Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Lata Mangeshkar as playback singer
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

লতা মঙ্গেশকর বরাবর বিশ্বাস করতেন, গায়ক-গায়িকার পারস্পরিক সামঞ্জস্য না হলে ডুয়েট কোনওভাবেই জমে না। তাই কিশোর, রফি, মান্না, হেমন্ত, মুকেশ যাঁদের সঙ্গেই তিনি গান গেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেই একাধিক গান গাইতে গাইতে তৈরি করে নিয়েছিলেন সুন্দর বোঝাপড়া, তালমেল। সেই বোঝাপড়াই ছাপ ফেলেছে গানের রেকর্ডিংয়ে, ‘ফাইনাল টেক’-এর সময়ে। দীনদয়াল শর্মা পরিচালিত হিন্দি ফিচার ‘ত্যাগ’-এ এমনই দুটি মনমাতানো ডুয়েট আমরা পেয়েছিলাম কিশোরকুমার ও লতা মঙ্গেশকরের অসাধারণ পরিবেশনায়– ‘(আ) মন পুকারে রে’ এবং ‘হাম তুম তুম হাম’। লিখেছিলেন, বিশিষ্ট গীতিকার আনন্দ বক্সী। সুর দিয়েছিলেন শচীন দেববর্মণ। সত্তর দশকের গোড়ায় শুরু হলেও এই ছবিটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পায় ১৯৭৬ সালে। ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন রাজেশ খান্না, শর্মিলা ঠাকুর, প্রেম চোপড়া, সুলোচনা, কমল কাপুর, ধীরজকুমার, অসিত সেন, চন্দ্রিমা ভাদুড়ি প্রমুখ।

এরপরেই বলতে হয়, শক্তি সামন্ত নির্দেশিত জনপ্রিয় ছবি ‘আনন্দ আশ্রম’-এর কথা। চমকপ্রদ অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার, শর্মিলা ঠাকুর, অশোককুমার, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, রাকেশ রোশন, উৎপল দত্ত, অসিত সেন, অনিতা গুহ প্রমুখ। খ্যাতনামা গীতিকার ইন্দিবরের লেখা ও শ্যামল মিত্রের সুরে লতার নিবেদন– ‘যব চাহো চলি আউঙ্গিঁ’ আজও ঐ ফিল্মের এক অনন্য সংযোজন। রূপম চিত্রের ব্যানারে পরিস্ফুট, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ফিচার ‘আলাপ’ এক অনন্যসাধারণ ছবি হিসেবে দর্শকদের মনে তার জায়গা পাকা করে নিয়েছে। এই ফিল্মে দুর্দান্ত অভিনয়ের নিদর্শন রেখেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, রেখা, ছায়া দেবী, মনমোহন কৃষ্ণ, আসরানি, ওম প্রকাশ, লিলি চক্রবর্তী ও আরো অনেকে। প্রথিতযশা সুরকার জয়দেব ভার্মা সুরের ঝর্ণা বইয়ে দিয়েছিলেন এই ফিল্মের মাধ্যমে। কাহারবা তালে বাঁধা– ‘কাহে মনওয়া নাচে হমরা’ এক অনবদ্য কম্পোজিশন। ডঃ রাহী মাসুম রজার লেখনী এ গানকে পৌঁছে দিয়েছিল সাফল্যের শিখরে। অন্তরার কথাগুলিতে রয়েছে রূপক অলংকারের সার্থক প্রয়োগ– 

‘ন্যয়নন কজরা ডালন ব্যয়ঠি
মাথে পে সূরজ পালন ব্যয়ঠি,
বিচ মেঁ আয়ে দেখো স্বপনে সাঁচে’ 

এবং 

‘নস নস মেঁ ইয়ে কৌন উতরা হ্যাঁয়,
দিল মেঁ কিসকা দিল ধড়কা হ্যাঁয়,
নামা নাম কা নিস দিন বাঁচে’। 

ইন্দু পিকচার্সের ছবি ‘আপ কি খাতির’ পরিচালনা করেছিলেন সুধেন্দু রায়। ছবিতে অভিনয়কলার সুচারু নিদর্শন রেখেছিলেন বিনোদ খান্না, রেখা, নাদিরা, হেলেন, তরুণ ঘোষ, ম্যাকমোহন, কুলজিৎ সিং ও অন্যান্যরা। লতা কণ্ঠে দাদরা তালে বাঁধা– ‘রাজা মেরে তেরে লিয়ে’ ও কাহারবা তালে ‘প্যায়ারা এক বংলা হো’ (বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ডুয়েট) এই ছবির আবেদন বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেকাংশে। শৈলী শৈলেন্দ্রর লেখা এই দুটি গান প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

জে ওমপ্রকাশের ছবি ‘অপনাপন’ সত্তর দশকের এক সাড়া জাগানো ফিচার। জিতেন্দ্র, রীনা রায়, সুলক্ষণা পণ্ডিত, সঞ্জীবকুমার, ইফতেখার, বীরবল, রাজ মেহরা প্রমুখ শিল্পীরা অভিনয়ধারার এক নতুন আঙ্গিক তুলে ধরেছিলেন। লক্ষ্মীকান্ত–প্যারেলালের সুরে লতার গাওয়া দুটি ডুয়েটই জনপ্রিয় হয়। একটি– ‘আদমি মুসাফির হ্যায়’ (মহম্মদ রফির সঙ্গে ডুয়েট) এবং ‘ইস দুনিয়া মেঁ জিনা হ্যায়’ (কিশোরকুমারের সঙ্গে ডুয়েট)। দুটি গানেরই রচয়িতা আনন্দ বক্সী। বিখ্যাত কৌতুকাভিনেতা আসরানি নির্দেশিত ফিচার ফিল্ম ‘চলা মুরারি হিরো বননে’ সেইসময়ের এক অভিনব প্রচেষ্টা। এই ফিল্মে দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন স্বয়ং আসরানি, বিন্দিয়া গোস্বামী, সিমি, এ কে হাঙ্গল, কেষ্ট মুখোপাধ্যায়, ডেভিড প্রমুখ। সুরসম্রাট রাহুল দেববর্মণের গান এ ছবির অমূল্য সম্পদ। লতার কণ্ঠে ‘তেরি কঠপুতলি হুঁ নাচনে নিকলি হুঁ’ ও ‘হাথোঁ মেঁ হাথ হম লে কর’ আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের প্রিয়। গানদুটির রচয়িতা, যোগেশ গৌড়। ভি শান্তারাম পরিচালিত দ্বিভাষিক ছবি ‘চানি’–তে প্রাণবন্ত অভিনয় করেছিলেন রঞ্জনা, মাস্টার সুশান্ত রায়, যশবন্ত দত্ত, প্রেমকুমার, গৌরী কামাত, দুর্গা সেনজিৎ ও অন্যান্যরা। হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সুরে লতা কণ্ঠে– ‘তুমহি্ হো মেরে অপনে’ এবং ‘ম্যায় তো যাউঙ্গি যাউঙ্গি রে’ মারাঠি কাব্যসঙ্গীতের এক অপূর্ব উদাহরণ। এই ফিল্মের গান রচনা করে কবি ভরত ব্যাস প্রমাণ করেছিলেন তিনি সব ধরনের গান লেখায় পটু। 

Kinara Movie Lata
১৯৭৭ সালে গুলজারের কিনারা ছবিতে লতা গাইলেন ‘নাম গুম যায়েগা’

যশরাজ ফিল্মস–এর হিট ছবি ‘দুসরা আদমি’ মুক্তি পায় ৭০-দশকের মধ্যভাগে। এই বিগ বাজেট ভেঞ্চারের মুখ্য আকর্ষণ ছিল শশী কাপুর, রাখি, ঋষি কাপুর, নীতু সিং, পরীক্ষিত সাহানি, দেবেন ভার্মা –র অভিনয়। মজরুহ্ সুলতানপুরির কথায় ও রাজেশ রোশনের সুরে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া চারটি ডুয়েট এই ফিল্মকে আরও জনপ্রিয় করে। গানগুলি ছিল– ‘আও মনায়ে জশন–এ-মুহব্বত’ (কিশোরকুমারের সঙ্গে ডুয়েট), ‘আখোঁ মে কাজল হ্যায়’ (কিশোরকুমারের সঙ্গে ডুয়েট),  ‘নজরোঁ সে ক্যহ দো প্যায়ার’ (কিশোরকুমারের সঙ্গে ডুয়েট), ‘কেয়া মৌসম হ্যায় অ্যায় দিওয়ানে’ (কিশোরকুমার ও মহম্মদ রফির সঙ্গে ডুয়েট)। উদীয়মান পরিচালক রাম কেলকরের ছবি ‘দুনিয়াদারী’ বক্স অফিসে তেমন সফল না হলেও এই ছবির গান মানুষের মনে সাড়া জাগিয়েছিল। কাহারবা তালে ‘নাও কাগজ কি গ্যাহরা হ্যায় পানি’ লতা-রফির কণ্ঠে এক অসাধারণ সাংগীতিক উপহার। শঙ্কর জয়কিষণের সুর এই গানকে ভালোলাগার আবেশে জড়িয়ে ফেলেছিল। উমা সিনে ফিল্মসের নিবেদন ‘এক হি রাস্তা’ ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন খ্যাতনামা নির্দেশক মোহন সায়গল। এই ছবিতে অভিনয় করেন জিতেন্দ্র, শাবানা আজমি, বিনোদ মেহরা, আশা সচদেব, উৎপল দত্ত। ভার্মা মালিকের লেখা ও রাজেশ রোশনের সুর এই ছবির রত্নসম্ভার। লতা কণ্ঠের নিবেদন– ‘ধীরে ধীরে সুন মোরে সজনা’ মানুষের মনে দোলা দিয়ে যায় আজও। 

বাসু চ্যাটার্জির অভিনব নির্মাণ ‘খট্টা মিঠা’-তে প্রাণবন্ত অভিনয়ের নিদর্শন রেখেছিলেন অশোককুমার, রাকেশ রোশন, বিন্দিয়া গোস্বামী, দেবেন ভার্মা, প্রীতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। গুলজার সাহেবের লেখা ও রাজেশ রোশনের সুরের মূর্চ্ছনা এই ছবিকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল। দাদরা তালে– ‘থোড়া হ্যায় থোড়ে কি জরুরৎ হ্যায়’ (কিশোরকুমারের সঙ্গে ডুয়েট) আজও অনন্য। লতা কণ্ঠের দ্বিতীয় গানটিও কিশোরকুমারের সঙ্গে- ‘তুমসে মিলা থা প্যায়ার কুছ অচ্ছে নসীব থে’। গুলজারের ছবি ‘কিনারা’ মুক্তি পায় ১৯৭৭ সালে। মেঘনা মুভিজের ব্যানারে এ ছবিতে ছিলেন জিতেন্দ্র, হেমা মালিনী, ধর্মেন্দ্র, শ্রীরাম লাগু ও আরো অনেকে। লতার গলায় এ ছবির তিনটি গানই সুপারহিট। গানগুলি– ‘মিঠে বোল বোলে বোলে পায়েলিয়া’ (ভুপেন্দ্রর সঙ্গে ডুয়েট), ‘নাম গুম যায়েগা’ (ভুপেন্দ্রর সঙ্গে ডুয়েট), ‘অব কে না সাওন বরষে’। সে বছরই লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া বেশ কিছু গান বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘মুক্তি’, ‘নিয়াজ অর নমাজ’, ‘পলকোঁ কি ছাওঁ মে’, ‘পাপী’, ‘ফির জনম লেঙ্গে হম’, ‘প্রতিমা অর পায়েল’, ‘প্রায়শ্চিত’, ‘শঙ্কর হুসেন’, ‘সাহেব বাহাদুর’, ‘স্বামী’, ‘জয় বিজয়’, ‘গায়ত্রী মহিমা’, ‘ড্রিম গার্ল’, ‘চলতা পুরজা’, ‘আফৎ’, ‘আশিক হুঁ বাহারোঁ কা’ ইত্যাদি ছবির গানই ছিল তাদের সম্পদ। 
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)  

 

পরবর্তী তথা শেষ পর্ব প্রকাশিত হবে ২৩ জুন ২০২২
*ছবি সৌজন্য: Wikipedia
Author Sanjay Sengupta

বিশিষ্ট গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রাহক সঞ্জয় সেনগুপ্ত, গান বাজনা-র জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কলকাতায় জন্ম হলেও ছেলেবেলা কেটেছে ওড়িশায়। দীর্ঘদিন এইচ.এম.ভি-র মতো ঐতিহ্যশালী সাঙ্গীতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। তাঁর অনবদ্য কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে আছে প্রায় ১২০০ বই ও পত্র-পত্রিকায়, দেশ বিদেশ জুড়ে। সঙ্গীত ছাড়াও আগ্রহ নানা বিষয়ে। খেলাধূলা, মূলত ক্রিকেট ও সিনেমা সংক্রান্ত লেখায় তাঁর পান্ডিত্য ঈর্ষণীয়।

Picture of সঞ্জয় সেনগুপ্ত

সঞ্জয় সেনগুপ্ত

বিশিষ্ট গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রাহক সঞ্জয় সেনগুপ্ত, গান বাজনা-র জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কলকাতায় জন্ম হলেও ছেলেবেলা কেটেছে ওড়িশায়। দীর্ঘদিন এইচ.এম.ভি-র মতো ঐতিহ্যশালী সাঙ্গীতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। তাঁর অনবদ্য কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে আছে প্রায় ১২০০ বই ও পত্র-পত্রিকায়, দেশ বিদেশ জুড়ে। সঙ্গীত ছাড়াও আগ্রহ নানা বিষয়ে। খেলাধূলা, মূলত ক্রিকেট ও সিনেমা সংক্রান্ত লেখায় তাঁর পান্ডিত্য ঈর্ষণীয়।
Picture of সঞ্জয় সেনগুপ্ত

সঞ্জয় সেনগুপ্ত

বিশিষ্ট গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রাহক সঞ্জয় সেনগুপ্ত, গান বাজনা-র জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কলকাতায় জন্ম হলেও ছেলেবেলা কেটেছে ওড়িশায়। দীর্ঘদিন এইচ.এম.ভি-র মতো ঐতিহ্যশালী সাঙ্গীতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। তাঁর অনবদ্য কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে আছে প্রায় ১২০০ বই ও পত্র-পত্রিকায়, দেশ বিদেশ জুড়ে। সঙ্গীত ছাড়াও আগ্রহ নানা বিষয়ে। খেলাধূলা, মূলত ক্রিকেট ও সিনেমা সংক্রান্ত লেখায় তাঁর পান্ডিত্য ঈর্ষণীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস