(Little Magazine)
পুষ্প ফোটে কোন কুঞ্জবনে
তুমুল জীয়ন্ত মানুষ সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ভ্রমণের শিখরচূড়ায় বসিয়েছিলেন যে গন্তব্যকে, তার যোগ্যতা ছিল এই যে, সেখানে মরার সুখ অপেক্ষায় ছিল তাঁর – “এ দীনা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জায়গা তো বিস্তর, মরার জায়গা পৃথিবীতে ওই একটাই।” স্থান নিয়ে ভিন্নতা স্বীকার করেও তার অনন্যতার নির্ণায়ক যে বৈশিষ্ট্যটি সন্দীপনের সিদ্ধ মনে হয়েছিল, স্কটল্যান্ডের গ্লেনকো পাহাড়শ্রেণীর পায়ের নীচে দাঁড়িয়ে তার সম্পর্কেও এমনতরো সিদ্ধান্ত নিতে হল আমাকে। জিনা ইয়াহা, তো মরনা ইয়াহা-ই।সে আশ্চর্য কেমনতর? বেশ, তাহলে আকাশের গায়ে দ্বাদশীর চাঁদের নীচের সীমানা (Little Magazine)
বরাবর একটা রেখা টানুন, তারপর তাদের দুই প্রান্ত-বিন্দু থেকে দুটো সরলরেখা আনুভূমিকের সঙ্গে অর্ধসমকোণ করে কিছুটা নামিয়ে আনুন। এবার তাদের নীচের বিন্দু দুটো জুড়ে দিন আর একটা সরলরেখা দিয়ে, যা চাঁদের পরিধির নিম্নতম বিন্দুটি ছুঁয়ে যাবে। তারপর চাঁদটিকে টুপ করে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিন। পড়ে রইল দুই পাহাড় আর তাদের মধ্যবর্তী কয়েক কিলোমিটারের অর্ধচন্দ্রাকার মালভূমির ব্যবধান, যা ঠিক এতটাই জ্যামিতিক, নির্ভুল। (Little Magazine)
আরও পড়ুন: মথ: প্রতিচ্ছবি ও প্রতিধ্বনির গল্প- অমিতাভ মৈত্র
তার মাঝবরাবর পড়ে থাকা রাস্তা যখন আমাদের নির্বান্ধব গাড়িটাকে পথ করে দিচ্ছে, তখন বিশ্বাস করুন, তার সামনের আসনে বসা আমি যেন চোখ বন্ধ করে দেখতে পেলাম, ঈশ্বর স্বয়ং ওই খাঁজে পিঠ রেখে এলিয়েছেন একটু বিশ্রাম নিতে। তাঁর মাথা ঠেস পেয়েছে এক পাহাড়ের গায়ে, অন্য পাহাড়চূড়ায় তাঁর পায়ের পাতা দুটি পাতা। যেন নিজের সৃষ্টিতে নিজেই বিভোর। দেখতে দেখতে মনে হল, বেঁচে থাকার স্পৃহার সর্বোত্তম পরিতৃপ্তি যদি হয়েই গেল ওই পাহাড় আর পাহাড়প্রমাণ শূন্যতাকে ছুঁয়ে, তবে মরার সুখটুকুই তো শুধু বাকি থাকে সেখানে। সন্ধের সেই ফালি চাঁদের শূন্যতায় উড়ন্ত দুটো পাখি যেন ওই সুখের খোঁজেই মশগুল। (Little Magazine)
সুখের পাখি উড়ে উড়ে এল
অথচ স্কটল্যান্ড যাত্রার শুরুতে সুখ ছিল বাড়ন্ত। দমদম-দোহা এয়ার কাতার ৪৫ মিনিট লেট। কোভিডের কল্যাণে প্রায় সারা পৃথিবী জুড়েই অনেক কিছুর মতো অসময়ে বিমান ছাড়াটা নিউ-নর্মাল। সেটা সহ্য হলেও, তার জন্য যাত্রীদের যে দুর্ভোগ, তার প্রতি বিমান-কোম্পানির সীমাহীন নির্লিপ্ততা সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। দোহাতে দেরিতে পৌঁছে প্রাপ্তি হল একটা শুকনো দুঃখপ্রকাশ, ক্ষমাপ্রার্থনা আর ধমক – “২০ মিনিট তো বাকি, দৌড়ে কী হবে? গেট বন্ধ হয়ে গেছে, কেউ আপনাদের উঠতে দেবে না”। অতএব, ছোটা থামিয়ে, খানিক হাঁপিয়ে ট্রান্সফার ডেস্কের লাইনে। ‘সমাধানে’ এডিনবরার পরিবর্তে লন্ডন, সেখান থেকে অন্য ফ্লাইটে এডিনবরা। টাকায় গোনা ভাড়ার সঙ্গে বাড়তি খরচ ১৩ ঘন্টা সময়। দুপুর একটার পরিবর্তে পৌঁছোব রাত দুটোয়। (Little Magazine)
“বিস্ময়ের ক্লাইম্যাক্সটির পর্দা উঠল এডিনবরার ব্যাগেজ ক্যারসালে। শীতের পোশাক আর শুকনো খাবারে ঠাসা দুটো সুটকেসের ভুলু আছে, লালু গায়েব।”
এহ বাহ্য। বিস্ময়ের ক্লাইম্যাক্সটির পর্দা উঠল এডিনবরার ব্যাগেজ ক্যারসালে। শীতের পোশাক আর শুকনো খাবারে ঠাসা দুটো সুটকেসের ভুলু আছে, লালু গায়েব। ওটিতেই আমার অর্ধাঙ্গিনীর সর্বস্ব। রাত দুটোর আশপাশ সময়ে এয়ারপোর্টে কাজ করেন এমন একজন মানুষ নেই যার কাছে অভাবের অভিযোগটা জানাব। সহমর্মী ও সম-অভিজ্ঞতায় সম্পন্ন এক সঙ্গী যাত্রীর পরামর্শ ই-মেল করুন, এরা আর কিছু বোঝে না। (Little Magazine)
হোটেলে পৌঁছে চোখে লঙ্কা ঘষে ই-মেলের চালাচালি শুরু। ওপারে প্রশ্ন, এপারে উত্তর; কী রং? লাল; কী লাল? টুকটুকে না কালচে? হার্ডবডি না স্কাইব্যাগ? ভেতরে কী কী আছে ? মনে আছে নাকি ছাই ! এমনতর ওপারে তুমি শ্যাম, এপারে আমির মাঝখানে বয়ে যাওয়া নদীতে হঠাৎ আলোর ঝলকানি, ভেসে আসে আদরের নৌকো। মেল জানাল পাওয়া গেছে। আধ ঘন্টা পরে হোটেলে যখন ঘরের দরজা খুলে নটবর পা, থুড়ি চাকা রাখল কার্পেটের গায়ে, তখন ন’টা। এখনও এক ঘন্টা ব্রেকফাস্ট মিলবে। তারপর সন্ধে অব্দি এডিনবরার পথে, পাবে চক্কর। রাতে আবিষ্কার করেছিলাম, লাল সুটকেস থেকে উধাও হয়েছে তিন প্যাকেট বিস্কুট, দুটো কাপ-ম্যাগি আর ইসবগুলের ভুসির ঠোঙা। হ্যাঁ, এখানেও। (Little Magazine)
হিউম টু ঢিসুম
এডিনবরার এসপ্ল্যানেড চত্বরটির নাম ‘রয়্যাল মাইল’। এক স্কটিশ মাইল (ব্রিটিশ মাইলের থেকে আলাদা। এ দুই জাত শুধু জুতোয় অভিন্ন) লম্বা পাথরবিছানো রাস্তার একপ্রান্তে নিভন্ত আগ্নেয়গিরির ওপরে তৈরি এডিনবরা ক্যাসেল, অন্যপ্রান্তে হলিরুড হাউস প্রাসাদ আর স্কটিশ পার্লামেন্ট হাউস। মাঝে, এই এক মাইলে হাজারেরও বেশি বছরের ইতিহাসের সাক্ষীসাবুদ। মাঝবরাবর জায়গায়, বিখ্যাত সেন্ট গাইলস ক্যাথিড্রালের প্রায় উলটোদিকে ফুটপাথের ওপরে ডেভিড হিউমের ৯ ফুটের ব্রোঞ্জ-মূর্তি। পোডিয়ামের সীমানার বাইরে ডান পা-টি এগিয়ে রাখা। সবুজ হয়ে যাওয়া মূর্তির পায়ের বুড়ো আঙুলটা শুধু সোনার মত চকচকে। এমনটা কেন বলার আগে বলি হিউম সাহেবের দু’কথা। অষ্টাদশ শতাব্দীর স্কটিশ জ্ঞানচর্চার পুনরুত্থান (enlightenment) পর্বের পুরোধা এই ডেভিড হিউম। দর্শন, ইতিহাস ও অর্থনীতির নানা তত্ত্বের প্রবক্তা হিউমের জন্ম-মৃত্যু এই শহরেই। ছিলেন বাস্তববাদী আর কুসংস্কারমুক্তির পক্ষে। (Little Magazine)
“এক রেস্তোঁরার সাইনবোর্ডে, নাম ‘ঢিসুম’। শুনেই মনে হবে অমিতাভের ঘুষিটা ল্যান্ড করল প্রাণের নাকে। আসলেও তাই-ই।”
অদৃষ্টের পরিহাস, তার আড়াইশো বছর পরেও তার পায়ের বুড়ো আঙুল চকচকে হবার মূলে এক সংস্কার—‘ওটি’ ছুঁয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে পাশ অবধারিত। এ তত্ত্বের উদ্গাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ছাত্ররা। উলটো দিকে হাই কোর্ট, সেখানে বিচারপ্রার্থীরাও ওই বুড়ো আঙুলের বশংবদ, ছুঁয়ে গেলে জিত হবেই হবে। (Little Magazine)
হায়, কুসংস্কারবিরোধীর কী করুণ পরিণতি! কিন্তু আমি তাতে খুশি। কেন-না ভদ্রলোক ছিলেন ঘোষিত বর্ণবিদ্বেষী। লিখেছিলেন “I am apt to suspect the negroes to be naturally inferior to whites. There was never a civilized nation of any other complexion than white- nor even any individual eminent in action or speculation.” অতএব। সবুজ ঘাসের প্রিন্সেস স্ট্রিট গার্ডেনের মধ্যে প্রায় দু’শো ফিট উঁচু গথিক স্থাপত্য, স্যার ওয়াল্টার স্কট মেমোরিয়াল। “ইভান-হো” বা “দ্য লেডি অফ দ্য লেক”-এর লেখক স্কট এখানে প্রায় ঠাকুরবাড়ির সদস্য, রবিঠাকুর না হলেও অবনঠাকুর তো বটেই। কোনও সাহিত্যের মানুষের উদ্দেশে করা এটাই পৃথিবীর উচ্চতম সৌধ। (Little Magazine)
আরও পড়ুন: ‘আমি আর লীনা হেঁটে চলেছি’: কবিতা— ছাগলের তৃতীয় সন্তান- জাজরা খলিদ
বছরের এ সময়ে ঠিক বিকেল পাঁচটায় তার চূড়োর ছায়াটা পড়ে পাশের এক রেস্তোঁরার সাইনবোর্ডে, নাম ‘ঢিসুম’। শুনেই মনে হবে অমিতাভের ঘুষিটা ল্যান্ড করল প্রাণের নাকে। আসলেও তাই-ই। এক টুকরো বোম্বাই ঘরানার ইরানি কাফে দুটো তলার বিরাট অংশ জুড়ে সাহেবদের শহরের বুক জুড়ে বসেছে। আবহসঙ্গীতে বিনাকা গীতমালার আমিন সায়ানি, দেওয়াল জুড়ে পুরনো পার্শি নাটকের সাদা কালো স্টিলস, ষাটের দশকের সিলিং ফ্যান ঘুরছে হলুদ আলোর নীচে কাঠের ফার্নিচারে। মনের আরাম। তবে সবার চেয়ে বেশি আরাম পেলুম সাদা চামড়ার মেয়ে এসে অর্ডার নিয়ে যখন লিখছে, টু পাও ভাজি, টু ডাল ফ্রাই, থ্রি ছোলে বাটোরে। আমিও কি তবে ডেভিড হিউমের মতই। (Little Magazine)
যত জানি, তত জানি নে
তবে এসব থাক পড়ে, থাক এডিনবরা ক্যাসেলের ইতিহাস, থাক ন্যাশনাল মিউজিয়মের স্মৃতিকথা, থাক প্রিন্সেস গার্ডেনের ফুলেল সৌরভ। আমরা যাচ্ছি স্কটিশ হাইল্যান্ড ইনার হেব্রিডেস দ্বীপমালার প্রধান সদস্য আইল অফ স্কাই-তে। তার শরীরে পৃথিবীর প্রাচীন পর্বতমালার পেশীতন্তু, শিরায় বহমান অসংখ্য হ্রদ, স্থানীয় গেলিক ভাষায় যাদের পরিচিতি ‘লক’ নামে, প্রাচীন বনানীর ফাঁকে ফাঁকে যাদের আছে এক সম্পন্ন বন্যপ্রাণের বিস্তার। (Little Magazine)
স্কটল্যান্ড আসলে ভিন্ন দেশ, খানদানি ইংরেজদের সঙ্গে যারা টক-ঝাল-নোনতা সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ। জিশুজন্মের ন’শো বছর আগের ইতিহাসের প্রথম পাওয়া সাক্ষ্যে এরা শিকারি ও ফলমূল সংগ্রাহক, ক্রমে রোমান শাসনকালীন গল-দের প্রভাবে সেল্টিক ভাষাভাষী পশুপালক ও চাষ-আবাদ করা মানুষ। নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগ অব্দি দুর্দান্ত ভাইকিংদের অধিকারে, তখনই সম্ভবত সেল্টিক থেকে গেলিক ভাষার বিস্তার, পাশাপাশি নরস আক্রমণে পর্যুদস্ত। শেষে ১২৬৬-র পারথ চুক্তির পর থেকে দুটো স্থানীয় বড়ো গোষ্ঠীর অধীনে শান্তি প্রতিষ্ঠা। আপাতত স্থানীয় কাউন্সিলের শাসনে শীতল জীবনযাপন। (Little Magazine)
“স্কটল্যান্ডের সিগনেচার খাবার ‘ফিস অ্যান্ড চিপস’। প্রায় আস্ত কাঁটাছাড়ানো মাছের কবিরাজি কাটলেট। সঙ্গে আলুভাজা আর পছন্দের সস্।”
আইল অফ স্কাই-এর প্রধান শহর পোরট্রি। আদতে বন্দর, আর তার জীবনকে ধারণ
করতে পারে, তেমন ব্যবস্থা। তবে পর্যটকের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। পুরো যুক্তরাজ্যের ১০টি
অবশ্য দ্রষ্টব্য গ্রামের একটা পোরট্রি। দশ বছরের আগের পরিকাঠামোয় কটি হোটেল, দোকান, একটা সিনেমাহল যুক্ত হয়েছে। থাকার প্রধান ভরসা এয়ার বিএনবি। শহরের কেন্দ্রস্থলে টাউন সেন্টার, যেখানে রয়েছে একটা ক্রশ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। স্কটল্যান্ডের বড়ো বেশি মানুষ এই যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন। স্কার্ট পরা ব্যাগপাইপার বাদক স্কটল্যান্ডের সংগীতের প্রতিভূ হয়ে তার পাশে সুর তুলছেন। সেখান থেকে বন্দরমুখী রাস্তা ওয়েন্টওয়ার্থ স্ট্রিটের দুপাশে আঞ্চলিক শিল্পকলার বিপণি, মূলত উলের তৈরি জিনিসের সম্ভার। হেরিং মাছের ব্যাবসাকেন্দ্ৰ, বন্দরে প্রচুর মাছ-ধরা জলযানের ভিড়। আশ্চর্যের বিষয় আঁশটে গন্ধের লেশমাত্র নেই। (Little Magazine)
একদিকের পাড়ে পরপর কটি রঙিন বাড়ি—প্যাস্টেল হোমস। গল্পটা এরকম যে এদের একটাতে বাস করত একজোড়া সমকামী পুরুষ, যারা গর্বের সঙ্গে তাদের পরিচয় আর ঠিকানা জানাতে তাদের বাড়িটাকে গোলাপি রঙে রাঙিয়ে ফেলেছিল। পাশের বাড়ির বাসিন্দা তখন তার পছন্দের ফুটবল ক্লাবের রঙে নীল করে ফেলল দেয়াল। এভাবে পর পর নানা বাহানায় আর ক’জন, তৈরি হয়ে গেল রঙিন পাড়া – প্যাস্টেল হোমস। (Little Magazine)
“পায়ের কাছে হ্রদ, নাম সাউন্ড অফ রাসে। ঘাসে মোড়া গিরিশিরার গা বেয়ে উঠতে হয় প্রায় তিনশো মিটার। কষ্ট করলে যে দৃশ্যের দেখা মেলে, তাকে দৈত্য সঙ্গে স্বর্গলাভ বললে ভুল হয় না।”
অপর্যাপ্ত মাছের চাষ। তাই স্কটল্যান্ডের সিগনেচার খাবার ‘ফিস অ্যান্ড চিপস’। প্রায় আস্ত কাঁটাছাড়ানো মাছের কবিরাজি কাটলেট। সঙ্গে আলুভাজা আর পছন্দের সস্। জিভ আর পেটের যুগপৎ শান্তি। আর রসিকজনের ‘শান্তির বারি’ স্কচ হুইস্কির সন্ধানে ট্যালিসকার বা বেন-ডেভিস ডিটিলারি দর্শন। এক ফসলের ৯ টন মল্ট এক সঙ্গে গুঁড়ো হবে, নির্যাস চলে যাবে কাঠের কন্টেনারে, যেখানে ন্যুনতম ৬ থেকে ৩০ বছর অজ্ঞাতবাস শেষে ডিস্টিলেশন হবে মস্ত যন্ত্রে। নিষ্কাশিত সিরাপে বিভিন্ন মাত্রার জল মিশিয়ে আবার জলদস্যুদের ব্যারেলে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছরের বিশ্রাম শেষে আত্মপ্রকাশ। মজার বিষয় – জলটিও ব্র্যান্ডেড। অমুক পাহাড়ের তমুক প্রপাতের জল, এই রকম আরকি! চাখার আগে দেখে আর শুনেই নেশা হবার জোগাড়। (Little Magazine)
তবে সত্যিকারের নেশার বাস পাহাড়ের গায়ে, প্রপাতের জলে। পোরট্রি থেকে ছয় মাইল দূরে ট্রটারনিশ গিরিশিরার ওপরে ১৬০ ফিট উঁচু স্তম্ভের আকারের আছে যে প্রাকৃতিক প্রস্তর-ভাস্কর্য, তার নাম ওল্ড ম্যান অফ স্টর। চারপাশে আর কয়েকটি ছোটো স্তম্ভ। কথিত, স্টর নামের দৈত্যকে মৃত্যুর পর এখানে সমাধিস্থ করা হয়। সবটুকু মাটির নীচে গেলেও জেগে থাকে তার বুড়ো আঙুল, যা নাকি আজকের ওই স্তম্ভ। পায়ের কাছে হ্রদ, নাম সাউন্ড অফ রাসে। ঘাসে মোড়া গিরিশিরার গা বেয়ে উঠতে হয় প্রায় তিনশো মিটার। কষ্ট করলে যে দৃশ্যের দেখা মেলে, তাকে দৈত্য সঙ্গে স্বর্গলাভ বললে ভুল হয় না। (Little Magazine)
আরও পড়ুন: ‘সূত্রপাত’ পত্রিকা নবপর্যায়: নাসের রাবাহ-র কবিতা: ভাষান্তর: অরিত্র সান্যাল
পোরট্রি থেকে মাইল বিশেক দূরে ব্ল্যাক কালিন্স পাহাড়শ্রেণী। তার থেকে ক্ষীণ স্রোত হয়ে নামছে ব্রিটল নদী। খানিক এসে ছোট্ট ঝরনা হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ছোট্ট পুকুরের মধ্যে, তারপর আবার পাড় উপচে বয়ে যাচ্ছে নীচে। এরকম অনেকবার। এই পুকুরদের নাম ফেয়ারি পুলস। স্বচ্ছ নীল জল। রঙিন নুড়ি-পাথরের তলদেশ। সাংঘাতিক সুন্দর কিছু না। তবে নামের প্ররোচনায় ভেবে নিন পাড়ের পাথরের ওপরে বসে আছে স্বচ্ছ পোশাকের পরিরা, সূর্যকে নিভিয়ে চাঁদের আলোর সুইচটা টিপে দিন, দূর থেকে ভেসে আসুক মেষপালকের বাঁশির সুর, দেখবেন মধ্যপ্রদেশসর্বস্ব মধ্যবয়সেও বেঁচে থাকার আনন্দ ঘিরে ধরছে আপনাকে। ঠিক যেমন করে মরে যাবার আনন্দে মশগুল করেছিল গ্লেনকো পাহাড়ের দল। সে গল্প তো আগেই বলেছি। (Little Magazine)
(বানান অপরিবর্তিত)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।