সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিত ফুড গ্রুপগুলোর দৌলতে আজকাল বিভিন্ন শহরের খাদ্যরসিক মানুষরা সহজেই পরিচিত হয়ে উঠছেন। সেইরকমই একটি ফুড গ্রুপ – দ্য নোমাড ফুডি-র কিছু সদস্যরা ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি লখনাউ-তে দু দিন কাটালেন এই প্রাচীন শহরের বিখ্যাত খাদ্য-সংস্কৃতির স্বাদ আহরণের উদ্দেশ্যে। ফুড ট্রীপের আয়োজন করেছিলেন গ্রুপের কর্ণধার সুপ্রিয় বোস এবং এস এন এস টেবল সংস্থার সুনেয়া কাপুর। দলের ১৫ জন মুম্বইবাসী, আর আমি ও এক সঙ্গী কলকাতার বাসিন্দা।
রাজসিক নৈশভোজ ও শাহী মেহমান নওয়াজি
১৪ই ফেব্রুয়ারী বিকেলের ফ্লাইটে লখনউ পৌঁছে পুরনো শহরের ট্রাফিক ঠেলে হজরতগঞ্জের কাছেই চার তারা হোটেল লেওয়ানা সুইটস–এ চেক ইন করলাম। সুপ্রিয় আমাদের জন্য এয়ারপোর্টে একটি ছোট এসি বাস নিয়ে অপেক্ষা করছিল। মুম্বই ও কলকাতা থেকে আসা ফ্লাইটের সময় কাছাকাছি ছিল। তাই সবাই একসঙ্গেই হোটেলে গেলাম। অনলাইন পরিচয় তো আগেই ছিল। বাকিটা বাসে বন্ধুত্বটা হইচই করতে করতেই জমে গেল।
আইটেনারি অনুয়ায়ী প্রথম রাতের নৈশভোজ ছিল খাজুরগাঁও-এর বর্তমান মহারাজ-এর হাভেলীতে। ড্রেস কোড ছিল ইন্ডিয়ান। আমরা সবাই একটু ফ্রেশ হয়ে শাড়ি, কুর্তা ইত্যাদি পরে আবার চাপলাম বাসে। এখানে বলে রাখি যে আমরাই ছিলাম প্রথম ভারতীয় টুরিস্ট যাদের খাজুরগাঁও রাজপরিবার আপ্যায়ন করেছিলেন। এর আগে অবধি শুধুমাত্র বিদেশী পর্যটকদের জন্য হাভেলীর দ্বার খোলা হয়। হোটেল থেকে অল্প দূরেই হাভেলী। ঢোকার গেট বাসের পক্ষে বেশ ছোট। খানিক কসরতের পর বাস ঢুকলে দেখি ভিতরে বেশ বড় চত্বর। ফোয়ারা ওয়ালা বাগান পেরিয়ে হাভেলী। সুসজ্জিত গাড়িবারান্দার সিঁড়ির উপরেই অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষমান রাজকুমার শিবরাজ, রাজকুমারী ইন্দ্রাণী এবং রাণীসাহেব আভা। মহারাজা শারীরিক অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত ছিলেন।
ভিতরে ঢুকে প্রথমেই শতাব্দী প্রাচীন বিশাল দরবার হল। মেঝে জুড়ে গালিচা, আর হলের ঠিক মাঝখানে কাওয়ালী দল তৈরি আমাদের বিনোদনের জন্য। দেওয়ালের তিনদিক ঘেরা বসার জায়গায় টুক করে বসে পড়লাম। আলাপ পর্বের পর কাওয়ালীর সুরে হল গমগম করে উঠল। উপরে তাকিয়ে দেখি হলের চারদিক ঘোরানো দোতলার বারান্দা যেটা লখনউ স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য। সুরের সঙ্গে সুরাপর্বও শুরু হলো আর তার সঙ্গে ট্রে ভর্তি নানা খাবার পরিবেশন। অ্যাপিটাইজার ছিল শামী কাবাব, মুরগ সুফিয়ানা টিক্কা, শিরমাল-এর উপর সাজানো গালাওয়াত কাবাব, চটপটি মছলি, সিকান্দ্রী পনির, পিটে পালক কা খাস্তা, আলু পিঁয়াজ কি পাকোরি এবং বলাই বাহুল্য যে এর প্রত্যেকটাই ছিল অপূর্ব সুস্বাদু। খাবারগুলোর সঙ্গে একটু পরিচয় করিয়ে দিই। শামী কাবাব হল মাংস (পাঁঠার) বাটা দিয়ে তৈরি চ্যাপ্টা গোল ছোট কাবাব। মুরগ সুফিয়ানা টিক্কা হলো হাড়বিহীন মাংসের টুকরো মৌরি ও অন্যান্য মশলা সহযোগে তন্দুরে গ্রীল করা কাবাব। গালাওয়াত হলো মোষের মাংস পিটিয়ে তৈরি মুখে দিলে গলে যায় এমন নরম কাবাব। এর সম্বন্ধে বিশদে পরে বলব। এটা শিরমল পরোটার (এক ধরনের কেশর দেওয়া পরোটা) টুকরো-র উপর সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়েছিল। চটপটি মছলি হল মাছ দিয়ে তৈরি তন্দুরি টিক্কা আর সিকান্দ্রী পনির হল গরম মশলা, দই, চাট মশলা, পেঁয়াজ, আদা রসুন ইত্যাদি মাখিয়ে শাসলিক। পিটে পালক কি খাস্তা হচ্ছে পালং শাকের পুর ভরা খাস্তা কচুরি আর পাকোরি হচ্ছে আলু পেঁয়াজ ময়দায়ে চুবিয়ে ভাজা পাকোড়া।
নবাবী পরিবেশে আমাদের মধ্যেকার নবাব-বেগম খোশমেজাজ ততক্ষণে জেগে উঠেছে। কাওয়ালির দিল দরিয়া গানের সঙ্গে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে কাওয়ালী চাল এবং দরাজ হাথে বকশিশ দেওয়া যখন জমে উঠেছে তখনই নৈশভোজের ডাক। সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলার বারান্দা পেরিয়ে পৌঁছলাম ডাইনিং হলে। সেখানেও দেখি বিশাল টেবল জুড়ে এলাহি ব্যবস্থা। টেবলে গোল করে সাজানো রয়েছে মাংসের কোর্মা, মুরগ মুসল্লম, মাংসের শাহী পুলাও, মছলি কি সালান, পনির বেগম পসন্দ, আওয়াধি নিমোনা, বেসন কি আলু, রঙ বিরঙ্গি, ডাল সুলতানি, সবজ পুলাও, শিরমল, রুমালি, ফিরনি ও মালাই পান। এ সবই লাখনউ অওয়ধি ঘরানার বিলুপ্তপ্রায় খাবার। রাজকুমার শিবরাজ জানালেন এইসব খাবারের প্রণালী সযত্নে সুরক্ষিত পরিবারের রন্ধনশালার চার দেওয়ালের মধ্যে। মহারাজার খানসামারা উত্তরাধিকারসূত্রে এই সমস্ত রান্নার প্রণালী আয়ত্ত করেছেন। এদের আগের প্রজন্মও খাজুরগাঁও রাজবংশের রন্ধনশালার কর্মচারী ছিলেন।
সব পদের বর্ণনা দিতে গেলে তো মহাভারত হয়ে যাবে, তাই যেগুলি অতুলনীয় লেগেছিল শুধু সেগুলি সম্বন্ধে বলছি। তার মধ্যে প্রথমেই ছিল মুরগ মুসল্লম। গোটা মুরগিতে মশলা আর দই মাখিয়ে অনেকক্ষণ রেখে বাদাম বাটা আর পেঁয়াজ দিয়ে ঢিমে আঁচে রান্না। রেকাবীতে রাখা মুরগির গায়ে চামচ ছোঁয়ালেই মাংস হাড় থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছিল। মুখে দিলে তা গলে যাওয়ার মত নরম আর নজিরবিহীন রকমের সুস্বাদু। সেই স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুঘলাই রেস্তরাঁয় এই জিনিস খেয়েছি, কিন্তু এইরকম স্বাদ আগে কোথাও পাই নি। দ্বিতীয় যে পদটার স্বাদ অনন্য লেগেছিল সেটা হল শাহী পোলাও। খাসির মাংসের বড় বড় টুকরোর সাথে কেশর দেওয়া সরু চালের দম পোলাও। যেমন সুন্দর দেখতে তেমনই মন মাতানো গন্ধ। খেতে শুরু করলে থামা প্রায় অসম্ভব। মাছের সালান ছিল আরেকটা চমকপ্রদ পদ। এমনিতে মাছ আমার তেমন প্রিয় নয়। তাও স্বাদ নেওয়ার জন্য সামান্য খেয়ে দেখি অপূর্ব। বড় বড় ম্যাকারেল মাছের টুকরো পাকা টম্যাটো আর মশলা দিয়ে একটু টক টক একটা কারি। ডেসার্ট-এ আশ্চর্যজনক পদ ছিল মালাই পান বা বালাই কি গিলউরী। পাতলা মালাইয়ের পরতের মধ্যে মাওয়া, মিছরি আর ড্রাই ফ্রুটসের পুর ভরে পানের আকার দেওয়া হয়। উপরে রুপোলী তবক। এ জিনিস শুধুমাত্র লখনউ-তেই পাওয়া যায় এবং এটা তৈরি করতে অত্যন্ত উচুঁদরের পারদর্শিতা প্রয়োজন। খেয়ে যাকে বলে প্রথম কামড়েই প্রেম।
রাজকীয় আথিতেয়তা শুধু প্রথম রাতেই শেষ নয়, দ্বিতীয় রাতেও নৈশ ভোজের নিমন্ত্রণ ছিল অবনবাই ম্যানশনে সুনেয়ার পরিবারের সঙ্গে। অনেকেই জানেন না যে লাখনউ-তে বিখ্যাত গঙ্গা-যমুনা (হিন্দু-মুসলমান) সংস্কৃতির তলা দিয়ে তিরতিরিয়ে সরস্বতীর মত বয়ে যাচ্ছে পার্সি সংস্কৃতি। সুনেয়ার মাসী মিস জারীন ভিকাজী আমাদের শোনালেন তাঁর পূর্বপুরুষদের ব্রিটিশদের কাছ থেকে তালুক পাওয়ার গল্প আর এই শহরে আস্তে আস্তে পার্সি সমাজ গড়ে ওঠার কথা।
খাজুরগাঁওতে যদি আওয়াধি সংস্কৃতির পরিচয় পেয়ে থাকি, তবে অবনবাই ম্যানশনে কী করে পার্সি কায়দায় পার্টি করতে হয় তার আন্দাজ পেলাম।
সুন্দর, ঢালা বড় ছাতে কাওয়ালীর বদলে আয়োজন ছিল লাইভ গজলের। আমাদের দলের সদস্যদের গাওয়ার সুযোগও ছিল। ছাত অচিরেই ড্যান্স ফ্লোরে রূপান্তরিত হলো পুরনো হিন্দি গানের দৌলতে। ছাতের লাগোয়া ঘরে ওপেন বার আর সঙ্গে বার-বি-কিউ। ছিল লাখনউ-এর বিখ্যাত রাজা ভাইয়ার ভাঙ – তবে সতর্কীকরণ বার্তা সহযোগে। অ্যাপিটাইজার ছিল তন্দুরি সোয়া চাপ, মালাই ব্রকলি, মাটন শিখ কাবাব, মুরগ মখমলি টিক্কা, এবং কাকোরি কাবাব।
মেইন কোর্সে ছিল মাটন পসিন্দা কাবাব, ফিশ মুসল্লম, পনির খুশ রঙ, ভেজ পুলাও, পুদিনার রায়তা, আর অবশ্যই জনপ্রিয় পার্সি ডিশ মাটন ধানসাক ও ব্রাউন রাইস। রান্না অতি অপূর্ব। তবে যে পদটার জন্য এখনও মন কেমন করে, সেটি হল গাজর কি হালুয়া। নিজেদের রসুই-এ তৈরি ঘি-এ জবজবে গাজর আর তার মধ্যে গিজগিজ করছে কাজু কিশমিশ। যেমন গন্ধ, তেমন স্বাদ। দু বাটি খাওয়ার পরেও এখন মনে হয় কেন তখন আর এক বাটি খেলাম না। দুঃখের কথা হল ভাঙের প্রভাবে এই আশ্চর্য পদের ছবি তোলার কথা দলের কারওরই খেয়াল হয়নি।
লখনউ-এর বিখ্যাত মেহমান নওয়াজি আর নবাবী খানার ছাড়াও এই সফরে পাওয়া গেল লখনউ-এর রাস্তার অসামান্য সব খাবর চেখে দেখার সুযোগ। তাই অওয়ধি খানার দ্বিতীয় পর্বে থাকছে সেই টুন্ডে, ইদ্রিস, নিমিশ, হজরতগঞ্জের গল্প।
" data-author-type="
Warning: Undefined array key "type" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/html-layout.php on line 18
" data-author-archived="
Warning: Undefined array key "archived" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/html-layout.php on line 19
">
Warning: Undefined array key "id" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/html-layout.php on line 39
-"
Warning: Undefined array key "archive" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/html-layout.php on line 40
itemscope itemid="" itemtype="https://schema.org/Person" >
Warning: Undefined array key "img" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-avatar.php on line 4
Warning: Undefined array key "show_social_web" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-socialmedia.php on line 6
Warning: Undefined array key "show_social_mail" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-socialmedia.php on line 7
Warning: Undefined array key "show_social_phone" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-socialmedia.php on line 8
Warning: Undefined array key "type" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 17
Warning: Undefined array key "type" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 19
Warning: Undefined array key "type" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 21
Warning: Undefined array key "archive" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 37
Warning: Undefined array key "name" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-name.php on line 41
Warning: Undefined array key "job" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 10
Warning: Undefined array key "job" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 15
Warning: Undefined array key "company" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 17
Warning: Undefined array key "phone" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 26
Warning: Undefined array key "mail" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 36
Warning: Undefined array key "web" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-meta.php on line 46
Warning: Undefined array key "bio" in /www/banglalivecom_170/public/wp-content/plugins/molongui-authorship/views/author-box/parts/html-bio.php on line 8
2 Responses
খুব ভালো লাগল পড়তে।
Wow this sounds amazing. Feeling bad that I am no longer in Bombay.