চার দিকে শুধুই পাহাড়। অপার নিস্তব্ধতা। অপলক তাকিয়ে উপভোগ করছেন প্রকৃতির রূপ, রং। হঠাৎ ট্যাং ট্যাং করে পকেটের মুঠো ফোনটা বেজে উঠল। আর আপনার সমস্ত নেশা একেবারে উধাও। মনে হল সোজা স্বর্গরাজ্য থেকে কেউ আপনাকে উৎখাত করে মাটিতে ফেলে দিল। ফোনটা কেটে দিলেন বটে, কিন্তু সেই ঘোর, সেই মুগ্ধতা আর ফিরল না। মনটা পানসে করে হোটেলের ঘরে ফিরে এলেন। মনে হল ফোনটা সঙ্গে না নিয়ে এলেই ভাল হত। সত্যি তো, রোজকার কর্মব্যস্ত জীবন থেকে বিরতি নিতেই তো বেড়াতে যাওয়া। সেখানেও যদি মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাড ধাওয়া করে, কী করে চলবে বলুন তো! তাই বলি বেড়াতে গিয়ে টেকনোলজিকে বরং বুড়ো আঙুল দেখান। নাই বা করলেন তিন-চারদিন ফেসবুক, নাই বা দিলেন ইনস্টাগ্র্যামে ছবি, অফিসের মেল, ফোন থেকে নিলেনই না হয় কয়েক দিনের ছুটি, ক্ষতি কোথায়? আমরা কিন্তু ঘুরতে গিয়ে ডিজিটাল ডিটক্স-এর পক্ষেই সওয়াল করব। আর শুধু আমরা নয়, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যদি ঘুরতে গিয়ে প্রযুক্তি তথা ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন, তা হলে ঘোরার অভিজ্ঞতা মানুষদের অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে।
‘ট্র্যাভেল রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বেশির ভাগ মানুষই এখন ‘ডিজিটাল ডিটক্স হলিডে’-র দিকে ঝুঁকছেন। তাঁরা চাইছেন সোশ্যাল মিডিয়া, ফোন, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সমস্ত কিছু থেকে দূরে থাকতে, অন্তত ক’টা দিনের জন্য। গবেষণার প্রধান লেখক ড. ওয়েন্ডি কাই (ইউনিভার্সিটি অব গ্রিনউয়িট বিজনেস স্কুল) জানিয়েছিন যে, “ আজকের দুনিয়ায় যোগাযোগ রাখা কোনও সমস্যাই নয়। ইন্টারনেটের কারণে সারা পৃথিবীটা আজ হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই যোগাযোগটাই মাঝে মাঝে লোকেদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাঁরা সকলেই প্রযুক্তি থেকে ক্ষণিকের বিরতি নিতে চাইছেন। আর তাই ডিজিটাল ফ্রি ট্যুরিজমের চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে। মোটামুটি সকলেই চাইছেন প্রযুক্তি থেকে দূরে থেকে ছুটি সম্পূর্ণ ভাবে উপভোগ করতে।‘’
এই গবেষণা অনুযায়ী দেখা গেছে যে, যাঁরা কোনও রকম গ্যাজেট তথা ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি, তাঁরা অনেক বেশি বেড়ানো উপভোগ করেছেন। স্থানীয় মানুষ ও অন্যান্য পর্যটকদের সঙ্গে সখ্য স্থাপন করেছেন। সর্বোপরি, নিজের ভ্রমণসঙ্গীর সঙ্গে অনেক বেশি সুন্দর সময় কাটাতে পেরেছেন।
এই গবেষণায় সাতটি দেশের ২৪ জন মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা প্রায় ১৭টি দেশ ঘোরেন। বেশির ভাগ মানুষই ২৪ ঘণ্টার উপর কোনও রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করেননি। বেশির ভাগ পর্যটকই জানান যে মোবাইলের আওয়াজ, নোটিফিকেশন, অ্যালার্ট ইত্যাদি না আসায়, তাঁরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক বেশি ভাল করে উপভোগ করেছেন। নিবিষ্ট মনে চার দিকে কী হচ্ছে তা খেয়াল করেছেন এবং অনেক সুন্দর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। অন্য পর্যটক ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে তাঁরা খোলাখুলি মিশতে পেরেছেন এবং অনেক কিছু জানতে পেরেছেন যা হয়তো ওয়েবসাইট বা গাইডবুকে পাওয়া সম্ভব নয়।
অনেকে আবার এ-ও বলেছেন যে আবার প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেট, ফোন, ল্যাপটপের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার পর তাঁদের বেশ মন খারাপ হয়েছে। ক্রমাগত আসতে থাকে মেসেজ ও নোটিফিকেশন তাঁদের ভাল তো লাগেইনি, বরং তাঁরা বিরক্ত বোধ করেছেন। ফলে তাঁরা আবার যদি ডিজিটাল ডিটক্সের প্রস্তাব পান, কোনও ভাবেই না করবেন না।
আপনিও যদি এই মতে বিশ্বাসী হন, তা হলে আশা করব পরের ছুটিতে আপনারাও মোবাইল বন্ধই রাখবেন!