কলামের অন্যান্য পর্ব: [১] [২] [৩] [৪] [৫] [৬]
দেশ দেশান্তরে থেকেও বাঙালির কোনও চিরস্থায়ী বাসভূমি হল না। প্রবাসে প্রথম পর্বে হয় ছাত্রজীবন, নয়তো গ্রিন কার্ড আর মার্কিন নাগরিকত্বের কারণে চাকরি-সূত্রে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে চলে যাওয়া। বাড়ি বদল করতে করতে বহু বাঙালি পরিবার ইস্ট কোস্ট থেকে ওয়েস্ট কোস্টে চলে গেছে। কেউ গেছে ম্যাসাচুসেটস্ থেকে টেক্সাস, অ্যারিজোনা। আবার আমাদের মতো অনেকেই প্রবাস-জীবনের প্রথম শহর নিউইয়র্কের মায়া কাটাতে না পেরে তার উপকণ্ঠে থেকে গেলাম। হাডসন নদীর এপারে নিউজার্সি স্টেটের এই ওয়েন শহরেই আছি আজ প্রায় আটচল্লিশ বছর। মাঝে শুধু দু’বার বাড়ি বদল করেছি।
সারা নিউ জার্সিতে পরিচিত বাঙালি সমাজ, বন্ধুবান্ধব, লতায়-পাতায় আত্মীয়-স্বজন, নিজেদের ক্লাব ‘কল্লোল অফ্ নিউ জার্সি’র দুর্গাপুজো, বঙ্গ সম্মেলন ইত্যাদি ছাড়াও বিপদে-আপদে দীর্ঘদিনের আমেরিকান প্রতিবেশীর সাহায্য, লোকবল — সব কিছুর মধ্যেই কেমন যেন নিরাপত্তাবোধ কাজ করে। তবে তো এখানেই শেষের সেদিনের প্রতীক্ষায় থাকার কথা। হয়তো তাই ঘটবে। তবু স্বর্গের আগের স্টেশন যে কোথায় হবে, এমন একটা ভাবনা মাথার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।
তার কারণ, সম্প্রতি অনেকেই দেখছি নিজেদের ছেলেমেয়েদের কাছাকাছি থাকার প্রয়োজনে বাড়ি, ঘর-দোর বিক্রি করে অন্যান্য স্টেটে চলে যাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের বক্তব্য— তোমাদের বয়স হয়ে যাচ্ছে। যতই উইক-এন্ডে পার্টি করো, শরীর-টরির তো মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়। মনের জোরে বেশিদিন চালানো যায় না। একটা এমার্জেন্সি হলে তো সানফ্র্যানসিস্কো, নয়তো অ্যাটল্যান্টা থেকে আমাদেরই ফ্লাইট নিয়ে পৌঁছতে হয়। এভাবে টেনশন নেওয়া আর সম্ভব নয়। এবার আমাদের কাছে চলে এসো। আমাদের ছেলেমেয়েরাও চায় দাদু, ঠাকুমা, দিদিমারা কাছাকাছি থাকবে। অতএব রিয়েল এস্টেট এজেন্টকে ডেকে বাড়িটা বিক্রির জন্যে দিয়ে দাও। মুভ করার আগে আমরা গিয়ে বাড়ির সবকিছু ফেলে দিয়ে তোমাদের নিয়ে চলে আসব। ইন দ্য মিন টাইম, তোমরা স্যালভেশন আর্মি, ভিয়েতনাম ভেটারেন, আফগান রেফিউজিদের সেন্টারে ফার্নিচার, বাসনপত্র, জামাকাপড় যত পারো ডোনেট করতে শুরু করো। ট্রাই টু থ্রো-অ্যাওয়ে অলমোস্ট এভরিথিং।

এই হুকুম তামিল করতে গিয়ে বুড়ো, আধবুড়ো কত বাঙালি যে দাতা হর্ষবর্ধন হয়ে বাড়ি বিক্রি করে চলে যাচ্ছে। যারা খুব জেদি, তারা অবশ্য ভিটে ছেড়ে নড়ছে না। নয়তো, সাধের সংসার থেকে প্রচুর জিনিস প্যাক করিয়ে আবার অন্য শহরে ছেলেমেয়ের বাড়ির কাছাকাছি ছোট বাড়ি কিংবা টু-বেডরুম অ্যাপার্টমেন্ট কিনে চলে যাচ্ছে। কারণ, ছেলেমেয়ের সংসারে স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে, কে বাঁচিতে চায়!
আমরাও যে মেয়ে, জামাই-এর কাছ থেকে আভাসে-ইঙ্গিতে এরকম কথা শুনছি না তা নয়। ওরা থাকে কানেটিকাট স্টেটে, গ্রিনিচ শহরে। গাড়িতে দূরত্ব সওয়া ঘণ্টার বেশি নয়। নিয়মিত যাওয়া-আসা করি। কিন্তু হঠাৎ এমার্জেন্সি হলে দু’পক্ষেরই টানাপোড়েন। এত বছরে কতবার যে ওরা মাঝরাতে ফোন পেয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো আমাদের জন্যে হাসপাতালে চলে এসেছে! সবই বুঝি। তবু, এখনই পাততাড়ি গুটিয়ে কানেটিকাট চলে যেতে ইচ্ছে করে না। চেনা পরিবেশ ছেড়ে চলে গিয়ে নিউ জার্সির সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবন থেকে ক্রমশই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। আর কত বছরই বা এত দূর গাড়ি চালিয়ে যোগাযোগ রাখতে পারব?
যাই হোক, আপাতত ‘থ্রো অ্যাওয়ে অলমোস্ট এভরিথিং’-এর দুর্ভাবনায় বহু অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র শহরের ‘রি-সাইকল সেন্টারে’ জমা দিয়ে আসছি। মাঝে মাঝে পুরনো জামাকাপড়ের বস্তা তুলে নিয়ে যাচ্ছে ‘ভিয়েতনাম ভেটারেন্’ আর ‘স্যালভেশন আর্মি’র ট্রাক। একদিন মেয়ে ফোন করে বলল, ‘আফগান রেফিউজি সেন্টার’-এর জন্যে ওকে যদি কয়েকটা পুরনো বেনারসি শাড়ি দিয়ে দিই। আমি তো অবাক! কাবলিওলারা বেনারসি পরবে? শুনলাম তাদের মধ্যে মহিলারা নাকি দর্জির কাজ জানে। চারটে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি বেনারসি চালান করে দিলাম। আফগান রেফিউজিদের সেলাই মেশিন কেনার ফাণ্ড আর বাচ্চাদের নতুন জামা, জুতো কেনার ফাণ্ডের জন্যেও ডোনেশন দিলাম। তারপর একদিন ওই রেফিউজি সেণ্টারে ভলাণ্টারি কাজ করতে গিয়ে মেয়ে দেখে এল— সেই পুরনো বেনারসি কেটে কুর্তা টাইপ জামা সেলাই হচ্ছে। ওর সমাজসেবায় সাহায্য করতে এবার ভাবছি কয়েক বাক্স বাসনপত্র দান করব। আফগান আর হেশিয়ান (হেইতির ভূমিকম্পের পর যারা আমেরিকায় অ্যাসাইলাম পেয়ে চলে এসেছে) রেফিউজি সেন্টারের জন্যে! কেষ্টার মতো পুরাতন ভৃত্য নেই বলে বাসনকোসন ভাঙেও না তো সহজে। এভাবেই পুরাতন বাসনপত্রের সদগতি হবে কাবলিওলার রান্নাঘরে।
সম্প্রতি আমাদের এক আত্মীয় ডঃ বিমলেন্দু গাঙ্গুলি আর তাঁর স্ত্রী ডঃ রাখী গাঙ্গুলি নিউইয়র্কে লং আইল্যান্ডের এত বছরের বাস উঠিয়ে তাদের ছেলের কাছে অ্যাটল্যান্টায় চলে গেলেন। কতদিনের সম্পর্ক আমাদের। আর কি সহজে দেখা-সাক্ষাৎ হবে। চলে যাবার আগে রাখী বলেছিল, আমার বর কোনও বইপত্র ফেলতে দেবে না। সমস্ত বই প্যাকিং বক্সে ভরে অ্যাটল্যান্টা পাঠাচ্ছে। তাও কি সব নেওয়া সম্ভব? ব্যোমকেশ, কিরীটি অমনিবাস এর মধ্যেই অ্যাটল্যান্টায় ছেলের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। বাকি আছে হেমেন্দ্রকুমার, স্বপনকুমার। আর বোধহয় নেওয়া যাবে না।

আমি চমকে উঠলাম। হেমেন্দ্রকুমার রায়, স্বপনকুমারকে ফেলে যাবে? আমাকে দিয়ে যাও। অ্যাটল্যান্টা যাওয়ার আগে যেদিন তোমরা এখানে আসবে, প্লিজ, ওঁদের বস্তাবন্দি করে নিয়ে এসো।
শেষ পর্যন্ত সেভাবেই তাঁরা এলেন। হেমেন, প্রেমেন (গোয়েন্দা পরাশর বর্মার গল্প নিয়ে) আর শ্রী স্বপনকুমার। বই-এর ভারে বস্তা দুটো এত ভারি ছিল যে, তাদের ঝুঁটি ধরে বাড়ির বেসমেন্ট থেকে মোট চব্বিশটা সিঁড়ি ভেঙে দোতলার স্টাডিরুমে টেনে আনতে গিয়ে আমার স্বামী ভবানী মন্তব্য করলেন—”এগুলো কার্পেটের ওপরেই রেখে দিচ্ছি..কোনও বুক-শেলফে আর জায়গা নেই।” খুব সত্যি কথা। বই-এর ভারে দেওয়াল জুড়ে গন্ধমাদন পর্বত। একদিন তার চূড়া থেকে বিমল করের ‘পঞ্চাশটি গল্প’ টেনে নামাতে গিয়ে ইয়া মোটা শিবরাম সংকলন ধুম করে চোখের ওপর এসে পড়ল। চোখে কালশিটেও পড়েছিল।
যাই হোক, এবার গোয়েন্দা গল্পের কথায় আসি। ক্রাইম থ্রিলার সম্পর্কে ডাক্তারদের নাকি খুব আগ্রহ থাকে। বিমলেন্দু গাঙ্গুলি পেশায় সাইকিয়াট্রিস্ট। প্রাইভেট প্র্যাকটিস ছাড়াও দীর্ঘদিন নিউইয়র্ক স্টেটের কুখ্যাত প্রিজন ‘রাইকার্স আইল্যান্ড’-এ চাকরি করেছেন। সেখানে বন্দি থাকা সিরিয়াল কিলার, রেপিস্ট, ড্রাগ অ্যাডিক্ট, স্কিৎসোফ্রেনিক ও অন্যান্য মানসিক রোগগ্রস্ত ভায়োলেন্ট অপরাধীদের চিকিৎসা করতেন। জেলে সিকিওরিটি থাকা সত্ত্বেও, ভায়োলেন্ট রোগীদের আচমকা আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে ক্রিমিন্যাল সাইকোলজি সম্পর্কে জানার জন্যে নয়, স্কুলে পড়ার বয়স থেকেই সবরকম বই-এর সঙ্গে গোয়েন্দাকাহিনী পড়ার প্রচণ্ড নেশা ছিল। সে জন্যেই ডাক্তারি পাশ করে আমেরিকায় চলে আসার পরে ও দেশ থেকে গাদা গাদা রহস্য কাহিনি কিনে আনতেন। তারই দু’বস্তা সংগ্রহ নিয়ে আমি এখন মশগুল হয়ে আছি।

দেশে থাকতে স্কুল, কলেজ জীবনে আগাথা ক্রিস্টি, আর্থার কোনান ডয়েল ইত্যাদি পড়লেও, সেভাবে ইংরেজি ক্রাইম নভেল বা “পাল্প ফিকশন” জাতীয় বইটই পড়ার সুযোগ পাইনি। বাংলায় ডিটেকটিভ গল্পের নেশা ছিল। শরদিন্দু, নীহাররঞ্জন, হেমেন্দ্র কুমার, প্রেমেন্দ্র মিত্র এঁদের লেখাই পড়েছি। আমরা ‘আনন্দমেলা’ পড়ে বড় হইনি। ফেলুদা, কাকাবাবু ও শীর্ষেন্দুর “হারানো কাকাতুয়া” পড়ে শিহরণ, সবই হয়েছিল এদেশে এসে। ততদিনে আমেরিকান ক্রাইম থ্রিলার পড়ার নেশা ধরে গেছে। জেমস প্যাটারসন, জন গ্রীশাম, নেলসন ডিমিল, স্টিফেন কিং, প্যাট্রিসিয়া কর্নওয়েল, ড্যান ব্রাউন, এঁদের লেখা বই পড়ছি। অক্টোবর মাস হচ্ছে আমেরিকায় ‘ন্যাশনাল বুক মান্থ’। জেমস প্যাটারসনের রহস্য সিরিজ ‘অ্যালেক্স ক্রস’-এর সাতাস নম্বর বই “ফিয়ার নো ইভিল” বাজারে এসে গেছে। বিখ্যাত লেখক জন আর্ভিং-এর সদ্য প্রকাশিত বই ‘দ্য লাস্ট চেয়ার লিফট’ উপন্যাসে প্রেম আর ভৌতিক অনুভূতি মিলেমিশে আছে। সেই ভালবাসা আর ভূত-কাহিনি অবশ্য এখনও পড়া হয়নি।
এরই মাঝে হঠাৎ আমার শয়নে স্বপনে স্বপনকুমার। সত্যি বলতে কি ছোটবেলায় সেভাবে গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জী আর তার সহকারী রতনের রোমহর্ষক গল্পগুলো পড়ার সুযোগ পাইনি। আমাদের লেক মার্কেট পাড়ার ‘কিশোর বুক স্টল’-এ বা ‘কল্পতরু’ নামে বই-এর দোকানে আট আনা সিরিজের বই-টই পাওয়াও যেত না। তখন আমার অদেখা প্রেমিক কিরীটি রায়। আমার স্কুলের বন্ধু নন্দিনী সেনগুপ্তর মামা ছিলেন ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত। নন্দিনীকে বলেছিলাম—“তোর বড়মামাকে বলিস, কিরীটির বন্ধু সুব্রতর যেন বিয়ে না হয়!” কিন্তু নীহাররঞ্জন গুপ্ত ‘বেবী’ নামে এক প্রেমিকাকে এনে সুব্রতর বিয়ে দিয়ে দিলেন। সেদিক থেকে শ্রীস্বপনকুমার তাঁর নায়ক দীপক চ্যাটার্জীকে চিরকুমার রেখে ভালই করেছিলেন। নির্ঘাৎ কিছু পাঠিকাকে ধরে রাখতে পেরেছিলেন।
কিন্তু কে এই স্বপনকুমার? ছদ্মনামে রহস্য সিরিজ লিখেছিলেন কত বছর ধরে। আমি তো কলেজ জীবনেও তাঁর কোনও বই-টই পড়িনি। এখনও এত বছর পরে অজস্র বইগুলো পেয়ে তার ইতিবৃত্তান্তের খবর নিতে চেষ্টা করলাম। এখনও পর্যন্ত ‘বিশ্ব-চক্র সিরিজ’ নামে প্রকাশনা সংস্থার প্রায় ৯৫টা বই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেছি। অদৃশ্য সংকেত, দুরাত্মার ছল, ভ্রান্ত পথের শেষে.. মৃত্যুহীন প্রাণ, বিজয়িনী তন্দ্রা.. ছায়ার আর্তনাদ, কালো মুখোশ.. অজয়গড়ের রহস্য, গহন রাতের অট্টহাসি ..ওঃ কি সব শিহরণ জাগানো নাম!
সত্যি বলতে কি ছোটবেলায় সেভাবে গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জী আর তার সহকারী রতনের রোমহর্ষক গল্পগুলো পড়ার সুযোগ পাইনি। আমাদের লেক মার্কেট পাড়ার 'কিশোর বুক স্টল'-এ বা 'কল্পতরু' নামে বই-এর দোকানে আট আনা সিরিজের বই-টই পাওয়াও যেত না। তখন আমার অদেখা প্রেমিক কিরীটি রায়। আমার স্কুলের বন্ধু নন্দিনী সেনগুপ্তর মামা ছিলেন ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত। নন্দিনীকে বলেছিলাম—“তোর বড়মামাকে বলিস, কিরীটির বন্ধু সুব্রতর যেন বিয়ে না হয়!”
কিন্তু প্রথম থেকেই খটকা লেগেছিল। বিশেষ করে নারায়ণ দেবনাথের আঁকা ছবিগুলো দেখে। বইগুলো দেবসাহিত্য কুটীর থেকে বেরোয়নি তো? ঝামাপুকুরের নাম না থাক, ৬৮, কলেজ স্ট্রিটের ঠিকানা আছে। প্রকাশক ক্ষীরোদ চন্দ্র মজুমদারই বা কে ছিলেন? নির্ঘাৎ দেব সাহিত্য কুটীরের কেউ. তারপরেই চমৎকৃত হলাম ক্ষীরোদ চন্দ্র মজুমদারের নামের নীচে ‘নিউ বেঙ্গল প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড’ আর তার ঠিকানা দেখে। সেই ৬৮, কলেজ স্ট্রিট। আমার ‘আরোহন’ নামে বড় গল্প সংকলন তো ‘নিউবেঙ্গল’ থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালের কলকাতা বইমেলায়। তখন প্রকাশক ছিলেন প্রবীর কুমার মজুমদার। ঠিকানা সেই ৬৮, কলেজ স্ট্রিট। লেখা আছে—১১, ঝামাপুকুর লেন, কোলকাতা … শ্রীবরুণ চন্দ্র মজুমদার কর্তৃক মুদ্রিত। এরপরে প্রবীর মজুমদার ‘দেব সাহিত্য পরিষদ’ নামে অন্য প্রকাশনা শুরু করেন। তবে কয়েক বছর আগে শারদীয়া নবকল্লোলে ‘নিউ বেঙ্গল’-এর বই-এর তালিকার বিজ্ঞাপনে দেখলাম ‘আরোহণ’ রয়েছে।
৬৮ নং কলেজ স্ট্রিট থেকে দীর্ঘদিন ধরে শ্রীস্বপনকুমারের ডিটেকটিভ বইগুলো ‘বিশ্ব চক্র সিরিজ’ থেকে প্রকাশিত হলেও সেটি যে দেব সাহিত্য কুটীরেরই অংশ, আমার ধারণা সঠিক বলেই মনে হল।
ক্রমশ ইন্টারনেট ঘেঁটে আরও তথ্য পেলাম। ছদ্মনামী লেখক ছিলেন ডাঃ সমরেন্দ্রনাথ পাণ্ডে। প্রথম বই ‘অদৃশ্য সংকেত’ ছাপা হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। প্রায় তিন যুগ ধরে লিখেছিলেন রহস্য কুহেলিকা সিরিজ, ক্রাইম ওয়ার্ল্ড সিরিজ, ড্রাগন সিরিজ, বাজপাখি সিরিজ, বিশ্ব চক্র সিরিজ, কালরুদ্র সিরিজ, কালনাগিনী সিরিজ। এই সব অল্পদামি চটি বইগুলো একসময় স্কুল, কলেজের ছেলেমেয়েদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে সে অর্থে লেখক হয়তো অর্থবান ছিলেন না। বাড়িতে উপার্জনের প্রয়োজনে তিনি ‘শ্রীভৃগু’ ও ‘জ্যোতিষী ভৃগু’ নামে জ্যোতিষচর্চা করতেন। ডাঃ সমরেন্দ্র পাণ্ডের নাম আমার জানা ছিল না। শ্রীস্বপন কুমারকেও ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা বইগুলো পেয়ে এখন আমার শয়নে স্বপনে স্বপনকুমার।
ছবি সৌজন্য: আলোলিকা মুখোপাধ্যায় ও https://salvationarmy.ca/prairie/2020/04/tsawpgeervhelps/
দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।