বাচ্চার খাওয়া, ঘুম, পড়াশোনা নিয়ে আপনারা সদাই ব্যস্ত। নিয়ম করে সবজি, ফল, মাছ, ডিম খাওয়ান। ন’টার মধ্যে না ঘুমলে রীতিমতো টেনশনে ভোগেন। ‘কাল সকালে উঠে স্কুলে যেতে পারবে তো’, জাতীয় প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। আর পড়াশোনার কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে বাচ্চা কোন ধরনের পানীয় খাচ্ছে, তার দিকে নজর দেন কি? দু’বছরের বাচ্চার হাতে যদি ফলের রসের টেট্রা প্যাক ধরিয়ে দেন, দেখবেন তা নিমেষে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আদৌ কি তা শরীরের জন্য ভাল? আবার সারাদিন বাচ্চাকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য, চনমনে রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর পানীয় সরবরাহ করা একান্ত জরুরি। তা হলে কী খাওয়াবেন বাচ্চাকে? আসুন দেখে নিই।
জল-আপনি কি জলের বোতল নিয়ে বাচ্চার পিছন পিছন ঘোরেন? জল খাওয়ানোর জন্য সাধ্য সাধনা করেন? তা হলে বলব বেশ করেন। আমাদের শরীর যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারে, তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল প্রয়োজন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই কথাটা খাটে। ডিহাইড্রেশনের প্রথম ইঙ্গিত খিটখিটে মেজাজ। চিন্তা করা ক্ষমতাও সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে। তাই সারাদিনে নিজেরাও জল খান আর সন্তানকেও খাওয়ান। গবেষণা করে দেখা গেছে জলের চেয়ে ভাল পানীয় আর কিছুই নেই। অনেক বাচ্চাই জল খেতে পছন্দ করে না। সেক্ষেত্রে জলে টাটকা ফল দিয়ে রাখুন। স্বাদ বদলালে বাচ্চাও জল খেতে আপত্তি করবে না।
নারকেলের দুধ-যে সব বাচ্চারা দুধ খেতে চায় না, তাদের নারকেলের দুধ দিয়ে দেখতে পারেন। ঘন তো বটেই সঙ্গে খেতেও ভাল। নারকেলে প্রচুর ভাল ফ্যাট থাকে যা বাড়ন্ত বাচ্চাদের জন্য উপযোগী। নিয়মিত নারকেলের দুধ খেলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও বাড়ে।
আমন্ড মিল্ক- প্রোটিন, ভিটামন ই, ম্যাগনেশিয়ামে ভরপুর বাদাম দুধ। ক্যালশিয়াম আর ভিটামিন ডি-ও আছে এই দুধে। এই প্রতিটি পরিপোষক পদার্থ বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী। আমন্ড মিল্কের পুষ্টিগুণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার জায়গাই নেই। পাশাপাশি এতে ভাল ফ্যাটও আছে। ফলে পেট অনেকক্ষণ ভর্তি থাকে। স্বাদেও কোনও অংশে কম নয়। কর্নফ্লেক্স বা বাচ্চার পছন্দের সিরিয়ালের সঙ্গে দিয়ে খাওয়াতে পারেন আবার শুধু খেতেও দারুণ লাগে।
ক্যফেইনমুক্ত চা-বাচ্চাদের দেখবেন চা-এর প্রতি একটা আকর্ষণ থাকে। প্রায় রোজই তারা পুতুলদের নিয়ে চা-এর আসর বসায়। কখনও আবার আপনাকে মিছিমিছি বানিয়ে দেয়। তবে জানলে অবাক হবেন কিছু ভেষজ চা কিন্তু সত্যিই বাচ্চাদের জন্য উপকারী। শুধু খেয়াল রাখবেন, যে চা বাচ্চাকে দিচ্ছেন তাতে যেন ক্যাফেইন না থাকে। পেট ব্যথায় হালকা আদা চা কিংবা গলা ব্যথা হলে পেপারমিন্ট টি দিয়ে দেখতে পারেন। সুফল পাবেন।
এ তো গেল কোন কোন পানীয় বাচ্চাকে দিতে পারেন। এ বার বলব কোনগুলো একেবারেই না দেওয়া ভাল। তালিকায় সবার প্রথমেই নাম আসবে সফ্টড্রিংকের। এই ধরনের পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে কেমিক্যাল, ক্যাফেইন আর চিনি থাকে। এগুলো দাঁতেরও ক্ষতি করে। ফলে মাঝে মধ্যে দিলেও প্রতি দিনের অভ্যাসে পরিণত করবেন না। এর পরেই আসে এনার্জি ড্রিংকের কথা। বাচ্চা যতই বায়না করুক না কেন, সরাসরি না বলে দেবেন। এনার্জি ড্রিংক থেকে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। হৃদস্পন্দন, রক্ত চাপ বেড়ে যেতে পারে। অনেকের আবার ঘুমের সমস্যাও দেখা যায়। তার চেয়ে অন্য ভাবে বাচ্চার কর্মশক্তি বাড়াবার কথা ভাবুন।