পৃথিবীর প্রথম গোয়েন্দা কে? না না, শার্লক হোমস, পোয়ারো বা ফেলুদা, কেউ নন। অনেকে হয়তো এডগার অ্যালান পো-এর গোয়েন্দা দুপঁ-র নাম বলবেন। কিন্তু তিনিও এসেছেন অনেক পরে। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, পৃথিবীর প্রথম গোয়েন্দা এক ভারতীয় মহিলা। তবে মানুষ নন, শ্বাপদ। কুক্কুরী। তাঁর নাম সরমা। আজ থেকে তিনহাজার বছর আগে লেখা ঋগবেদের দশম মণ্ডলের একশো আট নম্বর সুক্তে আমরা প্রথম সেই গোয়েন্দার সন্ধান পাই।
গল্পটা এই রকম, দেবতাদের প্রধান সম্পত্তি ছিল গোরু। বিদেশি একদল ডাকাত, যাদের বলা হত ‘পণী’, তারা একবার দেবতাদের সব গোরু চুরি করে পালায়। দেবতারা গোয়েন্দা হিসেবে নিযুক্ত করেন কুক্কুরী সরমাকে। খুঁজতে খুঁজতে সরমা পণীদের আড্ডায় পৌছন আর তাদের থেকে সব গোরু ফিরিয়ে আনাপ চেষ্টা করেন। পণীদের সর্দার নানা মিষ্টি কথায় সরমাকে ভোলাতে চাইলেও তিনি ভোলেন না। বরং ফিরে এসে তিনি দেবতাদের পণীর আস্তানার সন্ধান বলে দেন। তাঁর সাহায্যেই দেবতারা হারানো গোরু ফিরে পান। বেদের মতে পৃথিবীর সব কুকুরই শেষ অবধি সরমার সন্তান। তাই কুকুরের আর এক নাম সারমেয়।
খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে লেখা বুদ্ধের জন্মান্তরের কাহিনি ‘জাতক-মালা’তেও এক কুকুরকে গোয়েন্দাগিরি করতে দেখা গিয়েছিল। এক্ষেত্রে অবশ্য কুকুর রূপে এসেছিলেন বোধিসত্ত্ব স্বয়ং। তিনিই নাকি বারাণসী নগরে কুকুরদের সর্দার হয়ে জন্মেছিলেন। সেই নগরের রাজার রথের চাকা একবার জলে ভিজে গেল। রাতে চাকার সেই ভিজে চামড়া খেয়ে ফেলল রাজার পোষা কুকুরের দল। কিন্তু রাজভৃত্যেরা রাজাকে জানাল, রাস্তার কুকুররা চামড়া খেয়েছে। রাগে রাজা সব রাস্তার কুকুরদের মেরে ফেলবার আদেশ দিলেন। কুকুররূপী বোধিসত্ত্ব তখন রাজাকে অনুরোধ করলেন, সব কুকুরকে, এমনকী রাজার পোষা কুকুরদেরও যেন কুশের কাঁটা মেশানো বালি খাওয়ানো হয়। এই বালি খেয়ে সব কুকুর বমি করতে শুরু করল। কিন্তু শুধু রাজবাড়ির কুকুরদের বমিতে পাওয়া গেল চামড়ার টুকরো। রাজা বুঝলেন, তাঁর কুকুররাই রথের চামড়া খেয়েছে। এভাবেই চামড়ার কেস সলভ করেছিলেন কুকুররূপী বোধিসত্ত্ব।

আসলে গোয়েন্দাদের সঙ্গে কুকুরের সম্পর্ক চিরদিনের। শার্লক হোমসের কাহিনিতে কুকুরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে অন্ততঃ তিনবার। ‘সাইন অফ ফোর’ আর ‘মিসিং থ্রি কোয়ার্টার’-এ তো হোমস নিজেই কুকুর হাতে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু কুকুরের ডাক একটা কেসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সিলভার ব্লেজ়ের সেই জায়গাটা মনে আছে, যেখানে হোমসকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে এই কেসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা কী? হোমস বলছেন “The curious incident of the dog at the nighttime”. সবাই অবাক। কিন্তু রাতে তো কুকুর বেচারি কিছুই করেনি! হোমসের উত্তর “That is curious”. কুকুর নিয়ে এ হেন পাঞ্চলাইন কিন্তু আর কোত্থাও নেই।
গোয়েন্দা না হলেও প্রায় গোয়েন্দা আর এক চরিত্রের সঙ্গে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে অন্য এক কুকুর। ঠিক ধরেছেন। টিনটিন আর তার ফক্স টেরিয়ার কুকুর স্নোয়ি বা কুট্টুসের কথাই বলছি। মূল ফরাসীতে কুকুরের নাম মিলু। অনেকেই জানেন না, এই মিলু আসলে অ্যার্জের প্রেমিকার নাম, যে প্রেম পরিণতি পায়নি কোনওদিন। ইংরাজি অনুবাদে স্নোয়ি বা বাংলায় কুট্টুস হয়ে যাওয়ায় অ্যার্জের এই ট্রিবিউট প্রায় হারিয়েই গিয়েছে। তবে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে প্রেমিক-প্রেমিকা যেমন গল্প করে, টিনটিন আর মিলুও তেমন করে। অ্যার্জে নিজে বলেছেন,
“Snowy is always there alongside Tintin. They talk to each other. Even though he speaks, Snowy is above all just a normal dog. Even though he talks a great deal, he remains a simple dog for Tintin. Tintin and Snowy are totally on the same wavelength even when they are in conversation”.
আর টিনটিনের একেবারে বাস্তব জগতে এই অবাস্তবতা আমরা দেখেও দেখি না।

কমিকসে কুট্টুসের এই জনপ্রিয়তার কাছাকাছি টক্কর দেবার মতো আর দু’জনের কথাই মনে পড়ছে। বেতাল বা অরণ্যদেবের বিরাট কুকুর ডেভিল বা বাঘা আর অ্যাসটেরিক্স কমিকস সিরিজ়ে ওবেলিক্সের পোষা ছোট্ট কুকুর ডগম্যাটিক্স। ডেভিল অবশ্য কুকুর নয়, নেকড়ে। অন্ততঃ অরণ্যদেবের দাবি সেটাই। কর্ণেল ব্যাগশট নামে এক নিষ্ঠুর শিকারি ডেভিলের মাকে গুলি করে মারে। মায়ের মৃতদেহের পাশেই সদ্যোজাত ডেভিলকে খুঁজে পান চলমান অশরীরী। সে বেতালের সঙ্গ ছাড়ে না। প্লেনেও না। সে-ই বোধহয় পৃথিবীর একমাত্র কুকুর, যার নিজের নামে প্রেসিডেন্ট লুয়াগার সই করা পাসপোর্ট আছে। ডায়নাও তাঁকে বড্ড ভালবাসেন।
অন্যদিকে ডগম্যাটিক্স ছোট্টখাট্ট। কুট্টুসের চেয়েও। বিরাট ওবেলিক্সের পাশে একেবারে কাউন্টার পয়েন্টে তার অবস্থান। সে-ও টেরিয়ার প্রজাতির। প্রথম দিকের অভিযানে তাকে দেখা যায়নি। ‘অ্যাসটেরিক্স অ্যান্ড ব্যাঙ্কোয়েট’ কাহিনিতে আবির্ভাবেই সে সবার মন জয় করে নেয়। এরপর থেকে তাকে ছাড়া কোনও অভিযান ভাবাই যায়নি। এমনকি গোচিনিদের স্টুডিওটাও তারই ফরাসী নামে। স্টুডিও ইডাফিক্স।

বিদেশি সাহিত্যে বিখ্যাত কুকুরদের মধ্যে কয়েকজনের নাম তো না করলেই নয়। ছোটবেলায় পড়া রুশ বই ‘ধলা কুকুর শামলা কান’ উপন্যাসের সেই মায়াভরা কুকুর বিম, কিংবা যার নামেই গল্প, সেই ‘কাশতানকা’কে কি কেউ ভুলতে পারি? অথবা ডরোথির সঙ্গে জাদুর দেশে পাড়ি দেওয়া লোমে ঢাকা কানসাসের কুকুর টোটো! কিংবা হ্যারি পটারের কাহিনিতে মারজোরির সেই প্রিয় বুলডগ রিপার। মারজোরির বারোটা কুকুরের মধ্যে তাঁর প্রিয়তম। অত্যন্ত বদরাগী এই কুকুরকে মারজোরি আদর করে ডাকতেন রিপি-পু বলে।
এবারে বাংলা সাহিত্যের রত্নখনিতে উঁকি মারা যাক।
“ভজহরি আর রামচরণের মধ্যে ভারী ভাব। অন্তত, দুই সপ্তাহ আগেও তাহাদের মধ্যে খুবই বন্ধুতা দেখা যাইত। সেদিন বাঁশপুকুরের মেলায় গিয়া তাহারা দুইজন মিলিয়া একটা কুকুরছানা কিনিয়াছে। চমৎকার বিলাতি কুকুর— তার আড়াই টাকা দাম। ভজুর পাঁচসিকা আর রামার পাঁচসিকা— দুইজনের পয়সা মিলাইয়া কুকুর কেনা হইল। সুতরাং দুইজনেই কুকুরের মালিক। কুকুরটাকে বাড়িতে আনিয়াই ভজু বলিল, “অর্ধেকটা কুকুর আমার, অর্ধেকটা তোর।” রামা বলিল, “বেশ কথা! মাথার দিকটা আমার, ল্যাজের দিকটা তোর।”
তারপর সে কুকুর নিয়ে কী বিষম গলযোগ বাধল তা নিয়েই সুকুমার রায়ের দুরন্ত গল্প “কুকুরের মালিক”। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে কুকুর আরও আগে এসেছে। চণ্ডীমঙ্গলে তো কুকুর এসেছে বহুবার। ঈশ্বর গুপ্ত তো কবেই লিখে গেছেন,
ভ্রাতৃভাব ভাবি মনে, দেখ দেশবাসিগণে,
প্রেমপূর্ণ নয়ন মেলিয়া।
কতরূপ স্নেহ করি, দেশের কুকুর ধরি,
বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া ||

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিড়াল নিয়ে বড় বড় সন্দর্ভ রচনা করলেও কুকুরকে একদম অবহেলা করেননি। তাঁর কমলাকান্তের দপ্তরে দেখি,
“অকস্মাৎ অহিফেন-প্রসাদে দিব্য চক্ষুঃ লাভ করিলাম- দেখিলাম, এই ত পলিটিক্স্,- এই কুক্কুর ত পলিটিশান! তখন মনোভিনিবেশ পূর্ব্বক দেখিতে লাগিলাম যে, কুক্কুর পাকা পলিটিকেল চাল চালিতে আরম্ভ করিল। কুক্কুর দেখিল-কলুপুত্র কিছু বলে না-বড় সদাশয় বালক, কুক্কুর কাছে গিয়া, থাবা পাতিয়া বসিল। ধীরে ধীরে লাঙ্গুল নাড়ে, আর কলুর পোর মুখপানে চাহিয়া, হ্যা-হ্যা করিয়া হাঁপায়। তাহার ক্ষীণ কলেবর, পাতলা পেট, কাতর দৃষ্টি এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাস দেখিয়া কলুপুত্রের দয়া হইল, তাহার পলিটিকেল্ এজিটেশ্যন সফল হইল;- কলুপুত্র একখানা মাছের কাঁটা উত্তম করিয়া চুষিয়া লইয়া, কুক্কুরের দিকে ফেলিয়া দিল। কুক্কুর আগ্রহ সহকারে আনন্দে উন্মত্ত হইয়া, তাহা চর্ব্বণ, লেহন, গেলন এবং হজমকরণে প্রবৃত্ত হইল। আনন্দে তাহার চক্ষু বুজিয়া আসিল।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখায় খুব বেশি কুকুরের উল্লেখ করেননি বটে, তবে “আত্মীয় কেহ নাই নিকট কি দূর, আছে এক ল্যাজ-কাটা ভক্ত কুকুর” আর “লেজের মধ্যে মাথা থুয়ে/ খাঁদন কুকুর আছে শুয়ে/কেমন একরকম” এই দুই লাইনেই কুকুরদের অমরত্ব দিয়ে গেছেন। সমসাময়িক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্প ‘কুকুর ছানা।’ লন্ডনপ্রবাসী শরৎকুমার বাগচি শীতের হিমরাতে একটি কুকুরছানা কুড়িয়ে পেয়ে পাঁচ মাস লালনপালন করে। পরে আসল মালিককে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেন ছিঁড়ে সে চলে আসে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প ‘দেওঘরের স্মৃতি’ মনে করা যাক। অসুস্থ লেখক হাওয়া বদলের জন্য দেওঘরে যাওয়ার পরে বাড়ির সামনে একটি বেওয়ারিশ কুকুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে এবং ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।
বনফুলের গল্প ‘বাঘা’র নায়ক একটি ভীরু, রুগ্ন এবং দুর্বল কুকুর। মোহাম্মদ নাসির আলির ‘কুকুর ছানার কাণ্ড’ গল্পে লেবুমামা ঢাকা শহরে গিয়ে বাটপারের পাল্লায় পড়ে সাতটাকা দিয়ে একটা কুকুরছানা কিনে মহাবিপদে পড়ে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘সাপ’ গল্পের অন্যতম চরিত্র রেনি নামের একটা কুকুর। গল্পের নাম সাপ হলেও কুকুরটার কথাই মুখ্য।
আধুনিক লেখকদের মধ্যে কুকুর নিয়ে দুটো উপন্যাসের কথা না বললেই নয়। প্রথমটা সন্দীপন চাটুজ্জের “কুকুর সম্পর্কে দু একটা কথা যা আমি জানি।” বিচিত্র সেই কাহিনি। হেমাঙ্গ নামের এক ভদ্রলোকের হঠাৎ আশেপাশের সবাইকেই কুকুর মনে হতে লাগল। ব্যাপারটা কীভাবে হল সে সম্পর্কে তাঁর তেমন ধারণা নেই। কিন্তু তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন, প্রতিটি মানুষই কোনও না কোনও জাতের কুকুর। কেউ জার্মান শেফার্ড, কেউ বুলডগ, কেউ নেড়ি ইত্যাদি। এমনকি তাঁর নিজেকেও কুকুর মনে হয়।
”এখানে কফিখানায় আসে নানা আকৃতির, নানান জাতের নানা রঙের কুকুর। এরা সবাই মূলত নেড়ি। এদের মধ্যে তারা কালক্রমে জাতে উঠছে যারা গাড়ি কিনেছে। যারা ফ্ল্যাট কিনেছে। ব্যাঙ্কে টাকা বাড়ছে। এদের পেডিগ্রি রয়েছে এরা দাবী করে। এরা ক্রিকেট সিজনে ক্রিকেট, ফিল্ম ফেস্টিভালের সময় ফিল্ম ফেস্টিভাল, নির্বাচন কালে নির্বাচন এবং শরৎ ঋতুতে সাহিত্যের কথা বলে। পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল নিয়ে এখানে অহরহ কথা উঠে। প্রতিদিনের সংবাদপত্র থেকে এই আজ এটা পড়েছেন কিংবা এই আজ সেটা পড়েছেন- এভাবে কথা শুরু হয়। তবে বাংলার তুলনায় ইংরেজি কাগজ রেফার্ড হওয়া এখানে কাম্য। একজন কুকুর হিসেবে আমি এখানে প্রায়ই আসি। এদের সঙ্গ কামনা আমার পক্ষে প্রাকৃতিক। কুকুরজীবন তো আমাকেও কাটাতে হবে।”
আর দ্বিতীয় হল, নবারুণ ভট্টাচার্যের লেখা “লুব্ধক” নামের নভেলা- যার প্রস্তাবনায় লেখা “একটি কুকুরের উপকথা।” গল্পটা এইরকম- কলকাতা শহরকে দ্রুত কুকুরশূন্য করে ফেলার পরিকল্পনা হচ্ছে, কারণ কুকুররা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। আর সেই সবচেয়ে সাশ্রয়ী আর নির্ঝঞ্ঝাট উপায়ের সন্ধানে আছে সবাই। এ যেন কুকুরের রূপকে নাৎসি হলোকাস্টের ছবি। শেষে কি শহর কুকুরমুক্ত হল? না কুকুররা রুখে দাঁড়াতে পারল এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে, তা নিয়েই কাহিনি।
তবে বাংলা সাহিত্যে কুকুর নিয়ে যত গল্প, তাদের সেরাটা সম্ভবত সত্যজিৎ রায়ের লেখা। তাঁর সেপ্টোপাসের খিদে, শঙ্কুর শনির দশা, টিনটোরেটোর যিশু-সহ নানা কাহিনিতে একাধিক কুকুর এসেছে, কিন্তু কেউই ‘অসমঞ্জবাবুর কুকুর’কে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। অসমঞ্জবাবুর একটা কুকুর পোষার শখ। তেমন জাতের কুকুর না। “এমনি একটা সাধারণ কুকুর, যেটা তাঁকে সকাল সন্ধে সঙ্গ দেবে, তাঁর তক্তপোষের পাশে মেঝেতে গা এলিয়ে পড়ে থাকবে, তিনি আপিস থেকে ফিরলে পরে লেজ নেড়ে আহ্লাদ প্রকাশ করবে, তাঁর আদেশ মেনে তার বুদ্ধি আর আনুগত্যের পরিচয় দেবে। কুকুরকে তিনি ইংরিজিতে আদেশ করবেন, এটাও অসমঞ্জবাবুর একটা শখ। স্ট্যান্ড-আপ সিট ডাউন শেক হ্যান্ড, এসব বললে যদি কুকুর মানে তা হলে বেশ হবে।”

এমনই ভাগ্যের ফের, তাঁর কপালেই জুটল আশ্চর্য কুকুর ব্রাউনি, যে কিনা হাসতে পারে। আর সেই হাসিমুখ কুকুরকে ঘিরেই মানুষের লোভ, লালসা, হিংসার কী অসাধারণ ছবিই না এঁকেছেন সত্যজিৎ! শেষে একবারে অকারণে ব্রাউনি হেসে ওঠে। না, একেবারে অকারণে মোটেই নয়। অসমঞ্জবাবু এর কারণ বুঝতে পারেন “সাহেব ভাবছেন টাকা দিলে দুনিয়ার সব কিছু কেনা যায়, তাই শুনে কুকুর হাসছে।” ঘৃণ্য বলে, তুচ্ছ বলে, পশু বলে, পথের কুকুরকেও ছাড়েন না যুধিষ্ঠির। আর গল্পে সত্যজিৎ সেই কুকুরের তথাকথিত পাশবিকতাকে আমাদের চেনা মানবিকতার অনেক উপরে নিয়ে চলে যান। সাহেবের টাকার প্রস্তাবের জবাবে…
“ব্রাউনি ছোট্ট করে হেসে দিল— ফিক্।
অর্থাৎ ঠিক।”
*ছবি সৌজন্য: Pinterest, Facebook, BBC
জন্ম ১৯৮১-তে কলকাতায়। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি-তে স্বর্ণপদক। নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কারক। ধান্য গবেষণা কেন্দ্র, চুঁচুড়ায় বৈজ্ঞানিক পদে কর্মরত। জার্মানি থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা গবেষণাগ্রন্থ Discovering Friendly Bacteria: A Quest (২০১২)। তাঁর লেখা ‘কমিকস ইতিবৃত্ত’ (২০১৫), 'হোমসনামা' (২০১৮),'মগজাস্ত্র' (২০১৮), ' জেমস বন্ড জমজমাট'(২০১৯), ' তোপসের নোটবুক' (২০১৯), 'কুড়িয়ে বাড়িয়ে' (২০১৯) 'নোলা' (২০২০) এবং সূর্যতামসী (২০২০) সুধীজনের প্রশংসাধন্য। সম্পাদনা করেছেন ‘সিদ্ধার্থ ঘোষ প্রবন্ধ সংগ্রহ’ (২০১৭, ২০১৮)'ফুড কাহিনি '(২০১৯) ও 'কলকাতার রাত্রি রহস্য' (২০২০)।