Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

শয়তানের ফন্দি আর, বন্দিমুক্তির দিশা

দেবজ্যোতি

অক্টোবর ১৭, ২০২০

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

এই তো, এবারকার মতো বর্ষা চলে গ্যাছে। কুসুম-কুসুম কাশ দুলেছে, পুরনো বুড়ো ঝুলের মতো আঁশ উড়িয়ে আলুথালু আঁচলা হাওয়ায়। ভিজে মাটি শুকিয়ে গ্যাছে, তবে রুক্ষ হয়ে যায়নি এতটুকুনও। অন্তরে তার টইটম্বুর রস। মাপ্রকৃতির ঋতুচক্করে এখন তাপমাত্রা আর আপেক্ষিক আর্দ্রতার এক নিখুঁত ভারসাম্য। এ মোলায়েম কোলে, আলিস্যি খানিক পড়ে থাকলে চিৎপাত, আপনা হতেই মন কেমন বৃন্দাবন হয়ে যায় বুঝি। বিবাগী বাঁশির পুরাতনী সে পুরিয়া কল্যাণ, ধীরমন্দ লয়ে স্তিমিত হয়ে আসে, ঢলে-পড়া পশ্চিমের খাতকিনারে। চোখের ওপরে এই অনন্ত কালো-জুড়ে, অগুন্তি ফুটে ওঠে আলোকবিন্দু থরে-থরে। সহস্র সে গোপনারীভিড়ে স্বর্ণখণ্ড শ্রীমতী-যথা, শুষ্কশীর্ণ শবমূলাধারে আঁজলাখানিক সঞ্জীবনী সোম, অচেতনের শূন্যপিণ্ডে হৃদিচৈতন্যস্পর্শ, শেষ আশ্বিনের ভাঙা একখানা চাঁদ, জ্বলজ্বল করে ওঠে।

[the_ad id=”266918″]

এ কৃষ্ণপক্ষ, ছিনেজোঁকের মতো সমস্ত রূপ রস রজঃ তার নিংড়ে শুষে শেষ করে দিয়ে যাচ্ছে, তিথি গুনে-গুনে রোজ যতটা নেওয়ার, ছাড় নেই কণাটুকুন। তবু, যেতে-যেতেও যৌবন এখনও যতটুকুন আছে, তাই দিয়েই ফি-রাতে সে তার রাসপসরা সাজিয়ে বসে ঠিক, নিশ্চলে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে পুনঃ। যেন এই তার কাজ। কিম্বা, কপাল। আর-জম্মের পাপ। অথবা, প্রেম। আর, এ সবের মাঝে, ত্রয়োদশী চাঁদের কাঁধের কাছে মুখ গুঁজে, গুটিসুটি থাকে চুপটি বসে মিথুন রাশি। অলীক এক জাদুকল্প। অযোনিসম্ভূত অসীম। একটামাত্র দৃশ্যপটে এত-এত ভিন্ন আলোকবর্ষের সহাবস্থান। এতগুলো আলাদা সময়। সেই প্রত্যেকটি সময়ের আলাদা-আলাদা স্মৃতি। এত মানুষ, এত মুহূর্ত, এত মায়া মাদকতা মোহ। সব যেন একই সঙ্গে এখন ভিড় করে আসছে নেশাগ্রস্তের অসংলগ্ন অবচেতনে, স্বচ্ছ-অস্বচ্ছের মধ্যবর্তী এক ঘোলাটে ঘনত্বে। স্বপ্ন। তাতে ডুবে যেতে-যেতে শিথিল হয়ে আসছে স্নায়ু। চেতনার দায় ফুরিয়ে আসছে। হালকা হয়ে আসছে অস্তিত্বের অস্বস্তি। আর, এই আলগা আরামে আবার ঘুমিয়ে পড়বার আগে, মনে পড়ে যাচ্ছে, বহু বহু দিন স্নান করা হয়নি। এক পাশ ফিরে শুয়ে থাকতে-থাকতে, সে পাশটা সাদা হয়ে গ্যাছে রক্তহীন। শক্ত স্যাঁতস্যাঁতে বিসনায়, সুজনি চিটচিট করছে গায়ে। অসুখ। সারছে না। যুগের পর যুগ। সারছে না কিছুতেই। চিরস্থায়ী মড়কের মরশুম এক। এই শ্যাওলা, ছ্যাৎলা, এই বরফবক্ষে স্বতঃসংরক্ষিত ফসিল, সেই কবেকার এক মড়ার এই যে শুধু-শুধু রয়ে যাওয়ার ঢঙ, কী যেন মহার্ঘ্য কোনও প্রাগৈতিহাসিক পিন্ডি, গর্ভাধারে আগলে রাখা সৃষ্টির আগে দিয়ে, শালগ্রামে শিলাবন্দি ঈশ্বরের জন্মকোষ, ওঁ নমঃ, ওঁ নমঃ! আর পারি না। সত্যিই পারি না আর বইতে। গলায় বাঁধা দড়ি আর তার অন্য প্রান্তে পাপের ঘড়া। কবে পূর্ণ হবে! কবে পূর্ণ হবে! আর কত ভোগান্তি লেখা আছে কপালে আমার!

এ সবের মাঝে, ত্রয়োদশী চাঁদের কাঁধের কাছে মুখ গুঁজে, গুটিসুটি থাকে চুপটি বসে মিথুন রাশি। অলীক এক জাদুকল্প। অযোনিসম্ভূত অসীম। একটামাত্র দৃশ্যপটে এত-এত ভিন্ন আলোকবর্ষের সহাবস্থান। এতগুলো আলাদা সময়।

এর মধ্যে, লকডাউনের বাজারে, পাড়ার ইস্তিরিওলাটা মরল। না, করোনায় না। না-খেতে পেয়েও না। এমনি ঠিকই ছিল, ইস্তিরি আসছিল না তেমন, বেপাড়ার এক সাইকেলভ্যানওলাকে ফিট করে, তরিতরকারি নিয়ে ঘুরছিল গলি-গলি, দিব্যি দু’পয়সা হচ্ছিল। এমনিতেই একবেলা খাওয়া, সে খরচও বেঁচে যাচ্ছিল বেশ, ফ্রি রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে। অন্য বেলা মদ। কিন্তু লকডাউনে সেইটে জুটছিল না ঠিকঠাক। ব্ল্যাকে তিনগুণ চারগুণ দাম। অত পয়সা ওর নেই। অন্য সব ইস্তিরিওলাদের মতো, বাড়ি-ভাড়া ফ্ল্যাট-বিক্কিরির দালালি করে না। একলা পেট। অত লোড নিয়ে লাভ কী! তো, লকডাউন আলগা হলো। দেড় মাইল লাইন ঠেঙিয়ে দোকান অবধি পৌঁছনো গেল। জীবন আবার ছন্দে ফিরে এল আগেকার মতো।

[the_ad id=”266919″]

তার মধ্যে, একদিন অ্যায়সান ঝড় দিলো মাইরি, শালা বাপ-চোদ্দোপুরুষে কোনও কালে দেখেনি তেমন। তো, ইস্তিরিওলা স্টক তুলে গুছিয়ে রেখেছিল আগে দিয়েই, এমন দিনে তো বিশেষ কিছু করবার থাকে না, বাবু তাই দুপুর হতেই টুন। ঝড় কখন এল, ক’খানা ল্যাম্পপোস্টের মাজা মুচড়ে দিল, কাদের বাড়ি পাঁচিল পড়ে গেল, আরে, যার ফ্ল্যাট আছে, তারই তো অ্যালমুনিয়ামের জানলা আছে, তার কাচ ভাঙবার ভয়ে সে মরুক গে যাক, এ মাল এদিকে মহারাজ হয়ে দিব্যি নিজের চাদ্দিক-খোলা ইস্তিরি-আস্তানায় মেহফিল জমিয়ে বডি টানটান লম্বা, বুঝতেও পারেনি, ঝড়ে কখন সে গুমটি মড়মড় করে মচকে গ্যাছে, কখন সে গড়িয়ে পড়ে গ্যাছে রাস্তায়, কখন জল জমে গ্যাছে শহরজুড়ে, তাতে ডুবে, নাকি নিউমোনিয়া হয়ে, ভগবান জানে, পরদিন সকালে ভালো মনে আম্ফান দেখতে বেরিয়েছি, শুনি নাকি মরে পড়ে আছে ফুটপাতের খাঁজে, গিয়ে দেখি পাড়ার লোকে তাকে গোল হয়ে ঘিরে আহাআহা করছে, মদ খাওয়া কত খারাপ, বেঘোরে মরে গেলো ভালো একটা লোক, ইত্যাদি। মরা ইস্তিরিওলার মুখখানার পানের চেয়ে, বিশ্বাস করুন, হয়তো কানে লাগবে শুনতে, কিন্তু সত্যি কথাটা হল, আমার অতটাও মনখারাপ হয়নি, বরং তার মৃত্যর কাহিনিখানা জেনে, কী যে ভালো লেগেছিল ওই মুহূর্তে, আহা, কী সুখে মরেছে গো!

[the_ad id=”270084″]

দুনিয়ার লোকে তার আগে এক হপ্তা টানা টেনশন করে মরেছিল। ঝড় আসছে, ঝড় আসছে। তারপর, ঝড় এল। আমরা সক্কলে সিঁটিয়ে রইলুম। চাদ্দিকে একনাগাড়ে ভয়ঙ্কর হাওয়ার ভৌতিক হাসি। আসলে যে ঠিক কীসের আওয়াজ, গাছ পড়বার, নাকি গাড়ি উল্টোবার, নাকি ঘরদোর দোকানপাট বাজারহাট চুরমার হয়ে যাচ্ছে সব! শহরে এত রকমের কাঠামো বিপুল, যেখানে যা কিছু বানানো হয়েছিল এত কাল ধরে, এত এত এত খাঁচা, সমস্ত ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। কারও কিচ্ছু করবার নেই, বিকট এক বিভীষিকার সামনে দাঁড়িয়ে, ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা ছাড়া। এই বুঝি গ্রাস করল, এই বুঝি সমস্তটা গিলে ফেলল, ছাদ মাটি দেওয়াল দরজা তালগোল পাকিয়ে এই বুঝি তার হাঁয়ে ঢুকিয়ে নিল সবটা। হয়তো মরব না। মরলে তো মিটেই যেত। হয়তো দুমড়ে দলা হয়ে পড়ে থাকব কংক্রিটের পাঁজায় আটকে। যা যত বেশি শক্ত করে, শক্তিশালী করে বানিয়েছি, সেই তো সবচাইতে বেশি যন্ত্রণা দিয়ে মারবে। সবচাইতে শক্তিশালী অস্ত্র, সবচাইতে শক্তিশালী রাষ্ট্র, সবচাইতে শক্ত ধাঁচা, পোক্ত সম্পর্ক। এক কোপে নামিয়ে দেবে না কেউ। নলি টিপে ধরে থাকবে নিষ্ঠুর। হাহাকারটুকুনও বেরতে পারবে না গলা দিয়ে। মাঝে-মাঝে নিংড়োবে খানিক। হ্যাঁচকা মরণমোচড় দেবে হঠাৎ- হঠাৎ। দিতেই থাকবে। যুগের পর যুগ। কত ঘণ্টা, কত মিনিট, কতগুলো জীবন ধরে, কত কত আলোকবর্ষ পার করে তবে মুক্তি, কেউ জানে না। অনিশ্চয়। আতঙ্ক। অনন্ত।

কারও কিচ্ছু করবার নেই, বিকট এক বিভীষিকার সামনে দাঁড়িয়ে, ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা ছাড়া। এই বুঝি গ্রাস করল, এই বুঝি সমস্তটা গিলে ফেলল, ছাদ মাটি দেওয়াল দরজা তালগোল পাকিয়ে এই বুঝি তার হাঁয়ে ঢুকিয়ে নিল সবটা। হয়তো মরব না। মরলে তো মিটেই যেত। হয়তো দুমড়ে দলা হয়ে পড়ে থাকব কংক্রিটের পাঁজায় আটকে। যা যত বেশি শক্ত করে, শক্তিশালী করে বানিয়েছি, সেই তো সবচাইতে বেশি যন্ত্রণা দিয়ে মারবে।

তারচে’ দ্যাখো, ইস্তিরিওলা, আহা! আসলে তো, ভোগী আর ভুক্তভোগী, এই দুই নিয়ে দুনিয়া। আছে আর নেই নিয়ে নয়। থাকলেই হয় না, আবার না-থাকলেও দিব্যি হয় অনেক সময়ে। ভোগ করতে জানতে হয় গো, নইলে অন্যের ভোগের আসরে ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে থাকতে হয় কিংকর্তব্যবিমূঢ় অক্ষম। শোনও, বন্দি সবাই। এখন, কে কিসে বন্দি, অভাবে না স্বভাবে, সেইটেই হচ্ছে আসল কথা। সারাক্ষণ এক বিরামহীন বুভুক্ষুপনায়, অর্থ মান প্রতিপত্তি যশ, নাই নাই নাই, চাই চাই চাই, ইএমআই। সক্কলকার কাছে ভালো থাকতে হবে বলে, সমস্ত খিল্লি খিস্তি লোভ ক্ষোভ ঈর্ষা, নিজের মধ্যে চেপে রাখতে-রাখতে, হার্টে রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে রোজ। আর চাট্টি নিচের লোকের ওপর রোয়াব ঝাড়তে পারব বলে, ওই, ওইটুকুনই স্বাদ ক্ষমতার, ওইটুকুনের জন্যেই ওপরের লোকেদের স্তাবকতা করে চলেছি সস্তা। উইয়ের ঢিবির ’পরে চড়ে বসেছি তো, এ ঢিবি ধসেও পড়বে ঝুরঝুর করে, আবার ওই উই আমার গায়েও উঠে আসবে, খেয়ে ছিবড়ে শেষ করে দেবে সাফ। এখন, কোনটে যে আগে ঘটবে, সেইটেই হলো টেনশন। দশ পেগ হুইস্কিতেও সে আতঙ্ক কাটে না।

[the_ad id=”270085″]

না, পেটে মদ পড়েছিল বলে ইস্তিরিওলা অমন বেহুঁশ সুখে মরেনি। সে ভয়ে মরবে না, এইটে ঠিক করতে পেরেছিল। ভাগ্য আর ভগবানের সঙ্গে লড়তে যাওয়ার যে কোনও মানে হয় না, এইটুকখানি বুঝতে পেরেছিল বলেই, অমন ঝড়ের বাজারে সে, ধুশশালা, যা হবার হবে, বলে মেতে উঠতে পেরেছিল ফুর্তিতে। আমরাও তো জানতুম, যা হবার, হবেই। খালি ওই ধুশশালা-টুকুন বলে উঠতে পারিনি। কোনও দিন। মরবার পরেও লোকে কী বলবে, ভেবে যেমন আজ অবধি গলায় দড়ি দিতে পারলুম না কিছুতেই। তারচে’ হেঁপো রুগি হয়ে, সুগারে প্রেশারে মরব, তো ভি আচ্ছা। ভোগী কি ভুক্তভোগী, সে আমি জানলুম, লোকে তো আর জানতে পারবে না কোনওদিন।

যা যত বেশি শক্ত করে, শক্তিশালী করে বানিয়েছি, সেই তো সবচাইতে বেশি যন্ত্রণা দিয়ে মারবে। সবচাইতে শক্তিশালী অস্ত্র, সবচাইতে শক্তিশালী রাষ্ট্র, সবচাইতে শক্ত ধাঁচা, পোক্ত সম্পর্ক। এক কোপে নামিয়ে দেবে না কেউ। নলি টিপে ধরে থাকবে নিষ্ঠুর। হাহাকারটুকুনও বেরতে পারবে না গলা দিয়ে। মাঝে-মাঝে নিংড়োবে খানিক। হ্যাঁচকা মরণমোচড় দেবে হঠাৎ- হঠাৎ। দিতেই থাকবে। যুগের পর যুগ।

কিন্তু, এ ঢং আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে আমার। মাত্র এই ক’মাসে, কোটি-কোটি লোক কাজ হারাবার পর, ক্রমশ তো বুঝতে পারছি, এ আসলে কিছুই না, সামনের ক’বচ্ছরে আরও অনেক বেশি লোকের কাজ চলে যাবে। দু’টো ভাত আর একটু জলের জন্যে কামড়াকামড়ি করবে মানুষ। আর যখনই এমন হয়, তখনই বস্তা ঝাঁকিয়ে নিতে হয়। বড় ঝাঁকুনি। বিরাট একটা যুদ্ধ। অগুন্তি মৃত্যু। অসংখ্য বন্দী। মুফৎ শ্রম। তাই দিয়ে ফের নতুন করে গড়ে নেয়া একই ব্যবস্থার নতুন রূপ। তাইতে আবার বেশ কিছু কাল চলবে। ইতিহাসের এই চরকিপাক, না ভাগ্যের না ভগবানের হাতে ঘুরছে যে, পুজোপ্রার্থনায় বসব।
শয়তানের সামনে হাতজোড় করে কোনও লাভ হয় না, উল্টে আরও বাঁধা পড়ে যেতে হয়, ইএমআই বাড়তে থাকে।

[the_ad id=”270086″]

ইস্তিরিওলার মরামুখখানা দেখবার পর দিয়ে, ক্রমশ যেন ভয় কেটে যাচ্ছে আমার, টেনশন উধাও হয়ে যাচ্ছে, তাড়া চলে যাচ্ছে জীবন থেকে। আসলে কীসের এত তাড়া? কীসের এত দৌড়? কুত্তায় তাড়া করেছে? দৌড়ে পারবে? কত দৌড়বে? কতক্ষণ? কত দূর? আমি দাঁড়িয়ে পড়েছি। শালা কুত্তা আমায় দৌড় করিয়ে যাবে আর আমিও প্রাণপণে দৌড়ে যাব জীবনভর, এ ব্যবস্থায় বন্দি আর থাকতে চাই না আমি। দাঁড়িয়ে পড়েছি। স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে লেগেছি নিজের তালে। তাতে কুত্তা এসে কামড়ালে, কামড়াবে। মরলে, মরব। কিন্তু আর এক মুহূর্ত আতঙ্কে থাকব না আমি। কোনও কিছু হারাবার ভয় পাব না। না প্রাণ, না পয়সা, না প্রেয়সী। শালা, ঢপের এত ভালোবাসাবাসি, চপের যত সম্পর্ক, খালি শত-শত শর্ত আর শপথের টানাহ্যাঁচড়া, আত্মত্যাগের বুলি আর কুচুটে স্বার্থপরতার লুকোচুরি। থাকবার হলে, থাকবে। নইলে থাকবে না। না-থাকলে বেঁচে যাব।

[the_ad id=”270088″]

তারচে’, ভোররাতে ঘুম ভেঙে গেলে পর, শুকতারা দেখতে যাব ছাতে। দু’টো চড়ুইয়ের সঙ্গে ভাব। একটা খবরকাগজের সঙ্গে আড়ি। অগোছালো মনের মতো বাড়ি। নিজে পাই না-পাই, রেস্ত নাই, ওদের বাড়ি ইলিশ ভাজছে, গরম ভাতে সে গন্ধতেলের তরে নোলা টসটস করে উঠবে, হিংসেয় না, স্মৃতিসৌরভ যেমন এমনিই জেগে থাকে আলজিভে আলগোছে। জষ্ঠির পাকা আমবাগানের মাঝে আধোঘুম যেমন আজম্ম থেমে থাকে, ঝিম আমেজে বেলা গড়িয়ে বিকেল। যেন লালকাঁকড়াগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার দেহ-জুড়ে দ্বিধাহীন। আমিও নিশ্চিন্তে পড়ে আছি, সুড়সুড়ি খাচ্ছি। কামড়াবে না, জানি।

কিন্তু আর এক মুহূর্ত আতঙ্কে থাকব না আমি। কোনও কিছু হারাবার ভয় পাব না। না প্রাণ, না পয়সা, না প্রেয়সী। শালা, ঢপের এত ভালোবাসাবাসি, চপের যত সম্পর্ক, খালি শত-শত শর্ত আর শপথের টানাহ্যাঁচড়া, আত্মত্যাগের বুলি আর কুচুটে স্বার্থপরতার লুকোচুরি। থাকবার হলে, থাকবে। নইলে থাকবে না। না-থাকলে বেঁচে যাব।

সমুদ্র ধেয়ে আসছে, হঠাৎ ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে, অভিমানিনী ঠেস, ভেজা চুলের গরম ঝাপট, নিঃসাড় শরীরে সাড়া না-পেয়ে সে যেমন মুখ ফিরিয়ে ওদিক ঘুরে শুয়ে পড়ে নিঃশব্দে গজগজ করতে-করতে, এই ফিরতি নোনা জল তেমনি আবার চলে যাচ্ছে দূরে। এই তার যাওয়া-আসা, তটে আছড়ে-পড়া উচ্ছ্বাস, ফের হারিয়ে যাওয়া আপন অন্তরঅতলে, নিয়তি, নিয়তি, এক চাঁদবুড়ি, বসে-বসে নিজের পাকা চুল বাছে আর তাই নিয়ে সুতো পাকিয়ে পুতুল নাচায় দু’বেলা করে রোজ, আর তুমি ভাব, তোমার জোয়ার আপনা হতে আসে। মদন-রতি মিথুন রাশি, ওই বিগতযৌবনার ঘাড়ের ’পরে, যুগ-যুগ ধরে শিখছে বসে রসের খেলা, পাশ করেনি আজও। বুড়ি ননীদইয়ের লোক। সে তার ঈশ্বরের তরে রোজ-রোজ নৈবেদ্য সাজায় আকাশভরে। নিবেদন, নিবেদন। আর কিছু না। আবেদন না, কোনও দাবি না, চাওয়া-পাওয়ার চরকিপাক না। খালি মায়াভরা হাতে, আহা, তার সাবুমাখা! ভোগ! ওই দু’দলা খেলে এক বার, নির্বাণ। চরকিপাকের ভোগান্তিতে ফিরতে হয় না আর।

জন্ম কলকাতায়। কর্মও মোটের ওপর এখানেই। কারণ, সম্ভবত এ শহরের প্রতি মাত্রারিক্ত মায়া। যৌবনে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথাগত পড়াশুনোর প্রতি দায়বদ্ধতা ক্রমক্ষীয়মান, উল্টে সিলেবাস-বহির্ভূত নানা বিষয়ে আগ্রহ, বিশেষ করে রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম, মনস্তত্ত্ব, সাহিত‍্য, সঙ্গীত ও সিনেমা। কর্মজীবনে শুরুর দিকে, বিভিন্ন বিনোদনমূলক বাংলা টেলিভিশন চ‍্যানেলে বেশ কিছু জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের পরিচালক। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সিনেমার দুনিয়ায় সম্মানিত কয়েকটি ফিল্মের সম্পাদক। এরই মধ‍্যে, প্রথম সারির কয়েকটি টেলিভিশন চ‍্যানেলে চাকরি। বর্তমানে স্বাধীন ভাবে তথ‍্যচিত্র ও প্রচারমূলক ছবি নির্মাণ, বিভিন্ন অডিও-ভিস‍্যুয়াল মাধ‍্যমে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। আর, ব‍্যবসা সংক্রান্ত পরামর্শদাতা একটি সংস্থার অংশীদার। প্রথম প্রকাশিত গদ‍্য ২০০৬, ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদিত ‘রোববার’ পত্রিকায় (সংবাদ প্রতিদিন)। পরে, আনন্দবাজার পত্রিকা, এই সময় ও অন‍্যত্র। প্রবন্ধ বা ফিচারধর্মী লেখার পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি ছোটগল্পও।

Picture of দেবজ্যোতি

দেবজ্যোতি

জন্ম কলকাতায়। কর্মও মোটের ওপর এখানেই। কারণ, সম্ভবত এ শহরের প্রতি মাত্রারিক্ত মায়া। যৌবনে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথাগত পড়াশুনোর প্রতি দায়বদ্ধতা ক্রমক্ষীয়মান, উল্টে সিলেবাস-বহির্ভূত নানা বিষয়ে আগ্রহ, বিশেষ করে রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম, মনস্তত্ত্ব, সাহিত‍্য, সঙ্গীত ও সিনেমা। কর্মজীবনে শুরুর দিকে, বিভিন্ন বিনোদনমূলক বাংলা টেলিভিশন চ‍্যানেলে বেশ কিছু জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের পরিচালক। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সিনেমার দুনিয়ায় সম্মানিত কয়েকটি ফিল্মের সম্পাদক। এরই মধ‍্যে, প্রথম সারির কয়েকটি টেলিভিশন চ‍্যানেলে চাকরি। বর্তমানে স্বাধীন ভাবে তথ‍্যচিত্র ও প্রচারমূলক ছবি নির্মাণ, বিভিন্ন অডিও-ভিস‍্যুয়াল মাধ‍্যমে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। আর, ব‍্যবসা সংক্রান্ত পরামর্শদাতা একটি সংস্থার অংশীদার। প্রথম প্রকাশিত গদ‍্য ২০০৬, ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদিত ‘রোববার’ পত্রিকায় (সংবাদ প্রতিদিন)। পরে, আনন্দবাজার পত্রিকা, এই সময় ও অন‍্যত্র। প্রবন্ধ বা ফিচারধর্মী লেখার পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি ছোটগল্পও।
Picture of দেবজ্যোতি

দেবজ্যোতি

জন্ম কলকাতায়। কর্মও মোটের ওপর এখানেই। কারণ, সম্ভবত এ শহরের প্রতি মাত্রারিক্ত মায়া। যৌবনে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথাগত পড়াশুনোর প্রতি দায়বদ্ধতা ক্রমক্ষীয়মান, উল্টে সিলেবাস-বহির্ভূত নানা বিষয়ে আগ্রহ, বিশেষ করে রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম, মনস্তত্ত্ব, সাহিত‍্য, সঙ্গীত ও সিনেমা। কর্মজীবনে শুরুর দিকে, বিভিন্ন বিনোদনমূলক বাংলা টেলিভিশন চ‍্যানেলে বেশ কিছু জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের পরিচালক। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সিনেমার দুনিয়ায় সম্মানিত কয়েকটি ফিল্মের সম্পাদক। এরই মধ‍্যে, প্রথম সারির কয়েকটি টেলিভিশন চ‍্যানেলে চাকরি। বর্তমানে স্বাধীন ভাবে তথ‍্যচিত্র ও প্রচারমূলক ছবি নির্মাণ, বিভিন্ন অডিও-ভিস‍্যুয়াল মাধ‍্যমে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। আর, ব‍্যবসা সংক্রান্ত পরামর্শদাতা একটি সংস্থার অংশীদার। প্রথম প্রকাশিত গদ‍্য ২০০৬, ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদিত ‘রোববার’ পত্রিকায় (সংবাদ প্রতিদিন)। পরে, আনন্দবাজার পত্রিকা, এই সময় ও অন‍্যত্র। প্রবন্ধ বা ফিচারধর্মী লেখার পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি ছোটগল্পও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com