(Ashapurna Devi) নারী ছলনাময়ী, জন্ম অভিনেত্রী। কিন্ত সে কি কেবল পুরুষজাতিকে মুগ্ধ করার জন্য? বিভ্রান্ত করার জন্য? বাঁচবার জন্য নয়? আশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়?—পুরোপুরি উদ্ধৃত না হলেও এই কথাগুলো কি খুব অপরিচিত লাগছে? এমন একজন লেখক, যিনি লেখক ও লেখিকার বিভেদমূলক বাইনারিকে মুছে দিতে পেরেছিলেন অনায়াসেই! রাসসুন্দরী, কৃষ্ণভামিনীদের উপযুক্ত উত্তরসূরিই কেবল নন, বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন মাত্রা প্রদান করেছিলেন— তিনিই আশাপূর্ণা দেবী; বহু বাঙালি পাঠকের অতি পরিচিত সেই ‘ট্রিলজি’ প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুবর্ণলতা ও বকুল কথা-র স্রষ্টা। (Ashapurna Devi)
আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম ১৯০৯-এর ৮ই জানুয়ারি, উত্তর কলকাতায় নিজের মামাবাড়িতে। তাঁর বাবা হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত ছিলেন কমার্শিয়াল আর্টিস্ট। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে তিনি সরকারবিরুদ্ধ কাজের প্রতি একেবারেই পক্ষপাতী ছিলেন না কিন্ত আশাপূর্ণা দেবীর মা সরলাসুন্দরী ছিলেন সম্পূর্ণ এর বিপরীত! সাহিত্যপাঠকে নিজের ও সন্তানদের জীবনের আদর্শ করে তুলেছিলেন সরলাসুন্দরী। রাজনৈতিক আদর্শেও ছিলেন ব্রিটিশ-বিরোধী স্বদেশী মনোভাবাপন্ন। মনে পড়ে যায় প্রথম প্রতিশ্রুতি থেকে সুবর্ণলতা-র কথা! নিজের জীবনে যেভাবে মা-কে দেখেছেন আশাপূর্ণা দেবী, যেভাবে বড় হয়েছেন, ঠিক তাই-ই হয়ে উঠেছে তাঁর সৃষ্টির রসদ। (Ashapurna Devi)
গুপ্ত পরিবারের আদি নিবাস হুগলিতে হলেও আশাপূর্ণা দেবীর ছোটোবেলা কেটেছিল উত্তর কলকাতায় ঠাকুমার কড়া অনুশাসনেই! সেই কারণেই প্রথাগত শিক্ষার কোনও সুযোগ হয়নি। ইস্কুলে পড়লেই নাকি মেয়েরা বাচাল হয়ে যায়; এমন ধারণা থেকেই তাঁর স্কুলে পড়া হয়ে ওঠেনি কিন্ত তিনি যে ‘সম্পূর্ণা’! স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ যাঁকে চিঠির উত্তর দিয়েছেন, তাঁর শিক্ষা কী অসম্পূর্ণ হতে পারে? খুব ছোটোবেলায় দাদাদের পড়া শুনে শুনেই চট করে শিখে গিয়েছিলেন পড়তে। বর্ণপরিচয়ের পর মা সরলাসুন্দরী নিজের মেয়েদের পড়ানোর কোনও ত্রুটি রাখেননি! সাধনা, প্রবাসী, ভারতবর্ষ, সবুজপত্র, বঙ্গদর্শন, বসুমতী, সাহিত্য, বালক, শিশুসাথী, সন্দেশসহ বিভিন্ন পত্রিকা বাড়িতে আসত তাঁদের। তাঁর মা সরলাসুন্দরী ছিলেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, জ্ঞানপ্রকাশ লাইব্রেরি ও চৈতন্য লাইব্রেরির সদস্য! (Ashapurna Devi)
ভিডিও: বাংলা কথাসাহিত্যের হীরে-‘মানিক’ – জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য
নিজের ছোটোবেলায় স্পষ্টতই বুঝে গিয়েছিলেন সমাজে একটি মেয়ে ও ছেলের মধ্যের দূরত্বকে! কতটা যন্ত্রণা লুকিয়ে রেখেছিলেন নিজের ভিতর? “নারী জন্ম তো দেখলাম, পরের জন্মে পুরুষ হ’য়ে দেখব কেমন লাগে!”— এমন কথা বলার সৎসাহস নিয়েই সাহিত্য সৃষ্টিতে পা রেখেছিলেন আশাপূর্ণা দেবী। পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব অথবা দর্শন পাঠের সুযোগ বা পরিস্থিতি ছিল না কিন্ত সমস্ত প্রতীকূলতার বিরুদ্ধে, নিজের জীবন থেকে একের পর এক গল্প উঠে আসতে থাকে; জীবন থেকে সাহিত্য কীর্তির অসামান্য নজির স্থাপন করেছেন বাংলা সাহিত্যে। রবীন্দ্র পুরস্কার থেকে জ্ঞানপীঠ, পদ্মশ্রী পুরস্কার, বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম এতগুলি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা প্রাপ্তি সত্যিই বাংলা সাহিত্যের বিরলতম কীর্তি! (Ashapurna Devi)
মেয়েদের গোয়েন্দাগিরির নজির খুঁজতে চান গবেষকরা। সত্যান্বেষী বা ফেলুদার জনপ্রিয়তার মাঝে গোয়েন্দা দময়ন্তী বা কৃষ্ণাকে খুঁজে পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। ‘পুরুষ’-‘নারী’-র বাইনারির যে প্রভাব নিজের জীবনে দেখেছিলেন আশাপূর্ণা দেবী, তার প্রভাব এই একুশ শতকেও কি কমেছে তেমনভাবে? এমন সাত-সতেরো প্রশ্নের মাঝেই আশাপূর্ণা দেবীর গোয়েন্দা গল্পের চরিত্ররা ছিলেন মহিলা। বিচার এবং বুদ্ধি যে আসলে কোনও ‘শ্রেণি’ নির্দিষ্ট হতে পারে না, তা বেশ বোঝা যায় আশাপূর্ণা দেবীর ‘মেয়ে গোয়েন্দার বাহাদুরি’ গল্পের দিকে তাকালে। এই গল্পের কাজল কেবল মেয়ে নয়, ‘কাজের মেয়ে’-ও বটে! কাজল যার বাড়িতে আয়ার কাজ পায়, সেখানেই একটা আস্ত খুনের তদন্ত করে ফেলে বেশকিছু গোয়েন্দা গল্পের বই পড়ে। ১১৫-তম জন্মদিনে এখনও আশাপূর্ণা দেবী আমাদের শেখান, এই সমাজে মেয়েদের লড়াইটুকু স্পষ্ট করার কিছু দায় ও দায়িত্ব অবশ্যই থেকে যায়!
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।