(Short Story)
ব্যাপারটা তখনই বোঝা উচিত ছিল। এক ঠোঙা সিঙাড়া বেমালুম গায়েব হয় কী করে! বাড়িতে দ্বিতীয় প্রাণীটিও নেই যেখানে। তোমায় আর কী বলব মহুয়াদি, একটা বাড়িতে থাকে, যেটার বয়স দেড়শ বছর তো হবেই। আর কী সব পুরোনো ধ্যান ধারণা আজকাল ও সব চলে বলো? বলে ভগবান ফগোবান কিচ্ছু নেই। যত্তোসব কম্যুনিস্টের মতো কথাবার্তা এ যুগে মানায়? সময়ের সঙ্গে তো মানুষকে বদলাতে হয় সে বোধটাই নেই। আউট ডেটেড পুরোনো ভাবনা। (Short Story)
জানো আমি একদিন দেখতে গিয়েছিলাম পিকুকে। বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই। ভাবলাম কোথাও গেছে হয়তো। চলেই আসছিলাম এমন সময় দোতলার কোণা থেকে ওর ক্ষীণ গলার স্বর ভেসে এল, ‘কে?’ দেখতে পেলাম না তবু বললাম, ‘আমি’। গলাটা মনে হয় চিনতে পারল। শুনলাম, ‘দাঁড়া দাঁড়া আসছি’। (Short Story)
তারপর মূর্তিমতি এসে দরজা খুলে দিল। বলল ভাতের ফ্যান গালছিল তাই অত সময় লাগল। আমি বহু বছর পর ওই বাড়িতে গেলাম। মা গো থাকে কী করে! একতলা থেকে ওপরে তাকানো মাত্র আমার মাথা ঘুরে গেল কেমন যে অন্ধকার জেলখানার মতো। জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না, ‘এরকম হল কী করে?’ (Short Story)

বলল, ‘কয়েকটা জায়গায় গ্রিল আর টিন লাগাতে হয়েছে তাই আলো আটকে গেছে অনেকটা। আর এই এত বড় বাড়ির সবটা তো আর লাগে না, বেশিরভাগই তালাচাবি দেওয়া থাকে যে তাতে আলো হাওয়া অনেক কম খেলে।’ (Short Story)
আমি কয়েকটা সিঙাড়া নিয়ে গিয়েছিলাম। পিকু আবার মিষ্টি খেতে ভালোবাসে না। ওমা বলল, ‘এত পয়সা খরচ করে সিঙাড়া না এনে দুটো রসগোল্লা আনলেই তো পারতিস।’
‘কে খাবে? মিষ্টি খাস আজকাল?’ (Short Story)
পিকু বলল, ‘তাতেই বা কী! না থাকলেও সম্পত্তির ভাগিদার তো ও। বেশি বয়সে যদি সত্যি মনে হয় দেশে ফেরার কথা।’
‘আমরাই খেতাম। সিঙাড়া খেলে যদি অম্বল হয়! রসগোল্লায় আসলে কিছু হারাবার ভয় নেই। মাঝে মাঝে মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করে কিন্তু শুধু নিজের জন্য বেরিয়ে গিয়ে কিনব সে তো আর হয়ে ওঠে না। সময়ও পাই না রে।’
‘কী করিস একা একা? সময় পাস না কেন রে?’
‘বাড়ি সামলাই রে। এত বড় বাড়ি।’ (Short Story)
মহুয়াদি আমি হলে একেবারেই পাগল হয়ে যেতাম বিশ্বাস করো। পাঁচ বছরের মধ্যে পর পর মা, ছোটোকাকা, বাবা, কাকিমা সবাই চলে গেলেন ওর। ওই বাড়িতে যকের মতো ওকে একা আগলে বসে থাকতে হচ্ছে, ভাবো একবার।
বললাম, ‘তোর ছোট ভাই কী বলছে? ও আসে?’ (Short Story)
‘না রে ও কোনওদিন আর আসবে কী না কে জানে! ওর অস্ট্রেলিয়ান বউ আর সাদা চামড়ার দুই ছেলেকে নিয়ে দু’বার এসেছিল। একবার উত্তর ভারত বেড়াতে আর একবার দক্ষিণ। আর আসবে বলে মনে হয় না। ভাই অবশ্য বলে কোনও ভরসা নেই ডিভোর্স হয়ে গেলে হয়তো চলে আসব ভবিষ্যতের কিছু কী বলা যায়।’
ওই বাড়িতে ওর ভাই আর কোনওদিন থাকবে নাকি? পারবেই না। (Short Story)
পিকু বলল, ‘তাতেই বা কী! না থাকলেও সম্পত্তির ভাগিদার তো ও। বেশি বয়সে যদি সত্যি মনে হয় দেশে ফেরার কথা।’
“এসে দেখি অবাক কাণ্ড সিঙাড়ার ঠোঙাটাই নেই। হাঁক ডাক করাতে পিকু এল। খুব লজ্জিত হয়ে বলল, ‘এই রে ওরা আবার নিয়ে গেছে! কিছু মনে করিস না রে। ঝাল নোনতা ভালোবাসে। ওদেরও খিদে পায় যে।’”
এ কোনও কথা হল! তাই বলে পিকু সারাজীবন যকের ধন আগলাবে? আর কীই বা ধন। বাড়ির যে দিকে তাকাই শুধু ফাটল আর ফাটল। কোথাও কালো কালো বড় ঝুল তিরিশ বছর কেউ মনে হয় পরিষ্কার করেনি। যেসব মাকরসা ওগুলোকে প্রথম বানিয়েছিল তাদের চোদ্দ পুরুষের পর নাতি পুতিরাও আজ আর কেউ বেঁচে নেই। (Short Story)
পিকু বলল, ‘দাঁড়া চা করি আর বাটি নিয়ে আসি।’
‘ছাড় তো চা লাগবে না।’
‘বাহ সিঙাড়ার সঙ্গে খেতে হবে তো। তোর না লাগলেও আমার লাগবে।’
দেখি এক গোছা চাবি তুলে নিয়ে চলল।
‘এ কী রে তোর রান্নাঘরও তালা দেওয়া থাকে?’
‘কী করি বল, যে কোনও মানুষই একতলার দরজা ঠেলে যখন তখন বাড়ির যে কোনও জায়গায় চলে আসতে পারে যে! তুই বুঝিসনি তাই বেল দিয়ে অতক্ষণ দাঁড়িয়েছিলি। না খুলে রাখলে তো উপায় নেই। তিনতলা থেকে সবসময় দৌড়ে আসতে পারি না রে। বয়স তো হচ্ছে।’ (Short Story)

টানা দালানে পর পর সব তালা আঁটা ঘর। দোতলার শেষ মাথায় রান্নাঘর। চাবি দিয়ে খুলে আমার হাতে দুটো প্লেট দিল পিকু। প্লেট হাতে করে আমি বসার ঘরে ফিরে এলাম। এসে দেখি অবাক কাণ্ড সিঙাড়ার ঠোঙাটাই নেই। হাঁক ডাক করাতে পিকু এল। খুব লজ্জিত হয়ে বলল, ‘এই রে ওরা আবার নিয়ে গেছে! কিছু মনে করিস না রে। ঝাল নোনতা ভালোবাসে। ওদেরও খিদে পায় যে।’
‘দুটো সিঙাড়া কোনো ব্যাপার নয় আবার আনা যাবে কিন্তু ওরা কারা পিকু?’ (Short Story)
“আমার পক্ষে চারতলার ছাদে উঠে ফোন করা সম্ভব হয়নি। বুঝতেই পারছো ও বাড়ির চারতলা মানে এখনকার যুগের ছয়তলার সমান। কোথা থেকে হঠাৎ চপ সিঙাড়া ভাজার গন্ধে ঘরটা ভরে উঠল।”
পিকু বার বার মাথা নেড়ে বলতে থাকল, ‘ওদের ওপর রাগ করিস না রে। কী আর করবে ওরা! লোকজন তো আর বিশেষ আসেও না আজকাল। এখন টুক করে একটা সুযোগ পেয়েছে।’
‘কাদের ওপর রাগ করব না রে?’
‘ওদের কথা বলার দরকার নেই। নাম করব না রে।’
বললাম, ‘কিছু একটা অনলাইন আনিয়ে নিই।’ (Short Story)
‘না রে পারবি না। এখানে ফোনের সিগনাল ঢোকে না। তাই ডেলিভারিও হয় না।’
‘তবে কি তোর ফোন নেই পিকু?’
‘আছে তো। চারতলার ছাদে উঠলে ঠিকঠাক পাওয়া যায়। পুরোনো বাড়ি তো হাওয়া যে কোন দিক দিয়ে ঢোকে কোথায় যায় একদম বোঝা যায় না।’ (Short Story)
আমার পক্ষে চারতলার ছাদে উঠে ফোন করা সম্ভব হয়নি। বুঝতেই পারছো ও বাড়ির চারতলা মানে এখনকার যুগের ছয়তলার সমান। কোথা থেকে হঠাৎ চপ সিঙাড়া ভাজার গন্ধে ঘরটা ভরে উঠল। (Short Story)
“পাশের বাড়িতে কিছু ভাজছে রে। ঠিক মনে হচ্ছে কেউ সিঙাড়া ভাজছে না রে? তোর আনা সিঙাড়াগুলোর কথা মনে হচ্ছে। ওরা নিয়ে গেল কী আপদ! তবু একটু চা করে আনি কী বলিস।”
‘এ কী রে! এ গন্ধ কোথা থেকে আসছে?’
‘পাশের বাড়িতে কিছু ভাজছে রে। ঠিক মনে হচ্ছে কেউ সিঙাড়া ভাজছে না রে? তোর আনা সিঙাড়াগুলোর কথা মনে হচ্ছে। ওরা নিয়ে গেল কী আপদ! তবু একটু চা করে আনি কী বলিস।’
‘থাক পিকু। বসে একটু গল্পই করি।’ (Short Story)
বার বার বলতে থাকল কিছু মনে করিস না বাড়িতে খেতে দেওয়ার মতো আর কিছু নেই। তারপর জোর করল হরলিক্স খাওয়ার জন্য। বাধ্য হয়ে খেলাম নয়তো মনে দুঃখ পাবে। হরলিক্স খেয়ে কাপটা ঘরের কোণায় নামিয়ে রাখা মাত্র একটা ধুমসো এবড়োখেবড়ো কালো টিকটিকি এসে তার পাশে বসল। বাবা রে! (Short Story)
পিকু বলল, ‘আর বলিস না দুধ, হরলিক্স বা মাছ এমন কিছুর গন্ধ পেলেই হ’ল। ও চাটতে চলে আসবে।’
‘পিকু ওটা তো বেড়াল নয় টিকটিকি।’ (Short Story)
‘সে কথা ওকে তো আমি বোঝাতেই পারছি না রে। একটা শিশিতে চারটে মাছ পুষেছিলাম। সারাদিন তাদের এমন আগলাতো কী বলবো! একদিন তো ভয়ে একটা মাছ লাফিয়ে শিশির বাইরে পড়ে মরেই গেল।’
‘তুই কি টিকটিকি পুষিস?’
‘না রে, অমন নয়। থাকে যে।’ (Short Story)
জানো তারপরেই খিল খিল করে হেসে উঠল। ‘তুই ভয় পাচ্ছিস আমি পাগল কী না? না না একদম নই।’
‘পিকু তুই বই পড়িস না?’
‘আজকাল চোখটা তেমন সায় দেয় না রে। ঝাপসা দেখি।’
‘ডাক্তারের কাছে চল তবে। আমি নিয়ে যাব তোকে। কিছু করতে হবে না শুধু যাবি। টাকা পয়সা লাগবে না। আমি দেব।’ (Short Story)
‘ধ্যাৎ ওসব ভাবিস না। একদিন ঘরে অনেক আলো লাগিয়ে নেব। সব দেখতে পাব। কেৎরে পড়ার বয়স মোটেও হয়নি। এখনও কত শখ বাকি আছে! কত আশা নিয়ে বেঁচে আছি এহ্। ব্রাজ়িল যাব, কাঠমন্ডু যাব, বালি যাব, লাস ভেগাসে জুয়া খেলব। বড়লোক প্রেমিকের গাড়ি চড়ে ক্লাবে যাব, গেলাসে একটু একটু করে চুমুক দিয়ে জিন অ্যান্ড টনিক খাব। সব বাসনা অতৃপ্ত রেখে মরে গেলে তো পেত্নি হয়ে যাব।’ (Short Story)
“সারা জীবন ওর জন্য যে আর ঠিক করে কাজেই ফেরা হল না তোর, এ তো জানি। নিজের পেটের সন্তানের জন্যও কেউ এমন ত্যাগ করে না।”
পিকুর সরু লম্বা সোজা চেহারাটার দিকে তাকিয়ে মনে হল কই কোথাও তো কিছু কম পড়েনি। পাঁচ ফুট ছয় তো হবেই। কোমড় অবধি মোটা চকচকে কালো বিনুনি। একটাও রূপোলি চুল চোখে পড়ল না। হাসলে সাদা দাঁতগুলো একেবারে ঝকমক করে উঠছে। বয়স যে ছাপান্ন পেরিয়ে গেছে তা সহজে ঠাওর হয় না। প্রায় অপরিবর্তীত সেই কলেজ জীবনের সুন্দরী মেয়েটা। আমি হাঁ করে দেখছিলাম জানো মহুয়াদি। প্রথম না হলেও দ্বিতীয় বা তৃতীয় হত সবসময়। (Short Story)
কী চমৎকার যে নাচতে পারত তোমায় কী বলব। আর সবসময় উচ্ছল, হাসিখুশি একটা মেয়ে। সব কাজেই তাকে সহজে পাওয়া যায়। ওর সামনে পিছনে ছেলেরা ঘুরত দিনরাত। কাউকে পাত্তা দেওয়ার কথা ওর মনেই হত না। এ সেই পিকু? যে পাশ করার আগেই চাকরি নিয়ে কত দূরে চলে গেল! অকুতোভয়। আমরা তখনও সবাই মার হাতে রান্না করা ভাত মাছ খেয়ে, বাবার পয়সায় অটো চড়ে আরাম করে ক্লাস করতে যাই। কাজের ফাঁকে পরীক্ষা দিয়ে দিব্যি ফার্স্টক্লাস নম্বর নিয়ে ফিরে গেল পিকু। আমরা তো ওর নম্বরের ধার কাছেও ছিলাম না। আমরা ভাবতেও পারতাম না ওর মতো করে। শুধু বুঝতে পারতাম পিকু সব পারে। তখন পারত। (Short Story)

‘আর তোর পালিতা কন্যা মিঠি কোথায়? তোর কাছে আসে না?’
‘সে নিউজ়িল্যান্ডে থাকে রে। এক চমৎকার সাহেবকে বিয়ে করে ওখানে নাগরিক হয়ে গেছে। এই তো সাত মাস আগে একটা মেয়ে হয়েছে ওদের। প্রথম প্রথম ফোন করত আজকাল আর সময় পায় না। ওই নতুন বছরে হয়তো একটা মেসেজ পাঠায়। ভাল আছে রে। সুখে আছে। আজকাল বাচ্চাদের ইস্কুলে পড়ায়। ভাবলে ভারি আনন্দ হয়, সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় কত দূর গেল বল তো।’ (Short Story)
“তুই রোজ পুজো করলে তো পারিস। এই যে তোর কেউ নেই এ বয়সে কী নিয়ে আর থাকে মানুষ! সন্ধ্যেবেলা মন্দিরের আরতি দেখবি খুব শান্তি পাবি।”
‘কী বলছিস পিকু? তুই না থাকলে ও তো বাঁচতই না। তুই অত বড় চাকরি ছেড়ে ওকে কোলে করে নিয়ে এসেছিলি এ তো আমরা সবাই দেখেছি। সারা জীবন ওর জন্য যে আর ঠিক করে কাজেই ফেরা হল না তোর, এ তো জানি। নিজের পেটের সন্তানের জন্যও কেউ এমন ত্যাগ করে না।’ (Short Story)
‘অমন বলিস না। ওটা তো কর্তব্য ছিল। তোর চোখের সামনে অমন বাপ-মা হারা শিশু পড়লে তুই কি রাস্তার কুকুর শেয়ালের মুখে রেখে চলে আসতে পারতিস? আমিও পারিনি। আর দ্যাখ আমি না আসলে শেষ পর্যন্ত মা, বাবা, কাকা, কাকিমা এদের দেখাশোনাও তো হত না রে। ভাইও চলে গেল। কেউ তো আর কাছে ছিল না। ওই মানুষগুলো তো একা একাই মারা যেত। মিঠি ওদের প্রাণে আশার আলো ছিল। মা আর ছোটকাকা মারা যাওয়ার পর মিঠি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে চলে গেল। যা হয় ভালর জন্যই হয়।’ (Short Story)
‘তুই রোজ পুজো করলে তো পারিস। এই যে তোর কেউ নেই এ বয়সে কী নিয়ে আর থাকে মানুষ! সন্ধ্যেবেলা মন্দিরের আরতি দেখবি খুব শান্তি পাবি।’
‘তোকে কে বলল আমার শান্তি নেই? ওরা সিঙারা নিয়ে গেল বলে? মনে কর না আমি খেয়ে নিয়েছি। আমার শান্তির কোনও অভাব নেই রে। সন্ধ্যেবেলায় আসলে বুঝবি। একেবারে নিশ্চুপ, যাকে বলে পিনড্রপ সাইলেন্স। কেউ বিরক্ত করবে তার জো নেই।’ (Short Story)
‘তোর আত্মীয়স্বজন নেই? কেউ আসে না? মামাতো, পিসতুতো, জ্যাঠতুতো, খুড়তুতো কোনও ভাই বোন?’
“তবে তারা তো আর কেউ ভারতীয় নয়। এখানে ওদের আর কোনও শিকর নেই। খুব ভাল আছে সবাই।”
‘না রে কেউ নেই। ওই তো কাকা কাকিমা নিঃসন্তান ছিলেন। পিসি বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে সন্তানসহ মারা যায় সেই আমার ছোটবেলাতেই। মা’রও তো আর কেউ ছিল না। ব্যস পরবর্তী প্রজন্ম বলতে আমি আর ভাই। তারপর হল মিঠি আর ঋক-ঋত্বিক। মিঠির মেয়ে মিয়া তারও পরের প্রজন্ম। তবে তারা তো আর কেউ ভারতীয় নয়। এখানে ওদের আর কোনও শিকর নেই। খুব ভাল আছে সবাই।’
‘আর তুই? কী নিয়ে থাকিস?’
‘কেন এই বাড়ি? কম কাজ এখানে?’
‘চলে কী করে তোর?’ (Short Story)

‘কাকু আর বাবার সামান্য সঞ্চয় এখনও আছে কেউ নেয়নি। ওদের দেশে এ টাকার কোনও মূল্য নেই। আমার তাতেই চলে যায়। অসুখ হয়ে পড়ে থাকার ভয় তো আমার নেই। তারাই পড়ে থাকে যাদের দেখার লোক আছে। আমি তো পড়লেই মরে যাব।’ (Short Story)
আমি হাঁ করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম মহুয়াদি। একটা কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছিল কোথাও। পিকু বলেছিল বাড়িটাতে নানা ফাঁক ফোকোর দিয়ে অদ্ভুতভাবে আলো-হাওয়া খেলা করে। তাই কিছু বলিওনি। (Short Story)
‘একটা ঠান্ডা হাওয়া পাচ্ছিস না? একটা ঝামেলা হয়েছে একটু বোস আমি আসছি।’ বলে পিকু ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি বসে আছি তো আছিই। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট, পনেরো মিনিট, কুড়ি মিনিট– আর কি বসা যায়? আমি একতলা, দোতলা, তিনতলার সারি সারি তালা বন্ধ ঘর, অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে দালান পেরিয়ে চারতলার ছাদে উঠে গেলাম। বিশ্বাস করো মহুয়াদি পিকু কোথ্থাও নেই। আমি পিকুর নাম ধরে ডাকতে শুধু প্রতিধ্বনিই ফিরে এল। (Short Story)
কাঠফাটা রোদের দুপুরে বাইরে কোকিল ডাকছিল। আমাদের পাড়ার কোকিলগুলো বাপু অমন ডাকে না। আমি আর পিকুর বাড়ির বসার ঘরের চৌকাঠ পেরোইনি। রাস্তায় বেরিয়েই দেখি ঝাঁ ঝাঁ রোদে, উল্টোদিকের বাড়ির মহিলা জ়োম্যাটোর একটি ছেলের কাছ থেকে কী যেন নিচ্ছেন। মনে হল যেন সিঙাড়া। চোখে চোখ পড়তেই উনি একটু মুচকি হাসলেন। অবশ্য সেটা আমার ভুলও হতে পারে। (Short Story)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
জয়িতা বাগচী বর্তমানে স্বাধীন গবেষক। সাম্প্রতিকতম বই – আমাদের বেড়াল ও অন্যান্যদের কথা।