(Moti Nandi) পেনের সঙ্গে পানের যোগ আছে, এমনটাই মনে করতেন মতি নন্দী। অতএব পান মুখে শুরু হত লেখা। টেবিলের পাশেই রাখা থাকত একটা পানের ডাবর। তা থেকে পান মুখে দিয়ে হাতে তুলে নিতেন কলমখানি। এই কলমেই জন্ম, ‘কোনি’র। লড়াই শেষে এক সাঁতারু মেয়ের জয়লাভের কাহিনি নিয়ে তৈরি এই উপন্যাস, জনপ্রিয় হয়। সিনেমার পর্দায় খিদ্দার চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অনবদ্য অভিনয়ে বিখ্যাত হয়েছে এই চলচ্চিত্রের সেই আইকনিক ডায়ালগ ‘ফাইট, কোনি ফাইট।’
মতি নন্দীর জন্ম, উত্তর কলকাতায়। বাবা চুণীলাল নন্দী, মা মলিনাবালাদেবী। ছোটবেলাতেই পিতৃহারা হন। স্কটিশচার্চ থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫০-এ। আই.এস.সি ১৯৫১-এ। ডিপ্লোমা অর্জন করেন, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে সাম্মানিক স্নাতক, ১৯৫৭ সালে। কর্মসূত্রে ক্রীড়া-সাংবাদিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। পরে সম্পাদক হন। পত্রিকার হয়ে বিভিন্ন খেলাধুলা ছাড়াও, সংবাদপত্র প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছিলেন লস এঞ্জেলেস, মস্কো অলিম্পিক, দিল্লি এশিয়ান গেমস কভার করতে। তিনি বলতেন, ‘খেলাধুলার সঙ্গে সাহিত্য কেন আসবে না!’ লেখকের মতে; নর্মান মেলার, হেমিংওয়ে, বার্নার্ড ম্যালামাড তো উদাহরণ হয়েই রয়েছেন।
ভিডিও: মানবতাবাদের সংগ্রামী – কথাকার গৌরকিশোর
বাসস্থান ছিল তারক চ্যাটর্জি লেন। তিনতলা বাড়ির নিচে স্ত্রী-মেয়েদের সংসার। ছাদের ঘরে তাঁর লেখার জগত। এই ছাদঘরের লাগোয়া খোলা অংশে ভোরে ডাম্বেল নিয়ে শরীরচর্চা করতেন নিয়ম করে। একদিন বর্ধমান থেকে সদ্য কলকাতায় আসা তরুণ লেখক-সম্পাদক প্রশান্ত মাজী সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তিনি বলেন, ‘আমার এই জানালায় চোখ রাখলে আগে গোটা দশেক ছাদ দেখা যেত, খুব ভাল লাগত। কলকাতাকে বুঝতে গেলে ছাদ ছাড়া সম্ভব নয়।’ মতি নন্দী বলেন, ‘প্রশান্ত, তুমি একটু ছাদে গিয়ে দেখে এসো কলকাতাকে।’ প্রসঙ্গত, পরিচয় পত্রিকায় এই ছাদ নিয়ে তাঁর একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছিল সেসময়।
ঔপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক হিসেবে লিখেছেন উপন্যাস এবং ছোটগল্প। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লেখা ‘স্টপার’, ‘স্ট্রাইকার’ ইত্যাদি। তাঁর কলাবতী সিরিজটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ‘সাদা খাম’, ‘গোলাপ বাগান’, ‘দ্বিতীয় ইনিংসের পর’, ‘সবাই যাচ্ছে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘বাওবাব’, ‘নায়কের প্রবেশ ও প্রস্থান’ উল্লেখযোগ্য। কিশোর উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘অপরাজিত আনন্দ’, ‘দলবদলের আগে’, ‘আম্পায়ারিং’, ‘মিনু চিনুর ট্রফি’। পেয়েছিলেন সাহিত্য অকাদেমি এবং আনন্দ পুরস্কার। (Moti Nandi)
ভিডিও: মুক্তারামের রামকথা – জন্মদিনে শিবরাম
প্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন বার্গম্যান। একবার বলেন, “বার্গম্যান আমাকে উত্তেজিত করে। মনে পড়ছে, তাঁর ‘ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ়’ দেখে ‘ছ’টা পঁয়তাল্লিশের ট্রেন’ গল্পটি মাথায় এসেছিল।” মতি নন্দীর বেশ কিছু গল্প চলচ্চিত্রায়িত হয়েছিল। অর্চন চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘স্ট্রাইকার’ অবলম্বনে চলচ্চিত্রটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সমিত ভঞ্জ। কোনিকে ১৯৮৬-তে বড় পর্দায় নিয়ে আসেন পরিচালক সরোজ দে। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের পরিচালক অনিমেষ আইচ, লেখকের ‘জলের ঘূর্ণি ও বকবক শব্দ’ গল্প নিয়ে করেন ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ সিনেমাটি। (Moti Nandi)
মানুষের মধ্যেই তিনি পেয়েছিলেন লেখার রসদ। এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার লেখালিখির ক্ষেত্রে কোন বিষয় প্রেরণা হিসেবে কাজ করে? উত্তরে বলেছিলেন, ‘মানুষের জন্য করুণা, মমত্ববোধই আমার লেখায় জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।’ আর এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, মঙ্গলকাব্যের ‘চাঁদ’ চরিত্রটি তাঁর খুব প্রিয়। অমিয়ভূষণ মজুমদারের ‘চাঁদ বেনে’ বইটি তিনি তখন খুঁজছিলেন, পড়বেন বলে। সেসময় বলেছিলেন, ‘অমিয়বাবু কীভাবে চরিত্রটিকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, জানতে খুব কৌতূহল রয়েছে!’ সমস্ত জীবনের এই অনুসন্ধিৎসা তাঁকে লেখক হিসেবে খ্যাতির শিখরে নিয়ে গিয়েছিল। আজও কি কেউ তেমন খুঁজে ফেরেন ‘চাঁদ’ চরিত্র নির্মাণের কৃৎকৌশল! খ্যাপা যেভাবে খুঁজে ফেরে পরশ পাথর। (Moti Nandi)
আজ তাঁর জন্মদিনে বাংলালাইভের শ্রদ্ধার্ঘ্য। (Moti Nandi)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।