(Papadam)
পাঁপড়– একটি অতি পরিচিত মনোলোভা মুচমুচে খাবারের নাম সমগ্র ভারতের হেঁসেলে। ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যের মানুষের দৈনন্দিন খাবারের পাতে সগৌরবে নানান রূপে– সেঁকা, ভাজা, তরকারি– নানান রূপে হাজির এই লোভনীয় খাদ্য বস্তুটি। বাংলার রথের মেলা অসম্পূর্ণ থাকে গনগনে আঁচে কড়াই ভর্তি তেলে ভাজা পাঁপড় ছাড়া। অনুষ্ঠান বাড়িতে শেষপাতে চাটনি আর পাঁপড় ছাড়া খাদ্যতালিকা পূর্ণতা পায় না। (Papadam)
ভাষাবিদদের মতে সংস্কৃত শব্দ পর্পত থেকে পাঁপড় শব্দটি এসেছে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে পাঁপড় শুধু জনপ্রিয় নয়, সেখানে নানান উপকরণকে কাজে লাগিয়ে পাঁপড় তৈরির পরম্পরা বহুদিন ধরেই প্রচলিত। তামিলনাড়ুর মানুষজন আপ্পালাম ছাড়া খাবার কথা ভাবতেই পারে না। খাবার পাতে প্রতিদিন আপ্পালাম তথা পাঁপড় চাইই। একই অবস্থা কেরালায়। সেখানে পাপ্পাড়াম পাতে না থাকলে রীতিমতো দক্ষযজ্ঞ বেঁধে যাবে। সেই তুলনায় আমরা এই পলিমাটির দেশে বসবাসরত মাছ ভাত খাওয়া ভেতো বাঙালি জনগণ কিছুটা আলাদা। বর্ষায় সোনা মুগডাল আর গোবিন্দভোগ কিংবা তুলাইপাঞ্জি চালের খিঁচুড়ির সঙ্গে পাঁপড় আমাদের খুব পছন্দের যুগলবন্দি। (Papadam)

পাঁপড় তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের ডাল– মুসুরি, ছোলা, মুগ, মটর, বিউলি। পাশাপাশি চাল,সাবুদানা , হাল আমলের মিলেট – তারাও ঠাঁই পায় পাঁপড় তৈরির উপাদানের তালিকায়। ডাল বা চালের গুঁড়া জলে মেখে নিয়ে তার সঙ্গে নানান ধরনের মশলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় রকমারি মশলা পাঁপড়। এছাড়াও টম্যাটো, কাঁচা আম, লঙ্কার মণ্ড মিশিয়ে নানান বিচিত্র স্বাদের পাঁপড় দেদার বিকোচ্ছে বাজারে। (Papadam)
“ডায়েটিশিয়ানদের মতে খাবারের শুরুতে অথবা শেষপাতে সেঁকা পাঁপড় খেলে তা শরীরে উৎসেচকের কার্যকারিতা বাড়ায়; ফলে হজমের কাজ ভালো হয়।”
পুষ্টিবিদদের মতে সেঁকা পাঁপড় একটি সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার। তেলে ভাজা হলে পাঁপড়ের পুষ্টিগুণ অনেকটাই কমে যায়। পাঁপড়ের মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,আয়রন, কার্বোহাইড্রেট এবং ডায়েটারি ফাইবারের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টিমৌল। সুতরাং টুকটাক খাবার হিসেবে পাঁপড়ের উপযোগিতা অপরিসীম। তাঁদের মতে পাঁপড় একটি লো ক্যালরিযুক্ত খাবার।ফলে যাঁরা স্থূলতা কমাতে লো ক্যালরিযুক্ত খাবার খাচ্ছেন তাঁরা এই সুস্বাদু খাবারের ওপর ভরসা করতে পারেন অনায়াসে। কার্যকর উৎসেচক হিসেবেও পাঁপড়ের জুড়ি মেলা ভার। ডায়েটিশিয়ানদের মতে খাবারের শুরুতে অথবা শেষপাতে সেঁকা পাঁপড় খেলে তা শরীরে উৎসেচকের কার্যকারিতা বাড়ায়; ফলে হজমের কাজ ভালো হয়। এছাড়াও গ্লুটেন মুক্ত বলে যাঁদের গ্লুটেনে এলার্জি আছে, তাঁদের পক্ষেও পাঁপড় নিরাপদ। (Papadam)

এই অবধি পড়ে সবাই বোধহয় আজ বিকেলেই চায়ের সঙ্গে টা হিসেবে পাঁপড় খাবেন বলে মতলব করছেন? একটু অপেক্ষা করুন। আমার তরফে আরও কিছু জানানোর আছে। (Papadam)
খুব সম্প্রতি দিল্লির C.K.Birla হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের ডিরেক্টর ডাঃ মনীষা অরোরা যথেচ্ছভাবে পাঁপড় খাওয়ার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বলেছেন। শুধু পাঁপড় নয়, তার সঙ্গে আর কী কী খাওয়া হচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে, না হলেই থাকবে বিপদের শঙ্কা। (Papadam)
“অনেক সময় মশলা পাঁপড়ের সঙ্গে ঠাণ্ডা সফট ড্রিংকস বা হার্ড ড্রিংকস নেওয়ার অভ্যাস আছে অনেকের মধ্যে। এটাও বেশ ঝুঁকির ব্যাপার।”
হাসপাতালের মেটাবোলিক হেল্থ বিভাগের প্রশিক্ষক করণ সারিন শরীরের ওপর পাঁপড় খাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে বিউলির ডালে তৈরি পাঁপড়ের সঙ্গে পেঁয়াজ, টম্যাটো, ধনেপাতা ও কাঁচামরিচ খান। এভাবে পাঁপড় খেলে শরীরের শর্করার মাত্রা কতটুকু বাড়ে তা যাচাই করাই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। এভাবে সবজি সহযোগে সেঁকা পাঁপড় খাবার দু ঘন্টা পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে পাতলা পাঁপড় পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে ফলে শরীরে শর্করার মান বাড়তে পারেনা। তবে অতিরিক্ত পাঁপড় খেলে তা বিরূপ প্রভাব ফেলে। (Papadam)

এই বিষয়টার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন মহারাষ্ট্রের কল্যাণে অবস্থিত ফোর্টিস হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান Sumaiya A. তিনি বলেন, ডায়াবেটিস রোগীরা অন্যদের মতো পরিমিত পরিমাণে পাঁপড় খেতে পারেন। তবে তা অবশ্যই হবে সেঁকা পাঁপড়। তেলে ভাজা পাঁপড় খাওয়া চলবে না। পাঁপড়ের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম থাকলে তা না খাওয়াই ভালো। (Papadam)
ডাঃ মনীষা অরোরাও এই বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। তাঁর মতে মশলা পাঁপড়ের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা খুব বেশি।
আরও পড়ুন: বনজ কুসুম: পর্ব – ১৩
ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মশলা পাঁপড় অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া মোটেই ঠিক নয়। আসলে ঠিক কতটা পরিমাণে মশলা পাঁপড় খাওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে আর কী খাওয়া হচ্ছে– এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিনের খাবারের পাতে পাঁপড় খেলে শরীরে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। (Papadam)
তবে যদি খাদ্যতালিকায় স্যালাড বা অন্যান্য শাকসবজির পরিমাণ যথেষ্ট হয় তাহলে তা মশলা পাঁপড়ের ক্ষতিকারক প্রভাবকে কমাতে সাহায্য করে।
তবে যদি খাদ্যতালিকায় স্যালাড বা অন্যান্য শাকসবজির পরিমাণ যথেষ্ট হয় তাহলে তা মশলা পাঁপড়ের ক্ষতিকারক প্রভাবকে কমাতে সাহায্য করে। তবে একবারে অনেকটা পরিমাণে মশলা পাঁপড় খাওয়া হলে তা তাৎক্ষণিক ভাবে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে খাবার ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে। অনেক সময় মশলা পাঁপড়ের সঙ্গে ঠাণ্ডা সফট ড্রিংকস বা হার্ড ড্রিংকস নেওয়ার অভ্যাস আছে অনেকের মধ্যে। এটাও বেশ ঝুঁকির ব্যাপার। পাঁপড়কে বর্জন না করে পরিমিত পরিমাণে অন্যান্য ফাইবার যুক্ত খাবারের সহযোগী হিসেবে পাঁপড় খেলে উদ্বেগ করার কিছু নেই। (Papadam)
প্রতিবেদনটি ডক্টর্স ডায়ালগ থেকে পুনর্মুদ্রিত।
বানান অপরিবর্তিত
প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক, লেখক...