বয়সটা নেহাত কম হলে কী হবে, প্রতিভা কিন্তু আকাশচুম্বী! ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় ভালবাসেন না, এমন দর্শক বিরল। আপাতত তাঁকে দেখা যাবে এক জুনিয়র গোয়েন্দার ভূমিকায়। তবে এ বছর একটু কম সংখ্যক ছবি করে নাটক এবং পড়াশোনায় মন দিতে চান ঋতব্রত। বাংলালাইভ -এর সঙ্গে আলাপে সদ্য তরুণ অভিনেতা।
প্র: ‘গোয়েন্দা জুনিয়র’-এ বাঙালি দর্শকের কাছে নতুন গোয়েন্দা হতে পেরে কেমন লাগছে?
উ: ভালই লাগছে। ছোটবেলায় গোয়েন্দা গল্প পড়ে বা সিনেমা দেখে সকলেরই বোধহয় মনে হতো, আমি নিজেই একজন গোয়েন্দা! সেটা খেলনা বন্দুক হাতে নিয়ে ডিটেকটিভ সেজে বা আর একজন বন্ধুকে অজিত সাজিয়ে নানা ভাবে হয়ে এসেছে আর কী। আমি নিজে ফেলুদা সেজে, এক বন্ধুকে তোপসে সাজিয়ে গোয়েন্দা-গোয়েন্দা খেলতাম! সেখান থেকে একটু বড় বয়সে ফাইনালি যে পর্দার গোয়েন্দা হতে পেরে ভাল তো লাগবেই। শুনছি তো ভেঙ্কটেশের এটা নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি করারও ইচ্ছে রয়েছে।
প্র: চরিত্রটা কেমন?
উ: এক জন স্কুল স্টুডেন্ট। ভীষণ শার্প তার মাথা। নিজের সমস্যা সমাধান ক্ষমতা দিয়ে রহস্যের সমাধান করে। আরও মজার বিষয় যেটা ছবিটা করার আগে মৈনাকদা (ভৌমিক, পরিচালক) আমাকে বলেছিল, যে চরিত্রটি জানেই না যে সে ব্রিলিয়ান্ট! অর্থাৎ তার মধ্যে একটা ইনোসেন্স রয়েছে। সঙ্গে তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, স্কুলের ট্র্যাকও আছে। সঙ্গে জুড়েছে গোয়েন্দা গল্প।
প্র: এখন গোয়েন্দা গল্প পড়ার সময় হয়?
উ: কুড়ি বছর বয়স হয়ে গিয়েছে তো, এখন আর নতুন করে গোয়েন্দা গল্প বলতে গেলে পড়িই না। ইচ্ছে হলে ব্যোমকেশটা নামিয়ে হয়তো আবার পড়লাম। ‘মাকড়সার রস’ আমার খুব প্রিয়। মাঝেমধ্যেই পড়ি।
প্র: এখন তো প্রায় আধ ডজন ব্যোমকেশ, এক জোড়া ফেলুদা বাংলা বিনোদনের বাজারে রমরম করছে। তার মধ্যে আবার একটা গোয়েন্দা নিয়ে কি দর্শকের কাছে একঘেয়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে?
উ: আমার একটা কথা খুব মনে হয়। একটা স্ট্যান্ডার্ড গোয়েন্দা গল্পে অভিনেতার তেমন কিছু করার থাকে না। যদি না সেটা বিবিসি-র ‘শার্লক’-এর মতো বিভিন্ন ডাইমেনশনে বানানো একটা শো হয়। তবে একঘেয়ে হওয়ার প্রেশার আমার উপরে নেই। বড় গোয়েন্দা ক’জন আছে, ছোট গোয়েন্দা কত জন হল, কেমন বিক্রি হল, ক’টা লোক দেখল, এগুলো নিয়ে আমি সত্যিই মাথা ঘামাই না। আমার মনে হয়েছে, বাঙালি দর্শক গোয়েন্দা গল্প দেখতে খুবই ভালবাসেন। না হলে অঞ্জন দত্ত, অরিন্দম শীলের ব্যোমকেশ, হইচই-এর ব্যোমকেশ সবই এত জনপ্রিয় হতো না। মানুষ গল্পটা জানা হলেও ব্যোমকেশ-ফেলুদা দেখতে যায়। সেখানে একটা প্লাস পয়েন্ট হল, আমাদের ছবিটা মৌলিক গল্প, নতুন গোয়েন্দা। বাচ্চা গোয়েন্দা দেখার একটা ইন্টারেস্ট হবেই।
প্র: তা এই টিনএজার ডিটেকটিভের কি টিনএজ ক্রাশ রয়েছে?
উ: হ্যাঁ। সেরকম একটা চরিত্র রয়েছে। অনুষা বিশ্বনাথন চরিত্রটা করেছে।
প্র: শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় এই ছবিতেও আছেন। বাবাকে সেটে পাওয়ার সুবিধে রয়েছে নিশ্চয়ই কিছু?
উ: ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে থিয়েটার করে বড় হয়েছি। সুতরাং বাবার সঙ্গে পেশাদারি কাজ করার ব্যাপারটা অনেক দিন ধরেই হচ্ছে। সিনেমার ক্ষেত্রে ‘পর্ণমোচী’তে কাজ করেছি, ‘রক্তরহস্য’, ‘জেনারেশন আমি’ আর ‘গোয়েন্দা জুনিয়র’। বাবার সঙ্গে কাজ করার সুবিধে হল, একটা স্ক্রিপ্ট দু’জনেই পড়ার পরে বাবার যে মতামত, প্রতিক্রিয়া বা পরামর্শ সেটা আমি সরাসরি পেয়ে যাই। আর একটা ব্যাপার হল, এই ছবিটা আমরা এত তাড়াতাড়ি শুট করেছি, যে বলার নয়। প্রোডাকশনও অবাক হয়ে যাচ্ছে, এত তাড়াতাড়ি শুটিং হচ্ছে কী করে!
প্র: থিয়েটার, সিনেমার পাশাপাশি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যর পড়াশোনা… এত কম বয়সে এতটা চাপ মাঝে মাঝে সমস্যা তৈরি করে না?
উ: আমি যে প্রচুর ছবি করি, তা নয়। গত বছর একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। তাই ভেবেছিলাম, এ বছর একদম সিলেক্টিভ কাজ করব বা একেবারেই করব না। ‘গোয়েন্দা জুনিয়র’টা হঠাৎ করেই হয়েছে। সামনে আর কোনও কাজ নেই এবং আমি করতেও চাই না। কারণ তার কোনও প্রয়োজন দেখছি না। আসলে একটা ছবিতে লিড চরিত্র করার জন্য ১৫-২০ দিনের একটা সময় বার করতে হয়। এবং সেটা বিরাট চাপ নিয়ে করতে হয়। সবাই আমাকে বলে, তোর তো সময়ই নেই যোগাযোগ রাখার… সময়টা কিন্তু সত্যিই হয় না। শুটিংয়ের সময়টায় স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করতে হয়, পারফরম্যান্সের প্রেশার নিতে হয়, ভাল খেতে হয়, সময়মতো ঘুমোতে হয়, এক্সারসাইজটাও করতে হয়। টানা ১৫ দিন এই প্রেশারটা নিলে আর কিচ্ছু করার সময় পাওয়া যায় না। তার মধ্যে ২২ অগস্ট দলে নতুন নাটক নামছে। লোকে বলে না, যে নতুন নাটক নামা আর মেয়ের বিয়ে দেওয়া একই ব্যাপার। একদম সত্যি কথা। এত রকমের কাজ থাকে দলে, যে খুব চাপ পড়ে। তবে ব্যালান্স করাটা এখন বেশ খানিকটা শিখে নিয়েছি। কারণ সেটা শেখাটা খুব দরকারি।
প্র: এতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে না?
উ: তুলনামূলক সাহিত্য পড়ার জন্য যে পড়াশোনাটা দরকার, সেটা আমি করছি না। পাঁচ দিন হয়ে গেল, একটা বই নিয়ে পড়ে আছি। সময় হচ্ছে না বলে। ফোনে বই পড়াটা আমি পছন্দ করি না। ফলে মিস আউট হয়ে যায়। আমি এমনিতে হ্যাংআউট করতে অতটা পছন্দ করি না। কিন্তু এমনি গ্যাদারিং বা ভাল ভাল নাটক-সিনেমা হলে গিয়ে দেখাটা মিস হয়ে যায়।
প্র: গোয়েন্দা জুনিয়রের না হয় এক জন ক্রাশ আছে। ঋতব্রতর ক্রাশ কে?
উ: ছোটবেলা থেকে ধ্যানজ্ঞান সব দিয়ে যাকে আমি ভীষণ পছন্দ করি, সে হল এমা ওয়াটসন। যে বললে, আমি চলেও যেতে পারি তার কাছে। অসম্ভব পছন্দ করি ওকে। চার ফিট দূর থেকে দেখলেও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারি! এ ছাড়া পছন্দ করি এমা স্টোনকে। ‘নারকোস’-এ যে অভিনেত্রী পাবলো এস্কোবারের স্ত্রী হয়েছেন, তাঁকেও ভাল লাগে (পওলিনা গাইতান)। আর হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রি থেকে যদি কারও কথা বলতে হয়, তিনি কালকি কেকলাঁ।