(Poetry)
ইতিহাস
গলায় পা দিয়ে তারা
কবরের দিকে ঠেলে দেয়।
শ্বাস আটকে আসে
মাটিতে সাঁতার কেটে
তবুও বাতাস আঁকড়ে ধরি।
মাটি দিয়ে
কবরের মুখ ঢেকে দেয়।
আঁচড়াই, চিৎকার করি
গলা দিয়ে লেখা বন্ধ হয়।
মাটির উপরে ওরা
তৈরি করে রঙিন বাজার।
ক্রমে ঘুম আসে, ঘুমে
দেখি ওরা ঘুমের ভিতর
আবারও কোপায় মাটি
আমাকে আবার গোর দেয়।

রাস্তা বদলাও
হারিয়ে যেতেই হয় যদি, তবে মাথার ভিতরে
এত ঝড় কেন, কেন পায়ের তলার মাটি
এত সরে যাওয়া?
হারিয়ে যেতেই যদি হয়, তবে বর্ম খুলে দিয়ে
আদুল শরীরে যাওয়া ভাল
মুখ ফেরানোর আগে ভাল মুখ ফিরিয়ে নেওয়াও-
যেভাবে প্রতিটি মৃত্যু ভেঙে ফেলে ভাঙাচোরা সাঁকো-
পিছুডাক মানে কিছু অহঙ্কারী বাঘ
তোমাকে অনুসরণ করতে করতে শান্ত হয়ে গেছে।
শিকারের মৃত্যু হলে, শিকারীরও খিদে মরে যায়।

উত্তর কলকাতা
এখন কবিতা লিখতে ভয় হয়, মনে হয়
সত্যি কথা বলে ফেলব বুঝি
কবিতা লিখি না তাই,
কারণ কবিতায় কোনও
মিথ্যে কথা লেখা যায় না অন্ধকারে বসে।
চলো তবে সিনেমার মতো আমরা ভালোবাসা খেলি
রক্তমাংসময় নয়, ফুলে ফুলে সঙ্গমের আশির দশকে
যেমন প্রেমের দৃশ্যে সিনেমাই লজ্জা পেয়ে যেত।
এখন তোমার চোখে
চোখ রেখে বসে আছে আমার ঈগল।
নিজেরই আয়নার সামনে বসে দেখছি
সে অন্ধ ভিখিরি
দু’চোখ নিজেই খুলে বলছেন, দেখতে চাই না আর
নিজেকে ঘৃণার মতো পবিত্র আদর কিছু নেই
সাদা-কালো লেখা: রাহুল পুরকায়স্থ
দৃশ্য
যাকে তুমি পুড়তে দেখেছ, সে আমারই দেহ
প্রতিটি মৃত্যুর গল্প ভিন্ন তবু পুড়ে যাওয়া এক
যে স্রোত সামান্য দেহ নিয়ে ভেসে যাচ্ছে সেও আমি
যে তুমি দেখেছ দৃশ্য, তুমিও কি আমি নও আজ?
যে শিশু তোমার হাত ধরে আছে, সেও আমি, শুধু।
ছায়া পড়ে আগুনের, যাকে তুমি আলো নামে ডাকো-
যে পোড়ায়, সে-ই পোড়ে, পুড়ে যাওয়া ভিন্ন নয় কোনও।
তুমি পুড়ছ, আমি পুড়ছি, আকাশ সময় ধুলো, গাছ
প্রতিটি মৃত্যুর গল্প ভিন্ন, তবু পুড়ে যাওয়া এক…

উপত্যকা
তোমাকে স্বৈরিণী ভাবি,
ভাবি পোশাকের গিঁট
আলগা হয়ে আসছে ক্রমশ
আঁচল কোথাও নেই, ফুটে উঠছে
বিভাজিকা, হ্রদ
সমস্ত শিকল ভেঙে
মাধুরীকে তছনছ করে
স্বাধীন, অস্পষ্ট নারী,
আইটেম নাচের মতো
সমস্ত লজ্জার মুখে ছাই দিয়ে তুমি ডেমি মুর
দেবী নয়, মূর্তি নয়,
ভাবি ছায়া আলো অন্ধকারে
ফাঁকা দরজার মুখে প্রসাধন মেখেছ খিদের
ভাবি মাংস পড়ে আছে,
হাড় নেই সুসজ্জিত আজ
ক্ষুধার্ত অচ্ছুৎমুখে
তুলে নিচ্ছ সাদা তরবারী
তোমাকে স্বৈরিণী ভাবি, প্রিয়তমা, দেবতার কাছে
কে তুমি উদোম, নষ্ট-
আমি কি নিহত হতে পারি?
আমি কি নিহত হতে পারি এই ক্ষণজন্মা হ্রদে?
সুখ
গভীর ঘুমের মধ্যে, কোথাও হয়তো তুমি আছ
আমারই দোসর, তবু, এত কেন আগুন লেগেছে?
আকাশে জ্বলন্ত ধোঁয়া, গাছে গাছে আদিম শ্মশান
দিগন্তে কলকাতা পোড়ে, আদিগন্ত ভারতের ছাই
উড়ে এসে পড়ছে জলে, কোনদিকে মানুষ পালায়?
তবে কি নিজেরই ঘুমে ডাক দেব, এসো পরিত্রাণ?
হয়তো কোথাও তুমি আছ, তাই ডাকিনি তোমায়-
আমার আরুণিজন্ম এ শহরে উপবাস চায়।
যেভাবে খরার মাঠে ফুটিফাটা গোপন খোঁদলে
জন্ম নেয় চারাগাছ, সেভাবেই আজ
হয়তো গভীর ঘুমে আছ তুমি, চেয়েছ আমায়।
হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা লেখার শুরু নয়ের দশকে। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দুইই পেয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে। মোংপো লামার গল্প, সব গল্প কাল্পনিক, রুদ্রবীণা বাজো, বিপন্ন বিস্ময়গুলি, এসো ছুঁয়ে থাকি এই লেখকের কিছু পূর্বপ্রকাশিত বই।