স্মুদি (Smoothie), জনপ্রিয় শহুরে খাবার।ব্রেকফাস্টে (Breakfast) সম্পূর্ণ অয়েল-ফ্রি পেট ভরানো খাবার যাঁরা খেতে চান, ভাজা, সেঁকা, রান্নাঘরে গিয়ে সময় নিয়ে বানানো খাবার ইত্যাদি থেকে যাঁরা মুক্তি পেতে চান তাঁদের জন্য অপরিসীম উপকারী একটি আহার, স্মুদি (Smoothie)।আসলে প্রতিদিন নানারকম কাজের চাপে সকালের জলখাবারে চটজলদি এই স্মুদি বোধহয় অনেকটা পরিশ্রম থেকে বাঁচায়।
কারণ সকালে ঘুম থেকে উঠে ভেজানো ড্রাই ফ্রুটস বা সিডস্ শুধু শুধু খেতে মোটেই ভালো লাগেনা। তাই একটা স্মুদ মিক্সচার বানালে সেটি ঝটপট খেয়ে ফেলা যায়, সময়ও বাঁচে। নানান ফল সংযোজন করলে গুণ ও স্বাদ বহুগুণ বাড়ে। সব মিলিয়ে একটা দ্রুত প্রাতরাশের প্রস্তুতি হয়ে যায় তাড়াহুড়োর সময়।
স্বাস্থ্য সচেতন অল্পবয়সী থেকে মধ্যবয়সী – আজকাল প্রায় সবাই এই স্মুদির দিকে ঝুঁকেছেন।অতি পরিচিত, বলা ভাল ট্রেন্ডিং এ থাকা এই ঘন ভিটামিন মিনারেল ফাইবার সম্পৃক্ত খাদ্যবস্তুটির সঙ্গে অনেকেই আমরা পরিচিত।
অনেকে তো জলখাবারের ওয়েট লস প্রোগ্রামে স্মুদিকেই শুধু প্রাধান্য দেন। আবার পেট ভরানোর জন্য উপকারি সুস্বাদু নানা ফল দিয়েও এই স্মুদি বানান। কেউ কেউ সবজি পাতা দিয়েও বানিয়ে থাকেন। নানা রকম সিরিয়ালস যেমন ওটস্, সিডস্ ও নাটস্ অনেকক্ষেত্রে আবশ্যিক।

প্রথমেই বলি ফ্রুট শেক, শরবত বা মকটেল এবং স্মুদি প্রত্যেকটা কিন্তু একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। স্মুদি হতে হবে সামান্য ঘন একটি পানীয়। এতে ইয়োগার্ট বা কার্ড বা দুধ লাগবে ফল অনুযায়ী। ড্রাই ফ্রুটস বা নাটস এবং সিডস দিলে উপকার আরও বাড়বে। কারণ সকালে ঘুম থেকে উঠে ভেজানো ড্রাই ফ্রুটস বা সিডস্ শুধু শুধু খেতে মোটেই ভালো লাগেনা। তাই একটা স্মুদ মিক্সচার বানালে সেটি ঝটপট খেয়ে ফেলা যায়, সময়ও বাঁচে। নানান ফল সংযোজন করলে গুণ ও স্বাদ বহুগুণ বাড়ে। সব মিলিয়ে একটা দ্রুত প্রাতরাশের প্রস্তুতি হয়ে যায় তাড়াহুড়োর সময়।
নিজের ইচ্ছেমত উপকরণ দিয়ে বানিয়ে ফেলুন রোজকার ডায়েটের এই অনবদ্য বস্তুটিকে।একঘেয়ে না খেয়ে চলুন রকমারি, রঙিন, নানা স্বাদের, স্মুদি বানাই। প্রয়োজনীয় উপকরণ বলতে নানা রকম টাটকা মরশুমি ফল, (যা খুব সহজেই পাওয়া যায়) ইয়োগার্ট (চাইলে আপনি টকদই ব্যবহার করতে পারেন), লিকুইড দুধ এবং নারকেলের দুধ। এছাড়া, নানা রকম বাদাম, ড্রাই ফ্রুটস এবং সিডস্।
আম কলার স্মুদি
উপাকরণ হিসেবে লাগছে টুকরো টুকরো করে আম, কলা, কাঠবাদাম, দুধ, ফ্ল্যাক্স সিডস। এটা চিনি ছাড়াই বানাতে পারেন।তাতে উপকার অনেক বেশি।যদি আম খুব মিষ্টি না হলে ব্রাউন সুগার(Brown Sugar) দিয়ে একটু সিরাপ বানিয়ে নেবেন। এতে একটা শাইনিং টেক্সচার আসে, খেতেও ভাল লাগে। ব্রাউন সুগারের উপকার চিনির থেকে বেশি।এতে বিভিন্ন মিনারালস(Minerals) যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে।

এবার জুসারের মধ্যে সিরাপ, টুকরো করা আম কলা, ভেজানো কাঠবাদাম দিয়ে ভালো করে ঘুরিয়ে নিন। একটা স্মুথ টেক্সচার আসবে, এমন পানীয় বানাবেন।হাল্কা ঠান্ডা করেও খেতে পারেন, এমনিও খেতে পারেন।
পাকা আমে রয়েছে ভাইটামিন সি,এ,বি সিক্স। আম এবং কলার মধ্যে আছে অনেক ফাইবার যা পেশী গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও এন্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি ক্যান্সার। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সাহায্য করে।কাঠবাদাম ও দুধের উপকারিতাও প্রচুর, হাড় মজবুত করতে।

পাকা পেঁপের স্মুদি
পাকা পেঁপের স্মুদি
পাকা পেঁপের খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে।পেঁপে হজমে উপকারি। এছাড়াও, ত্বক ভালো রাখতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। কলাও আর একটি উপাদান, তবে পেঁপের পরিমাণ অনেকটা বেশি থাকবে কলার অনুপাতে। মিক্সারে এবারে সব উপাদান একসাথে দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।প্রয়োজনে ব্রাউন সুগার বা মধু বা তাল পাটালি দিতে পারেন ন্যাচারাল সুইটনার হিসেবে।না দিয়েও করা যায়।সুন্দর একটি গ্লাস এ ঢেলে পরিবেশন করুন।

শসা পুদিনার স্মুদি
শসা টুকরো করে কেটে নিন।সঙ্গে লাগছে পুদিনা পাতা, রোস্টেড ওটস্, খুব অল্প ভেজানো পেস্তা, আমন্ড, ক্র্যানবেরি , ব্ল্যাক ও গ্রিন কিসমিস এবং নারকেলের দুধ। অল্প মধু দিতে পারেন।এবার সব মিশিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করলেই রেডি দারুন স্বাদের একটি উপকা্রি ওয়েট লস স্মুদি|পুদিনা পাতায় আছে হজম ক্ষমতা ও ইমিউনিটি বাড়ানোর উপাদান।
ওটসে আছে ওজন ও ব্লাড সুগার কমানোর উপাদান।এছাড়াও আছে এসেনসিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড। মধুতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট,অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান।

বেদানা লিচুর স্মুদি
বেদনা, লিচু, ফ্ল্যাক্স সিডস, বেসিল সিডস এর মূল উপকরণ।
বেদানা ছাড়িয়ে নিতে হবে।লিচুর খোসা ছাড়িয়ে বীজ বের করে ভেজানো ফ্ল্যাক্স সিডস এবং বেসিল সিডস একসঙ্গে জুসারে ঘুরিয়ে নিতে হবে। সামান্য জল দিতে হবে, কারণ লিচু ও বেদানাতে এমনিতেই অনেক রস থাকে।
বেদানার উপকারিতার শেষ নেই। অ্যান্টি ক্যান্সার, ফাইটোনিউট্রিয়ান্টসে পূর্ণ, এছাড়া ত্বক এবং ব্রেইন ফাংশানে উপকারি।
এই মিশ্রণে চাইলে সামান্য মিষ্টির জন্য তাল পাটালি দিতে পারেন। লিচুতেও অশেষ উপকার আছে – পটাশিয়াম,কপার, ভিটামিন সি ইত্যাদি ছাড়াও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট তো আছেই। মিষ্টি খুব কম হলে তবেই দেবেন ব্রাউন সুগার বা মধু বা গুড়।নচেৎ প্রয়োজন নেই।
সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। মরশুমি, টাটকা ফল শাক সবজি বেশী করে খান।আর প্রচুর পরিমাণে জল খান।
ছবি সৌজন্য: লেখক, Wikimedia Commons
আঁকা, ফুড আর্ট ও রান্নাবান্না সৌমীর প্যাশন। গাছপালা, প্রকৃতি ভালোবাসেন। যেকোনও সৃজনশীল কাজে আনন্দ পান। বিজ্ঞাপণ ও বিপণন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।