গড়ের মাঠে হাওয়া খেতে খেতে প্রেমিকার কানে কানে ফিশফিশ, এই, আমায় বিয়ে করবে? কিম্বা রেস্তোরাঁর পর্দা ফেলা কেবিনের অন্তরালে ধোঁয়া ওঠা চা আর ডিম-টোস্টের ফাঁক দিয়ে হাতের ওপর হাত রাখা বাঙ্ময় নীরবতায় শুধিয়ে ফেলা, এক সঙ্গে বুড়ো হবে? এ সব এখন পুরনো ব্যাকডেটেড নভেলের পাতায় ছাড়া আর কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ এই ফেসবুক-ইন্সটার যুগে চুপিচুপি কিছু করে ফেলাটা নাকি স্রেফ ক্যাবলামি। আর বিয়ের প্রস্তাব? সে তো এক জীবন-পরিবর্তনকারী টার্নিং পয়েন্ট! রীতিমতো একটা ঘটনা! ফলে যেন তেন প্রকারেণ তাকে তো স্মরণীয় করে তুলতেই হবে! নইলে কপালে জুটবে আসমুদ্রহিমাচলের ভার্চুয়াল দুয়ো। সে কখনও হতে দেওয়া যায়?
অতএব হাওয়াইবাসী ক্রিস গার্থ ঠিক করে ফেললেন, প্রেমিকাকে উপহার দিতে হবে জীবনের সেরা স্মৃতি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। প্রেমিকা লরেনকে নিয়ে গেলেন ওয়াইকিকির সোনালি সৈকতে। এখানেই প্রথম দেখা। তাই বিবাহপ্রস্তাবের জন্য় এর চেয়ে উপযুক্ত স্থান আর কীই বা হতে পারে? কিন্তু ডাঙায় নয়, প্রস্তাব আসবে ঢেউয়ের দোলায় দুলতে দুলতে। না, নৌকোয় নয়, জাহাজে নয়, প্রস্তাব আসবে সার্ফিং করতে করতে! সরু সার্ফিং বোর্ডের ওপর ব্যালেন্স করতে করতে হাঁটু গেড়ে বসবেন ক্রিস। এবং নায়কোচিত ভঙ্গিমায় আংটি বাড়িয়ে ধরবেন আরেকটি সার্ফিং বোর্ডে ব্যালেন্সরত লরেনের দিকে। আর সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে ক্যামেরাবন্দি করতে চুপি চুপি বালুকাবেলায় হাজির থাকবেন বেশ কয়েকজন আলোকচিত্রী।
সব রেডি। তৈরি পাত্রপাত্রী। সার্ফিং বোর্ডের ওপর হাঁটু নামিয়ে আংটি বের করে লরেনের দিকে বাড়ালেন ক্রিস। এল প্রস্তাব। সলজ্জ হেসে সম্মতি জানালেন লরেন। এমন সময় অঘটন! ক্রিসের হাত ফসকে আংটি জলে। হইহই রব উঠল সমুদ্রসৈকতে। ছুটে এলেন আলোকচিত্রীর দল। উপস্থিত জনতা ভিডিও ক্যামেরা তাক করল দম্পতির দিকে। সকলেই ভাবলেন, গেল বুঝি এত সাধের প্রস্তাব-পরিকল্পনা জলে।
লেকিন… পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত!
ক্রিস যে সে খেলোয়াড় নন! তিনি আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন, ঘটতে পারে এমন কিছু। তাই যে আংটি নিয়ে জলে নেমেছিলেন, সেটা ছিল নকল! আসল আংটি সযত্নে রাখা ছিল পাড়ে। ফলে ক্ষণিকের জন্য় অপ্রস্তুত হলেও শেষমেশ পাড়ে এসে আসল আংটি দিয়ে নির্বিঘ্নে বাগদান সারেন ক্রিস। এবং গোটা ভিডিও রাতারাতি ভাইরাল! এক রাতে সেলেব্রিটি ক্রিস-লরেন! বাগদান-পর্বও এক্কেবারে চিরস্মরণীয়!
লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!