আগের পর্বের লিংক: [১] [২] [৩] [৪]
পাড়ার লোকজন বলত, ‘সুড়ঙ্গবাড়ি৷’ কেননা চারমুখওলা সুড়ঙ্গের ওপর দাঁড়ানো সে বাড়ি৷ পাড়ার লোকজন বলত, ‘রিফিউজি স্কুল’৷ কেননা স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্র রিফিউজি৷ বাংলায় বাস্তুহারা বা উদবাস্তু বা শরণার্থী বা ছিন্নমূল৷ সোজা কথায়, কাটা বাংলার পূর্বখণ্ডের খেদা-খাওয়া মানুষ৷ দাদুর কাছে এই সোজা সংজ্ঞা শিখেছে বালক৷ এমন কিছু ছাত্রও ছিল যারা রিফিউজি নয়৷ কিন্তু হদ্দ গরিব৷ এই গরিবরাও একপ্রকার রিফিউজি৷
বালক স্কুলে ভরতি হল৷ নাম মথুরানাথ-জগদীশ বিদ্যাপীঠ৷ ঠিকানা ডাঃ সুরেশ সরকার রোড৷ নম্বর মনে নেই৷ দূরে নয় এন্টালি থানা৷ আরও তিনটে স্কুল ছিল কাছাকাছি৷ একটা মথুরানাথের গায়ে৷ সারদা বিদ্যাভবন৷ মেয়েদের স্কুল৷ থানা পেরিয়ে কেরি বয়েজ মালটিপারপাস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল৷ এবং ব্যাপটিস্ট মিশন গার্লস হাই স্কুল৷ এই নামের মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা ধর্মের পরিচয় বা চিহ্ন আছে, বালক জানত না৷ মথুরানাথ-জগদীশ মানেও সে জানে না৷ কেরির ইউনিফর্ম ছিল গাঢ় নীল প্যান্ট আর সাদা জামা৷ ব্যাপটিস্টের লালফ্রক-সাদাজামা, ছোটদের এবং বড়োদের লালপাড় সাদা শাড়ি৷ মথুরানাথ-জগদীশের ইউনিফর্ম নেই৷ রোজকার পরবার জামাপ্যান্টই জোটে না৷ হাভাতেদের আবার কাচের বাসন!

হেডস্যার অনিলবরণ রায় সৌম্য সুদর্শন৷ টেবিলে বইখাতা ও বেত৷ এবং পেতলের ঘণ্টা৷ তিনি বাজালেন৷ পর্দা সরিয়ে একজন এলেন৷ প্রধান শিক্ষকের চেয়ারের পেছনে লাঠির মধ্যে গোল করে পাকানো কয়েকটা মোটা কাপড় কাঠের আংটায় আড়াআড়ি রাখা৷ বালক অবাক হয়েছিল ভেবে কাপড় দিয়ে কী করেন হেডস্যার৷ এন্টালি মার্কেটে সে দেখেছে কাপড়ের থান এভাবে গুটিয়ে রাখে৷ হেডস্যার বললেন, ক্লাস এইটে ইন্ডিয়ার ম্যাপ রেখে দাও৷ আর ওকে ক্লাস টু-তে বাণীস্যারের ঘরে নিয়ে যাও৷ লোকটি, পরে জেনেছে নাম ‘অনিল’, অনিল দপ্তরী, ওই গোটানো কাপড় একখানা তুলে নেয়, আর বলে, ‘আসো, আমার লগে আসো৷’
দু-নম্বরের একটা রুলটানা খাতা আর কাঠপেন্সিল নিয়ে ক্লাস টু-র দিকে বালক হাঁটতে লাগল৷ বাবা বললেন, ‘যাও৷ কোনো ভয় নাই৷ ল্যাখাপড়া করতে হবে মন দিয়া৷ স্যারেরা খুব ভালো৷ নতুন বন্ধুও পাইবা৷’ সেদিনের ছবিটা স্পষ্ট দেখা যায়, দুই থাকে ছ-টা বেঞ্চে গোটা কুড়ি পোলাপান৷ তারা দুলে দুলে ছড়া পড়ছে৷ ‘কটু বাক্য নাহি কবে৷ কুকাজে অখ্যাতি হবে৷’ বালক বাণীস্যারের সামনে বেঞ্চে বসে৷ একটি ছেলে সরে জায়গা করে দেয়৷ বালক অবাক চোখে বাণীস্যারকে দেখে৷ স্কুলের নামে যে ভয় সে পেয়েছিল, কেটে গেল মজাদার স্যারকে পেয়ে৷
উশকো-খুশকো ঝাঁকড়া চুল, ঘাড়ে বড়ো বড়ো লোম, মোটা ঝুলো গোঁফ, নাকের ডগায় চশমা, ঝুঁকে-বসা মোটাসোটা শরীরের বাণীস্যার৷ ভালুকের কথা মনে পড়ে যায় তার৷ দুপুরের দিকে ডুগডুগি বাজিয়ে পাড়ায় বাঁদর খেলা, ভালুক খেলা দেখাতে আসে মাঝে মাঝেই৷ নাকে দড়ি-বাঁধা ভালুক পেছনের পায়ে উঠে দাঁড়ালে যেমনটা দেখায়, বাণীস্যার ঠিক যেন তেমনি৷ সে বারবার, কখনও অল্প চোখ তুলে, কখনও আড়চোখে স্যারকে দেখেছে৷
– কী পঅড়ছ বাড়িতে? এবিসিডি জাআনো? কয় ঘরের নামতা জাআনো? নিজের নাম ল্যাখো৷ পরথমে বাংলায়৷ পরে ইঙ্গরাজিতে৷ গোটা গোটা কইরা লিখবা৷ বাবারে কইবা ইংরাজি হাতের ল্যাখার খাতা কিনা দিতে৷ এক ঘর ছাইড়া ছাইড়া লিখবা৷ ইস্, হাতের ল্যাখা কী খাআরাপ৷ মনে হয় কাগার পাআয়ের ছাআপ৷
পোলাপানরা দুলে দুলে পড়ে: ‘আরোগ্য সুখের মূল৷ কুবাচ্য কথার শূল৷’
বালকের খাতায় এক লাইন ইংরাজি লিখে দিলেন বাণীস্যার৷ বলেন,
– হাআতের ল্যাখা এইরহম হইলে তরে কোনো ইস্কুলে নিব না৷ আমি লেইখা দিলাম৷ পরথমে আমার ল্যাখার উপর পেন্সিল বুলাবি৷ পরে নীচে সাআদা জায়গায় নিজে লিখবি৷
বালক আড়চোখে দেখে উশকো খুশকো ঝাঁকড়া চুল, ঘাড়ে লোম, ঝুলো গোঁফ…৷ তার মাথার ভেতর ডুগডুগি বাজে৷

বালকের হাতের লেখা ‘ইস কী খারাপ’, এটা সে প্রথম শুনল৷ না দাদু, না দিদিমা, কখনও কিছু বলেনি৷ মহিমমুদির দোকান থেকে সদাই আনার লিস্টি সে নিজে লেখে৷ মহিমমুদিও বলেনি৷ কেউ তাকে হাতে ধরে অআ-কখ শেখায়নি৷ সে শিখেছে নীল আকাশের নীচে, তালতলা মাঠে, নীল টেরিলিনের শাড়ি-পরা সিস্টারদের কাছে, মাটিতে চাটাই পেতে বসে, টিনের স্লেটে হুমড়ি খেয়ে৷ হরেন মুখার্জির বাড়ির পেছনদিকের দেওয়ালে ব্ল্যাকবোর্ড ঝুলিয়ে সিস্টাররা লিখতেন৷ বালক সেটা দেখে দেখে টিনের স্লেটে লিখত৷ কী লেখা হল দেখবার ছিল না কেউ৷ “মে গাড ব্লেস ইউ” আর ‘প্রভু কহিলেন’ দিয়ে ক্লাস শুরু৷ এক কি দেড় ঘণ্টার মধ্যে শেষ৷ পুঁচকে কেক আর দুটো লজেন্স দিয়ে ছুটি৷
শীতের রোদ হয়তো তখন তালতলামাঠে শিশিরে শিশিরে লেগে আছে৷ দিদিমার পশমের চাদর গায়ে জড়িয়ে ঘাড়ের কাছে গিঁঠ দিয়ে দিত মা৷ কিংবা তখন গ্রীষ্মের রোদ খালি-গা বালকের ঘাড়ে গলায় বিনবিন ঘামাচি ওঠাচ্ছে৷ বর্ষায় তালতলামাঠ কাদা হয়ে গেলে স্কুলে ছুটি লম্বা৷ লম্বা লম্বা পা ফেলে বকের দল মাঠে ঘোরাঘুরি করে৷ এটাই বালকের প্রথম স্কুল৷ এখানে হাতের লেখা যেমন হবার তেমনি— বাণীস্যার বললেন,
– ইস হাআতের ল্যাখা কী খাআরাপ৷ মনে হয় কাআগার পায়ের ছাআপ৷
হেডস্যার অনিলবরণ রায় সৌম্য সুদর্শন৷ টেবিলে বইখাতা ও বেত৷ এবং পেতলের ঘণ্টা৷ তিনি বাজালেন৷ পর্দা সরিয়ে একজন এলেন৷ প্রধান শিক্ষকের চেয়ারের পেছনে লাঠির মধ্যে গোল করে পাকানো কয়েকটা মোটা কাপড় কাঠের আংটায় আড়াআড়ি রাখা৷ বালক অবাক হয়েছিল ভেবে কাপড় দিয়ে কী করেন হেডস্যার৷ এন্টালি মার্কেটে সে দেখেছে কাপড়ের থান এভাবে গুটিয়ে রাখে৷
সুড়ঙ্গস্কুলে মজা রোজ৷ চারমুখওলা সুড়ঙ্গের ভেতর দারুণ জমে ‘চোর চোর’ খেলা৷ সুড়ঙ্গের মাঝখানটা ঘন অন্ধকার৷ সেখানে লুকোলে চোখে পড়ে না৷ ওই মাঝখানটায় থকথকে কাদা, পা বসে যায়, একটা ঠান্ডা পা বেয়ে ওঠে৷ বেরিয়ে এসে ‘পানীয় জল’-এর ড্রামে লাগানো কলে দাঁড়িয়ে পা ধুয়ে নিতে হয়৷ ধোবার সময় আঁশটে গন্ধ নাকে লাগে৷ সুড়ঙ্গ কেন? পরে সে জেনেছে, আসলে, জায়গাটা খুব নিচু৷ বর্ষায় জল দাঁড়িয়ে যায়৷ সে কারণে ইটের পিলার গেঁথে গেঁথে ভিত উঁচু করে বাড়ি বানান জনৈক মথুরানাথ৷ ওটা তাঁদের বসতবাড়ি ছিল৷ সুড়ঙ্গে ‘চোর চোর’ খেলা মজার হলেও প্রথম প্রথম ঢুকতে ভয় পেয়েছে বালক৷ বন্ধুরা ডেকেছে, চলে আয়, এই তো আমরা৷
ক্লাসরুমগুলোর ছবি অনেকটা এইরকম: বিরাট হলঘর একটা৷ তার গায়ে চারটে বড়ো ঘর৷ ঘরগুলো কাঠের পার্টিশন দিয়ে আলাদা৷ অনেক উঁচু কড়িবরগা থেকে লম্বা রডে ঝোলে মোটাপেট চার ব্লেডওলা পাখা৷ বিরাট হলঘরের একটি অংশ পার্টিশন দিয়ে হেডস্যারের ঘর৷ দুটো সিঁড়ি৷ ছোটোটি সম্ভবত পরে বানানো৷ সেখান দিয়ে হেডস্যারের ঘর আর অফিসঘর৷ বড়ো সিঁড়ি দিয়ে সব ক্লাসরুমে পৌঁছে যাওয়া যায়৷
সুড়ঙ্গস্কুলে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছে বালক৷ শিখেছে কী কিছু? মনে তো পড়ে না৷ মনে পড়ে, বিশাল কাঠবাদাম গাছ স্কুলগেটের ডানদিকে৷ টিনের চালায় ঢুপঢাপ পড়ে কাঠবাদাম৷ পাঁচিল বেয়ে উঠে সেগুলো ছুড়ে ছুড়ে বন্ধুদের দেওয়া৷ দরোয়ানজি, মানে পণ্ডিতজির ঢোলা খাকি হাফপ্যান্ট থেকে বেরিয়ে আসে বড়োসড়ো ছুরি৷ কচকচ শব্দে খুলে গেলে ঝলসে ওঠে ঝকঝকে ধার৷ ঠুকে ঠুকে ভাঙা কাঠবাদামের ভেতরটা চিরে দেয় সেই ছুরি৷ মনে পড়ে, স্কুল শেষ হয়ে গেলে, চাতাল জুড়ে তখনও ছোটদের খেলা ফুরোয়নি, ছোট সিঁড়ির পাশে পণ্ডিতজির ঘর থেকে রুপোলি রঙের কয়লার উনুন বেরিয়ে আসে ‘পানীয় জল’-এর পাশে৷ ধোঁয়া ওড়ে৷ শিলনোড়ায় মশলা বাটার শব্দ৷ আর, পণ্ডিতজির গান ‘জয় জয় রঘুপতি রাঘব’৷ পাশের গার্লস স্কুল সারদা বিদ্যাভবনের কর্মী ধুতিশার্ট পরা ছিপছিপে লালজি আসেন, মিহিস্বরে মুলুকের কথা বলেন৷

আরও মজার, এই সুড়ঙ্গস্কুলে যাবার যে পথ, বিরসুল হাটের পাশে পেট্রোল পাম্প বাঁদিকে রেখে ফুলবাগান দিয়ে ঢুকে পদ্মপুকুর পার্ক পেরোলেই ভেসে আসে আচারের গন্ধ৷ কতরকম গন্ধ৷ কোনটা লেবু, কোনটা চালতা, কোনটা খেজুর, কোনটা আনারস বালক চেনে না, আচারগন্ধের পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে সে কারখানার গেটে দাঁড়াত খানিক৷
আচারগন্ধের পথ একদিন বন্ধ হয়ে গেল৷ বালককে আর মথুরানাথে যেতে হবে না৷ সে ক্লাস সিক্সে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছিল৷ পাশ করেছিল কিনা, ক্লাস সেভেনে উঠেছিল কিনা জানতে পারেনি৷ তাকে মার্কশিট দেওয়া হয়নি৷ কারণ, আট মাসের ক্লাস ফি ও এক বছরের ডেভেলপমেন্ট ফি বাকি৷ হাফইয়ার্লি পরীক্ষায় তাকে বসতে দেওয়া হয়েছিল এই ভেবে, যে পরে বেতনটা নিয়মিত দেবে৷ তাকে অনেকবার বলা হয়েছে৷ অভিভাবককে ডাকা হয়েছে৷ তিনি আসেননি৷ সুতরাং মৌখিকভাবেও রেজাল্ট জানানো হবে না৷ সিঁড়ির নীচের ধাপে, পণ্ডিতজির ঘরের পাশে দাঁড়িয়েছিল বালক বিকেলের পরেও৷ স্যারেরা বেরিয়ে গেছেন৷ পণ্ডিতজি নিশ্চয় গেয়েছিলেন, জয় জয় রঘুপতি রাঘব৷
একবছর নষ্ট৷ পরের বছর বেনেপুকুর বিদ্যাপীঠ৷ লিন্টন স্ট্রিট ধরে যেতে হয়৷ পথে বাঁ-হাতে পড়ে আত্মশক্তি ব্যায়ামাগার৷ তারপর নির্মলেন্দু চৌধুরীর বাড়ি৷ এরপর বাঁ-দিকে ঘুরে আর-একটু এগোলেই ডান-হাতে স্কুল৷ আবার ক্লাস সিক্স৷ প্রোমোশানের মার্কশিট নেই৷ পরীক্ষায় বসতে হল৷ এক স্যার নাকি জানিয়েছিলেন, ফাইভে বসলে ভালো হয়৷ ইংরেজি-অঙ্কে বেশ পুওর৷ ঠিক আছে, ক্লাস সিক্সে ভরতি হোক৷ লেখাপড়ায় যত্ন নিতে হবে৷
কেউ তাকে হাতে ধরে অআ-কখ শেখায়নি৷ সে শিখেছে নীল আকাশের নীচে, তালতলা মাঠে, নীল টেরিলিনের শাড়ি-পরা সিস্টারদের কাছে, মাটিতে চাটাই পেতে বসে, টিনের স্লেটে হুমড়ি খেয়ে৷
এই স্কুলটা মথুরানাথের তুলনায় একেবারে অন্যরকম৷ ছায়াঘেরা দোতলাবাড়ি৷ কয়েক ধাপ পেরিয়ে একতলা৷ চওড়া দেওয়াল৷ নিরিবিলি৷ মথুরানাথের হইচই নেই৷ ক্লাসে ঢুকলে পড়ায় প্রবেশ করতে হয়৷ এখানেও পড়া হল না৷ কারণ, বালকের বই নেই৷ বই না থাকলে ক্লাসের পড়া করবে কীভাবে? হাফইয়ার্লি পরীক্ষার আগেই বন্ধ হয়ে গেল স্কুল যাওয়া৷ বই কেনার সামর্থ্য নেই পরিবারের৷ এর ওর বই থেকে টুকে কতদিন পড়া যায়? তাছাড়া রিফিউজি ছেলেকে বই কে দেয়?
মনে পড়ে, স্কুলবাড়ির সামনে ছোট্ট আঙিনায় ছড়িয়ে থাকত রাশি রাশি খুচরো পয়সা৷ গাছের ডালপালার ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে পড়া গোল গোল রোদ৷ মনে পড়ে, দিনজুড়ে সিঁড়িজুড়ে গড়াগড়ি হলুদ উলের অজস্র বলের৷
পড়া হল না৷
পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ১৩ জুন ২০২২
*ছবি সৌজন্য: লেখক, The Print
মধুময়ের জন্ম ১৯৫২ সালে পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহে, কিশোরগঞ্জে। লেখাপড়া কলকাতায়। শৈশব-যৌবন কেটেছে স্টেশনে, ক্যাম্পে, বস্তিতে। গল্প লিখে লেখালেখি শুরু। পরে উপন্যাস। বই আখ্যান পঞ্চাশ, আলিঙ্গন দাও রানি, রূপকাঠের নৌকা। অনুসন্ধানমূলক কাজে আগ্রহী। পঞ্চাশের মন্বন্তর, দাঙ্গা-দেশভাগ, নকশালবাড়ি আন্দোলন নিয়ে কাজ করেছেন। কেয়া চক্রবর্তী, গণেশ পাইন তাঁর প্রিয় সম্পাদনা। প্রতিমা বড়ুয়াকে নিয়ে গ্রন্থের কাজ করছেন চার বছর। মূলত পাঠক ও শ্রোতা।
2 Responses
ছোট্ট বেলার কথা মনে পড়ে যায়।আমিও একরকম বাস্তুহারা পরিবারের সদস্য। ইস্কুলে প্রথম দিন টা এখনও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দুরূ দুরূ , ভীত গ্রস্থ এক বালক ক্লাসে ঢুকলাম। শিক্ষক মহাশয় প্রথম ঢুকেই টেবিলে একটা লম্বা বেত আর রোল কলের খাতা রেখে সবাই কে বললেন “তরা এক এক কৈরা নাম আর বাবার নাম ক”…..…আমার পালা এলে ভয় মেশানো গলায় বললাম সব। “”বয়, অহনে আমি তগো নাম নিমু” ….রোল নম্বর ধরে থাকলেন ….””প্রেজেন্ট স্যার, উপস্থিত, আমি সরকার”” বলে জানান দিলাম সবাই। সেদিনের মত ক্ষ্যান্ত । কিন্তু, ঐটুকু সময় যেন মণি কোঠায় জ্বল জ্বল করছে আজো। আহা, যদি এমন হতো ….টাইম মেশিনে বা রিওয়াইনড করে ঐদিন টায় চলে যেতে পারতাম???ই
বালকের ভয় ও বিস্ময় মেশানো চোখ দিয়ে খুব সুন্দরভাবে ঐ অতীত উঠে আসছে, উঠে আসছে বাস্তুহারা পরিবারের স্বপ্ন ও সংকট, অসহায়তা, এই আখ্যান আমাদের দেশের এমন দুঃসময়কে তুলে ধরছে সচরাচর অনেকে মিলে সেই সময়কে চাপা দিয়েই রাখতে চান বা চেয়েছেন এতকাল!