ভর্তি তার প্রতিটি ছবিই গল্প বলে চলে। গুছিয়ে বসে বা দফতরের মিটিংয়ের ফাঁকে - রং কাগজ এবং কলম সবসময় মজুত।