শরতের দিন নিয়ে আসে দুর্গাপুজো (Durga Puja)। মাঠে-ঘাটে, আকাশে এক অন্য আনন্দ।যে আনন্দ শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে পল্লী সবার মাঝে ছড়িয়ে যায়।এইবারের দুর্গা পুজোর লেখার অনুরোধ যখন এলো, আমি ভাবছিলাম প্রতি বছর তো রেসিপি বা ভালো ভালো রান্নার কথা বলি, এইবার অন্য কিছু হোক। শহর থেকে গ্রাম, বাংলার কয়েকটি সাবেকি পুজোর (Durga Puja) অন্দরমহলের কথা, ভোগ রান্নার কথাই আজ বলবো।

সোনারপুর মিলনপল্লীতে রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো। এই পুজো (Durga Puja) আগে হতো বরিশালের পোনাবালিয়াতে। তারপর এপারে এসে ১৯৭৮ থেকে শুরু হয় মায়ের পুজো।এদের ভোগে রোজ অনান্য মিষ্টির সাথে হয় একটি বিশেষ ভাজা মিষ্টি লুচির পুর। ময়দা ঘিতে ময়ান দিয়ে তাতে নারকেলের পুর ভরে সুন্দর করে মুড়ে ঘিয়ে ভাজা হয় এই মিষ্টি, ঠাকুরকে প্রসাদে নিবেদন করা হয়।

বাংলাদেশের ঢাকার কামারগাঁয়ে ২৫০ বছর আগে প্রচলন হয় ঘোষ বাড়ির পুজো। বর্তমানে কলকাতার লেক টেম্পল রোডে এই পুজো হয়। এদের ঠাকুরের এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে।এনাদের লক্ষ্মী আর কার্তিক ঠাকুর বসেন একদিকে আর ওপর দিকে সরস্বতী আর গণেশ। দশমীতে পান্তার বদলে সেদ্ধ চাল আর শালু শাপলার ভোগ নিবেদন করা হয় ঠাকুরকে। শাপলা ছাড়িয়ে, সর্ষের তেলে কালোজিরা, শুকনো লংকা, নুন, হলুদ আর মিষ্টি, এছাড়া অন্য কোনো মশলা নয়। পিতলের মালসায় এই ভোগ নিবেদিত হয়।

দুর্গাচরণ মিত্র’র পরিবারের এক শরিকিদের পুজো হয় দর্জিপাড়ায়। বিডন স্ট্রিটে এই পুজো ৩১৫ বছরের পুরোনো। এই পুজোর দুর্গা ঠাকুরের বাহন সিংহ হয় ঘোড়ার আদলে এবং সাদা রঙ এর। ঠাকুর হয় তিনচালার, যা আজকের দিনে বিরল। সাধারণত ঘি এর লুচি, লবণ ছাড়া ভাজা, এবং মুগের ডালের ভোগ ঠাকুরের জন্য বানানো হয়।এছাড়া নবমীতে ভোগ হয় বলির মাংস।যা রাঁধা হয় ঘিতে, আদা জিরা বাটায়, হিং এবং গরম মশলা দিয়ে। কোনো রকম পেঁয়াজ, রসুন, টক জাতীয় কিছু এতে যায় না।

রামকৃষ্ণপুর হাওড়াতে বোস বাড়ির পুজো (Durga Puja) নিমাইসাধন বোসের পারিবারিক পুজো। রোজ ২৪টি নারকেল নাড়ু এই পুজোর ভোগে নিবেদিত হয়। এছাড়া উমা আসার আনন্দে হয় আনন্দনাড়ু। পরিবারের সদস্যরা মহালয়ার পর থেকে নিরামিষ খান। নবমীতে সন্ধিপুজোর পরে পোনা মাছ আর ভেটকি মাছের ঝোল খেয়ে আমিষভোজন করেন। দশমীতে মহিলারা নিরামিষ মাংস ও পান খেয়ে ঠাকুর বরণ করেন। এটাই তাদের রীতি।
হুগলির আরামবাগের হরিনখোলার গ্রাম বাখরচক। সেখানে চ্যাটার্জি বাড়ির পুজো ৪৩০ বছর এর প্রাচীন। সাবেকি প্রতিমাকে নিবেদন করা হয়, পাঁচ কাঠা জমির চালের ভাত, পাঁচ কাঠা জমির চালের খিচুড়ি প্রসাদ। কাঠের উনুনে বড় বড় পিতলের হাঁড়িতে ভাত, খিচুড়ি রান্না হয়। লোহার কড়াইয়ে তরকারি তৈরি হয়। সিলভার স্টিল এসব বাসন ব্যবহার করা চলে না। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ঠাকুরের নির্দিষ্ট বাসন আছে।

বিভিন্ন রকম ভাজাভুজি, মুগের ডাল, ছোলাসহ কুমড়োর তরকারি, পুঁইশাকের ঘন্ট, কচু পলতার শুক্তো, গুড় পিঠে, ফুলকপি আলুর তরকারি, গুড়ের নারকেল নাড়ু ইত্যাদি। তিন দিনই একই ভোগ। পুজোর পর প্রায় ২০০ জন প্রসাদ পায়। ষষ্ঠী থেকে দশমী ঠাকুরের ভোগে কচু পলতার শুক্তো রোজ দেওয়া হয়। ঘিতে পাঁচ ফোড়ন, এবং কচু দিয়ে হয় এই শুক্তো, শেষে পলতা পাতা ভেজে মেশানো হয়ে।
ছবি সৌজন্য: লেখক
নিবাস গুরগাঁও। পেশায় বাবুর্চি। নিয়মিত রান্না বিষয়ক লেখালেখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এছাড়া স্কুলছুট বাচ্চাদের স্কুলে ফেরানোর কাজ করেন শমীতা।