Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

গোলকিপার (পর্ব ৪)

ধ্রুবজ্যোতি নন্দী

জানুয়ারি ২৭, ২০২০

Episodic Novel Illustration ধারাবাহিক উপন্যাস
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে একটা হাই চেপে দেবদীপ বলল, “অরি, কাল সকালে ডাক্তার সরকারকে একবার তোর হাতটা দেখিয়ে আনব, বুঝলি।”

–  নামকরা জ্যোতিষী?

– অ্যাঁ?

– হাত দেখালেই তো হিরে-মুক্তো পরতে বলবে।

– ফাজলামি করছিস! নেক্সট উইকে দু’দুটো খেলা।

–  সব ঠিক হয়ে যাবে। শুনলে না, কুর্চি কী বলে গেল? কিস্যু হয়নি। শুধু চামড়াটাই কেটে গেছে।

–  হুঁ, ও বলল আর আমরাও বুঝে গেলাম কিস্যু হয়নি। ও নিজে কিছু জানে? না বোঝে?

– কী বলছ দেবুদা, মেয়েটা কী দারুণ! যেমন ক্যাজুয়াল, তেমনি স্মার্ট। কাল সকালে ওর বাড়িতেই আর একবার থ্যাঙ্ক ইউ বলতে যাব।

– হ্যাঁ, গিয়ে বলিস, দুষ্মন্তকে বলবে আমার ডান হাতটাও কামড়ে দিতে? জানিস, ও তোর চেয়ে বয়সে বড়?

–  বড়! দেখে তো মনে হয় না। আর তাতেই বা কী?

– দেখে কী বুঝবি, অরিত্র? অ্যাঁ, দেখে কতটুকু বোঝা যায়! ওই তো সিড়িঙ্গিপনা চেহারা…

– একটা ঝকঝকে সুন্দরী মেয়েকে তুমি কি সব সিঙাড়া-জিলিপি বানাচ্ছ! তুমি শুধু বলো তো, ওর প্রেমিক-টেমিক কিছু আছে কিনা জানো?

– খুব আছে। প্রত্যেক বছরই তো নতুন নতুন ছেলের সঙ্গে ঘুরতে দেখি।

নিচু বলে অরিত্রকে কখনও-সখনও অসুবিধেয় পড়তে দেখেছে দেবদীপ। ইচ্ছে করেই একটা গড়ানো শট নিল গোলে।

– ও, পার্মানেন্ট কেউ নেই। তাহলে আমার চান্স আছে।

শেষ মুহূর্তের স্যুইংটার জন্যে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে দেবদীপের। শটটা পোস্টের তিন হাত দূর দিয়ে চলে গেল! দেবদীপ নতুন করে বল বসাল আবার।

– আচ্ছা, তুই এইটুকু সময়ে কী পেলি বল তো মেয়েটার মধ্যে?

– দেবুদা এটা কিন্তু তোমার সাবজেক্ট না। ফুটবল নিয়ে বলো, সব শুনব। কিন্তু নিজে বিয়ে করনি, প্রেমও করনি বোধহয় কোনও দিন। এটা তোমার সাবজেক্টই না।

– তাহলে আসল কথাটা বলি? সাবজেক্ট-অবজেক্ট তুই বুঝে নে এবার। কতটা বড়লোক জানিস কুর্চিরা? ওর বাবা সুজাত গুপ্ত বিলেত ফেরত ডাক্তার। কার্ডিয়াক সার্জন। বিরাট নামডাক, বিশাল পসার। পোর্শে চড়ে হাসপাতালে ঢোকে। লেক গার্ডেন্সে বাগানওয়ালা বাড়ি, কিন্তু সে বাড়ি বন্ধ করে থাকে ডোভার রোডে দশতলা বাড়ির পেন্টহাউসে, ডুপ্লে অ্যাপার্টমেন্টে। তার মেয়েকে টার্গেট করেছিস তুই! অ্যাটাকিং থার্ডে ঢুকবি কি রে, তোকে মাঝমাঠ পেরোতে দেবে না। মালাইচাকি ঘুরিয়ে দেবে। 

– দেবুদা, আমি আদতে গোলকিপার। অন্যের ডিপ ডিফেন্সে আমি ঢুকতে যাব কেন? নিজের তেকাঠি আমি ভাল করে চিনি, ব্যস। দেখ না, কাল সকালে হাতে ওই চন্দ্রমল্লিকাটা নিয়ে চাইছি তোমার বন্ধুতা গাইতে গাইতে ওদের বাড়িতে ঢুকব। 

দেবদীপ স্তব্ধ হয়ে গেল। সামনের টেবিলে রাখা জলের গেলাস এক নিঃশ্বাসে খালি করে তিনবার কপাল চাপড়াল। অরিত্র হাসিহাসি মুখে তাকিয়ে আছে তারই দিকে। গা-পিত্তি জ্বলে গেল যেন দেবদীপের। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে বসে রইল বেশ কিছুক্ষণ। অরিত্রও গায়ে পুলওভার চাপিয়ে চুপ করে শীতের শান্তিনিকেতনে শিশির পড়া দেখছে। দেবদীপ জিজ্ঞেস করলেন, “তোর হাতে কি ব্যথা আছে?”

– দাঁত বসিয়েছে, কেটেও গেছে, চোট তো লেগেইছে। কিন্তু একজন অ্যাভারেজ ফুটবলারকে যে ব্যথা সামলাতে হয়, তাতে সত্যি বলছি দেবুদা, এটা টেরও পাচ্ছি না।

– ঠিক আছে, তাহলে তোকে একটা গল্প হলেও সত্যি শোনাই। তোর জানা দরকার বলেই বলছি, কিন্তু এ নিয়ে কারুর সঙ্গে কোনও দিন কোনও কথা বলতে যাস না। নেভার। তোকে নিজের ভাই মনে করি বলেই বলছি। ঠিক আছে?

– নিশ্চিন্তে বল। এখানকার গল্প ওখানে গিয়ে বলা আমার স্বভাবে নেই।

– বেশ। তাহলে শোন। আমার ঘুম তো জলাঞ্জলি দিয়েইছি, তোর ঘুমেরও বারোটা বাজাই।

“বছর কুড়ি আগে বাবা যখন শান্তিনিকেতনে এই বাড়িটা কিনলেন, তখনই কুর্চিদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিচয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিচয় অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। কুর্চিদের বাড়িটা তৈরি করেছিলেন ওর ঠাকুরদা। তাঁকে অবশ্য আমি খুব বেশি দেখিনি। অধ্যাপক মানুষ, এখানেই পড়াতেন, খুব নামডাকও ছিল। কিন্তু রিটায়ার করার আগেই মারা যান। কুর্চির বাবা সুজাত তখন এখানকার স্কুল থেকে পাশ করে কলকাতায় মেডিকাল কলেজে পড়ছে। ভালো ছাত্র হিসেবে খুব সুনাম। কিন্তু পরে সুজাতদা সম্পর্কে কত যে খারাপ কথা শুনেছি – নাক-উঁচু, স্বার্থপর, মানি-মাইন্ডেড, আরও কত কী! তবে সার্জন হিসেবে প্রশংসা ছাড়া নিন্দে শুনিনি কোনও দিন। কুর্চির যখন সাত-আট বছর বয়স, তখনই ওর মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। ছোট্ট ছেলের কাস্টডি নেয় ওর মা, আর সুজাতদা রেখে দেয় কুর্চিকে। ওই পর্যন্তই অবশ্য। কুর্চিকে আগাগোড়া মানুষ করেছেন সুজাতদার মা। আমরা বলি মংলিমাসি। সুজাতদা তো সারা বছরই হিল্লি-দিল্লি, ইউরোপ-আমেরিকা করে বেরিয়েছে। কলকাতায় থাকলেও সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত হাসপাতাল আর চেম্বার করেছে। আর মংলিমাসি কুর্চিকে আগলে পড়ে থেকেছেন কলকাতায়। ইস্কুল-কলেজের ছুটিতেই ফিরতে পারতেন শান্তিনিকেতনে।”  

“অরিত্র, তুই প্রশান্ত পারিজা বলে কোনও ফিল্ম এডিটরের নাম শুনেছিস? ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-ট্যাওয়ার্ড পেয়েছিল, অল্প বয়সেই খুব নাম করেছিল ওর জগতে। শুনিসনি? যাক গে। কুর্চি তো ইংরিজির ছাত্রী, ওর সঙ্গে জানি না কী করে গভীর বন্ধুত্ব হয়েছিল প্রশান্তের। কিন্তু সুজাতদা দেখা গেল এ সব ব্যাপারে বেশ কনজারভেটিভ। ফিল্ম লাইনের ছেলে প্রশান্তকে ওর একেবারেই পছন্দ হয়নি। সেটা বুঝতে না দিয়েই সুজাত কুর্চিকে জিজ্ঞেস করেছিল, তোরা বিয়ের কথাটথা ভাবছিস না?”

আগের পর্ব পড়তে হলে – https://banglalive.com/goalkeeper-an-episodic-novel-on-relationships-and-social-norms-3/

Author Dhurbajyoti Nandi

আদতে ছিলেন সাংবাদিক, তারপর কর্পোরেট কর্তা। অবসরের পর শান্তিনিকেতনে বসে লেখাজোকায় মন দিয়েছেন। বেশ কিছু প্রবন্ধ আর গল্প লিখেছেন আজকাল, অনুষ্টুপ আর হরপ্পা-য়। প্রথম উপন্যাস 'গোলকিপার' প্রকাশিত হয়েছে বাংলালাইভে। আপাতত ডুবে রয়েছেন ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে। আজকালের রবিবাসর ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর ধারাবাহিক রচনা - সিনেমাতলার বাঙালি।

Picture of ধ্রুবজ্যোতি নন্দী

ধ্রুবজ্যোতি নন্দী

আদতে ছিলেন সাংবাদিক, তারপর কর্পোরেট কর্তা। অবসরের পর শান্তিনিকেতনে বসে লেখাজোকায় মন দিয়েছেন। বেশ কিছু প্রবন্ধ আর গল্প লিখেছেন আজকাল, অনুষ্টুপ আর হরপ্পা-য়। প্রথম উপন্যাস 'গোলকিপার' প্রকাশিত হয়েছে বাংলালাইভে। আপাতত ডুবে রয়েছেন ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে। আজকালের রবিবাসর ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর ধারাবাহিক রচনা - সিনেমাতলার বাঙালি।
Picture of ধ্রুবজ্যোতি নন্দী

ধ্রুবজ্যোতি নন্দী

আদতে ছিলেন সাংবাদিক, তারপর কর্পোরেট কর্তা। অবসরের পর শান্তিনিকেতনে বসে লেখাজোকায় মন দিয়েছেন। বেশ কিছু প্রবন্ধ আর গল্প লিখেছেন আজকাল, অনুষ্টুপ আর হরপ্পা-য়। প্রথম উপন্যাস 'গোলকিপার' প্রকাশিত হয়েছে বাংলালাইভে। আপাতত ডুবে রয়েছেন ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে। আজকালের রবিবাসর ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর ধারাবাহিক রচনা - সিনেমাতলার বাঙালি।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস