চারদিকে থমথমে এক নিস্তব্ধতা। কোনও শহরের প্রাণকেন্দ্র রাত এগারোটায় এরকম নিঃঝুম হয়ে যেতে পারে, কলকাতার ছেলে অর্জুন স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। তার ওপর শহরটার নাম অ্যামস্টারডাম, ইউরোপের সবচেয়ে রঙিন শহর। আর এই রাস্তার ঠিক পাশের রাস্তা হল কালভারস্ত্রাত; ডাচরা স্ট্রিটকে স্ত্রাত বলে। এর ওপর পৃথিবীর সবকটা পোশাক বা সাজগোজের নামী ব্র্যান্ডের শোরুম আছে। বিদেশি ট্যুরিস্টদের কাছে এ রাস্তা শপিং স্ট্রিট নামে পরিচিত।
অর্জুন রাস্তার দিকে মুখ করে শুয়েছিল। এবার পাশ ফিরল। ওর এই স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের দুটো জানলাই রাস্তার দিকে খোলে। জানলার একটু তলায় যেন ঘোমটা পরে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার একটা আলো। তার আলো ভরিয়ে দিচ্ছে ওর ছোট্ট ঘরের অনেকটা। প্রচণ্ড হাওয়ার দুর্নিবার ধাক্কায় থরথর করে কাঁপছে জানালার কাঁচ। দুটোই ভাল করে লক করে দিলেও ঘরটা অসম্ভব ঠান্ডা হয়ে আছে। ঘরের হিটার কি কাজ করছে না? রেগুলেটরের নব যতটা সম্ভব ডানদিকে ঘোরানো যায়, ঘুরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শীত ভাঙছে না। গায়ের ডুভে বা লেপটা পুরো মাথার ওপর চাপিয়ে দিল অর্জুন। কিন্তু তাতে যেন কিরকম দমবন্ধ লাগছে! মনে হচ্ছে কেউ যেন মুখচাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে।
আইটি সেক্টরে চাকরির সূত্রে পৃথিবীর অনেক ক’টা বড় শহরে থাকার সৌভাগ্য অর্জুনের হয়েছে। অ্যামস্টারডামে ও এসেছে ঠিক তেরো দিন হল। কোম্পানি গেস্টহাউসে চোদ্দো দিন থাকতে দেয় ভাড়া বাড়ি খুঁজে নেওয়ার জন্যে। শনিবার বলে ও আজকেই শিফট করেছে এখানে। কালকের দিনটা জিরিয়ে নিয়ে পরশু এখান থেকেই অফিস যাওয়া শুরু করবে। বাড়িটা অফিসের খুব কাছে, হেঁটে অফিস পৌঁছে যাওয়া যায় কুড়ি মিনিটে। ঠান্ডার দেশে হাঁটাটা বছরের বেশিরভাগ সময়ই উপভোগ্য; তাই বাড়িভাড়া একটু বেশি হলেও এটাই ও ফাইনাল করে জানিয়েছে এজেন্ট সাসকিয়া-কে। সাসকিয়া মেয়েটা ভাল। অর্জুন খুব তাড়াতাড়ি ডিল ফাইনাল করায় বাড়িওয়ালাকে বলেকয়ে বিছানার নতুন ম্যাট্রেস, ডুভে আর কিছু বাসনপত্র জোগাড় করে দিয়েছে। ওগুলো কিনতে হলে বেশ কিছু ইউরো খসত, আর এক বছর বাদে দেশে ফেরার সময় ফেলে দিতে হত।
আরও পড়ুন: তুষ্টি ভট্টাচার্যের গল্প: এক্সপ্রেস
এদিকে ঠান্ডা যেন বেড়েই চলেছে ঘরে। ফোনে দেখল বাইরের টেম্পারেচার মাইনাস চার। বরফ পড়তে শুরু করেছে অল্পসল্প। একটা সোয়েটার পরে নিল, পাজামার ওপর পরল জিনস। একটা স্কার্ফ দিয়ে কান মাথা ঢেকে নিল। কিন্তু শুয়েও স্বস্তি নেই। জানলার দিক থেকে হিমেল হাওয়া এসেই যাচ্ছে। অথচ ও নিজে ভাল করে বন্ধ করেছে সব।
এখন দেশে প্রায় ভোর হতে চলেছে। সাড়ে পাঁচটায় বাবা মর্নিংওয়কে যাবে। মা চান করে একঘণ্টা পুজো করতে বসবে। ওর স্ত্রী তুলি উঠে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ঘুম থেকে ঠেলে ঠেলে তুলবে মাম্মামকে। মাম্মাম ওদের একমাত্র মেয়ে, ভালোনাম অতুল্যা। সাত বছরের মেয়েকে রোজ সকাল ছটা কুড়িতে স্কুলবাস ধরতে হয়। স্কুলবাসে ওঠার আগে তুলি আর মাম্মামের রুটিনে আবার পাড়ার কয়েকটা নেড়িকে বিস্কুট খাওয়ানোও আছে। তাই কিছুটা হলেও আগে রেডি হতে হয়। অর্জুন একদম পছন্দ করে না কুকুর; বিশেষ করে অসহ্য লাগে যখন পাড়ার নেড়িগুলো সারারাত ঘেউঘেউ করে। কিন্তু আজ এই অদ্ভুত রাতে ওর মনে হল – রাস্তায় দু’একটা কুকুর ডাকলে খারাপ হত না…
হঠাৎ একটা আওয়াজ হল। কাঠে আলতো ধাক্কা দেওয়ার মতো। অর্জুন যেদিক ফিরে শুয়ে, সেদিক থেকে; মানে বাড়ির ভেতরের দিক থেকে। কিন্তু ও যদ্দূর জানে, এই চারতলা বাড়ির আটটা ফ্ল্যাটের সাতটাই এখন ফাঁকা। ও একাই আছে চারতলায়, রাস্তার দিকের ফ্ল্যাটে। বাড়ির মেঝে কাঠের। একটাই সিঁড়ি। সরু আর অসম্ভব খাড়া! মেনগেট থেকে ঘুরে ঘুরে উঠে গেছে চারতলায়। এতটাই খাড়া যে ওর দুটো ভারী সুটকেস আর দুটো ব্যাগ টেনে তোলবার পর আধঘণ্টা শুয়েছিল বিছানায়। সাসকিয়া অবশ্য বলেছিল গতকাল চলে এলে সুটকেস তুলে দেওয়ার জন্যে বাড়িওয়ালা সাহায্য করত। প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটের জানালার সামনে একটা করে পুলি বা কপিকল আছে। তাতে দড়ি লাগিয়ে নিচ থেকে ভারী জিনিস তুলে ফেলা যায় বেশ সহজে। অর্জুনের বর্ধমানের গ্রামের বাড়িতে পাতকুয়ো থেকে এরকম ভাবেই দড়িতে বালতি ঝুলিয়ে জল তোলা হত।

সিঁড়ির খাড়াই আর চারতলা চড়বার ঝক্কিটা ও আন্ডারএস্টিমেট করেছিল। যাইহোক, আলতো ধাক্কার শব্দটা থেমে গেল। সব ফ্ল্যাটের লোকের কাছেই চাবি আছে মেনগেটের। অর্জুন এখানে এসেছে সন্ধ্যে ছ’টায়। তারপর থেকে দু’বার নিচে নেমেছে। একবার সামনের সুপারস্টোর ‘অলডি’ থেকে কিছু খাবার আনতে। আর পরেরবার নেমেছিল কলিংবেল বেজেছিল বলে। মেনগেটের সামনে কেউ থাকলে ওপরের জানলা দিয়ে মুখ বাড়ালেই দেখা যায়। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না। নেমে এসেও দেখে রাস্তাটা শুনশান। অবশ্য এটাকে রাস্তা না বলে গলি বলাই ভাল। কোনও গাড়ি যাতে না ঢুকতে পারে, তাই গলির মুখে দুটো লোহার থাম। যাদের মধ্যে দিয়ে খালি ঢোকে মিউনিসিপ্যালিটির ময়লা তোলার ব্যাটারিচালিত ছোট গাড়ি।
***
এই বাড়িটার বয়স নাকি দুশো বছরেরও বেশি। দু’নম্বর ভূতবগস্ত্রাত। মাম্মামকে কাল এই বাড়ির ঠিকানা বলায় খিলখিল করে হেসে উঠেছিল;
“ধ্যাৎ, তুমি মিছিমিছি বলছ…এরকম নাম হয় নাকি রাস্তার!”
“না মাম্মাম, সত্যি। বেলজিয়ামের অ্যাণ্টওয়র্প শহরে একটা রাস্তার নাম প্রেতস্ত্রাত।”
মাম্মামের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল।
“বাবা, তোমার ওখানে কি ভূতেরা থাকে?”
“জানি না, কাল গেলে হয়তো দেখতে পাব। শুনেছি ওখানে সারারাত ভূতেরা বকবক করে, তাই এমন নাম।”
“দেখলে একটা ছবি তুলে নিও তো? আমার ক্লাসের অভিরূপ বলে, ওর বাবা নাকি পার্ক স্ট্রিট সেমেটারিতে ভূতের ছবি তুলেছে।”
“বেশ তুলব।”
“তোমার পেছনে ওটা কিসের স্ট্যাচু, বাবা?”
“কোনটা?”
“ওই যে ওয়াল ক্যাবিনেটে রাখা আছে? একটা বাচ্চা ছেলে দেওয়ালে হাত দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে আছে…”
“ওহ্, ওটা তো হান্স। দেওয়াল নয়। ওটা হল ডাইক। এখানে বাঁধকে ডাইক বলে। হান্সের গল্পটা খুব ফেমাস।”
“কী করেছিল ও?”
“বলছি, কিন্তু তুমি ডিনার করবে তো এখন?”
একটু দূর থেকে তুলি মেয়ের হয়ে উত্তর দিল,
“তুমি গল্পটা বলে দাও, নাহলে আজ ঘুমোতে দেবে না আমায়। আর কাল তো শনিবার, স্কুল নেই।”
“আচ্ছা। তাহলে শোন মাম্মাম…”
“পুরোটা বলবে কিন্তু।”
“একদম। আদ্ধেক বললে হান্সের ভূত আমার ঘাড়ে চাপবে। আচ্ছা নেদারল্যান্ডসের মানে কি বলেছি তোমায়?”
“না।”
“নেদার মানে হচ্ছে নিচু। তাই নেদারল্যান্ডস মানে নিচু জমি। এই দেশটার বেশিরভাগ সমুদ্রের জলের লেভেলের তলায়। তাই এরা সমুদ্রের ধারে অনেক অনেক বছর ধরে মাটি আর পাথর দিয়ে বাঁধ বা ডাইক তৈরি করে আসছে। এই অ্যামস্টারডাম থেকে একটু দূরে হার্লেম বলে একটা ছোট্ট শহর আছে। তার একধারে নর্থ সি। আজ থেকে দুশো বছর আগে হান্স ব্রিনকার বলে তোমার বয়সী একটা বাচ্চা ছেলে সেখানে থাকত। ওরা খুব গরিব ছিল। হার্লেমের কিছু খাল ওই নর্থ সি-তে গিয়ে মিশত। খালগুলোর মুখে অনেকগুলো গেট ছিল। সেগুলোকে বলে স্লুইসগেট। সেগুলো খুললে তবেই জল ঢুকতে, বেরোতে পারে। সেই স্লুইসগেটগুলো খোলা-বন্ধ আর ডাইকের রক্ষণাবেক্ষণ করতেন হান্সের বাবা।”
“একদিন বিকেলে হান্সের মা একটা কেক বানালেন। তার কিছুটা ওরই পরিচিত একজন অন্ধ লোককে দিতে গেল হান্স। বেশ দূরে তার বাড়ি। ডাইক পেরিয়ে যেতে হয়। তিনি তো কেক পেয়ে খুব খুশি। হান্সকে অনেক ধন্যবাদ দিলেন। তারপর হান্স বাড়ির দিকে রওনা দিল। গাছে গাছে পাখিরা খেলছে। ডাইকের ওপর ঘাস আর ছোট ছোট ফুলগাছ। প্রজাপতিদের পেছনে দৌড়তে দৌড়তে ও খেয়াল করেনি যে বেশ দেরি হয়ে গেছে। এদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া। ও পা চালিয়ে চলল। হঠাৎ এক জায়গায় শুনতে পেল জলের কুলকুল শব্দ। ওর কেমন সন্দেহ হল। অন্ধকার হলেও ঠাহর করতে পারল যে ডাইকের দেওয়ালে একটা ছোট্ট ফুটো হয়েছে। তাই দিয়ে সমুদ্রের জল ঢুকছে একটু একটু করে।”
অ্যামস্টারডামে ও এসেছে ঠিক তেরো দিন হল। কোম্পানি গেস্টহাউসে চোদ্দো দিন থাকতে দেয় ভাড়া বাড়ি খুঁজে নেওয়ার জন্যে। শনিবার বলে ও আজকেই শিফট করেছে এখানে। কালকের দিনটা জিরিয়ে নিয়ে পরশু এখান থেকেই অফিস যাওয়া শুরু করবে। বাড়িটা অফিসের খুব কাছে, হেঁটে অফিস পৌঁছে যাওয়া যায় কুড়ি মিনিটে। ঠান্ডার দেশে হাঁটাটা বছরের বেশিরভাগ সময়ই উপভোগ্য; তাই বাড়িভাড়া একটু বেশি হলেও এটাই ও ফাইনাল করে জানিয়েছে এজেন্ট সাসকিয়া-কে।
“সর্বনাশ!!! ওদের পাড়া তো এখনও অনেকটা দূর। খবর দিতে গেলে জোয়ার বাড়বে, একটু বাদে জলের চাপে এই ফুটোটার চারপাশে ফাটল ধরবে। তারপর ডাইক ভেঙে হূ হূ করে জল ঢুকে পুরো শহরটাকে ভাসিয়ে দেবে। ডাইকের কাছে গিয়ে ও ফুটোটা দেখল। এখনও ওটা ছোট আছে। নিজের একটা আঙুল ও ঢুকিয়ে দিল তাতে। একদম যেন মাপে মাপ। জল আর ঢুকতে পারছে না। খুশি হল ও। মিনিট গড়িয়ে ঘণ্টা গড়াল। ও একইভাবে হাঁটুগেড়ে বসে থাকল। হাতটা যাতে জোর পায়, রক্ত চলাচল যাতে বন্ধ না হয়, তাই অন্য হাত দিয়ে ডলতে লাগল ওর কনুই থেকে কব্জি। এদিকে হান্সের বাবা-মা তো ভেবে অস্থির। অন্ধকারে চারদিক খুঁজছে। কিন্তু কোথাও হান্সকে পাচ্ছে না।”
“ওদিকে আস্তে আস্তে তো হান্সের আঙুল অবশ হয়ে আসছে কনকনে জলের তোড়ে। তবুও সারারাত ওভাবেই বসে থাকল হান্স, দাঁতে দাঁত চেপে। ভোর যখন হবে, একজন লোক কাজে যাওয়ার সময় ওকে দেখতে পেল। ততক্ষণে বেচারা প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
“বেঁচে ছিল হান্স?”
“হ্যাঁ। তবে এটা নাকি সত্যি ঘটনা নয়। একজন আমেরিকান লেখক ১৮৬৫ সালে এই গল্পটা লিখেছিলেন।”
“সত্যিই হবে, বাবা। আমার মনে হয়। একবার স্ট্যাচুটা নিয়ে আসবে ফোনের সামনে?”
অর্জুন উঠে নিয়ে এল পাথরের তৈরি মূর্তিটা। ডাইকের দেওয়ালে আঙুল ঢুকিয়ে হাঁটু মুড়ে বসা হান্স।
“তুমি একে নিয়ে যেও তোমার ফ্ল্যাটে। ও তোমাকে ভূতদের হাত থেকে বাঁচাবে।”
হেসে ফেলল অর্জুন।
“নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না মাম্মাম, এটা এই গেস্ট হাউসের…”
আর কথা এগোয়নি সেদিন।
***
অর্জুনের ঘরে কনকনে ভাবটা ক্রমেই বাড়ছে। কমবার কোনও লক্ষণই নেই। ব্যাপারটা কী? জানালা দিয়ে অর্জুন দেখল সামনের কার্নিশে বরফের একফালি সাদা আস্তরণ। হঠাৎ মনে একটা সন্দেহ জাগল। ডুভের তলা থেকে বেরিয়ে জানলার দিকে এগিয়ে গেল অর্জুন। ঠিক ধরেছে। জানলার তলার কাঠে একটা ফুটো। বেশ বড়সড়। তার সামনেই ঘরের একমাত্র টেবিল আর চেয়ার রাখা বলে এতক্ষণ দেখতে পায়নি। ওগুলো থাকায় ঠান্ডা হাওয়া সরাসরি বিছানায় ওর কাছে পৌঁছচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু ঘরটা ক্রমেই কনকনে হয়ে আসছে।

অর্জুন এদিক সেদিক খুঁজতে লাগল, যদি কিছু ওখানে গুঁজে দেওয়া যায়। স্যুটকেস ভাল করে খোলাও হয়নি। এখন ইচ্ছেও করছে না। যে ব্যাগটা খুলেছে, সেখানেও কিছু পেল না গোঁজবার মতন। হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগল ঘরে যদি কিছু থাকে। একটা পেন বা পেন্সিলও ঢুকবে না ওই সরু ফুটোতে। নিচু হয়ে খাটের তলায় দেখতে গিয়ে চমকে উঠল অর্জুন। আরে! এটা এখানে কী করে এল? এ তো সেই হান্সের হাঁটুমোড়া মূর্তিটা! অবিকল গেস্ট হাউসেরটারই মতন। যাইহোক, হয়তো হবে এটা বাড়িওয়ালার।
অর্জুন মূর্তিটা হাতে তুলে নিল। বেশ দেখতে জিনিসটা। এটায় আবার হান্সের মূর্তিটাকে ডাইক থেকে আলাদা করা যায়। দেখতে দেখতে অর্জুনের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে ডাইক থেকে হান্সকে আলগা করে খুলে নিয়ে চলে এল দেয়ালের ফুটোর কাছে। অবাক কাণ্ড… মূর্তিটার একটা আঙুল একদম মাপমতো ঢুকে গেল কাঠের ফুটোতে। টেবিলটা জানালার পাশে আর একটু সরিয়ে তার ওপর হান্সকে বসিয়ে দিল অর্জুন। একদম ঠিকঠাক উচ্চতায় টেবিলটা। একফোঁটা উঁচুনিচু হল না। কাঠের দেয়ালের ফুটোয় আঙুল গলিয়ে হাঁটু মুড়ে আধবসা হয়ে রইল হান্স।
আস্তে আস্তে গরম হতে শুরু করল ঘরের ভেতর। স্কার্ফ, সোয়েটার, জিনস ছেড়ে গেঞ্জি, পাজামা পরে ডুভের তলায় বাকি রাতটুকু শান্তির ঘুম দিল অর্জুন। সকালে উঠে জানালার দিকে চোখ গেল। হান্স নেই। মানে মূর্তিটা বেমালুম হাওয়া। খাটের তলায় উঁকি দিল অর্জুন। না, নেই ডাইকটাও। জানালার কাঠে কিন্তু ফুটোটা আছে। ঠিক যেরকম কাল রাতে দেখেছিল।
*ছবি সৌজন্য: Getty Images, Tripadvisor, Raptisrarebooks
প্রান্তিক বিশ্বাসের জন্ম কলকাতায়। স্কুলে থাকতে লেখা শুরু। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ পর্যন্ত কালান্তর সংবাদপত্র, সময় ও গ্রন্থন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় গল্প, কবিতা ও রম্যরচনা। তারপর ২০০০ সাল থেকে দীর্ঘ পনেরো বছরের বিরতি লেখায়। ফিরে আসা ছোটগল্প, অণুগল্প, নিবন্ধ ও উপন্যাসে। তথ্যপ্রযুক্তির কর্মী, বর্তমানে কর্মরত কলকাতায়। লেখা ছাড়া ঘুরতে, ছবি তুলতে আর আঁকতে ভালোবাসেন।
4 Responses
তোমার এ ছোট গল্প পড়ে ভালো লাগল, প্রান্তিক। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। নতুন নতুন গল্প পাব। এই আশায় রইলাম।
তোমাদের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলেছি। আশীর্বাদ কোরো দাদা ❤️🙏
Khub bhalo laglo, Prantik.
খুব আনন্দ পেলাম শরদ দা! আপনাদের আশীর্বাদের মর্যাদা রাখতে পারি যেন ❤️🙏