দেশজুড়ে লকডাউন চলছে এবং চলবে আরও কিছুদিন। অর্থাৎ আরও কয়েকটা দিন এভাবেই গৃহবন্দি হয়ে বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে কাটাতে হবে চব্বিশ ঘণ্টা। দুশ্চিন্তা থাকলেও লকডাউনের একটা সুফল ইতিমধ্যেই দেখা গেছে। পরিবেশে দূষণের মাত্রা অনেকটা কমে গিয়েছে, যার ফলে নিজেকে সুস্থ রাখার কাজটাও এখন তুলনামূলকভাবে সহজ। তাছাড়া লকডাউনের কারণে বাইরের অর্থাৎ রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লকডাউনে থাকা চাকরিজীবীদের মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এক, যাঁদের বাড়ি থেকে কাজ অর্থাৎ ওয়র্ক ফ্রম হোম করতে হচ্ছে। দুই, যাঁদের কাজ বাড়ি থেকে করা সম্ভব নয় বলে স্রেফ ছুটি কাটাচ্ছেন।
এই দু’দলের মধ্যেই একটা কমন ফ্যাক্টর রয়েছে – কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসে ট্রেনে চড়ে কিংবা হাঁটাহাঁটি করে যে পরিশ্রম করতে হয় তা এখন দৈনিক ক্যালেন্ডার থেকে বাদ পড়েছে। আর অনেকটাই শিথিল হয়েছে খাওয়া-ঘুমের রুটিন। বাড়ি থেকে কাজ করলেও ঘড়ির কাঁটা মেনে চান খাওয়া করার দরকার পড়ছে না। যেমন তেমন করে ল্যাপটপ খুলে কাজে বসে পড়লেই চলে যাচ্ছে। এতে একটা সুবিধে অবশ্যই হয়েছে। যাতায়াতের খরচটা বেঁচে যাচ্ছে। কিন্তু আরও একটা খরচ এতে বেঁচে যাচ্ছে যা মোটেও কাম্য নয়। তা হল ক্যালরি। আর এই বেঁচে যাওয়া ক্যালরি যথাসময়ে খরচ না করলে, কোয়ারান্টাইন শেষ হবার আগেই ফিটনেসের দফারফা হবে। তাই এখনই সাবধান হওয়ার সঠিক সময়।
আপনার শরীর একটা যন্ত্র এবং সমস্ত যন্ত্রের মত একেও চালু রাখা প্রয়োজন।
- রোজ হাল্কা ব্যায়াম করার অভ্যেস করুন – চালু কথায় যাকে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ বলে (কোনও যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়া খালি হাতে যে ব্যায়ামগুলো করা যায়), কম সময় আর ছোট জায়গার জন্য সেগুলো আদর্শ। সোজা দাঁড়িয়ে ঘাড় দিয়ে শুরু করে একে একে নিচের দিকে নামতে থাকুন। দেহের প্রত্যেকটা জয়েন্ট একবার ডান থেকে বাঁয়ে আর বাঁ থেকে ডানে ঘুরিয়ে নিন। ঘাড়, কাঁধ, কবজি, কোমর, হাঁটু, অ্যাঙ্কল – এইভাবে।
- কাজ করার সময় ঠিকভাবে বসুন –বাড়িতে অফিসের মত আরামদায়ক চেয়ার যা বসে কাজের উপযুক্ত, তা নেই। অনেককেই খাবার টেবিলের চেয়ারে কিংবা বিছানায় বসে কাজ করতে হয়। তাই চেষ্টা করতে হবে শিরদাঁড়া সোজা করে, যতটা সম্ভব আরামদায়ক ভঙ্গিতে বসে কাজ করার।
- মাঝে মাঝে কাজ থেকে ব্রেক নিন – এক দেড় ঘণ্টা পর পর উঠে একটু হাঁটাচলা করুন। দাঁড়িয়ে হাল্কা স্ট্রেচ করে নিন। সোজা দাঁড়িয়ে ডান পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে পেছন দিক তুলুন। ডান হাতে পায়ের অ্যাঙ্কলটা ধরে নিন। ব্যালান্সের অভাব হলে কিছু একটা ধরে সাপোর্ট নিন। একইভাবে বাঁ পাও স্ট্রেচ করুন। পা সামান্য ফাঁক করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত ওপরে তুলে এক হাতে অন্য হাতের কব্জি ধরুন। তারপর একবার ডান দিকে একবার বাঁ দিকে পুরো শরীরটাকে বাঁকান।
- বেশি করে জল খান – অফিসে যেমন করেন সেই অভ্যেস বাড়িতেও বজায় রাখুন। কাজের জায়গায় জলের বোতল নিয়ে বসতে ভুলবেন না। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন সামান্য গরম জল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করে। তাই সামান্য গরম জলও খেতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর খাবারই এই লকডাউনে আপনাকে সুস্থ রাখবে।
- কাজের ফাঁকে মুখ চালাতে – বাড়ি থেকে কাজ করছেন বলে টুকটাক মুখ চলছেই। মুখ চালান, ক্ষতি নেই। তবে চানাচুর, চিপস, কুকিজ-এর বদলে নুন লেবু কাঁচালঙ্কা দিয়ে ভেজানো ছোলা বা মটর খেতে পারেন। এতে প্রয়োজনীয় প্রোটিন পাবেন কোনও বাড়তি ফ্যাট ছাড়াই আর এর মুখরোচক স্বাদ আপনাকে গৃহবন্দিত্বের দুঃখ ভুলিয়ে চনমনে করে তুলতেও সাহায্য করবে।
- ফ্যাট এবং কার্ব কম খান – অফিসের এবং বাড়ির কাজ সামলে রান্নাবান্না করা বেশ ঝক্কির কাজ মনে হতে পারে। তাছাড়া রসদও একটু সামলে খরচ করতে হচ্ছে। তাই বেশিরভাগ দিন খিচুড়ি কিংবা ফেনাভাত ঘি আলুসেদ্ধ গোছের খাবার খেয়েই হয়তো দিন কাটছে। অথচ একইরকম কম সময় কিছু সহজ পুষ্টিকর খাবার আপনি তৈরি করে নিতে পারেন। যেমন ভাত, ডালসেদ্ধ, ডিমসেদ্ধ। ভাতের সঙ্গে বাড়িতে যে সবজি আছে তা সেদ্ধ করে, নুন, তেল কাঁচালঙ্কা মেখে খান। যতটুকু না দিলেই নয় ঠিক ততটুকু তেল বা ঘি ব্যবহার করে এবং গৃহবন্দিত্বের রেশন বজায় রেখেই কম সময়ে এসব রান্না করা সম্ভব। ভাতের ফ্যান অবশ্যই ফেলে খান। অনেক বাড়তি ক্যালরি খাওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবেন।
- ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ সান্ধ্য চা আর ডিনার – যতই ব্যস্ত থাকুন, মিল স্কিপ করবেন না। কিছুই না পেলে এক কাপ দুধ কিংবা একটা সেদ্ধ ডিম নিদেনপক্ষে একবাটি মুড়ি কিংবা কর্নফ্লেকস খেয়ে নিন। দুটো মিলের মধ্যে লম্বা ব্যবধান আপনার মেটাবলিজম এবং হজমশক্তি দু’য়ের পক্ষেই ক্ষতিকর। তাই লম্বা সময় পেট খালি রাখবেন না।
- ঘড়ি দেখা বন্ধ করবেন না – জীবনযাত্রা যখন স্বাভাবিক ছিল, ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী আপনার দিন চলত। ঘড়ি ধরে ঘুম থেকে ওঠা, চান খাওয়া করে অফিস যাওয়ার অভ্যেস ছিল। সেই রুটিনের যতটা সম্ভব মেনে চলুন। এতে যেমন আপনার শরীর সুস্থ থাকবে তেমনই লকডাউন পরবর্তী দিনগুলোয় আপনার রুটিনে ফেরাও সহজ হবে।
যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম দেখা গেছে তারাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। দেহের ফিটনেস বজায় রাখাও কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং সুস্থ থাকুন, আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। নিজের শরীর নিজের সমাজ এবং নিজের পরিবারের প্রতি দায়িত্ববান হন। করোনাভাইরাসও আপনাকে সমঝে চলবে।
পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় আকারে স্থূল, প্রকারে কুল এবং জোকার-এ মশগুল। ভালোবাসেন মার্ভেল, ডিসি, আর যা কিছু ফিশি। পূর্বজন্মে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন। বর্তমানে বাংলার নেশায় বুঁদ। পরজন্মে গল-দের গ্রামে খোলা আকাশের নীচে গোল টেবিলে নৈশভোজের আসরে বসে বুনো শূকরের রোস্ট খেতে চান।
One Response
খুব প্রয়োজনীয় এই মুহূর্তে এই টিপস গুলি!