banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ভালোবাসার দিনক্ষণ

আলোলিকা মুখোপাধ্যায়

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪

Valentines Day stories and economical view
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

কলামের অন্যান্য পর্ব:  [] [] [] [] [] [] [] [] [] [১০]

মার্কিন পাঁজি অনুযায়ী ভালোবাসার অমৃতযোগ ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেনটাইন্স ডে (Valentines Day)। কোনকালে সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামের সঙ্গে এই মধুক্ষণটি জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, সঠিক জানা নেই। তবে ওই দিনে ভালোবাসা জানানো যে কতখানি জরুরি, আমাদের পুরনো বন্ধু এডওয়ার্ড রোলোফ সে ব্যাপারটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিল। যদিও অনেক দেরিতে।

এড্-এর প্রথম বউ তাকে বড় অসময়ে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ওদের তখন দুটো ছোট ছোট মেয়ে। সে সময় এড্ চাকরি, আরও পড়াশোনা আর সংসার চালানোর চাপে পড়ে। সকাল-সন্ধে এমন ব্যস্ত যে, বউকে সংসারের স্থায়ী সদস্য ভেবে নিয়ে খুব নিশ্চিন্ত হয়ে বসেছিল। ভ্যালেনটাইন্স ডে-তে “ভালোবাসি ভালোবাসি” বলে জলে স্থলে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজানো দূরে থাক, শীতের সকালে ‘নকুড়মামা’ সেজে আকাশ দেখতে দেখতে অফিস চলে গেল। বিকেলে যখন বাড়ি ফিরল, না কিনেছে গোলাপের তোড়া, না কিনেছে হৃদয়ের ছাপ আঁকা হরতন মার্কা চকোলেটের বাক্স! কার্ড কেনার তো ব্যাপারই নেই। 

এরপর আর শুকনো কথায় চিঁড়ে ভেজে? এড্ রেস্তোরাঁতে ডিনারের জন্যে আগাম রিজার্ভেশন করেনি বুঝে, বউও আর বাচ্চাদের বাড়িতে রেখে যাওয়ার জন্যে বেবি-সিটারের খোঁজ করেনি। এড্ শেষ মুহূর্তে দৌড়োদৌড়ি করে চকোলেটের বাক্স আর ওয়াইন কেনার চেষ্টা করছিল। ‘দরকার নেই’ বলে বউ কিছুই আনতে দেয়নি।

chocolate and wine
এড্ শেষ মুহূর্তে দৌড়োদৌড়ি করে চকোলেটের বাক্স আর ওয়াইন কেনার চেষ্টা করেছিল

পরের বছর ভ্যালেনটাইন্স ডে-তে সব কিছু মেক-আপ করবে বলে ভেবে রেখেছিল এড্। বউ তার আগেই অসম্ভব ভালোবাসাপ্রবণ এক সাহেবের সঙ্গে অন্য বাড়িতে চলে গেল। এড্-এর বিরুদ্ধে তার প্রধান অভিযোগ ছিল, সে নিয়মিত ভালোবাসে কিনা বোঝা যেত না। 

আরও পড়ুন- গল্প: এই জীবনের সত্য (অন্তিম পর্ব)

এড্ এবার হাতে-কলমে শিক্ষা পেয়েছিল। কোন সাবজেক্টে উইক, সেটাও জেনেছিল। তারপর দ্বিতীয় বউ স্কুল টিচার আইলিন-কে একেবারে ভালোবেসে অস্থির! ওদের বিয়েতে গিয়েছিলাম। বর, বউ দু’জনের বয়স তখন প্রায় চল্লিশ। চার্চে বিয়ে হল। তারপরে ওদের বেলুন ওড়ানো ‘জাস্ট ম্যারেড’ লেখা যে ফেস্টুন লাগানো কালো ক্যাডিল্যাকের পেছন পেছন ধাওয়া করে ‘রিসেপশন’-এ গিয়েছিলাম এড্-এর মায়ের বাড়িতে। ওই মহিলাই তখন নাতনিদের বেশি দেখাশোনা করতেন। 

সেদিন অসম্ভব বৃষ্টি। বিকেলে পেছনের বাগানে শামিয়ানা খাটিয়ে পার্টির ব্যবস্থা হয়েছে। বৃষ্টিতে মাঠ ভিজে গোবর। ক্রমশ এমন ঝড়-বৃষ্টি নামল যে আমরা হুড়মুড়িয়ে বর-কনেকে ছেড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লাম। লং ড্রেস প্রায় হাঁটুর কাছে তুলে, ব্যালেরিনা জুতো হাতে নিয়ে আমরা মহিলারা সব দৌড়ে ভেতরে পালিয়েছি। ছেলেরাও টাক্সিডো আর বো-টাই সমেত জুতো ভর্তি কাদা নিয়ে লিভিং-রুমে ভিড় করেছে। প্রায় গোটা বিয়েবাড়ি সেখানে। ওদিকে প্রচণ্ড ঝড়জলের মধ্যে ভেজা প্যান্ডেলে ঝমঝম বাজনার সঙ্গে আইলিনকে বগলদাবা করে পাক খেয়ে খেয়ে নেচে বেড়াচ্ছে এড্ রোলোফ। বউকে ধরেছে, যেন কচ্ছপের কামড়। আমরা জানলা দিয়ে দেখছি, দু’জনের জুতো কাদা মাখামাখি। কিন্তু নাচ থামানোর লক্ষণ নেই। এড্ সেদিন নির্ঘাৎ বাজ-পড়া অবধি চালিয়ে যাবে ভেবেছিল। এবার জীবনে আর কোনও উইক পয়েন্ট থাকতে দেবে না। পরে নিউমোনিয়া হয় হোক, তবু ঝড়ের রাতেই অভিসার সেরে নেবে। নেহাৎ আইলিন টিচার বলেই বোধহয় কড়া ধমক দিয়ে ওকে ভেতরে এনেছিল।

bride and groom dance

সেদিন থেকে এড্-এর এক কথা— শুধু ভালোবাসায় ভোলাব। তারপর থেকে যত বছর ধরে আমাদের দেখা হয়েছে, এড্ আর আইলিনের সংসারে ছোট দুই মেয়ে যে আদর-যত্নে বড় হচ্ছে, টিচার আইলিনের ‘দিদিমণিগিরি’-তে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পেরেছে— এ সবই শুনেছি। তবে মেয়েরা একটু বড় হয়ে নিজেদের মায়ের কাছেও যাতায়াত করত। 

এ কথা ঠিক যে, ‘ভ্যালেনটাইন্স ডে’-র (Valentines Day) সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসার একটা তারিখ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সত্যিকারের যোগসাজস আছে ব্যবসাদারদের সঙ্গে। পুরনো দিনে ছিল এই উপলক্ষ্যে প্রিয়জনকে ফুল বা চকোলেট উপহার দেওয়ার প্রথা। ‘প্রিয়জনের দিন’ অর্থে স্ত্রী, নয়তো ভাবী স্ত্রীর জন্যে চিহ্নিত ছিল এই বিশেষ তারিখ। উপহার দেওয়ার রেওয়াজ ছিল শুধু পুরুষদের। 

কিন্তু ক্রমশ দেখা গেল নারীর সম-অধিকারের বিষয়টি ছাড়াও ব্যবসায়িক ভিত্তিতেও ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে (Valentines Day) লাভজনকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কার্ডের ব্যবসা, ফুলের ব্যবসা, চকোলেটের ব্যবসা, পোশাকের ব্যবসা, গয়নার ব্যবসা, রেস্তোরাঁ, হোটেল, রিসর্ট সব কিছুতে ওই বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে লুটে নেওয়া দরকার। তখন ধুয়ো উঠল প্রিয়জনের সংজ্ঞাকে শুধু বউ আর প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা চলবে না। স্বামী বা প্রেমিক কেন নয়? আর বাবা, মা-ও কি ফ্যালনা? পুরুষ, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? আর, বন্ধুরা প্রিয়জন নয়? তবে চিঠিতে ‘মাই ডিয়ার’ লেখার মানে কী? ছেলেমেয়েই বা অপ্রিয় হবে কোন দোষে? অন্তত তাদের শিশুবয়সে? তাছাড়া, অফিসেও যদি কাউকে প্রিয় বলে মনে হয়, বছরে একদিন একটু ঝেড়ে কাশবে না?

কিন্তু ক্রমশ দেখা গেল নারীর সম-অধিকারের বিষয়টি ছাড়াও ব্যবসায়িক ভিত্তিতেও ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে লাভজনকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কার্ডের ব্যবসা, ফুলের ব্যবসা, চকোলেটের ব্যবসা, পোশাকের ব্যবসা, গয়নার ব্যবসা, রেস্তোরাঁ, হোটেল, রিসর্ট সব কিছুতে ওই বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে লুটে নেওয়া দরকার।

হলমার্ক কার্ড কোম্পানি বোঝালো তারা মেয়েদের প্রেম প্রকাশের অধিকার নিয়ে খুবই সচেতন। একা একা কি ভালোবাসা হয়? মেয়েদেরও কত কিছু বলার থাকে। সেই সম্ভাব্য নারীর উক্তি সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে কার্ড কোম্পানি রমরমা ব্যবসা জুড়ে দিল। বাজার ছেয়ে গেল নতুন ধরনের ভ্যালেনটাইন্স কার্ডে। বর দিচ্ছে বউকে। বউ দিচ্ছে বরকে। মা দিচ্ছে মেয়েকে। মেয়ে দিচ্ছে তার বয়ফ্রেন্ডকে। বয়ফ্রেন্ড দিচ্ছে তার বন্ধুকে। গোলাপি রঙের ওপর সাদা লেস বসানো নানা ডিজাইনের কার্ড। কখনও টুকটুকে লাল পানপাতা আঁকা। ভেতরে ভালোবাসার কবিতা। যেমন সম্পর্ক, তেমন বক্তব্য। মধুর রসের ছড়াছড়ি হলেও, সখ্য আর বাৎসল্যের ও শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ করে দিল এই সব ভ্যালেনটাইন্স কার্ড।

valentines-day-cards-and-gifts

আমেরিকায় গত পাঁচ যুগ ধরে আমার ভূমিকা হয়ে রইল মূল গায়েনের পেছনের সারিতে থাকা অখ্যাত দোহারের মতো। মূল গায়েন যখন যেমন গেয়েছে, বুঝে-না বুঝেই সুর মেলানোর চেষ্টা করেছি আরও অনেক এথনিক সম্প্রদায়ের মতো। এদেশের যত প্রথা, যত উপলক্ষ্য, তার প্রত্যেকটিতে শামিল না হলেও অধিকাংশ মেনে চলেছি যস্মিন দেশে যদাচার বোধে। এই প্রথানুগত্যের পেছনে কাজ করেছে, ছেলেমেয়েদের আগ্রহ, ইচ্ছে-অনিচ্ছের প্রভাব। অন্তত আংশিকভাবে। 

প্রথমদিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে (Valentines Day) কবে আসত-যেত খেয়ালও থাকত না। মেয়ে যখন স্কুলে কিন্ডার-গার্টেনে পড়ে, সেই প্রথম বলেছিল, এক বাক্স ভ্যালেন্টাইন্স কার্ড কিনে দিতে হবে। সঙ্গে বড় একবাক্স চকোলেট। ১৪ ফেব্রুয়ারি স্কুলে নিয়ে যাবে। ক্লাসের ছেলেমেয়েদের দেবে। টিচার নাকি বলে দিয়েছেন সবাইকে। ও ক্যাথলিক স্কুলে পড়ত। পাবলিক স্কুলে কী নিয়ম ছিল জানি না।

কার্ডের বাক্স আর চকোলেট কেনা হল। ছোট ছোট লাল টুকটুকে পান পাতার মতো দেখতে পঁচিশখানা কার্ড নিয়ে টিচারের দেওয়া ফর্দ মিলিয়ে মেয়ে তখন কাগের ঠ্যাং, বগের ঠ্যাং লিখতে বসে গেল। ভেতরে ছাপা অক্ষরে লেখা আছে—টু মাই ভ্যালেনটাইন… তার পাশে মেয়ে লিখছে ছোট ছোট নাম—জেনি, হলি, রায়ান, ব্রেট, কেন্, সুজি…। মোট আঠারো জন ছিল ওর ক্লাসে। বাকি থাকল সাতটা কার্ড। একটায় টিচারের নাম লিখল—‘সিস্টার অ্যাগনেস’। বাকি রইল ছয়। ভালোবাসার জন আর খুঁজে পায় না। জিজ্ঞেস করেছিলাম— তুই আর কাউকে ভালোবাসিস না? একটুও না? ভেবে দ্যাখ না?
মেয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসল। ভালোবাসা সহজ কাজ নয়। শেষে হিসেব মেলাবার চেষ্টায় বলেছিলাম— “তুই আমাদের ভালোবাসিস তো। দুটো কার্ড আমাকে আর বাবাকে লিখে দে না। বাবা তোর জন্যে চকোলেট নিয়ে আসবে।” যেন মস্ত সমস্যা মিটল ভেবে সে একগাল হেসে ‘টু মা’ আর ‘টু বাবা’ লিখে আমাদের উৎসর্গ করল। তারপরেও বাক্স খালি হয়নি। উদ্বৃত্ত কার্ডের জন্যে উদ্বৃত্ত প্রিয়জন পাওয়া যায়নি।

Little girl with Valentine cards

ভ্যালেনটাইন্স ডে’র আগে দোকানে দোকানে বিরাট সেল চলে। হিরে, মুক্তো, চুনি, পান্না আর ১৪ ক্যারেটের সোনার গয়না ছাড়াও অন্যান্য জুয়েলারিতে বিশেষ ডিসকাউন্ট থাকে। জামাকাপড়, কসমেটিক্স-এর দোকানেও খুব বিক্রি হয়। ফুলের দোকানে গোলাপের তোড়ার দাম তুঙ্গে ওঠে। অনলাইনে পাঠালে খরচ বেশি। হাতে দিলে সামান্য কম। চকোলেটের চেহারা হরতনের মতো। বড় বড় চকোলেটের ‘হৃদয়’ হাতে নিয়ে ভালোবাসতে যাওয়া আর রেস্তোরাঁয় বসে ভ্যালেনটাইন নাইটের স্পেশাল ডিনার খাওয়া। রেস্তোরাঁগুলো বিজ্ঞাপন দেয়— “রোম্যান্টিক মোমের আলোয় ডিনার। তোমার প্রিয়জনের জন্য বিনে পয়সায় পাবে ফুলের তোড়া।” অবশ্যই ভাঙছে না যে, সে ফুল লাল গোলাপ নয়। তার বদলে লাল রিবনে বাঁধা দু-তিনটি রঙিন ফুল। নামী-দামি রেস্তোরাঁ হলে একজোড়া গোলাপ! ইটালিয়ান রেস্তোরাঁ উদ্বুদ্ধ করছে— “তোমার ভ্যালেনটাইনের জন্যে ইটালির নেমন্তন্ন। চিকেন রোল্যান্টিনি (শুধু দু’জনের), লবস্টার ফ্র্যাডিয়াভোলো (শুধু দু’জনের), ফিলে অফ্ ফ্লাউন্ডার ফ্র্যানচেস্ (শুধু দু’জনের)। একেবারে কপোত-কপোতীর খাদ্য! ফ্রেঞ্চ রেস্তোরাঁ ডাকছে—“অনবদ্য বাজনার সঙ্গে অনবদ্য মদ্যপান। এস তোমার প্রিয় বান্ধবীকে নিয়ে।”

শুধু চিনেরা এসব ধানাই-পানাই করে না। রোজকার বাঁধাধরা বিজ্ঞাপনের সঙ্গে হঠাৎ হঠাৎ একটা-দুটো লাল-কালো হরতনের ছাপ মেরে দিয়েছে। হৃদয়ে হাফসোলের মতো। আবার স্পেশাল লাইটে চিনে পদগুলোর নাম দিয়েছে—‘লাভার্স বোট’ (চিংড়ি)। লাভার্স নেস্ট (ফ্রায়েড রাইস)। অন্নের সঙ্গে আশ্রয়ের তুলনা দিয়েছে মনে হয়। ‘টেস্ট অফ লাভ’ (হট অ্যান্ড সাওয়ার স্যুপ) উষ্ণ প্রেম? ‘ড্র্যাগন অ্যান্ড ফিনিক্স’ (নুডলস) ড্র্যাগন আর আগুনপাখির মধ্যে ঝুটোপুটি নাকি? শেষকালে লিখেছে— ‘অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ’ (চিকেন অ্যান্ড প্রণ ডিস)।
সর্বনাশ! বিজ্ঞাপনে চিনেরা একেবারে আদিপর্বে চলে গেছে।

candle light dinner
রেস্তোরাঁগুলো বিজ্ঞাপন দেয়— রোম্যান্টিক মোমের আলোয় ডিনার

বহু বছর আগে এক মাদ্রাজি রেস্তোরাঁ আমাদের ডাকযোগে ভ্যালেনটাইন্স ডে-র কুপন পাঠিয়েছিল। সেই ডিনারে দোসা, ইডলি খেতে গেলে আমাদের মাথাপিছু দু’ডলার করে কম পড়বে। আবার ফ্রি মেডুবড়া। দহিবড়াতেও ডিসকাউন্ট। সঙ্গে মনোরম পরিবেশ বোঝাতে কর্নাটকি সংগীত। তখন অবশ্যই ক্যাসেটে ডিনারের জন্যে আমি মাদ্রাজিতে রাজি হইনি। 

শেরাটন, হিলটন, হায়াত, ম্যারিয়ট ইত্যাদি হোটেলেও ভ্যালেনটাইন্স নাইট-এ বিশেষ ডিনার পার্টির ব্যবস্থা থাকে। 

ইদানিং গ্রিটিং কার্ডের ব্যবসা ক্রমশই বাজার হারাচ্ছে। অনলাইনে শুভেচ্ছা পাঠানোর যুগে ক্রিসমাসের সময়ও কার্ড আর পোস্টেজ স্ট্যাম্প বিক্রির হার খুবই কমে গেছে। ভ্যালেনটাইন্স ডে উপলক্ষ্যেও হয়তো সেরকম কার্ড বিক্রি হচ্ছে না। অথচ একসময় ওই কার্ডে কতরকম বৈচিত্র্য থাকত। তবু কারও কারও পছন্দ হত না। একজনের বউ টিপ্পনি কেটে বলেছিল— “তুমি আর হলমার্ক কোম্পানির ভাষায় ভালোবাসা জানিও না। প্রত্যেক বছর একঘেয়ে ছড়া।” বউ-এর মন ভোলাতে অনুপ্রাণিত হয়ে বর নাকি পরের বছর নিজে হাতে কবিতা লিখেছিল। তার অনুবাদ করে বাংলায় চার লাইনের একটু নমুনা দিলাম—

“গোলাপ জল লাল, সঙ্গে কত কাঁটা
তোমার গালও লাল, কথায় কথায় ঝ্যাঁটা
গোলাপ ভালোবাসি আমি কাঁটাও ভালবাসি
তোমায় ভালোবাসি আমি ঝ্যাঁটাও ভালবাসি।”
(ইংরেজি কবিতায় ঝ্যাঁটার বদলে বাক্যবাণের কথা ছিল)

এই প্রেমের ছড়া পাওয়ার পরে তার গোলাপ-সুন্দরীর প্রতিক্রিয়ার খবর পাইনি। 

valentines-day-Cards
ইদানিং গ্রিটিং কার্ডের ব্যবসা ক্রমশই বাজার হারাচ্ছে

এড্ রোলোফ বলেছিল— “আমি অ্যালেনকে (প্রথম বউ) বারবার ভালোবাসার কথা জানাতে পারতাম না। ভাবতাম ও বুঝে নেবে। মাঝে মাঝে বলার দরকার হয়, ভাবিনি। এখনও ভাবি না। তবু আইলিনকে বলি। সকাল, বিকেলে আই লাভ ইউ বলছি। নিজের কানেই অদ্ভুত লাগে। অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে। হয়তো বহু ব্যবহারে কথাটার ভারও কমে যাচ্ছে। 

এদেশে বহু আমেরিকান স্বামী-স্ত্রীর মতো ভারতীয় স্বামী-স্ত্রীরা মাঝে মাঝেই পরস্পরকে ‘আই লাভ ইউ’ বলেন কিনা জানা নেই। বললেও সাক্ষী রেখে তো বলেন না। কেউ এ প্রসঙ্গে বলেন— এই কথার মধ্যে একটা স্বীকৃতি বা আশ্বাসের ভাব থাকে। বিশেষ কোনও মুহূর্তের সংলাপ ভেবে কথাটাকে বাক্সবন্দি করে রাখা ভুল। তারপর সহজে আর বাইরে আনা হয় না। আসলে আমরা নাটকীয়তা হবে ভেবে ভুল করে আবেগের ওপর আলগা উচ্ছ্বাসের ছাপ মেরে দিই।
আবার কেউ সেই বিখ্যাত উদ্ধৃতির উদাহরণ দিয়ে বলেন— ভালোবাসার সংজ্ঞা অনুযায়ী দু’জন মানুষ পরস্পরের সুখ-দুঃখ আপনিই বুঝে যাবে। মুখের ভাষায় ‘দুঃখিত হলাম’ কিংবা ‘ধন্যবাদ’ বলারও প্রয়োজন হবে না। ভালোবাসা যেখানে গভীর, মুখের ভাষায় তার স্বীকারোক্তি বাহুল্য মাত্র। 

ভ্যালেনটাইন্স ডে-তে এইসব আপ্তবাক্য বুঝে ফেললে আর কোনও গোল থাকে না। সেন্ট ভ্যালেনটাইন তো সন্তই ছিলেন। সাধুসন্তদের নাম দিয়ে দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছিল, তখন শুধু হৃদয়ের অনুভূতিই ছিল প্রধান। অর্থাৎ, প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানাও। ক্রমশ যুগের পরিবর্তনে সেই বিশেষ দিনে বহু আড়ম্বর যোগ হয়েছে। কলকাতায় গেলে শুনি ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিয়ে, সরস্বতী পুজো, ভ্যালেনটাইন্স ডে, শ্রাদ্ধ একদিনে হলে ফুলের বাজারে নাকি ব্যবসা তুঙ্গে ওঠে। 

প্রিয়জন বলতে শুধু স্বামী, স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকা নয়; বন্ধুত্বও সেই সংজ্ঞায় স্থান পায়। ভ্যালেনটাইন্স ডে সেই দিন উদযাপনের মধ্যে দিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এদেশে একসময় সমকামী মানুষদের জন্যে ভ্যালেনটাইন্স ডে-র বিশেষ কার্ড ছাপা শুরু হয়েছিল। কার্ডে সেই হৃদয়ের ছবি আর লাল, গোলাপি তির-ধনুকের ফাঁকে ফাঁকে একটি-দু’টি কথা—“সামাজিক স্বীকৃতির বাইরে যে সম্পর্ক, সেই প্রেম ভালোবাসার জন্যে…”। আজ সম্ভবত সেই কার্ড আর ছাপা হয় না। ভালোবাসার দিনক্ষণ উদযাপনে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দে থাকাই শেষ কথা। 

 

*ছবি সৌজন্য: Free stock, Istock, Pngtree

দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প‍র্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড‌ সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com