(Leela Majumdar) লাল রঙের একটা বাক্স। দেখলেই মনে হবে এ গয়নার বাক্স নির্ঘাত! কিন্তু খুললেই চমকে যেতে হয়! আরে, এ তো আস্ত একটা বই। লাল রঙের কভারে রূপোলি অক্ষরে জ্বলজ্বল করছে ‘পদিপিসির বর্মিবাক্স’,। আজ যারা কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়েছে, তাদের অনেকের শৈশবে জড়িয়ে আছে এই লাল বাক্স, পদিপিসির বর্মিবাক্স। যে প্রজন্ম এখন সদ্য তিরিশের কোঠায় পা দেব দেব করছে, তাদের শৈশব এবং কিছুটা কৈশোর জুড়েও রয়েছেন লীলা মজুমদার।
একটু ইতিহাসের দিকে তাকানো গেলে দেখা যাবে, কলকাতার বিখ্যাত রায় পরিবারে লীলা মজুমদারের জন্ম, ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। বাবা ছিলেন প্রমদারঞ্জন রায় ও মা সুরমাদেবী। বাবা প্রমদারঞ্জন যেমন ভারতীয় জরিপ বিভাগের অফিসার ছিলেন, তেমনই সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিতি কম ছিল না!
আর যাঁর কথা না বললেই নয়, সেই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, যাঁর পৈতৃক নাম কামদারঞ্জন রায়, ছিলেন লীলা মজুমদারের জ্যাঠামশাই! সুতরাং সম্পর্কের দিক থেকে তিনি শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন, এবং সত্যজিৎ রায়ের পিসি। শৈশবে শিলঙের লরেটো কনভেন্টে পড়াশোনার পর সেন্ট জনস ডায়োসেশন স্কুলে ভর্তি হন লীলা মজুমদার। পরবর্তী উচ্চশিক্ষা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে।
১৯৩৩-এ কার্যত পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি দন্ত চিকিৎসক ডাঃ সুবীর কুমার মজুমদারকে সংসার সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন। প্রমদারঞ্জন মেনে নিতে পারেননি কন্যা লীলার এই সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে প্রায় চিরতরের জন্য সম্পর্ক ভেঙে যায় বাবা ও মেয়ের! তবে স্বামীর কাছ থেকে নিজের লেখালিখির বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছিলেন তিনি।
ভিডিও: নারীর মন নারীর কথা: আশাপূর্ণা দেবী – জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য
“ওঁর নাবালকদের জন্য লেখাগুলো যতটাই সাবালক, সাবালকদের জন্য লেখা যেন ততটাই নাবালক!” এমন কথা বলেছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক মণীন্দ্র গুপ্ত। ছোটদের জগতে নিজেকে মুক্ত করার এক স্বাধীনতা উপস্থিত ছিল লীলা মজুমদারের। পদিপিসির বর্মিবাক্স বা গুপীর গুপ্তখাতা-র মতন বইগুলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই আলো ঝলমলে রঙিন শহরেই! শৈশবের জাদুকর এরই মাঝে কখন লিখে ফেলেন পাকদণ্ডী! (Leela Majumdar)
১৯২২-এ লীলা মজুমদারের প্রথম গল্প ‘লক্ষ্মীছাড়া’ প্রকাশিত হয় সন্দেশ পত্রিকায়। ১৯৬১ থেকে সত্যজিৎ রায় সন্দেশ-এর দায়িত্ব নেওয়ার পর ’৬৩ থেকে ’৬৪ পর্যন্ত এই পত্রিকার সাম্মানিক সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত ছিলেন লীলা মজুমদার। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র পুরস্কার পান লীলা মজুমদার, ‘আর কোনোখানে’ লেখার জন্য। সেই কোন ছোটোবেলায় রবীন্দ্রনাথের অটোগ্রাফ সংগ্রহের জন্য প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশকে দিয়েছিলেন একটি খাতা! আর সেই খাতায় কবিগুরু লিখেছিলেন একটি ছড়া, “নামের আখর কেন লিখিস/ নিজের সকল কাজে?/ পারিস যদি প্রেমের আখর/ রাখিস জগৎ মাঝে”। (Leela Majumdar)
পরবর্তী সময়ে কেবল রবীন্দ্রসান্নিধ্যই নয়, শান্তিনিকেতনে ইংরেজি পড়ানোর সূত্রে কাটিয়েছেন দীর্ঘ সময়। কেবল রবীন্দ্র পুরস্কার নয়, নিজের সাহিত্যজীবনে আনন্দ পুরস্কার, শিশু সাহিত্য পুরস্কার, সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার, দেশিকোত্তমসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান অর্জন করেছেন তিনি। (Leela Majumdar)
জন্মদিনে তাই পাকদণ্ডী বরাবর একটু হেঁটে গেলে মন্দ কী।
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।