জঙ্গলে ঘুরতে আমাদের দুজনেরই খুব ভালো লাগে। পুজোটাও অক্টোবর মাসের শেষের দিকে, ওই সময় জঙ্গলে যাব ঠিক করলাম। শুধু আমরা কর্তা-গিন্নী। ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি মধ্য প্রদেশে (Madhya Pradesh) অনেক অনেক জঙ্গল, তাতে গিজগিজ করছে বাঘ ভাল্লুক। এরকমই এক জঙ্গল, বান্ধবগড়ে (Bandhavgarh) যাব, দু’রাত থাকব। তারপর চলে যাব উত্তর দিকে, পারসিলিতে।
আমাদের যাত্রা শুরু হল সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে, হামসফর এক্সপ্রেসে। বান্ধবগড়ের সবচেয়ে কাছের স্টেশন উমারিয়া। কিন্তু, পরিচিত হোটেলওয়ালা গাড়িওয়ালা সব সাহডোলে। তাই পরদিন সকালে সাহডোল স্টেশনে নেমে পড়লাম । প্রাতঃরাশ সেরে গাড়ি নিয়ে সোজা বান্ধবগড় (Bandhavgarh)। সেখানে অনেকগুলো রিসর্ট। আমাদের রাত্রিবাস মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের হোয়াইট টাইগার লজে (White Tiger Lodge)। অনেকগুলো ঘর, সুইমিং পুল নিয়ে অনেকটা জায়গা জুড়ে হোটেল চত্বর। একধারে বাঁধানো উঁচু মাচান, নদী আর জঙ্গল দেখা যায় সেখান থেকে।
আমাদের সাফারি বুকিং আগেই করা ছিল। এ হল জঙ্গলে জীপ ঢুকবার পারমিট। জীপের জন্য এবং গাইডের জন্য আলাদা চার্জ, সেটা ওখানে গিয়ে দিতে হবে। এবার জীপ যদি না থাকে তাহলে পুরোটাই ভেস্তে যাবে। তবে (Bandhavgarh) বান্ধবগড়ে সে সমস্যা কম। জঙ্গলে একটা কোর এরিয়া (Core area) থাকে। তার চারপাশে ঘিরে থাকে বাফার জোন (buffer Zone), যা সারাবছর খোলা থাকে। কোর এরিয়া (Core area) বর্ষাকালে বন্ধ থাকে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাস।
বান্ধবগড় বিশাল জঙ্গল, তার বাফার জোনে আছে ধামোখার, জোহিলা আর পানপাতা। কোর এরিয়াকে তিনটে ভাগ করা হয়েছে, টালা, মাগধী আর খিটাউলি। যে গাড়ি একটা এরিয়াতে ঘুরবে, সে বাকি দুটো জায়গায় ঢুকতে পারবে না। আমাদের রিসর্ট টালা বুকিং সেণ্টারের কাছে, আমরা টালা চত্বরে ঘুরব। দুবেলা সাফারি, সকালে আর বিকেলে। রাতের সাফারি শুধুই বাফার জোনে হয়।
ভোরবেলার জঙ্গল, সে এক অপূর্ব জায়গা। পাখিদের ডাকাডাকি শুনে ঘুম ভেঙে জঙ্গলের জেগে ওঠা, হাওয়ার শিরশিরানি, সচকিত বণ্যপ্রাণীর সতর্ক, সন্দিগ্ধ দৃষ্টিপাত, মাইলের পর মাইল শরতকালের খোলা নীল আকাশ, লালমাটিতে ছোপানো গাছের গুঁড়ি আর ঘনসবুজ পাতা, তাদের মর্মরধ্বনি, বুনোফুলের গন্ধে সুবাসিত বাতাস, ভোরের কুয়াশায় আর শিশিরসিঞ্চিত ঘাসে হেমন্তের নিঃশব্দ আগমনীবার্তা– প্রাণ জুড়িয়ে যায় এমন জায়গায়।
ভোরবেলা হাল্কা শীতে মাথায় টুপি পরে বুকিং কাউন্টার অবধি হেঁটে গেলাম। হুডখোলা অনেক জীপ দণ্ডায়মান। তার মধ্যে একটি আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। জীপে ড্রাইভার এবং এক বয়স্ক গাইড। এই জীপটি গাইডের নিজস্ব, বান্ধবগড়ে ভাড়া খাটে। ড্রাইভারকে গাইডের নির্দেশ অনুযায়ী যেতেই হবে, তার অন্যথা হবে না।
জীপে চড়ে টালা গেট দিয়ে ঢুকলাম ভিতরে। আমাদের আগে পরে আরও কিছু জীপ ছিল, সবাই এক এক দিকে ছড়িয়ে পড়ল। হাল্কা কুয়াশার চাদরে মোড়া বিস্তীর্ণ প্রান্তর, কাশফুলে ঢাকা। টুকটুকে লাল সূর্য নতুন দিনের আলোয় কুয়াশার স্তর সরিয়ে দিচ্ছে। একদল হরিণ আমাদের জীপের আওয়াজ পেয়ে দৌড় দিল কাশের বনের ভেতর দিয়ে, হারিয়ে গেল কুয়াশায়। ভোরবেলার জঙ্গল, সে এক অপূর্ব জায়গা। পাখিদের ডাকাডাকি শুনে ঘুম ভেঙে জঙ্গলের জেগে ওঠা, হাওয়ার শিরশিরানি, সচকিত বণ্যপ্রাণীর সতর্ক, সন্দিগ্ধ দৃষ্টিপাত, মাইলের পর মাইল শরতকালের খোলা নীল আকাশ, লালমাটিতে ছোপানো গাছের গুঁড়ি আর ঘনসবুজ পাতা, তাদের মর্মরধ্বনি, বুনোফুলের গন্ধে সুবাসিত বাতাস, ভোরের কুয়াশায় আর শিশিরসিঞ্চিত ঘাসে হেমন্তের নিঃশব্দ আগমনীবার্তা– প্রাণ জুড়িয়ে যায় এমন জায়গায়।
জঙ্গলে বাঘের সন্ধানে ঘুরছি, কিন্তু তারা বেপাত্তা। বর্ষাশেষে জঙ্গল সবুজ হয়ে আছে। জঙ্গলে প্রধানত শালগাছ আর বাঁশঝাড়। ঘন পাতার আস্তরণে গাছপালা ঢাকা, ঘাস প্রায় এক মানুষ সমান। আমাদের দশ হাতের মধ্যেও যদি বাঘ শুয়ে থাকে, আমরা দেখতে পাব না। এক জায়গায় বাঁশের ঝাড় অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে; সেইখানে আমাদের জীপ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল, ড্রাইভার দেখাল বাঘের পায়ের টাটকা ছাপ, কিছুক্ষণ আগেই গেছে ওখান দিয়ে। চুপচাপ অনেকক্ষণ থেকে তারপর অন্য দিকে গেলাম। মাঝে মাঝে অন্যান্য জীপের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, সব সওয়ারির গম্ভীর মুখ দেখে বোঝাই যায় কেউ দেখতে পায়নি। আমি তো জানি, বাঘ আমায় দেখা দেবে না, তাই ভালো করে জঙ্গল উপভোগ করছি, অন্যান্য জীবজন্তু দেখছি।
মাঝে একটা ফাঁকা জায়গায় জীপ দাঁড়াল। হোটেল থেকে প্যাক করে আনা খাবার দিয়ে প্রাতরাশ সারা হল। আমাদের গাইড বারবার বলল, বাঘ দেখতে হলে গরমকালে আসুন। পাতা ঝরে যায়, গাছের ফাঁকে দৃষ্টি চলে যায় অনেক দূর পর্যন্ত। অরণ্য দপ্তর জলের জায়গা তৈরি রাখে, সেখানে জীবজন্তু জল খেতে আসে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমাদের গাইড চলে আসতে চাইছিল, কিন্তু আমরা বললাম এখানে শুনেছি শেষশয্যায় বিষ্ণুর মূর্তি আছে, সেটা দেখব তো। তার অতদূর যাওয়ার বাসনা ছিল না, বারবার বলছে আপনাদের এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ি পথে কষ্ট হবে। কিন্তু এতদূর এসে, বিষ্ণু মূর্তি না দেখে চলে যাব, তা হয় না। আমরা জোর করাতে গাইড নিমরাজি হয়ে বলল, “ঠিক আছে, চলুন তাহলে”।
অনেকটা পাহাড়ি পথ যাওয়ার পর এক জায়গায় গাড়ি দাঁড়ালো। জায়গাটা ফোর্ট বান্ধবগড় ( Fort Bandhavgarh) নামে পরিচিত। টালা কোর এরিয়াতে সকালের সাফারি নিলে এখানে যাওয়া যায়। একমাত্র এইখানে জীপ থেকে নামা যাবে, আর কোথাও নামার অনুমতি নেই।
কিছু সিঁড়ি বেয়ে উঠে একটি আয়তাকার জলাশয়, এবং তার লম্বা দিক বরাবর একটি বেদী। তার উপর সেই বিখ্যাত বিষ্ণুমূর্তি, শেষশয্যা। চতুর্ভুজ বিষ্ণু সাতফণা বিশিষ্ট নাগরাজ শেষনাগের উপরে শয়ান, বাঁ-পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করা। বাঁদিকে উপরের হাতে শঙ্খ, নীচের হাতে পদ্ম। পদ্ম তাঁর বাম ঊরুর উপর ন্যস্ত। ডানদিকের নীচের হাতে ধৃত গদা। ডানদিকের উপরের হাতটি এবং চক্র কবে কখন ভেঙে হারিয়ে গেছে। দশম শতকে কালচুরি বংশোদ্ভূত রাজা যুবরাজদেবের মন্ত্রী গোল্লক এই মূর্তি তৈরি করিয়েছিলেন। মূর্তিটি ৩৫ ফুট লম্বা। এখানে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর তিনজনের মূর্তি আছে। সবকটি মূর্তি এবং বেদীটি একটিমাত্র বিশাল স্যান্ডস্টন পাথর কুঁদে তৈরি। বিষ্ণুর পায়ের কাছ থেকে চরণগঙ্গা নদীর উৎপত্তি। পুরাণে এই নদীর আরেক নাম বেত্রবলী গঙ্গা। সারা বছর কুলুকুলু বয়ে যাওয়া এই নদী পুরো টালাতে জল সরবরাহ করে।
পুরো বেদীটি ও মূর্তিগুলি ঘন শ্যাওলার আস্তরণে আবৃত ছিল। ২০২২ সালে মূর্তিগুলি শ্যাওলামুক্ত করা হয়, কিন্তু তার চারপাশে ঘন জঙ্গল থাকায় এই মূর্তিগুলি একটু বেমানান লাগল। এই শান্ত, নিরিবিলি, নির্জন জায়গায় অনেকক্ষণ বসে রইলাম।
সেদিন বিকেলে আর সাফারি করতে যাই নি। সন্ধ্যেবেলা চায়ের আসরে বিকেলে সাফারি করা লোকজন একগাল হেসে জানালেন বিকেলে বাঘ দেখা দিয়েছে। অনেকটা দূরে নালার ধারে শুয়ে ছিল, ওঁদের দিকে অপাঙ্গে তিনবার তাকিয়েছে, একবার হাই তুলেছে। সকলে বিগলিত। হতভাগা বাঘ, সকালে কম্বলমুড়ি দিয়ে ঘুমোতে কে তোমাকে বলেছিল?!!
পরদিন চললাম পারসিলি। বান্ধবগড় (Bandhavgarh) থেকে মানপুর, বেওহারি হয়ে যেতে হয়। বেওহারিতে একটা রেলস্টেশন আছে। মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের একটা ছোট রেস্তোরাঁও আছে, সেখানে দুপুরের খাবার পাওয়া যায় কিনা ঠিক জানি না। ওই সময় নয় নম্বর স্টেট হাইওয়ের সংস্কার চলছে, ধুলো আর খানাখন্দ’র চোটে আমাদের অবস্থা শোচনীয়। বেওহারি শহরের মধ্যে দিয়েই রাস্তা, কোন বাইপাস তখনও নেই।
ইতিমধ্যে দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গেছে। মধ্যপ্রদেশে শহরে গ্রামে সর্বত্রই দুর্গাপুজো হয়। এখানে দুর্গার আটটি হাত, তিনি সিংহের উপর বসে আছেন। পদতলে মহিষাসুর বা অন্য কোন অসুর নেই, নেই দুই ধারে লক্ষ্মী-সরস্বতী-গণেশ-কার্তিক। এখানকার প্যাণ্ডেল বাঁশ দিয়ে বাঁধা নয়, লোহার রডের খাঁচা বানিয়ে রঙিন কাপড়ে আচ্ছাদিত। বেশ ধুমধাম করে পুজো চলছে।
নয় নম্বর ছেড়ে পঞ্চান্ন নম্বর স্টেট হাইওয়েতে পড়ে প্রাণে শান্তি এল। আমরা এখন সিধি জেলায়। জেলার প্রধান শহরের নামও সিধি।মধ্যপ্রদেশের উত্তর-পূর্বপ্রান্তে সিধি জেলা হল ছত্তিশগড়ের প্রায় লাগোয়া। মনে পড়ল স্কুলে ভারতের ভৌগলিক পরিচিতিতে জেনেছিলাম পশ্চিম থেকে পূর্বে মালোয়া, বুন্দেলখণ্ড, বাঘেলখণ্ড ও ছোট নাগপুর পরপর চারটি মালভূমি আছে। মালোয়া-বুন্দেলখণ্ডের তলা দিয়ে বিন্ধ্যপর্বত আড়াআড়ি যেতে যেতে ডানদিকে তেরছা হয়ে উঠে যায় উত্তর-পূর্ব দিকে। বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণদিকে বাঘেলখণ্ড। এই জায়গার নাম ছিল দহলা, পরে চতুর্দশ শতকে বাঘেলা রাজপুতরা এখানে রাজত্ব করেন। সেইখান থেকেই জায়গার নাম বাঘেলখণ্ড (Bagelkhand)।
খুন্নিবৃত্তির আশায় এদিক ওদিক দেখছি, কোথাও কোন খাবারের দোকান চোখে পড়ছে না। বেশ কিছুটা এসে পথের ধারে একটা ছোট চায়ের দোকানে দাঁড়ালাম। জায়গাটার নাম বাগদারি। এক মহিলা দোকান সামলাতে ব্যস্ত। পরনে টুকটুকে লাল শাড়ি। চা বানানোর ফাঁকে ফাঁকে গল্প হল তাঁর সাথে। মুঠোফোনে কাকে যেন ডেকে পাঠালেন। একটু পরে বছর ছয়েকের একটা ছোট মেয়ে এল, ওঁর নাতনি। বুঝলাম আমাকে দেখতে এসেছে। যত্ন করে শালপাতার ছোট বাটিতে চারটে সিঙাড়ার ওপর একহাতা ঘুগনি ঢেলে আইসক্রীমের কাঠি দিয়ে পরিবেশন করলেন। আইসক্রীমের কাঠি দিয়ে সিঙাড়া খাওয়া অতীব কঠিন কাজ, আমি রণে ভঙ্গ দিয়ে হাত লাগালাম। ফ্রিজে রাখা ছিল প্লাস্টিকের গ্লাসে ঘন মালাই। মিষ্টি বেশি নয়, ওপরে বাদাম কুচি ছড়ানো। খিদের মুখে অমৃত।
যত্ন করে শালপাতার ছোট বাটিতে চারটে সিঙাড়ার ওপর একহাতা ঘুগনি ঢেলে আইসক্রীমের কাঠি দিয়ে পরিবেশন করলেন। আইসক্রীমের কাঠি দিয়ে সিঙাড়া খাওয়া অতীব কঠিন কাজ, আমি রণে ভঙ্গ দিয়ে হাত লাগালাম। ফ্রিজে রাখা ছিল প্লাস্টিকের গ্লাসে ঘন মালাই। মিষ্টি বেশি নয়, ওপরে বাদাম কুচি ছড়ানো। খিদের মুখে অমৃত।
হাইওয়ে দিয়ে আরো খানিকটা গিয়ে চামরাডোল নামে একটা জায়গা পড়ে, সেখান থেকে বাঁদিকে কোনাকুনি একটা রাস্তা ঢুকেছে। সেই রাস্তা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। রাস্তাটা অপূর্ব সুন্দর, দুধারে গাছ আর গাছ, মনে হয় যেন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। এক জায়গায় সরু একটা রাস্তা বাঁদিকে ঢোকে, সোজা নদীর দিকে। রাস্তা শেষ হয় মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের পারসিলি ট্যুরিস্ট লজে (Parsili)।
উঁচু পাঁচিল ঘেরা লজের কম্পাউণ্ড। লজের পিছন দিকে বানস নদী চওড়া বাঁক নিয়েছে। এই নদী শোন নদীতে মিশেছে। চওড়া সিঁড়ি ধাপে ধাপে নেমে গেছে। তারপর ঘাটে নামার জন্য কয়েক ধাপ সরু সিঁড়ি । সিঁড়ির মুখে একটা লোহার বেঁটে মত গেট, তাতে শিকল বেঁধে তালা ঝোলানো। ছোট্ট একটা ঘাট, তাতে নৌকা বাঁধা। ওপারে বালির চরে লোকজন পিকনিক করতে যায়। বালির চর পেরোলেই ঘন জঙ্গল। চারপাশে জঙ্গল, অসীম নির্জনতা… কোলাহলমুক্ত এক অন্য পৃথিবী।
বানস নদী আমাদের পশ্চিম দিকে, এখানে সূর্যাস্ত অপূর্ব সুন্দর হওয়ার কথা। সেইদিন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, শুক্লা সপ্তমীর চাঁদের আলো ম্রিয়মাণ। হাওয়া ঠাণ্ডা হয়ে উঠছে, তাই আর বেশিক্ষণ নদীর ধারে বসা গেল না।
পরদিন সকালে বানস নদীতে হাঁটতে যাব। অগভীর জল, কোথাও পাথরের ওপর বয়ে যাচ্ছে, কোথাও নদীর তলদেশে বালি। একটু খেয়াল করে না হাঁটলে হঠাৎ হাঁটু অবধি পা ঢুকে যাবে বালিতে। সঙ্গে আছে পথপ্রদর্শক। ঠাণ্ডা জলে পা দিয়ে শরীর চনমনিয়ে উঠল। খালি পায়ে যাচ্ছি পাথর সামলে। খানিকটা দূরে নদী পেরিয়ে বালিয়াড়িতে উঠলাম। নানা রকম পায়ের ছাপ, কোনটা তিন আঙুলওয়ালা জলজ পাখির, কোনটা গোসাপের, কোনটা গুবরে পোকার।
বসে আছি, এমন সময় দেখি উল্টোদিকে ঘন গাছপালার ফাঁকে এক পাল গরু চলেছে। এরা এখানে চরছে, এই জঙ্গলে? গোপালক কোথায়? উত্তর জেনে আশ্চর্য হলাম। এরা সবাই গ্রামবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়া গরু। দুধ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলে এদের প্রতিপালন করার ক্ষমতা কারো থাকে না। নিজেরাই ভালভাবে দুবেলা দুমুঠো অন্নসংস্থান করতে পারে না, গরু পোষা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এই গরুগুলো বিক্রি করাও যায় না, কারণ ক্রেতা নেই। তাই গ্রামবাসীরা গোহত্যার পাপ থেকে মুক্তি পেতে এদের তাড়িয়ে দেয়। এইভাবেই এরা দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়, কয়েকটি যায় বাঘের পেটে।
পথপ্রদর্শক একটা গাছের ছায়ায় বসিয়ে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসল। বানস নদীতে সারা বছর জল বেশি থাকে না, কিন্তু বর্ষায় এর রূপ অন্যরকম। হঠাৎ জলের তোড়ে সবকিছু ভেসে যায়। অনেক সময় হয়তো পারসিলিতে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিপাতও হয় নি, কিন্তু নদীর উৎসের কাছাকাছি প্রবল বর্ষণ হয়েছে। নদীর চরে চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজন তো জানে না। শুকনো খটখটে দিনে নদীতে হঠাৎ প্রবল জলোচ্ছ্বাসের জন্য কেউই মনে মনে তৈরি থাকে না। অনেক মানুষ সময়মতো পালাতে পারেন নি, প্রাণহানি ঘটেছে। বর্ষাকালে যাঁরা যাবেন, তাঁদের প্রতি সতর্কবাণী: ওই সময় নদীতে নেমে হাঁটতে গেলে বিপদের সম্ভাবনা আছে।
বসে আছি, এমন সময় দেখি উল্টোদিকে ঘন গাছপালার ফাঁকে এক পাল গরু চলেছে। এরা এখানে চরছে, এই জঙ্গলে? গোপালক কোথায়? উত্তর জেনে আশ্চর্য হলাম। এরা সবাই গ্রামবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়া গরু। দুধ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলে এদের প্রতিপালন করার ক্ষমতা কারো থাকে না। নিজেরাই ভালভাবে দুবেলা দুমুঠো অন্নসংস্থান করতে পারে না, গরু পোষা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এই গরুগুলো বিক্রি করাও যায় না, কারণ ক্রেতা নেই। তাই গ্রামবাসীরা গোহত্যার পাপ থেকে মুক্তি পেতে এদের তাড়িয়ে দেয়। এইভাবেই এরা দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়, কয়েকটি যায় বাঘের পেটে। দেখে খুব খারাপ লাগল।
বিশেষ তথ্য –
- সাফারি বুকিং-এর ক্ষেত্রে পুরো জীপ কিম্বা সীট বুকিং করতে হয়।
বুকিং সাইট: https://www.forest.mponline.gov.in
পরবর্তী পর্ব: ৯ই মে, ২০২৪
ছবি সৌজন্য : লেখক, Flickr, Pixahive, PublicDomainPictures.net, Wikimedia Commons
বিশাখা ঘোষ পেশাগত বাঁধনে বাঁধা অর্থনীতির সঙ্গে। কিন্তু মন চায় ঘুরে ঘুরে বেড়াতে, আর অজানা পৃথিবীকে চিনতে। তাতে নিজেকেও তো চেনা হয়। আপনাকে জানাতে তাঁর ভারী কৌতূহল। ছাত্রাবস্থা কেটেছে প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁটাকল ক্যাম্পাস আর আইএসআই-তে। এখন কল্যাণী বিশ্ববিদ্য়ালয়ে অধ্যাপনা করেন। ভালোবাসেন আড্ডা মারতে।