banglalive logo
[ivory-search id="382384" title="AJAX Search Form"]

নতুন ইশকুল

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Notun Ishkul
আগডুম রাজ্যের বাগডুম রাজা। সে রাজ্য যেমন সুন্দর, রাজার তেমন দাপট। রাস্তা ঘাট, আপিস দোকান, হোটেল রেস্তঁরা, ইস্কুল হাসপাতাল, সবসময় জমজম করছে। আবার একটু নাগাল পেরলে, কালচে সবুজ ধানের ক্ষেত-ভরা ফসল, দিঘি ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গোরু। রাজ্যের মাঝখানে মস্ত ইমারত। বাগডুম রাজার রাজপ্রাসাদ। সে প্রাসাদ আধুনিক কালের সব কলকব্জা দিয়ে ঠাসা। তার গাড়িশালে সার সার গাড়ি, সাইকেলশালে সাইকেল, তা ছাড়া লোক লস্কর, সেপাই, খানসামা কে নেই? বাগডুম রাজার একমাত্র সন্তান মনডুম। মনডুম ছয় পেরিয়ে সাত হবে। একরাশ মেঘ মেঘ চুল নিয়ে সে সারা প্রাসাদ খেলে বেড়ায়, নেপচুনের সাথে। নেপচুন তার পোষা বেড়াল। দুধ দুধ রঙ তার, কান দুটি কালো। এছাড়া মন্ত্রীপুত্র, কোটাল-কন্যা, সওদাগর কন্যা, তারাও সব খেলতে আসে। সব সমবয়সী কিনা। না না, শুধু খেললে হয় নাকি? মনডুম জানে তাকে পড়েশুনে বড় হতে হবে। এই রাজ্যের ভবিষ্যত তার হাতে। আগডুম রাজ্যের সবচেয়ে বড় ইস্কুলে সে যায়। দিদিমণি, মাস্টারমশাই সবাই খুব খুশি মনডুমকে নিয়ে। যেমন তার বুদ্ধি, তেমনি তার ব্যবহার। ইস্কুলের হেডস্যার, রাজ্যের সেরা মানুষ তৈরি করতে চায় মনডুমকে। এটাই শিক্ষক হিসেবে তাঁর ব্রত। আগডুম রাজ্যকে তাঁর উপহার। সব ঠিক ঠিক চলছিল। মনডুম এবছর পরীক্ষা দিয়ে পরের ক্লাসে উঠেছে। বর্ষশেষের ছুটির পর স্কুল খুলবে। নতুন বই পাবে, তার গন্ধই আলাদা। খুব আনন্দে রয়েছে মনডুম। এমন সময় দেশে মড়ক লাগল। ওরে বাবা! সে কি হায় হায় ঘটনা! চারিদিকে তোলপাড়। হুশহুশ করে লোকজন সব মরে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট বন্ধ, আপিস দোকান বন্ধ, হোটেল রেঁস্তোরা বন্ধ, ইস্কুলও বন্ধ। দেশের মধ্যে খোলা রইল শুধু হাসপাতাল। একদুই দিন ছুটি সবারই ভালো লাগে। মনডুমও শুরুতে খুশিতেই ছিল। কিন্তু ক্রমশঃ তার মুখ ভার হতে শুরু করে। ইস্কুলে যাওয়া নেই। আসলে, ইস্কুল মানে তো হরেক মজা!  ঠিক হল, ভিডিও কলে পড়া হবে। মাস্টারমশাই ইমেল করলেন রাজামশাইকে। রাজমশাই ডাকলেন শিক্ষামন্ত্রী, বার্তামন্ত্রী, প্রযুক্তিমন্ত্রীকে। রাজা ডেকেছে, তাই মিটিং হচ্ছে। তবে সব মুখ ঢেকে, আর দূরে দূরে বসে। সবাই মিলে যুক্তি করে ঠিক করে, হ্যাঁ হ্যাঁ তাই হোক। ভিডিও কলে ছেলেমেয়েরা ক্লাস করবে। বিদেশেও এইভাবেই চলেছে। রাস্তা ঘাট শুনশান। লোক নেই, গাড়ি নেই। আগডুম রাজ্য যেন ছবির পাতায় সাঁটা, যেখানে সব কিছু আছে কিন্তু প্রাণ নেই। রাজবৈদ্য, রাজকবিরাজ দেশি বিদেশি ওষুধ, জড়িবুটি নিয়ে গবেষণা করেই চলেছে, মড়ক থেকে কী করে নিস্তার পাওয়া যায়। আবার কী করে ফিরে পাওয়া যায়, থেমে যাওয়া জীবন।  ওদিকে ঘটা করে ক্লাস শুরু হল। কিন্তু মনডুমের মন বসে না। দিদিমণি যতই বলে, “ক্যামেরা অন কর, মুখ দেখাও।” মনডুম মুখ গোঁজ করেই থাকে। তার মনেই হয় না, যে এটা ক্লাস! যে সবসময় ক্লাস আলো করে থাকত, তাকে দেখতে না পেয়ে দিদিমণি মাস্টারমশাইদেরও মনখারাপ হয়ে যায়। আর এ কেবল মনডুমের সমস্যা নয়, ইস্কুলের বহু বাচ্চারাই মুখ চুন করে থাকে। তারা ভালো করে কথা বলে না। প্রশ্ন করলে, উত্তর দেয় না। বই খুলতে বললে, খোলে না। লিখতে বললে, লেখে না। সবাই ভাবতে থাকে, ভাবতে থাকে, কীকরে সমাধান করা যায়?  হেডস্যার ইমেল করেন বাগডুম রাজাকে। পরামর্শ দেন, মনডুম যদি ওর বাড়ির কোন সঙ্গীকে নিয়ে ভিডিও কলে বসে, তাহলে হয়তো ক্যামেরা অন করবে। বেশ কথা, কিন্তু মনডুমের তো সেখানেই সমস্যা। মনডুম গিয়ে বাবাকে বলে, “তুমি আমার সঙ্গে ক্লাস করবে?” ওরে বাবা! তা কী করে হয়? বাগডুম রাজার কী সময় আছে? নাকি রাজামশাইকে তা মানায়? মনডুম যায় মায়ের কাছে। রানিমারও হাজার কাজ। বাইরে বেরতে পারছেন না। রানিমা এখন ঘর থেকেই বৈদ্যদের, কবিরাজদের কাজে সাহায্য করে চলেছেন। কোন দেশ থেকে কী আনাতে হবে? কোন হাসপালে ওষুধ ফুরোল? কোথায় বিছানা কম পড়েছে? মনডুম কাউকে পায় না, মনখারাপ বাড়তেই থাকে। মন্ত্রীপুত্র, কোটাল-কন্যা, সওদাগর-কন্যারও যে যার বাড়িতে আটকে। রাজবাড়িতেও আসে না, এখন কাকে নিয়ে ক্লাস করবে?  মনডুমের দিদিমণির কানে পৌঁছয় কথাটা। তিনি বলেন, “মনডুমের কোন পুষ্যি নেই?” তাই তো? এতক্ষণ মনডুমের খেয়াল হয়নি। নেপচুন যে সারাদিন পায়ে পায়ে ঘোরে, একটা সাদা তুলোর বলের মতো, খেয়াল থাকে না। কান দুটো কালো, সারা গায়ে সাদা। দিদিমণি আরও বলেন, “এ আমাদের নতুন ইস্কুল। এখানে আমরা, সবাই আমাদের পুষ্যি নিয়ে ক্লাস করতে পারব।” শুনে মনডুম খুব খুশি। নেপচুনকে কোলে নিয়ে ক্যামেরা অন করে। ওকে দেখে মাস্টামশাই, দিদিমণি সবাই খুশি। আর মনডুম ক্লাস করছে জেনে বাকি ছাত্রছাত্রীরাও ক্যামেরা অন করল। কেউ নিজের কুকুর, কেউ কাঠবিড়ালি, কেউ গোরু, আবার কেউ টিয়া পাখি, এমন হরেক পোষ্য নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করতে বসে। বাপরে! সে একেবারে অভিনব দৃশ্য।  ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তাদের বাবা-মা, ইস্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা, সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এই মড়কের সময়ে অন্ততঃ একটা সমস্যা কাটল। বাচ্চারা ক্লাসে ফিরেছে, হোক না সে ভার্চুয়াল। সবাই নেপচুনের নামে ধন্য ধন্য করল। রাতারাতি নেপচুন প্রচারের আলোয়! টিভিতে, কাগজে নেপচুনের বড় বড় ছবি বেরল। বাগডুম রাজার আনন্দ ধরে না। তিনি নেপচুনকে একটা সোনার লকেট গড়িয়ে দিলেন। সেটা দেখতে মাছের মতো। চোখে দুটো চুনি বসানো। নেপচুন বকলসে মাছের লকেট পেয়ে, উৎসাহী হয়ে কামড় বসাতে গিয়েছিল। কোনও স্বাদ পেল না, তাই সবাই খুশি হলেও, সে খুশি হতে পারেনি। রেগে বলল “ম্যাও!” তারপর সে আর এক কাহিনি। সে গল্প না হয় অন্যদিন হবে।   
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

এক সর্বগ্রাসী হাঁ-করা চোখ নিয়ে, কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌরভের। যা দেখেন, তাই মনে হয় ছুঁয়ে দেখলে ভালো হয়। কিছুটা প্রকৌশল, কিছুটা ছবি আঁকা, ভাষা শিক্ষা, থিয়েটার এমন আরও অনেক কিছু। এভাবেই ভেসে চলা। শৈশবে স্কুল পত্রিকায় হাত পাকিয়ে রেল স্টেশনে দেওয়াল পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনের পাতা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্যিক পত্রিকায় পৌঁছনো। জীবিকার তাগিদে কম্পিউটারের সাথে সখ্য। পাশাপাশি কয়েক মাইল ‘কোড’লেখা চলে সমান্তরাল। কর্পোরেটের হাত ধরে পৃথিবীর কয়েক প্রান্ত দেখে ফেলার অভিজ্ঞতা। সবই উঠে আসে লেখায়। আপাততঃ কলকাতা ও ঢাকা মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা সাত।

4 Responses

  1. এই চারিদিকে মন খারাপের মধ্যে, এই সুন্দর গল্পটা পড়ে মন ভালো হয়ে গেলো । আপাতদৃষ্টিতে ছোটদের গল্প হলেও, বড়দের জন্য অন্তর্নিহিত বার্তাটি এড়ানো যায় না । লেখককে ধন্যবাদ এমন একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য ।

  2. Ektu aage fb te ekta bhabna post korlam, bachha der niye, odbhut bhabe, tarporei Ruchirar olonkoron dekhte giye, golpo ta o pore nilam, kemon kore janbo,Neptune ke nayok baniye aapnar onoboddyo ekti lekha o tar songey samonjossyo rekhe Ruchirar osadharon chhobi te eto sundor bhabe aamar bhabna ke dwigun utsahito kore debe. Bhalo thakun aaro emon chhotoder niye likhun, Ruchira keo bolchhi, tor to tor Baba, Maar moto gooner shesh nei, egiye ja. Chini bole gorbito thakbo.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com