Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বিবিসির বর্ষসেরা ধৃতিমান

ধনেশ পাখি
হর্নবিল বা ধনেশ পাখির নানা প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে লুপ্তপ্রায় সম্ভবত নারকন্ডাম হর্নবিল প্রজাতিটি। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের এক নির্জন দ্বীপ নারকন্ডামে মাত্র সাড়ে সাতশো ধনেশ টিকিয়ে রেখেছে এই বিরল প্রজাতির অস্তিত্ব। সাধারণত জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ধনেশ থাকতে পারে না। তাই নারকন্ডামের নিরিবিলি জনহীন অরণ্য তাদের বাসা বাঁধার পক্ষে আদর্শ। তবে ধৃতিমানের অভিজ্ঞতা বলে, নারকন্ডামের এই ধনেশ প্রজাতি মানুষকে বিশেষ তোয়াক্কা করে না। মাটির কাছাকাছি, মাত্র মিটার দুয়েক উঁচুতেও বাসা বাঁধে অনেক সময়েই।
বইকাল হ্রদে নার্পা সিলের অপেক্ষায়
বরফে মোড়া সাইবেরিয়ার বৈকাল হ্রদ। পৃথিবীর বৃহত্তম, গভীরতম, প্রাচীনতম মিষ্টি জলের হ্রদ। সেখানে বাস নার্পা সিলের। মাইনাস ২১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বরফের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে থেকে তাদের ক্যামেরায় ধরেছিলেন ধৃতিমান। একফোঁটা নড়াচড়া করলেও সিলের দল বরফে ডুব দেবে, আর উঠবে না। ফলে সাদা থার্মাল স্যুট গায়ে বরফের চাদরে নিজের দেহ আড়াল করে সিলের অপেক্ষা
চম্বলের কুমির
চম্বল বললেই মনে হয় ডাকাত! কিন্তু চম্বল বললেই যে এক ঘন সবুজ ছায়ামাখা নদী আর তার তীর বরাবর চম্বল বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ কেন্দ্র সে কথা কতজনেই বা মনে রাখে? চম্বল নদীতে বাস ঘড়িয়াল প্রজাতির কুমিরের। ছবিতে এক পুরুষ ঘড়িয়াল তার কচি ছানাদের দেখাশোনায় মগ্ন। বাবার পিঠে মহানন্দে খেলে বেড়াচ্ছে সদ্যোজাত ঘড়িয়াল-ছানারা।
ব্রাজিলের গ্রিন অ্যানাকোন্ডা
ব্রাজিলের সেমি অ্যাকোয়াটিক গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। রং পুরোপুরি সবুজ না হলেও এমনই নাম। জিভের রং বেগুনি। দক্ষিণ ব্রাজিলের পান্তানাল অরণ্য এলাকাতেই মূলত এদের বাস। অন্য সব সাপের মতোই অ্যানাকোন্ডাও কেমোপিসেপটিভ ডিটেকশন দিয়েই যাবতীয় ইন্দ্রিয়ের কাজ মেটায়। আন্ডারওয়াটার ক্যামেরা কাঁধে স্কুবা ডাইভিং করে এ ছবি তুলেছিলেন ধৃতিমান।
ব্রাজিলের জাগুয়ার
দক্ষিণ ব্রাজিলের পান্তানাল অরণ্যের জাগুয়ারদের লেন্সবন্দি করতে ধৃতিমান পৌঁছে গিয়েছিলেন সেখানে। কুইয়াবা নদীর তীরে ঘুরে বেড়ানো এই জাগুয়ারকে তাক করেছিলেন বহুক্ষণ। সব ব্যাঘ্র প্রজাতির মতোই জাগুয়ারেরাও জলে ভয় পায় না। সাঁতার কাটতে, জল কেটে ছুটতে তারা বেশ পটু। গলা ভেজাতে আসা কোনও প্রাণি শিকারের লক্ষেই নদীর ধারে এই হাঁটাচলা।
পান্তানালের শ্বাপদ
দক্ষিণ ব্রাজিলের পান্তানাল এলাকাই বর্তমানে জাগুয়ারদের প্রধানতম মুক্ত এবং নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র। এখানে প্রায় চার থেকে সাত হাজারের কাছাকাছি জাগুয়ার রয়েছে। প্রাচীন মায়া-অ্যাজটেক সভ্যতায় এই জাগুয়ারের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এমকি জাগুয়ার নামটাও এসেছে সেখান থেকেই। এর অর্থ - এক লাফে যে মারতে পারে।
জাগুয়ারের কেইমান শিকার
পান্তানালের জলে-কাদায় বসবাসকারী বিশেষ ধরনের কুমিরের নাম কেইমান। আর এই কেইমান শিকার জাগুয়ারদের বিশেষ পছন্দ। সকাল নটা থেকে দশটার মধ্যে জলের ধারে ওঁৎ পেতে ডাঙায় রোদ পোহাতে আসা কেইমানদের মাথার খুলির দিকটা কামড়ে ধরে তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া জাগুয়ারদের কাছে বেশ সহজ কাজ।
জনস্টনস ক্যামেলিয়ন
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বিরুঙ্গা পর্বত। নাইরাগঙ্গো আগ্নেয়গিরির ছবি তুলবেন বলে জঙ্গুলে পথ বেয়ে পাহাড়ে চড়তে চড়তে ধৃতিমানের সঙ্গে দেখা জনস্টনস ক্যামেলিয়নের। ইনি পুরুষ। চেনা সহজ। পুরুষদের মাথায় থাকে তিনটি বড়ো বড়ো কাঁটা। দৈর্ঘ্য়ে ফুটখানেক। লেজটি সুবৃহৎ। এ জঙ্গলে পোকামাকড়ের অভাব নেই। ফলে ইনি বেশ হৃষ্টপুষ্ট।
বিরুঙ্গার জ্বালামুখ
বিরুঙ্গা পর্বতের মাথায় রয়েছে জ্বালামুখ। ভেতরে দাউ দাউ করে জ্বলছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি নাইরাগঙ্গো। পায়ে হেঁটে সেই পাহাড়ের ওপর চড়ে সেখান থেকে দেখতে হয় অন্ধকারে জ্বলছে লাল গলানো লাভাস্রোত। আগ্নেয়গিরির ছশো মিটারের মধ্যে ক্যামেরা-সহ দাঁড়িয়ে ধৃতিমান। একসঙ্গে গায়ে এসে লাগছে আগুনের তাত আর হিমেল হাওয়া।
নাইরাগঙ্গো
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরিগুলির মধ্যে অন্যতম এই নাইরাগঙ্গো। কখন অগ্ন্যুৎপাত ঘটাবে আগে থেকে বলা অসম্ভব। বাতাসে ভাসতে থাকে কড়া গন্ধকের ধোঁয়া। সারা রাত ক্যামেরা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে তাকে লেন্সবন্দি করেন ধৃতিমান।
আন্দামানের রূপসাগরে ডুব দিয়ে
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এ তো আমাদের ঘরের কাছেই! উড়োজাহাজে চড়লে ঘণ্টা কয়েকের পথ। কিন্তু আকাশে না উঠে যদি ডুব দেওয়া যায় ভারত মহাসাগরের গহীনে? তাহলে যে আন্দামানকে দেখা যাবে, তাকে কতজন চেনেন? ১৯৮৯ সালে স্কুবা ডাইভার জঁ কুস্তোঁ প্রথম আবিষ্কার করেন জলের তলার এই রঙিন প্রবালদ্বীপ। নাম দেন "অদৃশ্য দ্বীপপুঞ্জ"। এখানে কেবল মাছের প্রজাতির সংখ্যাই কম করে হাজার দেড়েক। তারই ছবি ধৃতিমানের ক্যামেরায়।
মৃত প্রবালে বাসা বেঁধে অক্টোপাস
একুশ শতকের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যথাসাধ্য যুঝে চলেছে ভারত মহাসাগরের প্রবালপুঞ্জ। সমুদ্র্রের জলের উষ্ণতাবৃদ্ধি, সুনামি, ২০১০ সালের কোরাল ব্লিচিং - এ সবের প্রভাবেই ক্রমাগত মারা যাচ্ছে প্রবালের দল। আর সমুদ্রের তলায় জমে উঠছে তাদের দেহাংশ। আর এই এবড়ো খেবড়ো প্রবাল-দেহাংশের মধ্যেই বাসা বাঁধে নানা সামুদ্রিক প্রাণি। যেমন ছবির এই জায়েন্ট অক্টোপাস।
উত্তর মেরুসাগরের বিষাক্ত জেলিফিশ
উত্তর মেরুসাগরের তলদেশে পাওয়া যায় এই দানবাকৃতি জেলিফিশ, যার ইংরিজি নাম Lion's Mane। সিংহের কেশরের মতোই ঝাঁকড়া এর সরু সরু দাঁড়া যা শয়ে শয়ে বেরিয়েছে উপরের জেলি থেকে। প্রতিটি দাঁড়ায় ভয়ানক বিষ, যার এক ছোবলে আধমরা হয়ে যেতে পারে মানুষ। প্রাণ হারাতে পারে বহু সামুদ্রিক জীব। এদের দৈর্ঘ্য কম সে কম ছ ফুট।
গ্রিনল্যান্ডের অতিকায় হিমশৈল
বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে এমনই দেখতে হয়েছে উত্তর মেরুর হিমশৈলগুলিকে। কোথাও বরফ গলে গলে ভাস্কর্যের মতো আঁকাবাঁকা ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে। আবার কোথাও বা সমতল বরফের চাঙড়, যাদের আয়তন যাত্রীবাহী জাহাজের চেয়েও বিশাল। এদের দেখে নাকি এককালে ঋতু পরিবর্তন বুঝতে পারতেন গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দারা।
জলের তলার জীবকূলকে ক্যামেরায় ধরতে
দক্ষিণ মেরু সাগরের নিচে ক্যামেরা হাতে ধৃতিমান। পরনে জলনিরোধক গরমজামার উপর ড্রাই স্যুট, দস্তানা, ফেস মাস্ক, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ক্যামেরা এবং জলের তলায় আলো ফেলার স্টোব লাইট। এ ছাড়া অতিরিক্ত ওজনজনিত প্লবতার সঙ্গে যুঝতে কোমরে ঝুলিয়েছেন সতেরো কেজি সীসের বাটখারা।
ধনেশ পাখি
হর্নবিল বা ধনেশ পাখির নানা প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে লুপ্তপ্রায় সম্ভবত নারকন্ডাম হর্নবিল প্রজাতিটি। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের এক নির্জন দ্বীপ নারকন্ডামে মাত্র সাড়ে সাতশো ধনেশ টিকিয়ে রেখেছে এই বিরল প্রজাতির অস্তিত্ব। সাধারণত জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ধনেশ থাকতে পারে না। তাই নারকন্ডামের নিরিবিলি জনহীন অরণ্য তাদের বাসা বাঁধার পক্ষে আদর্শ। তবে ধৃতিমানের অভিজ্ঞতা বলে, নারকন্ডামের এই ধনেশ প্রজাতি মানুষকে বিশেষ তোয়াক্কা করে না। মাটির কাছাকাছি, মাত্র মিটার দুয়েক উঁচুতেও বাসা বাঁধে অনেক সময়েই।
বইকাল হ্রদে নার্পা সিলের অপেক্ষায়
বরফে মোড়া সাইবেরিয়ার বৈকাল হ্রদ। পৃথিবীর বৃহত্তম, গভীরতম, প্রাচীনতম মিষ্টি জলের হ্রদ। সেখানে বাস নার্পা সিলের। মাইনাস ২১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বরফের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে থেকে তাদের ক্যামেরায় ধরেছিলেন ধৃতিমান। একফোঁটা নড়াচড়া করলেও সিলের দল বরফে ডুব দেবে, আর উঠবে না। ফলে সাদা থার্মাল স্যুট গায়ে বরফের চাদরে নিজের দেহ আড়াল করে সিলের অপেক্ষা
চম্বলের কুমির
চম্বল বললেই মনে হয় ডাকাত! কিন্তু চম্বল বললেই যে এক ঘন সবুজ ছায়ামাখা নদী আর তার তীর বরাবর চম্বল বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ কেন্দ্র সে কথা কতজনেই বা মনে রাখে? চম্বল নদীতে বাস ঘড়িয়াল প্রজাতির কুমিরের। ছবিতে এক পুরুষ ঘড়িয়াল তার কচি ছানাদের দেখাশোনায় মগ্ন। বাবার পিঠে মহানন্দে খেলে বেড়াচ্ছে সদ্যোজাত ঘড়িয়াল-ছানারা।
ব্রাজিলের গ্রিন অ্যানাকোন্ডা
ব্রাজিলের সেমি অ্যাকোয়াটিক গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। রং পুরোপুরি সবুজ না হলেও এমনই নাম। জিভের রং বেগুনি। দক্ষিণ ব্রাজিলের পান্তানাল অরণ্য এলাকাতেই মূলত এদের বাস। অন্য সব সাপের মতোই অ্যানাকোন্ডাও কেমোপিসেপটিভ ডিটেকশন দিয়েই যাবতীয় ইন্দ্রিয়ের কাজ মেটায়। আন্ডারওয়াটার ক্যামেরা কাঁধে স্কুবা ডাইভিং করে এ ছবি তুলেছিলেন ধৃতিমান।
ব্রাজিলের জাগুয়ার
দক্ষিণ ব্রাজিলের পান্তানাল অরণ্যের জাগুয়ারদের লেন্সবন্দি করতে ধৃতিমান পৌঁছে গিয়েছিলেন সেখানে। কুইয়াবা নদীর তীরে ঘুরে বেড়ানো এই জাগুয়ারকে তাক করেছিলেন বহুক্ষণ। সব ব্যাঘ্র প্রজাতির মতোই জাগুয়ারেরাও জলে ভয় পায় না। সাঁতার কাটতে, জল কেটে ছুটতে তারা বেশ পটু। গলা ভেজাতে আসা কোনও প্রাণি শিকারের লক্ষেই নদীর ধারে এই হাঁটাচলা।
পান্তানালের শ্বাপদ
দক্ষিণ ব্রাজিলের পান্তানাল এলাকাই বর্তমানে জাগুয়ারদের প্রধানতম মুক্ত এবং নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র। এখানে প্রায় চার থেকে সাত হাজারের কাছাকাছি জাগুয়ার রয়েছে। প্রাচীন মায়া-অ্যাজটেক সভ্যতায় এই জাগুয়ারের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এমকি জাগুয়ার নামটাও এসেছে সেখান থেকেই। এর অর্থ - এক লাফে যে মারতে পারে।
জাগুয়ারের কেইমান শিকার
পান্তানালের জলে-কাদায় বসবাসকারী বিশেষ ধরনের কুমিরের নাম কেইমান। আর এই কেইমান শিকার জাগুয়ারদের বিশেষ পছন্দ। সকাল নটা থেকে দশটার মধ্যে জলের ধারে ওঁৎ পেতে ডাঙায় রোদ পোহাতে আসা কেইমানদের মাথার খুলির দিকটা কামড়ে ধরে তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া জাগুয়ারদের কাছে বেশ সহজ কাজ।
জনস্টনস ক্যামেলিয়ন
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বিরুঙ্গা পর্বত। নাইরাগঙ্গো আগ্নেয়গিরির ছবি তুলবেন বলে জঙ্গুলে পথ বেয়ে পাহাড়ে চড়তে চড়তে ধৃতিমানের সঙ্গে দেখা জনস্টনস ক্যামেলিয়নের। ইনি পুরুষ। চেনা সহজ। পুরুষদের মাথায় থাকে তিনটি বড়ো বড়ো কাঁটা। দৈর্ঘ্য়ে ফুটখানেক। লেজটি সুবৃহৎ। এ জঙ্গলে পোকামাকড়ের অভাব নেই। ফলে ইনি বেশ হৃষ্টপুষ্ট।
বিরুঙ্গার জ্বালামুখ
বিরুঙ্গা পর্বতের মাথায় রয়েছে জ্বালামুখ। ভেতরে দাউ দাউ করে জ্বলছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি নাইরাগঙ্গো। পায়ে হেঁটে সেই পাহাড়ের ওপর চড়ে সেখান থেকে দেখতে হয় অন্ধকারে জ্বলছে লাল গলানো লাভাস্রোত। আগ্নেয়গিরির ছশো মিটারের মধ্যে ক্যামেরা-সহ দাঁড়িয়ে ধৃতিমান। একসঙ্গে গায়ে এসে লাগছে আগুনের তাত আর হিমেল হাওয়া।
নাইরাগঙ্গো
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরিগুলির মধ্যে অন্যতম এই নাইরাগঙ্গো। কখন অগ্ন্যুৎপাত ঘটাবে আগে থেকে বলা অসম্ভব। বাতাসে ভাসতে থাকে কড়া গন্ধকের ধোঁয়া। সারা রাত ক্যামেরা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে তাকে লেন্সবন্দি করেন ধৃতিমান।
আন্দামানের রূপসাগরে ডুব দিয়ে
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এ তো আমাদের ঘরের কাছেই! উড়োজাহাজে চড়লে ঘণ্টা কয়েকের পথ। কিন্তু আকাশে না উঠে যদি ডুব দেওয়া যায় ভারত মহাসাগরের গহীনে? তাহলে যে আন্দামানকে দেখা যাবে, তাকে কতজন চেনেন? ১৯৮৯ সালে স্কুবা ডাইভার জঁ কুস্তোঁ প্রথম আবিষ্কার করেন জলের তলার এই রঙিন প্রবালদ্বীপ। নাম দেন "অদৃশ্য দ্বীপপুঞ্জ"। এখানে কেবল মাছের প্রজাতির সংখ্যাই কম করে হাজার দেড়েক। তারই ছবি ধৃতিমানের ক্যামেরায়।
মৃত প্রবালে বাসা বেঁধে অক্টোপাস
একুশ শতকের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যথাসাধ্য যুঝে চলেছে ভারত মহাসাগরের প্রবালপুঞ্জ। সমুদ্র্রের জলের উষ্ণতাবৃদ্ধি, সুনামি, ২০১০ সালের কোরাল ব্লিচিং - এ সবের প্রভাবেই ক্রমাগত মারা যাচ্ছে প্রবালের দল। আর সমুদ্রের তলায় জমে উঠছে তাদের দেহাংশ। আর এই এবড়ো খেবড়ো প্রবাল-দেহাংশের মধ্যেই বাসা বাঁধে নানা সামুদ্রিক প্রাণি। যেমন ছবির এই জায়েন্ট অক্টোপাস।
উত্তর মেরুসাগরের বিষাক্ত জেলিফিশ
উত্তর মেরুসাগরের তলদেশে পাওয়া যায় এই দানবাকৃতি জেলিফিশ, যার ইংরিজি নাম Lion's Mane। সিংহের কেশরের মতোই ঝাঁকড়া এর সরু সরু দাঁড়া যা শয়ে শয়ে বেরিয়েছে উপরের জেলি থেকে। প্রতিটি দাঁড়ায় ভয়ানক বিষ, যার এক ছোবলে আধমরা হয়ে যেতে পারে মানুষ। প্রাণ হারাতে পারে বহু সামুদ্রিক জীব। এদের দৈর্ঘ্য কম সে কম ছ ফুট।
গ্রিনল্যান্ডের অতিকায় হিমশৈল
বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে এমনই দেখতে হয়েছে উত্তর মেরুর হিমশৈলগুলিকে। কোথাও বরফ গলে গলে ভাস্কর্যের মতো আঁকাবাঁকা ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে। আবার কোথাও বা সমতল বরফের চাঙড়, যাদের আয়তন যাত্রীবাহী জাহাজের চেয়েও বিশাল। এদের দেখে নাকি এককালে ঋতু পরিবর্তন বুঝতে পারতেন গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দারা।
জলের তলার জীবকূলকে ক্যামেরায় ধরতে
দক্ষিণ মেরু সাগরের নিচে ক্যামেরা হাতে ধৃতিমান। পরনে জলনিরোধক গরমজামার উপর ড্রাই স্যুট, দস্তানা, ফেস মাস্ক, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ক্যামেরা এবং জলের তলায় আলো ফেলার স্টোব লাইট। এ ছাড়া অতিরিক্ত ওজনজনিত প্লবতার সঙ্গে যুঝতে কোমরে ঝুলিয়েছেন সতেরো কেজি সীসের বাটখারা।
ধনেশ পাখি
হর্নবিল বা ধনেশ পাখির নানা প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে লুপ্তপ্রায় সম্ভবত নারকন্ডাম হর্নবিল প্রজাতিটি। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের এক নির্জন দ্বীপ নারকন্ডামে মাত্র সাড়ে সাতশো ধনেশ টিকিয়ে রেখেছে এই বিরল প্রজাতির অস্তিত্ব। সাধারণত জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ধনেশ থাকতে পারে না। তাই নারকন্ডামের নিরিবিলি জনহীন অরণ্য তাদের বাসা বাঁধার পক্ষে আদর্শ। তবে ধৃতিমানের অভিজ্ঞতা বলে, নারকন্ডামের এই ধনেশ প্রজাতি মানুষকে বিশেষ তোয়াক্কা করে না। মাটির কাছাকাছি, মাত্র মিটার দুয়েক উঁচুতেও বাসা বাঁধে অনেক সময়েই।
বইকাল হ্রদে নার্পা সিলের অপেক্ষায়
বরফে মোড়া সাইবেরিয়ার বৈকাল হ্রদ। পৃথিবীর বৃহত্তম, গভীরতম, প্রাচীনতম মিষ্টি জলের হ্রদ। সেখানে বাস নার্পা সিলের। মাইনাস ২১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বরফের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে থেকে তাদের ক্যামেরায় ধরেছিলেন ধৃতিমান। একফোঁটা নড়াচড়া করলেও সিলের দল বরফে ডুব দেবে, আর উঠবে না। ফলে সাদা থার্মাল স্যুট গায়ে বরফের চাদরে নিজের দেহ আড়াল করে সিলের অপেক্ষা
চম্বলের কুমির
চম্বল বললেই মনে হয় ডাকাত! কিন্তু চম্বল বললেই যে এক ঘন সবুজ ছায়ামাখা নদী আর তার তীর বরাবর চম্বল বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ কেন্দ্র সে কথা কতজনেই বা মনে রাখে? চম্বল নদীতে বাস ঘড়িয়াল প্রজাতির কুমিরের। ছবিতে এক পুরুষ ঘড়িয়াল তার কচি ছানাদের দেখাশোনায় মগ্ন। বাবার পিঠে মহানন্দে খেলে বেড়াচ্ছে সদ্যোজাত ঘড়িয়াল-ছানারা।
ব্রাজিলের গ্রিন অ্যানাকোন্ডা
ব্রাজিলের সেমি অ্যাকোয়াটিক গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। রং পুরোপুরি সবুজ না হলেও এমনই নাম। জিভের রং বেগুনি। দক্ষিণ ব্রাজিলের পান্তানাল অরণ্য এলাকাতেই মূলত এদের বাস। অন্য সব সাপের মতোই অ্যানাকোন্ডাও কেমোপিসেপটিভ ডিটেকশন দিয়েই যাবতীয় ইন্দ্রিয়ের কাজ মেটায়। আন্ডারওয়াটার ক্যামেরা কাঁধে স্কুবা ডাইভিং করে এ ছবি তুলেছিলেন ধৃতিমান।
ব্রাজিলের জাগুয়ার
দক্ষিণ ব্রাজিলের পান্তানাল অরণ্যের জাগুয়ারদের লেন্সবন্দি করতে ধৃতিমান পৌঁছে গিয়েছিলেন সেখানে। কুইয়াবা নদীর তীরে ঘুরে বেড়ানো এই জাগুয়ারকে তাক করেছিলেন বহুক্ষণ। সব ব্যাঘ্র প্রজাতির মতোই জাগুয়ারেরাও জলে ভয় পায় না। সাঁতার কাটতে, জল কেটে ছুটতে তারা বেশ পটু। গলা ভেজাতে আসা কোনও প্রাণি শিকারের লক্ষেই নদীর ধারে এই হাঁটাচলা।
পান্তানালের শ্বাপদ
দক্ষিণ ব্রাজিলের পান্তানাল এলাকাই বর্তমানে জাগুয়ারদের প্রধানতম মুক্ত এবং নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র। এখানে প্রায় চার থেকে সাত হাজারের কাছাকাছি জাগুয়ার রয়েছে। প্রাচীন মায়া-অ্যাজটেক সভ্যতায় এই জাগুয়ারের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এমকি জাগুয়ার নামটাও এসেছে সেখান থেকেই। এর অর্থ - এক লাফে যে মারতে পারে।
জাগুয়ারের কেইমান শিকার
পান্তানালের জলে-কাদায় বসবাসকারী বিশেষ ধরনের কুমিরের নাম কেইমান। আর এই কেইমান শিকার জাগুয়ারদের বিশেষ পছন্দ। সকাল নটা থেকে দশটার মধ্যে জলের ধারে ওঁৎ পেতে ডাঙায় রোদ পোহাতে আসা কেইমানদের মাথার খুলির দিকটা কামড়ে ধরে তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া জাগুয়ারদের কাছে বেশ সহজ কাজ।
জনস্টনস ক্যামেলিয়ন
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বিরুঙ্গা পর্বত। নাইরাগঙ্গো আগ্নেয়গিরির ছবি তুলবেন বলে জঙ্গুলে পথ বেয়ে পাহাড়ে চড়তে চড়তে ধৃতিমানের সঙ্গে দেখা জনস্টনস ক্যামেলিয়নের। ইনি পুরুষ। চেনা সহজ। পুরুষদের মাথায় থাকে তিনটি বড়ো বড়ো কাঁটা। দৈর্ঘ্য়ে ফুটখানেক। লেজটি সুবৃহৎ। এ জঙ্গলে পোকামাকড়ের অভাব নেই। ফলে ইনি বেশ হৃষ্টপুষ্ট।
বিরুঙ্গার জ্বালামুখ
বিরুঙ্গা পর্বতের মাথায় রয়েছে জ্বালামুখ। ভেতরে দাউ দাউ করে জ্বলছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি নাইরাগঙ্গো। পায়ে হেঁটে সেই পাহাড়ের ওপর চড়ে সেখান থেকে দেখতে হয় অন্ধকারে জ্বলছে লাল গলানো লাভাস্রোত। আগ্নেয়গিরির ছশো মিটারের মধ্যে ক্যামেরা-সহ দাঁড়িয়ে ধৃতিমান। একসঙ্গে গায়ে এসে লাগছে আগুনের তাত আর হিমেল হাওয়া।
নাইরাগঙ্গো
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরিগুলির মধ্যে অন্যতম এই নাইরাগঙ্গো। কখন অগ্ন্যুৎপাত ঘটাবে আগে থেকে বলা অসম্ভব। বাতাসে ভাসতে থাকে কড়া গন্ধকের ধোঁয়া। সারা রাত ক্যামেরা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে তাকে লেন্সবন্দি করেন ধৃতিমান।
আন্দামানের রূপসাগরে ডুব দিয়ে
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এ তো আমাদের ঘরের কাছেই! উড়োজাহাজে চড়লে ঘণ্টা কয়েকের পথ। কিন্তু আকাশে না উঠে যদি ডুব দেওয়া যায় ভারত মহাসাগরের গহীনে? তাহলে যে আন্দামানকে দেখা যাবে, তাকে কতজন চেনেন? ১৯৮৯ সালে স্কুবা ডাইভার জঁ কুস্তোঁ প্রথম আবিষ্কার করেন জলের তলার এই রঙিন প্রবালদ্বীপ। নাম দেন "অদৃশ্য দ্বীপপুঞ্জ"। এখানে কেবল মাছের প্রজাতির সংখ্যাই কম করে হাজার দেড়েক। তারই ছবি ধৃতিমানের ক্যামেরায়।
মৃত প্রবালে বাসা বেঁধে অক্টোপাস
একুশ শতকের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যথাসাধ্য যুঝে চলেছে ভারত মহাসাগরের প্রবালপুঞ্জ। সমুদ্র্রের জলের উষ্ণতাবৃদ্ধি, সুনামি, ২০১০ সালের কোরাল ব্লিচিং - এ সবের প্রভাবেই ক্রমাগত মারা যাচ্ছে প্রবালের দল। আর সমুদ্রের তলায় জমে উঠছে তাদের দেহাংশ। আর এই এবড়ো খেবড়ো প্রবাল-দেহাংশের মধ্যেই বাসা বাঁধে নানা সামুদ্রিক প্রাণি। যেমন ছবির এই জায়েন্ট অক্টোপাস।
উত্তর মেরুসাগরের বিষাক্ত জেলিফিশ
উত্তর মেরুসাগরের তলদেশে পাওয়া যায় এই দানবাকৃতি জেলিফিশ, যার ইংরিজি নাম Lion's Mane। সিংহের কেশরের মতোই ঝাঁকড়া এর সরু সরু দাঁড়া যা শয়ে শয়ে বেরিয়েছে উপরের জেলি থেকে। প্রতিটি দাঁড়ায় ভয়ানক বিষ, যার এক ছোবলে আধমরা হয়ে যেতে পারে মানুষ। প্রাণ হারাতে পারে বহু সামুদ্রিক জীব। এদের দৈর্ঘ্য কম সে কম ছ ফুট।
গ্রিনল্যান্ডের অতিকায় হিমশৈল
বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে এমনই দেখতে হয়েছে উত্তর মেরুর হিমশৈলগুলিকে। কোথাও বরফ গলে গলে ভাস্কর্যের মতো আঁকাবাঁকা ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে। আবার কোথাও বা সমতল বরফের চাঙড়, যাদের আয়তন যাত্রীবাহী জাহাজের চেয়েও বিশাল। এদের দেখে নাকি এককালে ঋতু পরিবর্তন বুঝতে পারতেন গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দারা।
জলের তলার জীবকূলকে ক্যামেরায় ধরতে
দক্ষিণ মেরু সাগরের নিচে ক্যামেরা হাতে ধৃতিমান। পরনে জলনিরোধক গরমজামার উপর ড্রাই স্যুট, দস্তানা, ফেস মাস্ক, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ক্যামেরা এবং জলের তলায় আলো ফেলার স্টোব লাইট। এ ছাড়া অতিরিক্ত ওজনজনিত প্লবতার সঙ্গে যুঝতে কোমরে ঝুলিয়েছেন সতেরো কেজি সীসের বাটখারা।

গত কুড়ি বছর ধরে লেন্সে চোখ দিয়ে একাগ্র ভাবে ক্যামেরা তাক করে চলেছেন ধৃতিমান মুখোপাধ্যায় – পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রান্তরে। কখনও বার্ড অফ প্যারাডাইসের সন্ধানে, কখনও বা আফ্রিকার জাগুয়ারের খোঁজে, কখনও আবার দক্ষিণ মেরুর হিমশৈলের নিচে প্রাণিজগতের আনাচ কানাচে উঁকি দিতে। জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি, বরফগলা জলস্রোত, ঘন জঙ্গল কিংবা ধূ ধূ মরুভূমি – সব জায়গায় অনায়াস অবাধ তাঁর পদচারণা। তাঁর নির্ভীক লেন্স অনবদ্য টাইমিংয়ে বন্দি করে চলেছে প্রকৃতির অন্তরালের একান্ত মুহূর্তগুলি। বন্যপ্রাণের ছবি তোলা ছাড়াও প্রকৃতি সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক ইতিহাস ইত্যাদি নানা বিষয়ে আগ্রহ ধৃতিমানের। সেই সংক্রান্ত অজস্র প্রোজেক্টে বিশ্বজুড়ে চলতে থাকে তাঁর কর্মকাণ্ড।  

সম্প্রতি বিবিসি-র তরফে ২০২০ সালের বর্ষসেরা আলোকচিত্রীর সম্মান পেলেন ধৃতিমান। সেই উপলক্ষে বাংলালাইভের পডকাস্ট বিভাগে প্রচারিত হতে চলেছে তাঁর একান্ত সাক্ষাৎকার। তার আগে পাঠককুলের জন্য রইল ধৃতিমানের দুনিয়ার ঝাঁকিদর্শন।

পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় আকারে স্থূল, প্রকারে কুল এবং জোকার-এ মশগুল। ভালোবাসেন মার্ভেল, ডিসি, আর যা কিছু ফিশি। পূর্বজন্মে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন। বর্তমানে বাংলার নেশায় বুঁদ। পরজন্মে গল-দের গ্রামে খোলা আকাশের নীচে গোল টেবিলে নৈশভোজের আসরে বসে বুনো শূকরের রোস্ট খেতে চান।