Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

অপুর ঠিকানা: পর্ব ১

আলোলিকা মুখোপাধ্যায়

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

Alolika Mukhopadhyay
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

শান্তি ভবনের গেটের সামনে সাইকেল রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দেওয়ার সময় মহুয়া খেয়াল করল বটগাছটার নীচে আজ কোনও রিকশা নেই। মাঝে মাঝে এমন হয়। ফেরার সময় স্টেশনে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। মহুয়া রিকশাওয়ালা’কে জিজ্ঞেস করল- ‘‘তুমি কি চারটে নাগাদ ফিরে আসতে পারবে? আমি তাহলে অ্যাডভান্স দিয়ে রাখতে পারি।’’
লোকটি গামছা দিয়ে ঘাম মুছে বললো – ‘‘ক’টার ট্রেন ধরবেন?’’
-সাড়ে চারটের মধ্যে স্টেশনে পৌঁছে দিতে পারবে?’’ লোকটির হাতে কুড়ি টাকা ধরিয়ে দিতে সে সময় মতো ফিরে আসবে বলে সাইকেলে উঠে পড়ল। (Story)

চৈত্রের শুকনো হাওয়ায় ধুলোর ঘূর্ণি উড়ছে মফঃস্বল শহরের শুনশান দুপুরে শান্তি ভবনের ছোট বাগানে দুটো কুকুর লেজ গুটিয়ে ঘুমোচ্ছিল। মহুয়া’কে আধবোঁজা চোখে দেখে বার দুই ভুক ভুক করে আবার মাথা গুঁজে শুল।
নিচের অফিস ঘরে দেখা করে মহুয়া লম্বা করিডোর পার হয়ে ওর মা’র ঘরে পৌঁছল। কম খরচের এই ঘরগুলোয় চারজন করে থাকেন। মহুয়া পর্দা সরিয়ে ভেতরে এল। দুই বৃদ্ধা ঘুমোচ্ছেন, একজন বই পড়ছেন। শীলাও বোধহয় আধো ঘুমে ছিলেন। মহুয়ার চটির শব্দে পাশ ফিরে দেখলেন- ‘‘কখন এলি? নিচের থেকে তো কেউ খবর পাঠায়নি!’’
মহুয়া কাছে এল- ‘‘আমাকে তো ওরা চেনে। একটা দরকারে তাড়াতাড়ি আসতে হল। চল বারান্দায় গিয়ে বসব।’’
শীলা দুই ঘুমন্ত বৃদ্ধার দিকে চেয়ে বললেন- ‘‘এখন এখানেই বোস না। বারান্দায় বড্ড গরম।’’
বই পড়া মহিলা চশমার আড়ালে মহুয়াকে লক্ষ্য করছিলেন। ও ভদ্রতার হাসি হাসল। এঁকে আজ প্রথম দেখছে। বৃদ্ধাশ্রমে আজকাল ঘর ভরতে দেরি হয় না। ও মাকে তাড়া দিল – ‘‘না, এখানে ডিস্টার্ব করো না। ভিজিটর্স রুমে চল। দেখে এলাম লোকজন কেউ নেই।’’
পায়ে চটি পরতে পরতে অপ্রসন্ন মুখে শীলা বললেন– “কে আবার ভরদুপুরে আসবে? তুই তো বিকেলে এলে পারতিস।”

আরও পড়ুন: “মধ্যরাতের কবিতা”

মহুয়া উত্তর দিল না, কেন যে এই অবেলায় উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে এসেছে, মা ওর মুখ দেখেও কিছু বোঝার চেষ্টা করল না। দিনে দিনে যেন আরও অবুঝ আর স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। আজকের ঘটনাটা শুনলে মেয়ের যে কী প্রতিক্রিয়া হবে। ও অনুমান করতে পারছে! তবু, সামনের অনিশ্চিত দিনগুলোর কথা মায়ের জানা দরকার।
দুপুরে শান্তিভবনের কাজের লোকেরা বিশ্রাম নেয়। অসময়ে লোকজনও বিশেষ আসে না। মাকে নিয়ে মহুয়া ভিজিটর্স রুমের এক কোণায় গিয়ে বসল। কথা শুরু করার আগেই শীলা জিজ্ঞেস করলেন- “আজ ব্যাগ আনিসনি? আমার হরলিক্স, ঘি, চীজ বিস্কুট সব তো ফুরিয়ে এল। একটা ভাল সেন্ট চেয়েছিলাম তাও আনতে ভুলে যাচ্ছিস।”
মহুয়ার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটল- “তুমি একটু চুপ করবে? শুধু নিজের কথা! একবারও তো জানতে চাইছো না, কেন আমি হঠাৎ চলে এসেছি।”
শীলা অপ্রস্তুত হলেন– “তুই না বললে জানব কী করে? কী হ’লটা কী?”
মহুয়া কয়েক মুহূর্ত থেমে থেকে উত্তর দিল– “খুব খারাপ খবর মা। দীপংকর মারা গেছে। তিনদিন পরে জানতে পারলাম।”
শীলা চমকে উঠলেন– “সে কী! কোথায় মারা গেল? ক’দিন আগে জাহাজে রওনা হয়েছিল না? তোকে কে খবর দিল?”
মহুয়ার বুক ঠেলে দীর্ঘশ্বাস উঠে এল। চোখের জল মুছে মৃদু স্বরে বলল– “জাহাজেই মারা গেছে। সিঙ্গাপুর থেকে কোন পোর্ট-এ যাচ্ছিল। ক্যাবিনেটের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক। দরজা খুলে কাওকে ডাকতেও পারেনি।”
“বিদেশ বিঁভুইয়ে প্রাণটা গেল। ওর হার্টের অসুখ ছিল, তুই জানতিস?”
“ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খেত। ভালই তো ছিল। এখানে থাকলে হয়তো বেঁচে যেত। বাড়ির লোকেরা সময় মতন হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারত।”

শীলা সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বললেন – “লোকটা তবু মানসম্মান নিয়ে চলে গেছে। তোর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে যদি কিছু হত? তখন কী করতিস? ডাক্তার, হাসপাতাল করতে গিয়ে কম ঝামেলা হত? ওর বউ, ছেলে-মেয়ের কিছু জানতে বাকি থাকত?”
“একটা মানুষ চলে গেল। এখন তোমার এসব কথা মনে হচ্ছে? আমার সঙ্গে ওর সম্পর্ক যাই থাক, এত বছর সেই জীবনেই তো অভ্যস্ত ছিলাম, মা।”
শীলা বললেন– “জানি। আমাদের জন্যে ও করেওছে অনেক। তা তুই খবরটা পেলি কখন? কেউ জাহাজ থেকে ফোন করেছিল?”
মহুয়া মাথা নাড়ল– “না। জাহাজ থেকে শুধু ওর ফ্যামিলিকে খবর দিয়েছে। আমি খবর পেলাম ওর এক বন্ধু পীযুষ রায়ের কাছ থেকে। গতবছর দীপংকরের সঙ্গে বম্বে গিয়ে আলাপ হয়েছিল। শুধু উনি বোধহয় আমাদের রিলেশনটা জানতেন। গতবার এসে দীপঙ্কর আমার ফোন নাম্বারটা ওঁকে দিয়েছিল। আমাকে ও বলেছিল কোনও এমার্জেন্সি হলে বম্বেতে পীযুষকে কনট্যাক্ট করতে। তখন বুঝিনি ও কোন এমার্জেন্সীর কথা বলতে চেয়েছিল।”
শীলা উদ্বিগ্ন হলেন–
“এখন কী করবি মৌ? তোর জন্য দীপংকর ব্যাঙ্কে টাকা-কড়ি রেখে গেছে? ভবিষ্যতের কথা ভেবেও তো মানুষ ব্যবস্থা করে রাখে। ওর বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিস?”
মহুয়া বোঝে মা অবান্তর কিছু বলছে না। ও নিজেও কি এই বাস্তব সমস্যার কথা ভাবছে না? দীপঙ্কর যখন আসত, বেশ কিছু টাকা রেখে যেত। এবারে এসে যা দিয়েছিল, সেটা কয়েক মাসের খরচ। ওর নিজের গানের ফাংশান আর টিউশন মিলিয়ে মোটামুটি চলে যেত। কিন্তু মা যা আশা করছে, দীপংকর ওর জন্যে তেমন কোনও ব্যবস্থা করে গেছে বলে ভরসা হয় না।

তুই সময় থাকতে এসব কথা তুলিসনি কেন? কম দিনের সম্পর্ক? আমি কথা বলতে গেলে অশান্তি করতিস। দীপঙ্কর এসে থাকলে তোদের অসুবিধা হয় বলে আমাকে এখানে পাঠালি!

মহুয়া মাকে সত্যি কথাটা জানাল– “আমার অ্যাকাউন্টে কয়েক হাজারের বেশি রেখে যায়নি মা। মাঝে মাঝেই তো টাকা পাঠাত। হঠাৎ করে চলে যাবে নিজেই কি জানত?”
“কেন? তোর ভবিষ্যতের কথা ভাবেনি কেন? বউ, ছেলে-মেয়ের জন্যে সর্বস্ব রেখে গেল না? তুই সময় থাকতে এসব কথা তুলিসনি কেন? কম দিনের সম্পর্ক? আমি কথা বলতে গেলে অশান্তি করতিস। দীপংকর এসে থাকলে তোদের অসুবিধা হয় বলে আমাকে এখানে পাঠালি!”
মার কথার মাঝখানে মহুয়া উঠে দাঁড়াল। ব্যাগ থেকে কয়েকশো টাকা বার করে সামনের টেবিলে রেখে বলল– “চিৎকার করে লোক জড়ো করো না। তোমাকে এখানে থাকতে হবে। টাকা রেখে যাচ্ছি। যা দরকার, আনিয়ে নিও। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

শীলা পাথরের মতো বসে থাকলেন। মহুয়া বাগান পার হয়ে গেটের বাইরে এসে দেখল রিকশাওয়ালা ফিরে এসেছে। স্টেশনের পথে যেতে যেতে ও মা’র কথা ভাবছিল। এক জীবনে মা কত ভাবেই ওকে চালানোর চেষ্টা করল। সম্পর্কটা শেষপর্যন্ত তিক্ততায় এসে ঠেকেছে। সামনে এখন অনেক খরচ। তবু মাকে আর নিজের সংসারে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না। মাথার মধ্যে অজস্র চিন্তা দানা বাঁধছে। মহুয়া অনুভব করছিল একটা ঘটনায় ওর জীবনের ভিত নড়ে গেছে। আজ আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আত্মীয় স্বজন থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন হতে হতে সম্পর্কের যোগসূত্রগুলো ক্রমশ আলগা হয়ে গেছে।

ট্রেনে উঠে মহুয়ার খেয়াল হল আজ গানের ছাত্রীদের আসতে বারণ করা হয়নি। বাড়ি পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে। বম্বেতে পীযুষ নামে ভদ্রলোককে একবার ফোন করা যেতে পারে। এমন তো হতে পারে দীপংকর ওর জন্য বন্ধুর কাছে কোনও ইন্সট্রাকশন রেখে গেছে। নয়তো সেইবার এসে এমার্জেন্সির কথা বলেছিল কেন? অপুর হোস্টেলের খরচের জন্যে মহুয়ার চিন্তা নেই। তবু, নিজের বাকী জীবনটা পড়ে আছে। মায়ের খরচ চালাতে হবে।

আরও পড়ুন: ভালোবাসার দিনক্ষণ

এইসব দুশ্চিন্তার মাঝে মহুয়া যেন নিজেকেই প্রশ্ন করল– তবে কি শুধু টাকার জন্যে দীপংকরকে আঁকড়ে ধরেছিলাম? বয়সে বড় একজন বিবাহিত মানুষ, যে কখনও নিজের সংসার ভাঙবে না। সব জেনেও তো বছরের পর বছর তাকে সঙ্গ দিয়েছে। কবে ওদের জাহাজ আসবে বলে অপেক্ষায় থাকতাম। ফিরে যাওয়ার সময় এলে মনখারাপ হত। কখনও মনে হয়নি দীপঙ্কর আমাকে টাকা দিয়ে ভোগ করছে। ও আমার গান ভালোবাসত। রিসর্টে বেড়াতে গিয়ে কত রাত পর্যন্ত গান শুনত। ওর বিবাহিত জীবনে কোথাও কোনও অভাববোধ ছিল। আমার তো হারাবার মতো কিছুই ছিল না। সেই কবে গানের ফাংশানে আমাদের দেখা হয়েছিল। তারপর এত বছরের বোঝাপড়ার সম্পর্ক থেকে কেমন এক অধিকারবোধ জন্মেছিল। সেইজন্যেই কি দীপংকরের কাছ থেকে টাকা কড়ি পাওয়ার আশায় পীযুষকে ফোন করার কথা ভাবছি? কিন্তু ভদ্রলোক তো নিজে থেকে কিছু বলেননি। মহুয়া ভেবে নিল ও আর বম্বেতে ফোন করবে না।

চেরী হিলস এর “প্রবাসী” ক্লাবের পিকনিকের দিন ভোরের দিকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হল। একটু বেলায় রোদ উঠল। মেরীল পার্কের কাছাকাছি পৌঁছোতে মাইকে হিন্দি গান ভেসে এল। অভীক পার্কিং লটে গাড়ি রাখার পর ওমি আর শমি নেমে মাঠের দিকে ছুটল। অভীক বলল– “নিউজার্সি এখন আই.টি. কোম্পানির বাঙালিতে ভরে গেছে। পুজোর সময় কত ইয়াং গ্রুপ আসে দেখ না।”

“ভাল তো। ক্লাবে মেম্বারশিপ বাড়ছে। ওদের একটা দল অ্যাকটিভ হয়েছে বলে আমাদের আর খাটতে হচ্ছে না।”
চাঁদা দেওয়ার পর ব্রেকফাস্টের লুচি তরকারি খেয়ে অভীক এধার ওধার খানিক আড্ডা দিয়ে বেড়াল। দূরে ওমি, শমিদের মতো ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে কয়েকটা খেলার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। অস্মিতা কাঠের টেবিলের ধারে দাঁড়িয়ে একদল মহিলার সঙ্গে স্যালাড কাটতে ব্যস্ত। ক্রিকেট খেলার একটু দেরি আছে দেখে অভীক এক ক্যান বিয়র নিয়ে অজয়দা, সুব্রতদাদের পাশের চেয়ারে এসে বসল।

অভীক পার্কিং লটে গাড়ি রাখার পর ওমি আর শমি নেমে মাঠের দিকে ছুটল। অভীক বলল– “নিউজার্সি এখন আই.টি. কোম্পানির বাঙালিতে ভরে গেছে। পুজোর সময় কত ইয়াং গ্রুপ আসে দেখ না।

হঠাৎ কানে এল অজয়দা বলছেন “চোর পট্‌কাকে মনে আছে? একবার মালয়েশিয়া থেকে এসেছিল?”
সুব্রতদা উত্তর দিলেন “মেকানিক্যালের দীপংকরের কথা বলছিস? একবার এখানে এসেছিল না?”
“হ্যাঁ। মালয়েশিয়া থেকে ওদের শিপ এসেছিল। সে সময় আমাদের কাছে দুদিন ছিল। এবার দেশে গিয়ে শুনলাম ও মারা গেছে।”
“কী হল? হার্ট অ্যাটাক না ক্যানসার?”
অজয়দা বললেন “ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। জাহাজেই মারা গেছে। পরদিন ওর ক্যাবিনে ডেডবডি পাওয়া গেল।”
“ভেরি স্যাড। দীপংকরের ফ্যামিলির কী অবস্থা? তুই কনট্যাক্ট করেছিলি?” “নাঃ! ইনফ্যাক্ট্‌ দীপংকরের বৌকে একবারই দেখেছিলাম। আমরা কলকাতায় যেতে ওরা তাজবেঙ্গলে ইনভাইট করেছিল। তারপর অনেকদিন আর কন্ট্যাক্ট নেই। দীপংকরও আর ফোন টোন করত না।
দূর থেকে মুখে চোঙ্গা নিয়ে তথাগত ডাকাডাকি করছে – “বিমানদা, সূর্য্যদা, অভীকদা ক্রিকেট শুরু হচ্ছে। ইমিডিয়েটলি ওদিকের মাঠে চলে যান।”
এখানে বাঙালি/অবাঙালি মিলিয়ে একটা ক্রিকেট টিম হয়েছে। আজ তাদের মধ্যে খেলা হচ্ছে। অভীক আমপায়ার। ওর সঙ্গে সঙ্গে সুব্রত খেলা দেখতে চললেন।

লাঞ্চ ব্রেকে ওরা ফিরে এল। বার-বি-কিউ গ্রিলের কাছে এসে গরম তন্দুরি চিকেন, নান আর স্যালাড নিয়ে ধারে কাছের বেঞ্চগুলোয় গিয়ে বসল। ওমি আর শমি তরমুজ খেতে খেতে খবর দিয়ে গেল ওরা একটা জলার ধারে মাছ দেখতে যাচ্ছে, সঙ্গে অপরাজিতা আন্টি আর শম্পা আন্টি থাকবে। অভীক তাও বলল– “মাকে জিজ্ঞেস করে যাও।” তরমুজের রস লাগা টিশার্টে হাত মুছতে মুছতে শমি বলে গেল “মা জানে।”

এখানে বাঙালি/অবাঙালি মিলিয়ে একটা ক্রিকেট টিম হয়েছে। আজ তাদের মধ্যে খেলা হচ্ছে। অভীক আমপায়ার। ওর সঙ্গে সঙ্গে সুব্রত খেলা দেখতে চললেন।

ওদের মা তখন গানের তালে তালে মিউজিক্যাল চেয়ার দখল করতে ব্যস্ত। ক্যাসেটে বাজছে– যব সে তেরে ন্যায়না…। হুট করে গান থামছে। চেয়ার নিয়ে টানাটানি। অস্মিতার সিরিয়াস মুখে হেঁটে যাওয়া দেখে অভীকের হাসি পাচ্ছিল। ও প্রাইজ এর জন্য খুব লড়ে যেতে পারে। জিতলে একটা চিনেমাটির কফি মাগ টাগ নিয়ে বাড়ি যাবে। “টাগ অফ ওয়ার” এ তো নির্ঘাত ঢুকবে। জিতলে হয়তো আবার একটা কফি মাগ।
পিকনিকের মাঠে শেডের নীচে লম্বা বারান্দায় পোর্টেবল উনুনে পোলাও মাংস রান্না হচ্ছে। ভাড়া করা রাঁধুনী রতন আর ওর বউ এর মাথায় সাদা কাপড়ের “শেফ” এর টুপি। পেটে এপ্রন বেঁধে বিরাট বিরাট বাসনে খুন্তি নাড়ছে। একদল মহিলার আড্ডাও সেখানে।

সূর্যাস্তের পরে পিকনিক শেষ হল। ডিনারের শেষে খেলার প্রাইজটাইজ নিয়ে বাড়ি ফিরছে। “টাগ অফ ওয়ার এর সময় অস্মিতা মোটাদের দলে গিয়ে ভিড়েছিল। শেষপর্যন্ত দড়ি ছিঁড়ে মাটিতে আছাড় খেয়ে একশা কান্ড। ওর ক্যালকুলেশন অনুযায়ী একটা প্রাইজ এবার কম হল।
রান্নার বাসনপত্র মাজা, মাঠ পরিষ্কার করার জন্য দু’জন মেক্সিক্যান লোক ভাড়া করা হয়েছিল। ওদের কাজকর্ম মিটতে মাঠ প্রায় ফাঁকা হয়ে এল। অজয়বাবুর স্ত্রী ইন্দ্রাণী অস্মিতাকে বললেন “একবার আমাদের বাড়িতে ঘুরে যাও। বাগানের তরকারি দেব। তোমার ডিভিডিগুলোও ফেরত দেব।”

সূর্যাস্তের পরে পিকনিক শেষ হল। ডিনারের শেষে খেলার প্রাইজটাইজ নিয়ে বাড়ি ফিরছে। “টাগ অফ ওয়ার এর সময় অস্মিতা মোটাদের দলে গিয়ে ভিড়েছিল।

ওঁদের বাড়ি হাইওয়ে থেকে দূরে নয়। অভীকদের ফেরার পথে পড়বে। অস্মিতা জিজ্ঞেস করল “যাবে?” অভীক উত্তর দেওয়ার আগেই অজয় গাড়ির কাচ নামিয়ে ডাকলেন “চলে এসো। কফি খেয়ে যাবে। সুব্রতরাও যাচ্ছে।”
আধঘণ্টার মধ্যে সবাই অজয় ইন্দ্রাণীর বাড়িতে পৌঁছে গেল। ইন্দ্রাণী বাগানের লাউ কুমড়ো তুলে রেখেছিল। ওঁর কথায় অস্মিতা আর সুব্রতর স্ত্রী মীনাক্ষী বাগানের জুকুনি, স্কোয়াশ, বেগুন, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিল। কফি মেশিন চালিয়ে রান্নাঘরে গল্প শুরু হল। ওমি, শমি আইসক্রীম খেতে খেতে ফ্যামিলি রুমে টিভি দেখছে।
অভীক আর সুব্রতকে নিয়ে অজয় বাগানে বসলেন। তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। পিকনিক নিয়ে দু’চার কথা হল। গার্ডেন চেয়ারে মাথা হেলিয়ে অজয় যেন অন্যকথা ভাবছেন। একসময় সোজা হয়ে বসে বললেন। “দীপংকরের ব্যাপারটা মাথা থেকে যাচ্ছে না। ইন্দ্রাণীর তো বিশ্বাসই হচ্ছে না সেবার আমাদের কাছে বেড়াতে এল। বউ ছেলে মেয়ের কথা বলল। জাহাজের চাকরিতে ফ্যামিলি ছেড়ে থাকতে হয়। ছেলে মেয়ের পড়াশোনার জন্যে বউ আর ওর সঙ্গে ট্র্যাভল করে না… কত কথা বলেছিল!

অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প‍র্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড‌ সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

Picture of আলোলিকা মুখোপাধ্যায়

আলোলিকা মুখোপাধ্যায়

দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প‍র্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড‌ সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
Picture of আলোলিকা মুখোপাধ্যায়

আলোলিকা মুখোপাধ্যায়

দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প‍র্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড‌ সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com