সত্যি কথা বলতে কী, দু-চোখ মেলে ভাল করে চারপাশটাকে দেখতে অবধি পারি না। মনে হয় কী সব যেন আবছা আবছা আপন মনে ঘটে চলেছে, আর আমি ফ্যালফেলিয়ে রয়েছি। আমি একটা ঝিল্লি ভেদ করে সেই প্রাত্যহিকতায় ঢুকতে চাইছি কিন্তু কিছুতেই পারছি না। আমার চারপাশে খুবই এনার্জি-পূর্ণ নানাবিধ সিরিয়াস ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আর আমি হা ঘুম! আমার ঘুম! বলে পথে পথে বুক চাপড়ে, ককিয়ে মরছি। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠা মাত্র মনে হয়, উফ! আর একটু যদি ঘুমিয়ে নেওয়া যেত। দুপুর বেলায় মনে হয়, এ ছাড়ের চাকরি করে কী হবে, এর চেয়ে একটু ঘুমোতে পারলে ভাল হত। সন্ধে বেলায় যখন আর জাগতিক বিষয়বস্তু মাথায় প্রায় কিছুই ঢোকে না কিংবা আলমারির চাবি খুঁজতে খুঁজতে জান কয়লা হয়ে যায়, তখনই মনে পড়ে যে বিজ্ঞান বলেছে ঘুম কম হলে ব্রেন ঠিক মতো কাজ করে না। এবং তখুনি দ্বিধা না করে আমার ঘুম না হওয়ার দায় আমি বাড়ির লোকেদের এবং সংসারের ঝামেলার ওপর তুরন্ত চাপিয়ে দিই। রেগে গনগন করতে থাকি। আসলে এই রাগটা অধিকার কেড়ে নেওয়ার রাগ, বঞ্চিত হওয়ার রাগ, হকের পাওনা চোট হয়ে যাওয়ার রাগ। এ যে কী ছটফটানি, সে কথা কেবল বুঝতে পারে সংসার ও আপিসের ঘানি টানা স্লিপ-ডিপ্রাইভড মানুষজন। এরাও কিন্তু এক ধরনের বঞ্চিত সমাজের অংশ। এবং এদের হকের ঘুম না দিলে সংসার-বাহাদুর এক দিন উল্টে যাবেই যাবে। ঘুম না হওয়ার রোশানলে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাবে।
ঘুম এখন আমার কাছে অধরা প্রেমিক আর আমি নাছোড় স্টকার। সকাল-দুপুর-সন্ধে-রাত্রি আমি স্টক করতে থাকি ঘুমকে কিন্তু ঘুম আমায় ধরা দিতে চায় না। অবশ্য সেটা বললে সর্বৈব মিথ্যে বলা হবে। তাই বলা ভাল, ঘুম ধরা দিলেও আমি ছলে-বলে তাকে ধরে রাখতে অক্ষম।যেমন, দুপুর বেলা কম্পিউটারকে ঢুলুনি মাথা দিয়ে প্রায় ঢুঁসিয়ে দিয়ে যখন কাজ করার চেষ্টা করি, ঠিক সেই সময় নিবিড় ভাবে সে আমার চোখের পাতায় নেমে এসে ঘন হতে চায়, আমি অ-মানবিক মনোবলে তাকে হতচ্ছেদ্দা করে, কড়া-কফি সহযোগে প্রত্যাখ্যান করি। বিকেলে ফেরার পথে ফ্লাইওভারের ওপর মোলায়েম যাত্রায় গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে যখনই তুঁহু মম মনপ্রাণ হে! আউড়াই কী আউড়াই না, প্যাঁ প্যাঁ করে গাড়ির হর্ণের দাপটে মোর ঘুমনাথ পগাড় পার। এমন করে সন্ধে গড়িয়ে যখন রাতে বিছানায় গিয়ে শুই এবং ভাবি, এ বার একটু শান্তিতে ঘুমব, তখনই সাত বছরের একটি দুরন্ত জানান দেয় যে কালই তাকে একটি জটিল সায়েন্স প্রজেক্ট জমা দিতে হবে। আমার ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু অনুপায়। ছেলেকে ঘা-কতক বসিয়ে চার্ট পেপার, ইন্টারনেট, রং পেন্সিল, কাঁচি-আঠা নিয়ে বসতে হয়। উঠতে উঠতে রাত্রি দ্বিপ্রহর। তত ক্ষণে আমার কাঙ্ক্ষিত, অন্যের ডাগর চোখে বাসা বেঁধেছে আর আমায় লবডঙ্কা দেখিয়েছে। আমি এক-দু সেকেন্ড অন্তর হাই তুলছি, চোখ কচলাচ্ছি আর আশেপাশের নিশ্চিন্তে ঘুমন্ত মানুষদের দেখে হিংসায় সবুজ হয়ে যাচ্ছি। বুক ঠেলে কান্না উঠে আসছে। আর এক প্রহর বাদেই সকাল ছয়টার অ্যালার্ম বাজবে, আমায় সংসারে জুতে য়েতে হবে। এই সব ভাবনা মগ্ন হতে হতে ঠিক যখন সমস্ত অস্ত্র সমর্পণ করে ঘুমের অতলে তলিয়ে গিয়েছি তখনই অতর্কিতে অ্যালার্ম আক্রমণ করে। অপ্রস্তুত সৈনিকের মতো নিজেকে হাতড়ে হাতড়ে টেনে তুলি ও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিই, এবং আহত ও অবসৃত প্লেয়ারের মতো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্যাভিলিয়নের দিকে নয়, এখানে ব্যতিক্রম আছে, যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে যাই। সঙ্গী বলতে বুকে বল আর চোখে ঘুম। ব্রেনের আলুথালু ভাব তো রয়েইছে।
এর পর আবার সেই পরিচিত পুরাতন ভৃত্যের মতো জীবন, কখনও ফ্রিজ থেকে, কখনও ছেলের বইয়ের ব্যাগ থেকে, কখনও কাজের মাসির কামাই থেকে এবং কখনও বা মাল্টিটাস্কার আমি’র “’টু ডু” লিস্টি থেকে উঁকি দেয় ও মুচকি হাসে। আমি কালবিলম্ব না করে পুনরায় দুর্বাসা মুনির স্মরণ নিই এবং রেগে কাঁই হয়ে যাই। তার পর বাড়িতে বিভিন্ন বিদ্যুৎ চমকিয়ে অফিস যাই, সেখানে মনে মনে সবার বাপবাপান্ত করতে থাকি, বিশেষ করে যে সব ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ফুর্তিতে খিলখিল করে হেসে গড়িয়ে, জীবনকে জাপটে জড়িয়ে নিতে চায়, তাদের দেখে আমার গা-পিত্তি জ্বলে যায়। আর বসন্তকাল সারা বছরই তাদের আশেপাশে ঘ্যানঘ্যান করে হেদিয়ে মরে। আর আমার সঙ্গে তার সাপে-নেউলে সম্পর্ক এখন। ভেবে দেখেছি, আমি এমনটা ছিলাম না। এ সব ষড়যন্ত্রই ঘুমের, মানে না ঘুম হওযার চরম সাইড এফেক্ট। কিন্তু এ আর কত দিন সহ্য করা যায়। আড্ডার কোণে, সিনেমা হলের সিটে, মেট্রোর হাতল ধরে, এমনকী লিফটে ১৭ তলা ওঠার সময়ও চোখ বুজে একটু ঘুম কেড়ে নেওয়ার কী আত্যন্তিক প্রচেষ্টা! দেখেও চোখে জল আসে।
আমার আবার কোনও তুলসী চক্রবর্তীও নেই যিনি কিনা ঘুমচোর হয়ে আমারটি হাতিয়েছেন, যেমনটি মলিনাদেবীর জন্য, সাড়ে ৭৪ সিনেমায় করেছিলেন। ফলে কাকে ঠিক করে দোষ দেব বুঝে উঠতে পারি না। দুগ্গা পুজো, সত্যনারায়ণ-এ কত কী মনষ্কামনা জানায় লোকজন। আমি কেবল বলি, “হে ঠাকুর, শুধু এটুকু বলে দাও, আমি কবে একটি রাত পুরো ঘুমোতে পারব? কী এমন বেশি চাহিদা আমার”!!!
" data-author-type="
Warning: Undefined array key "type" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/html-layout.php on line 18
" data-author-archived="
Warning: Undefined array key "archived" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/html-layout.php on line 19
">
Warning: Undefined array key "id" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/html-layout.php on line 39
-"
Warning: Undefined array key "archive" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/html-layout.php on line 40
itemscope itemid="" itemtype="https://schema.org/Person" >
Warning: Undefined array key "img" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-avatar.php on line 4
Warning: Undefined array key "show_social_web" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-socialmedia.php on line 6
Warning: Undefined array key "show_social_mail" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-socialmedia.php on line 7
Warning: Undefined array key "show_social_phone" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-socialmedia.php on line 8
Warning: Undefined array key "type" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 17
Warning: Undefined array key "type" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 19
Warning: Undefined array key "type" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 21
Warning: Undefined array key "archive" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 37
Warning: Undefined array key "name" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 41
Warning: Undefined array key "job" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 10
Warning: Undefined array key "job" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 15
Warning: Undefined array key "company" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 17
Warning: Undefined array key "phone" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 26
Warning: Undefined array key "mail" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 36
Warning: Undefined array key "web" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 46
Warning: Undefined array key "bio" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-bio.php on line 8
3 Responses
অসাধারণ
দিদি, শ্রদ্ধা এবং প্রণাম নেবেন। অসামান্য নিবন্ধ। প্রায় একই অবস্থায় আছি। যেটুকু সময় ঘুমিয়ে থাকি, সেই সময়টুকু বাদ দিয়ে সর্বক্ষণ ঘুম পায়?
লেখাটি দুর্দান্ত। কিন্তু অবস্থা শোচনীয়, সত্যিই।