সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদের প্রেক্ষিতে বুধবার ভারতের উদ্দেশ্যে কড়া কূটনৈতিক বার্তা দিয়েছিল পাকিস্তান। তার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ইসলামাবাদকে পাল্টা জবাব দিল নায়াদিল্লি।
বুধবার ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকে বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছিল পাকিস্তান। ইমরান খানের মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফওয়াদ চৌধুরি পাকিস্তানের সংসদে দাঁড়িয়ে ভারতের সঙ্গে যাবতীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করার কথা বলেছিলেন। বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে কার্যত ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন ফওয়াদ। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নেতারাও মন্ত্রীর প্রস্তাবে সায় দেন। এর পর কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন ইমরান। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ করা হবে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলি খতিয়ে দেখা হবে। রাষ্ট্রপূঞ্জে ভারতের বিরুদ্ধেে সরব হবে ইসলামাবাদ।
ইমরান খানের সরকার জানায়, আগামী ১৪ অগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরের জনগণের পাশে থাকার বার্তা দেবে ইসলামাবাদ। ১৫ অগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালিত হবে কালা দিবস হিসাবে। পাকিস্তান সিদ্ধান্ত নেয়, নয়াদিল্লির পাক হাই কমিশনারকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। পরবর্তী হাই কমিশনার হিসাবে যাঁর যাওয়ার কথা ছিল, সেই মইন-উল-হককেও আপাতত ভারতে পাঠানো হবে না। পাশাপাশি, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব উড়ানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা আংশিক ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ।
পড়শি দেশের এমন পদক্ষেপের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এ দিন সকালে পাল্টা বিবৃতি দিল নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের বিবৃতি কম আগ্রাসী। এ দিন কার্যত নরমে-গরমে ইসলামাবাদকে বার্তা দিয়েছে ভারত। এক দিকে যেমন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রদ না করার আবেদন জানিয়েছে নয়াদিল্লি, অন্য দিকে সীমান্ত-সন্ত্রাস ইস্যুতেে ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে পাকিস্তানকে।
এ দিন ভারত জানিয়েছে, পাকিস্তান ভারতের অভ্যন্তরীন বিষয়ে অনর্থক এবং অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ করছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ ভাবে ভারতের অভ্যন্তরীন বিষয়, এনিয়ে অন্য কোনও দেশের কিছু বলার থাকতে পারে না। পাকিস্তান যেভাবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ করেছে তার নিন্দা করে নয়াদিল্লির আর্জি, ইসলামাবাদ বিষয়টি পুর্নবিবেচনা করুক। ভারতের অভিযোগ, কাশ্মীরের সমগ্রিক উন্নয়নে নয়াদিল্লি যে পদক্ষেপই করুক বা কেন, ইসলামাবাদ তার বিরোধিতা করে। বিশ্বের দরবারে ভারতকে বিপজ্জনক শক্তি হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য সীমান্তবর্তী এলাকায় ইসলামাবাদের মদতে যে সন্ত্রাস চলছে, তাকে আড়াল করা।
পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গে পুলওয়ামা হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কার্যত থমকে গিয়েছিল। সে সময় পাকিস্তানের পণ্যের উপর ২০০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল দিল্লি। ভারতীয় কূটনীতিকদের অবশ্য দাবি, বাণিজ্য বন্ধের জেরে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে পাকিস্তান। কারণ ভারত পাকিস্তানের পণ্যের উপর একেবারেই নির্ভরশীল নয়।
ভারতের এ দিনের বিবৃতির সংযত সুরের নেপথ্যে আর্ন্তজাতিক রাজনীতির বিভিন্ন সমীকরণ দেখছেন কূটনীতিবিদদের একাংশ। কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভার অধিবেশন। সেখানে কাশ্মীর প্রসঙ্গে ফের সুর চড়াতে পারে ইসলামাবাদ। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সাহায্যের বিনিময়ে কাশ্মীর ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সমর্থন পাওয়ার আশা করছে ইসলামাবাদ। তাই এখনই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি চাইছে না নয়াদিল্লি। তবে পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের মন্তব্যও মেনে নেবে না ভারত।