(Upendrakishore Ray Chowdhury)
বহুকাল পূর্বে, একদিন জ্যৈষ্ঠ মাসের সকাল বেলায় এই আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়াছিল।
জমদগ্নি মুনি তীর ছুঁড়িতেছেন, স্ত্রী রেণুকা তাহা কুড়াইয়া আনিতেছেন। মুনি ভাবিতেছেন, এ খেলায় বড়ই আমোদ; তাই আজ আর তাঁহার অন্য কাজের কথা মনে নাই। তিনি ক্রমাগত খালি কারের উপর তীরই ছুঁড়িতেছেন। এদিকে বেলা যে ঢের হইয়াছে, রোদে যে তালু ফাটিয়া গেল, খাটি যে তাতিয়া আগুন, সে কথা কে ভাবে? মুনির আজ তীর ছুঁড়িয়া বড়ই ভাল লাগিয়াছে। (Upendrakishore Ray Chowdhury)
বেচারী রেণুকা একেবারে সারা হইয়া গেলেন, তাঁহার মাথা ঝিম্ ঝিম্ করিতেছে, পায় ফোস্কা ইয়াছে, প্রাণ ওষ্ঠাগত! কিন্তু মুনির সেদিকে দৃষ্টি নাই। তাঁহার আজ বড়ই আমোদ হইয়াছে, তাই জন পালি তীরই ছুঁড়িতেছেন, আর বলিতেছেন, “রেণুকা, শীঘ্র আন! দেরি করিতেছ কেন?” (Upendrakishore Ray Chowdhury)
কিন্তু রেণুকা আর পারেন না। একটু ছায়ায় দাঁড়াইয়া বিশ্রাম না করিলে এখনই হয়ত তাঁহার পাণ যাইবে। তাই তিনি মুহূর্ত কালের জন্য একটি গাছের তলায় দাঁড়াইলেন, তাহার পরের মুহূর্তেই ছুটিয়া মুনির কাছে উপস্থিত হইলেন।
ইহাতেই মুনির রাগের সীমা নাই। তিনি ভ্রূকুটি করিয়া বলিলেন, “এত বিলম্ব হইল কেন?”
রেণুকা ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে, নিতান্ত কষ্টের সহিত বলিলেন, “বড় রোদ! মাথা জ্বলিয়া গেল।
একড় গাছতলায় দাঁড়াইয়াছিলাম!”
তখন মুনির চৈতন্য হইল। তিনি দেখিলেন, সত্য সত্যই রেণুকা রৌদ্রে নিতান্ত কাতর হইয়াছেন।
বেচারী রেণুকা একেবারে সারা হইয়া গেলেন, তাঁহার মাথা ঝিম্ ঝিম্ করিতেছে, পায় ফোস্কা ইয়াছে, প্রাণ ওষ্ঠাগত!
তাঁহার শরীর কাঁপিতেছে, তিনি আর দাঁড়াইতে পারেন না। মুনি একবার রেণুকার সেই অবস্থার দিকে, প্রাণ একবার সূর্যের দিকে চাহিয়া দেখিলেন, তারপর দুই চক্ষু লাল করিয়া বিষম ভ্রূকুটির সহিত
আর এক উঠাইয়া সূর্যকে বলিলেন, “বটে, তোমার এতই আস্পর্ধা! তুমি রেণুকাকে কষ্ট দিয়াছ।
দাঁড়াও। তোমাকে দেখাইতেছি।”
সূর্য ত তখন “বাপ্ রে! মারিল রে!” বলিয়া কাঁদিয়া অস্থির! তিনি তাড়াতাড়ি এক ব্রাহ্মণের বেশে জমদগ্নির নিকট আসিয়া জোড়হাতে বলিলেন, “ভগবান! সূর্য আপনার নিকট কি দোষ করিল? তার তেজ ভিন্ন ফল শস্য কিছুই থাকিতে পারে না, তাই এ সময়ে তাঁহার একটু গরম না হইলে ঢালবে কেন? তাহার জন্য কি তাহাকে মারিতে হয়? আর তাহাকে মারিবেনই বা কিরূপে? সে যে আকাশে ছুটাছুটি করিয়া বেড়ায়!”
(Upendrakishore Ray Chowdhury)
তিনি তাড়াতাড়ি এক ব্রাহ্মণের বেশে জমদগ্নির নিকট আসিয়া জোড়হাতে বলিলেন, “ভগবান! সূর্য আপনার নিকট কি দোষ করিল?
জমদগ্নি ভ্রূকুটি করিয়া বলিলেন, “যাও বাপু! তোমার চালাকি করিতে হইবে না। আমি চের পাইয়াছি, তুমি কে। আমি বেশ জানি, দুপুর বেলায় মাথার উপরে আসিয়া তোমাকে একটু দাঁড়াইতে হয়। সে সময় আমি তীর মারিয়া তোমাকে কানা করিব।”
তখন সূর্য অতিশয় ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “দোহাই মুনিঠাকুর! আমার ঘটি এ ক্ষমা করুন।” ইয়াছে, আমাকে
সে কালের মুনিরা চট করিয়াই ক্ষেপিয়া যাইতেন, আবার হাত জোড় করিলেই ঠাণ্ডা হইতেন! সূর্যের কথায় জমদগ্নি মুনি তুষ্ট হইয়া হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “আচ্ছা ঠাকুর, সে হইবে এখন। কিন্তু আমার পত্নী যাহাতে তোমার তেজে কষ্ট না পায়, আগে তাহার একটা উপায় কর।”
এ কথায় সূর্য তাঁহার চাদরের ভিতর হইতে একটি ছাতা আর এক জোড়া জুতা বাহির করিয়া জমদগ্নিকে দিলেন। ইহার পূর্বে আর এমন আশ্চর্য জিনিস কেহ কখনো দেখে নাই। মুনিঠাকুর তাহা হাতে লইয়া অপার বিস্ময় এবং কৌতূহলের সহিত অনেকবার উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ-সকল অস্ত্র দিয়া কি করিতে হয়?”
(Upendrakishore Ray Chowdhury)
সূর্য বলিলেন, “এই জিনিসটির নাম ছাতা; ইহাকে এমনি করিয়া মাথায় ধরিতে হইবে। আর, এই দুখানির নাম জুতা; ইহাকে এমনি করিয়া পায়ে পরিতে হইবে।” এই বলিয়া সূর্য চলিয়া গেলেন। রেণুকাও তখন হইতে রৌদ্রের কষ্ট হইতে রক্ষা পাইলেন। সেই অবধি লোকে জুতা পরিতে আর ছাতা মাথায় দিতে শিখিল।
এ কথায় সূর্য তাঁহার চাদরের ভিতর হইতে একটি ছাতা আর এক জোড়া জুতা বাহির করিয়া জমদগ্নিকে দিলেন। ইহার পূর্বে আর এমন আশ্চর্য জিনিস কেহ কখনো দেখে নাই। মুনিঠাকুর তাহা হাতে লইয়া অপার বিস্ময় এবং কৌতূহলের সহিত অনেকবার উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ-সকল অস্ত্র দিয়া কি করিতে হয়?”
(Upendrakishore Ray Chowdhury)
সে কালের মুনিরা চট করিয়াই ক্ষেপিয়া যাইতেন, আবার হাত জোড় করিলেই ঠাণ্ডা হইতেন!
সূর্য বলিলেন, “এই জিনিসটির নাম ছাতা; ইহাকে এমনি করিয়া মাথায় ধরিতে হইবে। আর, এই দুখানির নাম জুতা; ইহাকে এমনি করিয়া পায়ে পরিতে হইবে।” এই বলিয়া সূর্য চলিয়া গেলেন। রেণুকাও তখন হইতে রৌদ্রের কষ্ট হইতে রক্ষা পাইলেন। সেই অবধি লোকে জুতা পরিতে আর ছাতা মাথায় দিতে শিখিল।
এ কথায় সূর্য তাঁহার চাদরের ভিতর হইতে একটি ছাতা আর এক জোড়া জুতা বাহির করিয়া জমদগ্নিকে দিলেন। ইহার পূর্বে আর এমন আশ্চর্য জিনিস কেহ কখনো দেখে নাই। মুনিঠাকুর তাহা হাতে লইয়া অপার বিস্ময় এবং কৌতূহলের সহিত অনেকবার উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ-সকল অস্ত্র দিয়া কি করিতে হয়?”
(Upendrakishore Ray Chowdhury)
সূর্য বলিলেন, “এই জিনিসটির নাম ছাতা; ইহাকে এমনি করিয়া মাথায় ধরিতে হইবে। আর, এই দুখানির নাম জুতা; ইহাকে এমনি করিয়া পায়ে পরিতে হইবে।” এই বলিয়া সূর্য চলিয়া গেলেন। রেণুকাও তখন হইতে রৌদ্রের কষ্ট হইতে রক্ষা পাইলেন। সেই অবধি লোকে জুতা পরিতে আর ছাতা মাথায় দিতে শিখিল।
(Upendrakishore Ray Chowdhury)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।