দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ বন্ধুর ফোনটা আসে। কাজের কারাকোরাম পর্বতে চাপা পড়ে তখন আমি খাবি খাচ্ছি। (Cover Story)
বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথন ছিল অনেকটা এরকম।
-একটা উপকার করতে হবে। করতেই হবে।
-বলে ফেল।
-অফিস থেকে একটু বেরোতে পারবি। ভেরি আর্জেন্ট।
-জরুরি কিছু? শরীর ঠিক আছে তো তোর?
-শরীরের থেকেও বেশি জরুরি ভাই। একটা পার্সেল এসেছে আমার বাড়িতে। অনেক শখের, অনেক সাধের ঝিনচ্যাক নতুন মোবাইল। তোর অফিস তো আমার বাড়ি থেকে হাঁটাপথে দুমিনিট। তুই তো জানিসই, আমার কাজের জায়গা শহরের একেবারে অন্যপ্রান্তে।
-ডেলিভারির জন্য অফিসের ঠিকানা দিসনি কেন?
-গলতি হো গ্যায়া স্যার। প্লিজ একটু বেরো।
-লিভ উইথ এ নেবার করিসনি কেন? তোর বাড়ি তো একটা বিরাট কমপ্লেক্সে এখন। কত বড় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল খবরের কাগজে ফ্ল্যাটগুলো তৈরি হওয়ার সময়।
-ওই অপশনের কথা আমি জানি রে। করিনি। করতে পারিনি।
-কারণটা জানতে পারি? তোর প্রতিবেশী নেই?
ফোনের ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ ভেসে আসে।
-চুপ করে আছিস কেন? তোর প্রতিবেশী নেই?
-থাকলে কি আর তোকে বলতাম!
-বিজ্ঞাপনের লেখাটা মনে আছে তোর? প্রকৃতির কোলে থাকুন। আপনার সঙ্গী হবে আরও ৫০০টি রুচিসম্পন্ন, মননশীল পরিবার। প্রিয়জনের সংজ্ঞা বদলে দেবেন আপনার প্রতিবেশীরা। বুক করুন আজই।
এরপরে যা শুনেছিলাম ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে, তা কানের পাশে ভনভন করা মাছির মতো বেজে চলে এখনও।
-সাজানো বাগান, সোলার পাওয়ার্ড প্ল্যান্ট, ওয়ার্ক আউট এরিয়া, জগিং ট্র্যাক আর ইন-হাউস মাল্টিপ্লেক্সের মতো শূন্য প্রতিবেশী নিয়ে আমিও শূন্য দিন কাটাই ভাই। প্রতিবেশীর সংজ্ঞা বদলে গিয়েছে বিলকুল। ঠিকই বলেছিস।
ফ্ল্যাটজীবনের প্রতিবেশী সম্পর্কে একটি দারুণ লাইন খুঁজে পেলাম অন্তর্জালে। ‘আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ, শ্বাস-প্রশ্বাস, ডান দিকে যাচ্ছেন নাকি বাঁয়ে, প্রাতরাশ-লাঞ্চ-ডিনারের প্রতিটি পদ, ঘুম, নাক ডাকা, শুয়ে শুয়ে ছটফটানি, বাথরুমে স্নান কিংবা কমোডের ফ্লাশের আওয়াজ—দুনিয়ায় কেউ যদি সব চেয়ে ভাল জানেন তা হল আপনার প্রতিবেশী, আপনার পাশের ফ্ল্যাটের মানুষজন।’ আজকের দেশলাই বাক্স জীবনে, কুঠুরি জীবনে প্রিয়জনের থেকেও আপনার সম্পর্কে বেশি খবর পৌঁছে যায় প্রতিবেশীর কাছে। তাঁদের সঙ্গে হয়তো আপনার মোলাকাৎই হয়নি কোনওদিন। প্রয়োজন পড়েনি। আলাপ শুরু হওয়ার কিছু কাল্পনিক কথাবার্তার কথা ভাবা যেতে পারে। সমাজ জানে, এ কল্পনা-শরীর পরে রয়েছে এক সত্যিফোমের জ্যাকেট। ধরে নিই, এখন সময় সকাল সাড়ে সাতটা। আমার ফ্ল্যাট কিংবা প্রতিবেশীর ফ্ল্যাটের কলিংবেল বেজে উঠল।
দুনিয়ায় কেউ যদি সব চেয়ে ভাল জানেন তা হল আপনার প্রতিবেশী, আপনার পাশের ফ্ল্যাটের মানুষজন।’ আজকের দেশলাই বাক্স জীবনে, কুঠুরি জীবনে প্রিয়জনের থেকেও আপনার সম্পর্কে বেশি খবর পৌঁছে যায় প্রতিবেশীর কাছে।
-কিছু মনে করবেন না প্লিজ। প্রত্যেকদিন ভোরবেলা আপনার ফ্ল্যাট থেকে তীব্র রসুন পেঁয়াজের গন্ধ ভেসে আসে। চন্দন সাবান দিয়ে স্নান করার পরে আমি তখন সূর্যপ্রার্থনা করি, গায়ত্রীমন্ত্র জপ করি। আপনারা কি ব্রেকফাস্ট থেকেই পেঁয়াজ রসুন খাওয়া শুরু করে দেন? অসহ্য!
-কিছু মনে করবেন না প্লিজ। রোজ রাত্রি পৌনে বারোটার সময় আপনার বাড়ি থেকে মিক্সি চালানোর বিশ্রী আওয়াজ পাওয়া যায়। আমি তখন ব্যালকনিতে বসে আজি যত তারা তব আকাশে গাই। মুড বিগড়ে যায় একদম। আপনারা কি গভীর রাতে রান্না চাপান? রাত একটা নাগাদ শিল নোড়া দিয়ে মশলা বাটার আওয়াজও পেয়েছি।
-দুপুর তিনটের সময় আপনার বাড়িতে স্কিপিং করে নাকি কেউ? আমার প্রতিদিনের ভাতঘুমের বারোটা বাজান আপনারা। গুণেছি। ঠিক পঞ্চাশবার ধুপধাপ আওয়াজ হয়। মনে হয় তান্ডবনৃত্য চালাচ্ছে দলছুট কোনও দলমা হাতি। তারপরেই ধপ করে প্রচণ্ড এক আওয়াজ। পরিশ্রান্ত হওয়ার পরে কি বিছানায় হুড়মুড়িয়ে পড়ে যান?
-রাতে কতবার ওয়াশরুমে যান? আপনাদের কমোডে ফ্ল্যাশ টানার পরে ঘড়ঘড় করে আওয়াজ হতে থাকে। জঘন্য।
-দাঁত তো সকালবেলা আমিও মাজি। এমন করে ওয়াক ওয়াক করে আওয়াজ করেন কেন? বমি হয় নাকি রোজ?
-সেদিন রাত দেড়টায় কার সঙ্গে কথা বলছিলেন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে? সব শুনতে পেয়েছি। ঘরে বৌ-বাচ্চা আছে, লজ্জা করে না?
-সেদিন রাত সাড়ে বারোটায় কি সেটিং করছিলেন বাথরুমে বসে? ঘুষ নিতে চেয়ে লোককে ফোন করছেন অবলীলায়। আপনার লজ্জা নেই? এই আপনার মূল্যবোধ?
-আরও গোপন কথা ফাঁস করে দেব নাকি? খুব সাবধান কিন্তু। অবোধ কোথাকার।
-আপনারও গোপন কথাটি রবে না গোপনে। কেলেঙ্কারি বেঁধে যাবে কিন্তু। নির্বোধ কোথাকার।
-তবে রে!
-হা রে রে রে রে রে!
মায়ের মুখ থেকে শোনা প্রতিবেশীদের গল্প বলতে বড় ইচ্ছে করছে। ভাড়া বাড়ি। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর উপন্যাসের মতো একেবারে ‘বারো ঘর এক উঠোন’। দমদম। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও যে যৌথ পরিবার হতে পারে, তা বলতে গিয়ে মায়ের দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল বারবার। বড় বেরঙিন আজকাল। বলছিল, “জানিস! কারও বাড়িতে সুখের খবর এলে সেতারের মতো ঝঙ্কার ছড়িয়ে পড়ত সবকটা ঘরে। বাড়িতে একা থাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয়নি কোনওদিন। বাবা-মা কোনও কারণে বাড়ির বাইরে থাকলে খাবার উপচে পড়ত আমাদের ঘরে। প্রতিবেশীরা একে অন্যের সঙ্গে টক্কর দিতেন। কতবার শুনেছি, আমার মেয়ে খালিপেটে থাকবে এ আমরা বরদাস্ত করতে পারব না একদম। খাবার বেশি হত। বাবা মা ফিরে এসে ঝগড়া করত আমাদের প্রতেবেশীদের সঙ্গে। মনে পড়ে খুব।”
-একটাই তো মেয়ে। পাঁচ টুকরো মাংস পাঠালেন কেন?
-দু’দুটো ডবল ডিমের অমলেট পাঠালেন কেন?
-আপনার মেয়ে বলে কি আমাদের মেয়ে নয়? এ কেমন কথা দাদা! বেশ করেছি।
-আরও বেশি বেশি করে বাইরে যানতো মশাই। মেয়েটাকে একটু খাওয়াতে পারলে আমাদের কত আনন্দ হয় জানেন?

মায়ের থেকেই জানতে পেরেছিলাম, টিফিন কৌটোগুলো ফেরত দেওয়ার সময় তাতে পুরে দেওয়া হত একটু তিলের বড়া, কচুর শাক, লতি পাতুড়ি, আর অনেকটা ভালবাসা। আমার দিদু নাকি বলতেন, “খালি কৌটো ফেরত দিতে নেই। পাশে থাকা মানুষদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে হয়। হাতে হাত রেখে থাকতে হয়। আরো বেঁধে বেঁধে থাকতে হয়।”
শঙ্খবাবুর কয়েকটি লাইন দিদুর মাথার মধ্যে কখন কীভাবে গেঁথে গিয়েছিল জানি না। চর্চিত হয়েছিল যাপনেও।
এমন প্রতিবেশীর গপ্পো আমার কাছে, আমাদের কাছে রূপকথার মতো লাগে আজকাল। একা আছি কী না, পড়শি ফ্ল্যাটের লোকের কাছে তা আজ এক ফালতু তথ্য, জাঙ্ক ইনফর্মেশন। খবরের কাগজের পাতা, টেলিভিশন চ্যানেলে স্ক্রল করে যাওয়া সংবাদ আমাদের আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় প্রতিদিন। “জানতামই না কোনও মানুষ থাকতেন এ বাড়িতে।” কিংবা, “কালেভদ্রে দেখা যেত। মিশতেন না। আমরাও কথা বলতাম না অবশ্য।” অথবা, “নিজের সমস্যার ঠিক নেই, ব্যস্ত জীবনে অত প্রতিবেশীর খবর রাখলে চলে না দাদা। গন্ধ পেয়ে দরজা ভাঙা হয়।” আর কী আশ্চর্য। মৃত মানুষ বেরিয়ে পড়ে!
আমরা কজন একই পাড়ায় থাকি।
সমাজের ভাল মন্দ নিয়ে গবেষণা করেন যাঁরা, তাঁরা বলেন, “যৌথ শব্দটির গঠনের মধ্যেই মিশে ছিল অনেক একাত্মবোধের আঁকশি। যৌথযাপন ক্রমশ নিউক্লিয়ার হয়েছে। আর নিউক্লিয়ার শব্দের মধ্যে খেলা করে কিছু একা একা ঘূর্ণন।” একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়া রসায়নের বইয়ের কথা মনে পড়ে ফের। এ ঘূর্ণনে সার্বিকভাবে পাল্টে যাওয়া সমাজের আলকাতরা চোবানো প্রলেপ লাগে। আমরা নিজেরাই রেফারির বাঁশি বাজাই। নিজেরাই দৌড়োই। পাশের বাড়ির লোকগুলো কাতরাক। পিছিয়ে পড়ুক। কার কী যায় আসে!
কোথায় গেল বাড়ির ছাদ? কাগজ ভাঁজ করে প্লেন বানিয়ে উড়িয়ে দেওয়া চিঠি? প্লেনের ডানার মধ্যে লেখা থাকত মনোবাসনা। পাঁচ দশক আগে প্রেম করে বিয়ে করা আমার পিসিমা বলছিলেন, “তোরা যেগুলোকে আজকাল ইমোজি বলে ডাকিস, তার থেকে অনেক বড় ছিল, আদরের ছিল কাগজের প্নেনে করে আসা প্রিয়জনের প্রিয়বাক্য। না হলে আমাদের প্রতিবেশী ছেলেটি তোর পিসেমশাই হল কি করে?” বাহাত্তর পার করা, ত্রিকোণমিতি খেলা করা পিসিমার মুখে পুজোর রোদের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল খুশি। বলছিলেন, “আকাশ থেকে, প্লেনের ডানায় ভর করে উড়ে যেত আমাদের প্রেমকথা, এ ছাদ থেকে ও ছাদে। মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকা, ভিডিও কলে মত্ত তোদের এ প্রজন্ম এমন ভালবাসার মানে বুঝলই না। তোরা কী ভয়ঙ্কর রকমের গরীব!”

গরীবি হাটিয়ে, উত্তর কলকাতার কোনও এক খালপাড়লাগোয়া ‘বদ্ধ’ পৈতৃক বাড়ি ত্যাগ করে আমার সহকর্মী ফ্ল্যাট নিলেন দক্ষিণ কলকাতার চমকদার কমপ্লেক্সে। জন্মাবধি পঁয়তাল্লিশ বছর কেটেছিল ওই পাড়াতেই। সাবেকি পাড়া ত্যাগ করার সময় কিছু প্রতিবেশী এসেছিলেন। জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ফিরবে না, তুমি কি ফিরবে না, ফিরবে না আর কোনওদিন? এভাবেও চলে যাওয়া যায়?” সহকর্মী নাকি মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে পড়েছিলেন। জি প্লাস টোয়েন্টি ফোর টাওয়ারের তেইশ তলার ফ্ল্যাট ওঁকে হাতছানি দিচ্ছিল। পরের দিন সকালে অফিসে এলেন। হাঁড়িমুখ। খানিকটা সন্ত্রস্ত, ভীত। কথা হল।
কোথায় গেল বাড়ির ছাদ? কাগজ ভাঁজ করে প্লেন বানিয়ে উড়িয়ে দেওয়া চিঠি? প্লেনের ডানার মধ্যে লেখা থাকত মনোবাসনা। পাঁচ দশক আগে প্রেম করে বিয়ে করা আমার পিসিমা বলছিলেন, “তোরা যেগুলোকে আজকাল ইমোজি বলে ডাকিস, তার থেকে অনেক বড় ছিল, আদরের ছিল কাগজের প্নেনে করে আসা প্রিয়জনের প্রিয়বাক্য।
-তেইশ তলার উপরে প্রথম রাত্রিযাপন কেমন হল দাদা? কোন গান গাইছিলেন, গেস করি? আমার দক্ষিণ খোলা জানালায় উদার বন্ধু বাতাস জাগায় আমার হৃদয়। ঠিক ধরলাম তো?
-কোথায় এলাম ভাই, প্রেমেরে বিদায় করে দেশান্তরে? প্রাণে গান নাই।
-হাইলি শাসপিশাস। কোনও ঝুটঝামেলা পাকিয়ে ফেললেন নাকি দুম করে? চাবি হাতে নতুন ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়ানো পোস্ট তো দুশ লাইক পকেটে পুরলো।
-প্রতিবেশীরা ভয়ানক। ভয়ঙ্কর। নৃশংস। ডাকাত। সমাজবিরোধী। লম্পট।
-বুঝলাম না স্যার।
-মোবাইলের ওয়াই ফাই অন করার পরে অ্যাভেলেবল নেটওয়ার্কস-এর কী কী দেখলাম জানো? ডানস্টান চেকস্ ইন, চোরের ল্যান, আনট্রাস্টেড নেটওয়ার্ক, আমি খুনী, আই অ্যাম আন্ডার ইওর বেড, সব দেখতে পাচ্ছি কিন্তু, ছুঁলেই মরণ, ট্রোজান ভাইরাস। আরও ছিল। অনেক। এরা আমার প্রতিবেশী?
-এগুলো তো প্রত্যেকের নিজের ওয়াই ফাইয়ের নাম। ঘাবড়াচ্ছেন কেন?
-প্রথম পরিচয়ই শেষ পরিচয়। যা বোঝার বুঝে গিয়েছি আমি।
সময়ের সঙ্গে প্রতিবেশী-সম্পর্ক হয়তো বদলে যাচ্ছে এভাবেই। ব্যস্ত জীবনে, জটিল জীবনে আমাদের প্রতিবেশী থেকেও নেই। জীবনের ক্যাসেট অনেকটা ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে দেখতে আমাদের বয়েই গিয়েছে। ‘আপকামিং বিজনেস কনসেপ্টস’ বলে ইন্টারনেটে সন্ধান করলে স্ক্রিন আলো করে আসে—বি এ গুড নেবার। ভালো প্রতিবেশী হয়ে উঠুন। বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলুন। ওঁদের বাড়ি যান। পয়সা কামান। স্বাধীনভাবে ব্যবসা করুন।
মোবাইলের ওয়াই ফাই অন করার পরে অ্যাভেলেবল নেটওয়ার্কস-এর কী কী দেখলাম জানো? ডানস্টান চেকস্ ইন, চোরের ল্যান, আনট্রাস্টেড নেটওয়ার্ক, আমি খুনী, আই অ্যাম আন্ডার ইওর বেড, সব দেখতে পাচ্ছি কিন্তু, ছুঁলেই মরণ, ট্রোজান ভাইরাস। আরও ছিল। অনেক। এরা আমার প্রতিবেশী?
করতালি দিয়ে ওঠে লাল-নীল-হলুদ-সবুজ গ্রাফ। রেভিনিউ।
একজন চিঠি লিখেছিলেন খবরের কাগজের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে। বক্তব্য ছিল, ‘আমার পাশের বাড়িতে যে ভদ্রলোক থাকেন তাঁর বয়স ৯৫। সারাদিন ব্যালকনিতে বসে থাকেন। আমাকে দেখলেই জিজ্ঞেস করেন, অলকা কবে আসবে? অলকা ওঁর এক দশক আগে গত হওয়া স্ত্রীয়ের নাম। আমি বলি, আর আসবে না মেসোমশাই। উনি মারা গিয়েছেন। দু বছর ধরে রোজ বলি। ভদ্রলোকের অ্যালঝাইমার্স। ইদানীং বলা শুরু করেছেন, সুকল্যাণ কবে আসবে? উনি ওঁর একমাত্র ছেলে। কুড়ি বছর ধরে ইংল্যান্ডে। আমি ওই বৃদ্ধকে কী বলব? খুব টেনশনে এবং বিরক্তিতে আছি। আমার কী বদল করা উচিৎ–বাড়ি না প্রতিবেশী? প্লিজ হেল্প।’
গল্পটি আমার নয়। ইন্টারনেটের। কাঠামোটা বজায় রেখে সামান্য বদলে দিলাম।
মূল গল্পের উইন্ডোর নামটা জ্বলজ্বল করছে। ‘ফানি জোকস অন নেবার্স।’
আরও পড়ুন: আয় আয় চাঁদমামা টিপ নিয়ে যা
অম্লানকুসুমের জন্ম‚ কর্ম‚ ধর্ম সবই এই শহরে। একেবারেই উচ্চাকাঙ্খী নয়‚ অল্প লইয়া সুখী। সাংবাদিকতা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও পরে জীবিকার খাতবদল। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিস্ট পদে কর্মরত। বহু পোর্টাল ও পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রকাশিত হয়েছে গল্প সংকলন 'আদম ইভ আর্কিমিডিস' ও কয়েকটি অন্য রকম লেখা নিয়ে 'শব্দের সার্কাস'।
One Response
তোমার মন আছে, কুসুম। অম্লান হয়েই আছে।