আগের পর্ব পড়তে: [১] [২] [৩] [৪] [৫] [৬] [৭] [৮] [৯] [১০] [১১] [১২] [১৩] [১৪] [১৫] [১৬] [১৭] [১৮][১৯][২০] [২১] [২২] [২৩]
– ইন্দ্রাণীদি (Indrani Bhattacharya) এটা তোমার কাজ সক্কালবেলা স্নেহাশিসের ফোন, দূরদর্শন থেকে।
– কেন রে কী করলাম আবার? খুব চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমার ভ্রাতৃপ্রতীম, দূরদর্শনের অন্যতম খুব পপুলার এক্সিকিউটিভ স্নেহাশিসকে।
– মন্ত্রী এসে লেডিস টয়লেট দেখবেন বলেছেন।
– তাই? আমি খুব জোরে জোরে হা হা করে হেসেই ফেললাম।
– তা কী করব ওয়াশরুমের যা অবস্থা! ভোরবেলা পাঁচটার সময় হাজির হয়ে মেয়েদের কী যে হাল হয় সে তো আমার চেয়ে বেশি কেউ জানে না। ছ’টায় নিউজ। পাঁচটা, সাড়ে পাঁচটার মধ্যে তো পৌঁছোতেই হবে। টয়লেটের প্রয়োজন হতেই পারে। কিন্তু সে তো ব্যবহারের অযোগ্য। কেউ কি কোনওদিন ভেবে দেখেছিস? তাই মন্ত্রী যখন জিজ্ঞাসা করলেন আরও অনেক সমস্যার সঙ্গে ওটাও বলেছি!

– তাই বলছিলাম! ঠিক ধরেছি তাহলে তোমারই কাজ। আমি এবং স্নেহাশিস ফোনের এপার ওপার থেকে অট্টহাসি হেসেই চলেছি।
আসলে ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি। প্রিয়দা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী যখন information & broadcasting minister হলেন, আমাকে ফোন-
ইন্দ্রাণী তোমাদের দপ্তরের মন্ত্রী হলাম। কী কী সমস্যা আমাকে বলবে। আমি চেষ্টা করব ওগুলোকে সমাধান করতে, কলকাতা দূরদর্শন আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবেই।
সঙ্গে সঙ্গে আমি বলে ফেললাম-
প্রিয় দা ওয়াশরুমগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ভোরবেলা থেকে কাজ শুরু হয়। বুঝতেই পারছেন। অত ভোরে proper washroom নাহলে মেয়েদের কী অসুবিধা। এদিকে সেজেগুজে মুখে হাসি নিয়ে ক্যামেরার সামনে বসতে হয়।
– হ্যাঁ সে কী! ঠিক আছে, ঠিক আছে দেখে নিচ্ছি। তুমি চলে এস মুদিয়ালী। আলোচনা করে নেব।
পরদিনই গেলাম মুদিয়ালী। উনি কলকাতায় যেখানে থাকতেন। দেখা করতেন। চা-মিষ্টি সহযোগে নানানরকম তথ্য আদান প্রদান হল। বহু মানুষ দেখা করতে আসতেন। প্রিয়দা একটা আলাদা এটিকে বসে সব মন দিয়ে শুনলেন।
– ইন্দ্রাণী গোয়া film festival-এ যাচ্ছি। এসেই হাজির হব। আমি সব শুনে নির্বিকার। বাড়ি চলে এলাম। স্বপ্নেও ভাবিনি। সত্যি এইসব নিয়ে উনি এতটা মাথা ঘামাবেন।
হঠাৎ সকালবেলা স্নেহাশিসের ফোন পেয়ে আমি এত আশ্চর্য হয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারব না। তারপর তো দূরদর্শনের পুরো বাড়ি জুড়ে মহাযজ্ঞ শুরু হল। সমস্ত বাথরুম সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে দেয়ালে, মেঝেতে টালি বসিয়ে এক্কেবারে ফাইভস্টার ওয়াশরুম হয়ে গেল!

আবার একদিন ফোন-
ইন্দ্রাণী, সব বাথরুম একদম হাই কোয়ালিটি করিয়ে দিয়েছি। কিন্তু একটা কথা বলি ঝাড়ু আমি দিতে পারব না। ওদেরও বলেছি পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব আপনাদের।
আমি তো হতবাক। খুব কষ্ট করে গলার আওয়াজ বেরল-
প্রিয়দা ধন্যবাদ। আপনি যে কী সাংঘাতিক উপকার করলেন। অশেষ ধন্যবাদ।
ঠিক আছে ঠিক আছে।
– আমি আবার আসছি দিল্লীর সব কর্মকর্তারা থাকবেন। তুমি আসবে, থাকবে ঐ আলোচনায়। আমি director কেও বলেছি। তুমি আসবে।
– প্রিয়দা, আমি। মানে Doordharshan Core Committee meeting- এ আমি?
– হ্যাঁ, হ্যাঁ, আসবে। পারছি না, জানো ইন্দ্রাণী। Parliamentary, information, আরও, এ দপ্তর একসঙ্গে সামলান- সত্যি পারছি না।

আমি স্তব্ধ হয়ে ভাবলাম। মন্ত্রীদেরও কষ্ট হয়। ওঁরাও এইরকম করে বলেন?
বিশ্বাস করো সবাই, মন্ত্রী মানে আমার কাছে ভগবানের চেয়ে কম কিছু না। তাঁরা তো সব অনুভূতির উর্ধ্বে।
সঠিক দিনে, সঠিক সময়ে দূরদর্শন conference room-এ হাজির হলাম। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অনেক অচেনা, চেনা মানুষের দৃষ্টি সোজা আমার দিকে, কোনও central ministry-র permanent official meeting –এ খুব সম্ভব সেই প্রথম একজন contractual news caster এর যোগদান।
এই তো ইন্দ্রাণী এসে গেছে।
আমাদের আলোচনা শুরু হোক।
হ্যাঁ, কী বলছিলেন আপনার RNU?
অনেকরকম আলোচনার পর শেষে News caster-দের পোশাক নিয়ে কথা উঠল, প্রায় প্রত্যেকেই কোট, প্যান্ট, টাই এসবের পক্ষে কথা বলছেন। আমাদের দূরদর্শনের সুস্মিতা গুপ্তা, স্নেহাশীষ ও আরও অনেকে সবাই কোট, প্যান্ট, ব্লেজারের পক্ষেই সায় দিলেন।
প্রিয়দা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- ইন্দ্রাণী, কী মত?

– প্রিয়দা। আমি সবসময় শাড়ির পক্ষে। আমাদের যা facial and body structure তাতে শাড়ি একদম সঠিক attire western outfit আমাদের ৯০% বহন করতে পারে না। সেটা শারীরিক গঠনের জন্য। আর এই একটা জায়গাতেই তো আমরা ভারতীয় বা বাঙালি যাই বলুন ঐ শাড়ি দিয়ে প্রথমেই পৃথিবীকে প্রভাবিত করি। এবং সারা পৃথিবীর মানুষ কিন্তু শাড়িকে খুব Stylish বলে মানে এবং সম্ভ্রমের চোখে দেখে। শাড়ি শরীরের অনেক খুঁত ঢেকে দেয়। অন্য আরও attire-এর সঙ্গে অন্ততঃ দূরদর্শনে শাড়ি পরা বাধ্যতামূলক করা হোক।
– ইন্দ্রাণী যা বলেছে একদম ঠিক। ওইটাই তাহলে শেষ কথা। শাড়ি দূরদর্শনে থাকছে। কারোর ইচ্ছা হলে অন্য পোশাক পরতে পারে। কিন্তু শাড়িকে পোশাক হিসাবে মান্যতা দিতে হবে। উঠিয়ে দেওয়া যাবে না।
– আর ইন্দ্রাণী আর একটা কথা আমায় বলেছে। ওদের পারিশ্রমিক সত্যি খুব কম। এটা অন্তত দ্বিগুণ যাতে করা যায় আমি দেখছি।
আলোচনা শেষ। আমরা যে যার রাস্তা ধরলাম।
হ্যাঁ, শাড়িটা বেঁচে গেল সেদিন অনেকটা আমার জন্য।
প্রিয়দা হঠাৎ চলে গেলেন, এখন আর দক্ষিণবার্তা প্রকাশ অনুষ্ঠান হয় না। শাড়িও পাই না। কেউ বলে না, “ইন্দ্রাণী, শাড়ি পছন্দ হয়েছে তো?”

সুব্রতদা চলে গেলেন। একডালিয়া এভারগ্রীনের পুজো উদ্বোধনে গান গাইবার ডাক আর আসে না। আসে না প্রিয়দার পাঠান গানের তালিকা। সুব্রতদা বলতেন, ‘ইন্দ্রাণী, প্রিয়দা কিন্তু তালিকা পাঠিয়েছেন। তোমার জন্য। মঞ্চে গাইতে গাইতে হঠাৎ দেখতে পেতাম, সামনে বসে গালে হাত দিয়ে প্রিয়দা গান শুনছেন।
প্রিয়দা, সুব্রতদা চলে গেলেন। সঙ্গে নিয়ে গেলেন বাঙালি সংস্কৃতির চেতনা, ভাবনার বৃহৎ অংশ।
বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও দূরদর্শন ব্যক্তিত্ব