Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

উত্তরপুরুষ, তুমি (কবিতাগুচ্ছ)

Illustration
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

বসুন্ধরা 

যে কোনও বারান্দা মানে মায়ের অপেক্ষা, – বিকেলের দীর্ঘ আশাবরী
একে অপরের সঙ্গে মানুষের তর্কাতর্কি শেষ হয় না
জানলা দরজা অমন বন্ধ রেখো না হে ঈশ্বর, আমার প্রণাম
আমি রাখব কোথায়? দেহ যেখানে পোড়ে, শুধু তাকেই শ্মশান বলে না,-
মানুষ কোথায় জন্মায় আর কোন শ্মশানে পোড়ে এ এক রহস্য
অথচ রাস্তা মানেই কোথাও যাওয়ার কথা আছে
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি একপৃথিবী দুঃখ জ’মে
আমরা উন্মাদ সন্তান, খেলেছি পুতুল আর ঝুমঝুমি বাজিয়ে বলেছি
‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’…
তুমি অত ভয় পেও না মা, সঙ্গে আছি
এখনও ট্রেন চলছে, ঘড়িতে সন্ধেবেলা সন্ধে হয় আর সকালে সকাল…
পৃথিবীও অপেক্ষা করছে কোনও এক বারান্দায়, যার
কেউ না কেউ ফিরে তো আসবেই


ট্র্যাপিজ

আসলে সে রূপকথা, যাকে তুমি এতকাল জীবন ভেবেছ
যত ধিকিধিকি আগুন জ্বলবে, তত তোমার মনে পড়বে বালককৃষ্ণের কথা-
কখনও গিয়েছ কারও বাঁশি শুনে তার পিছুপিছু?
যেখানে খাদের ভয়, সেখানেই টোকা মারে প্রেম
যেন গতজন্মের অভিশাপ, গন্ধর্ববিবাহ
যুদ্ধ ও হিংসার ইতিহাস তো কম লেখা হল না আমাদের
আমাদের ভেতর যে বাঘ গুঁড়ি মেরে আছে, তার কথাও মনে রেখো-
হে ক্ষুধার্ত মানবজীবন, আড়চোখে যে এতকাল দেখে যাচ্ছে
সে তোমার সঙ্গে শোয়, স্বপ্নের ভিতর এলোমেলো বন্দুক চালায়
এইসব নিয়ে তুমি কোনওদিন উপন্যাস লেখোনি-
এখন ধানের গোলা শূন্য আর মাঠভর্তি নবান্ন
ঝরে যাচ্ছে অনাথ নির্জনতায়, তুমি, লক্ষ্য রেখো।
আগুন নিভে গেলেও, কোথাও না কোথাও তার দেহ পড়ে থাকে…

দহন

পেরিয়ে যেতে চেয়েছিলাম এই সুড়ঙ্গ, ওই কুয়াশায় মোড়া ঝাউবন
নিঃশব্দে পড়ে থাকা দেহের ভিতর কোনও স্বপ্ন থাকে না
আমি জানি, এ সময় ঝড় ঝাপটার মধ্যে পাপ ও পুণ্যের কথা অবান্তর
তবু মাটি তো কাটতেই হবে আমাদের, সভ্যতার মাটি, যার তলায়
জলের শব্দ হয়, এক আদিম নগরী থেকে কেউ কেউ বাঁশি বাজায়
শুনি অশ্বারোহী সৈন্যদল মাটিতে পা ঠুকছে ক্রমাগত
মাঠের উপর আমি কান পেতে দেখেছি কেউ নেই
শুনেছি এগিয়ে আসছে সমুদ্র হে জগন্নাথ, আমি আর কতবার
জন্ম নেব তুমি বলো,- একটি গরিব রাস্তা আছে এই জঙ্গলের ভিতর
সেখানে মানুষ যায়, কাতারে কাতারে, নাম নেই, সংখ্যা নেই
ও আমার দেশ, আমার ভারতবর্ষ, তোমায় চিনতে না চিনতেই
এই কুয়াশা মুড়ে ফেলল আমাদের, ওই সুড়ঙ্গের ভিতর সেঁদিয়ে গেলাম
এখন পাপ ও পুণ্যের কথা অবান্তর, এখন বেঁচে থাকার চেয়ে বড় কোনও
বেঁচে থাকা নেই, প্রেম নেই, ধর্ম নেই, যুক্তি নেই
কয়েকটি অবাক মুখ আজও কেন বিষণ্ণ আমি জানি না
পেরিয়ে যেতে চেয়েছিলাম তোমায়, মাটি তো কাটতেই হবে, আমরা তো
মাটির দেশের লোক, গা থেকে গন্ধ বেরোয়, যেন সাঁওতাল বিদ্রোহ

আঁধারপর্ব 

জল তো বোঝে না তার স্রোত আছে, সেও শুধু নিজেকে গড়ায়
যেদিকে রয়েছে ঢাল, ডেকেছে মোহানা
একমাত্র ঘাট বোঝে, যে সে ঘাট নয়, ত্রিবেণীর ঘাট, যেখানে
ত্রিনদী মিলিত হয়, তলায় তলায় থাকে টান
আমি তার বিদ্যুতটুকু নিয়ে যেতে এসেছি এখানে
কত জল ভেসে যায় জলে
কত স্রোত ভেসে যায় স্রোতে
অন্ধের দিন নেই রাত্রি নেই সবই অন্ধকার
সেও তো বোঝে না সব অন্ধকার আসে, যায়, জন্ম আর মৃত্যুর ভিতর
আমি তার আয়ুটুকু নিয়ে যেতে এসেছি এখানে 

বনস্পতি 

…বরং প্রেমের কবিতা লেখো, লেখো এই বর্ষামঙ্গল
সকলেই দুঃখ নিয়ে ঘর করে, মা-র কাছে মাসির গল্প
না-হয় না-ই বা করলে; কিছুদিন মধু খাও
পাখোয়াজ বাজাও
দুঃখের বর্ণনায় তুমি সঞ্জয় হলেও
যুদ্ধ কি থামাতে পারবে?
প্রতিটি মৃত্যুর জন্য মানুষ হিসেবে তুমি দায়ী
এখন কবর খোঁড়ো, শুয়ে পড়ো নিজে-
একটি বিষণ্ণ সুর কোথাও না কোথাও গাওয়া হবে
বরং প্রেমের কথা লিখে যাও, বলো, সব আছে
কিছুই হারিয়ে যায়নি এখনও কোথাও

Author Hindol Bhattacharjee

হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা লেখার শুরু নয়ের দশকে। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দুইই পেয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে। মোংপো লামার গল্প, সব গল্প কাল্পনিক, রুদ্রবীণা বাজো, বিপন্ন বিস্ময়গুলি, এসো ছুঁয়ে থাকি এই লেখকের কিছু পূর্বপ্রকাশিত বই।

Picture of হিন্দোল ভট্টাচার্য

হিন্দোল ভট্টাচার্য

হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা লেখার শুরু নয়ের দশকে। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দুইই পেয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে। মোংপো লামার গল্প, সব গল্প কাল্পনিক, রুদ্রবীণা বাজো, বিপন্ন বিস্ময়গুলি, এসো ছুঁয়ে থাকি এই লেখকের কিছু পূর্বপ্রকাশিত বই।
Picture of হিন্দোল ভট্টাচার্য

হিন্দোল ভট্টাচার্য

হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা লেখার শুরু নয়ের দশকে। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দুইই পেয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে। মোংপো লামার গল্প, সব গল্প কাল্পনিক, রুদ্রবীণা বাজো, বিপন্ন বিস্ময়গুলি, এসো ছুঁয়ে থাকি এই লেখকের কিছু পূর্বপ্রকাশিত বই।

7 Responses

  1. কবিতাময় অদ্ভুত বিষণ্ণতা, আশ্চর্য মায়ার কথা চলাচল করে। মনে হয়, অন্ধকার নৌকোর মধ্যে লন্ঠন দুলে উঠলো…

  2. মধ্য মেধা নিয়ে হিন্দোলের কবিতা সম্পর্কে মতামত প্রকাশের স্পর্ধা আমার নেই শুধু এটুকু জানি ওর কবিতা থেকে ‘আয় টুকু নিয়ে যেতে এসেছি ‘ আসলে খুব সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় ছবি আঁকেন, ‘কত স্রোত ভেসে যায় স্রোতে ‘ আমিও হিন্দোলের কবিতার স্রোতে ঋদ্ধ হই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস