Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ভূঁইচাঁপা 

সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

জুলাই ২১, ২০২৫

Short Story
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Short Story)

শেষ মুহূর্তে কিছুতেই পাওয়া গেল না অভীকদার ফোনটা। এদিকে প্লেন ধরতে যাওয়ার তাড়া ছিল। হাওয়া অফিসের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, বিকেলের পর থেকেই তুষারপাত হবে। সকালবেলায় উঠে অরূপ একটা ছোট কাগজে লিখে ফেলেছিল তার টু ডু লিস্ট। তারপর ডেস্কের সামনে দেওয়ালের বোর্ডে পিন দিয়ে গেঁথে দিয়েছিল কাগজটাকে। যাতায়াত মিলিয়ে দশদিনের মামলা– একটা সুটকেস আর একটা হ্যাভার স্যাক গুছিয়ে নিয়েছে সে, যার মধ্যে রয়েছে অভীকদার জন্য বেশ কিছু বই আর জার্নাল। অভীকদা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক বিশ্বভারতীতে। কলেজ স্ট্রিট আর ইন্টারনেট খুঁজে যখন কোনও বই পাওয়া যায় না, তখনই অরূপের কাছে জরুরি ইমেল। সেই ছোটবেলা থেকে পূর্বপল্লীতে পাশাপাশি বাড়িতে তাদের বাস। অতএব অগ্রজ হিসেবে অনুজের ওপর এই দাবী খুব স্বাভাবিক। (Short Story)

আরও পড়ুন: বসন্তপঞ্চমের রাগে

এবারে পুজোর সময় থেকেই অরূপ ঠিক করে রেখেছিল শীতকালে দেশে যাবে। এদেশে শীতকালটা বড্ড কষ্টদায়ক। গত তিরিশ বছর ধরে, মার্কিন দেশে থেকে অনেক কিছু অভ্যাস হলেও বছরের এই সময়টা তার কাছে একটা বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ। বালিটমোর শহরটাকে সে মোটামুটি চিনেছে তিল তিল করে গত ছয় বছরে– জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিসূত্রে। রমিংটন অঞ্চলে একটা ছিমছিমে দোতলা বাড়ি কিনেছিল সে। নীলিমা যখন শাম্বকে নিয়ে দেশে চলে যায়, তখন ওরা ছিল নিউজার্সিতে। সে সময়টা ছিল বড্ড কষ্টের। অনেকভাবে একটা বোঝাপড়ার জায়গায় আসবার চেষ্টা করেছিল অরূপ। শান্তিনিকেতনের পথে হেঁটে হেঁটে, সোনাঝুরির হাওয়া গায়ে মেখে। দিগন্ত বিস্তৃত খোয়াই আর তার পাশে বয়ে যাওয়া কোপাই– এর মাঝে নীলিমাকে জেনেছিল অরূপ। মাঝের বছরগুলো কেটে গেছে কীরকম স্বপ্নের মতো। (Short Story)

Short Story
ডেস্কের সামনে দেওয়ালের বোর্ডে পিন দিয়ে গেঁথে দিয়েছিল কাগজটাকে।

এক কাপ কফি হাতে অরূপ এসে দাঁড়িয়েছিল তার ডেস্কের সামনে। বিশাল কাচের জানালার ওপারে পাতা ঝরে যাওয়া সিডার, ম্যাপল আর ওক্‌ গাছের সারি। এখনও এখানে-ওখানে বরফ আর জল জমে আছে সামনের কালো ড্রাইভওয়ের ওপরে। বাড়ির বাগানে আকাশমণির কমলা ফুলের থোকা এখনও রয়ে গেছে কিছু। সাহেবরা বলে হানিসা্‌ক্‌ল। কফির কাপে চুমুক দিতেই, নড়ে উঠল মোবাইল ফোনটা। ‘আবোল তাবোল’ হোয়াটস্‌ অ্যাপ গ্রুপে ময়ূখের লেখা ভেসে উঠল ‘কী রে, রওনা দিবি কখন? বরফ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়নি তো…’। (Short Story)

ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে অরূপ উত্তর লেখে ‘এখন পর্যন্ত অল ওয়েল! আসছি বন্ধু…’।

‘ওরে, আমার মালগুলো আনছিস তো?’

অরূপের হঠাৎ চমক ভাঙে; তাই তো, ময়ূখের গিটারের জন্য কেনা বিদেশী ক্যাপো আর ডিজিটাল টিউনার তো নেওয়া হয়নি। দেখেছ, এখনই ভুল হয়ে যাচ্ছিল। কফির কাপটা খাবার টেবিলে রেখে, তিনদিন আগের ক্যুরিয়রে আসা একটা বাক্স, সুটকেসে ঢোকাল অরূপ। (Short Story)

“তাঁর কথাতেই ছবিটা দেখা হয়েছিল চিত্রা সিনেমা হলে। অরূপের বড় ভাল লেগেছিল ছবিতে দেখানো বাংলো বাড়ির সেই মাচার ওপর কাঠের ঘরখানা আর তার লাগোয়া ‘রোমিও জুলিয়েট ব্যালকনি’!”

অরূপ শান্তিনিকেতনের পাট চুকিয়ে চলে এল কলকাতায়। ভর্তি হয় প্রেসিডেন্সি কলেজে। নীলিমা তখনও বিশ্বভারতীতে। পূর্বপল্লীর বাড়িতে একটা ছোট্ট চিলেকোঠা ছিল। বাড়িটার নাম অরূপের ঠাকুরদা রেখেছিলেন “বাঁশরী”। ছাদের আশেপাশে ছিল দুটো আমগাছ, আর একটা মস্ত বড় কৃষ্ণচূড়া। এই গাছগুলোর নিবিড় ছায়া একটা অদ্ভুত আলো আঁধারি তৈরি করত, ঘরটার ভেতরে। অরূপ যখন পাঠভবনের অষ্টম শ্রেণীতে, সে সময় ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ দেখেছিল। আসলে ঠাকুরদার কোনও এক বন্ধু নাকি কাজ করতেন টালিগঞ্জ পাড়ায় আর তিনি ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের ইউনিটে। (Short Story)

তাঁর কথাতেই ছবিটা দেখা হয়েছিল চিত্রা সিনেমা হলে। অরূপের বড় ভাল লেগেছিল ছবিতে দেখানো বাংলো বাড়ির সেই মাচার ওপর কাঠের ঘরখানা আর তার লাগোয়া ‘রোমিও জুলিয়েট ব্যালকনি’! ‘বাঁশরী’-র চিলেকোঠা সে সময় খালিই পড়েছিল। (Short Story)

শীতের এক দুপুরে সেখানে একা একা বসে থাকতে অরূপের মনে হল ঘরটাতে থাকলে কেমন হয়। ঠাকুরদাকে বলাতে কাজ হল। এক সপ্তাহের মধ্যে চিলেকোঠা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সেখানে থাকতে শুরু করল অরূপ। (Short Story)

ঐ বাড়িটার অনেক স্মৃতি। সুমিত তার ছোট্ট ছেলে বাগালকে নিয়ে এসেছিল সেই কবে। আউট হাউসে থাকত মা-ছেলে মিলে। শান্তিনিকেতন ছিল অন্যরকম– ফাঁকা ফাঁকা। পূর্বপল্লীর ঢোকার মুখে বাঁক ঘুরলেই আলোপিসীদের মস্ত বাড়ি। কত ফুল ফুটত বাগানে সারাবছর ধরে। উল্টোদিকেই কুমুদের বাড়ি। ওর জ্যাঠামশাই ছিলেন বিশ্বভারতীতে অধ্যাপক। আরও এগিয়ে গেলে পূর্বপল্লীর ছায়ামাখা সরণির আশেপাশে কত মহৎ মানুষের বাড়ি আর কী সুন্দর নাম তাদের। ‘সোনাঝুরি’ ‘স্বাগতবিদায়’, ‘রুদ্রপলাশ’ এমন কত কি। (Short Story)

“একটা বিশাল অমলতাস গাছ, ছায়া দিত; হলুদ ফুলের থোকা হাত দিয়ে ধরা যেত বারান্দা থেকে। অরূপ আর সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিত এখানে। কখনও কখনও আসত পারমিতা আর অমিত।”

পৌষমেলায় বসত বাউলদের আখড়া। তিনদিন ধরে সেখানে নানারকম গান বাজনা। যেদিন ভাঙামেলা শুরু হ’ত– সেদিন বাউলরা পাড়ায় পাড়ায় বাড়ি বাড়ি যেত– গান শোনাতে। আর ছিল বহুরূপীর দল। বসন্ত উৎসবে শান্তিনিকেতনের অন্যরূপ। আগের রাতে বৈতালিক– গান গাইতে গাইতে প্রদক্ষিণ করা হত ক্যাম্পাস। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। পরের দিন দোল। কলাভবনের সামনে, মেলার মাঠে, গৌড় প্রাঙ্গণে ছেলেমেয়েরা দলে দলে জড়ো হ’ত। গলায় গান– হাতে বাজনা– পায়ে ছন্দ। ছোটবেলা থেকে এই দেখে বড় হয়েছে অরূপ আর নীলিমা। আমেরিকা এসেও কয়েকবছর খুব মন খারাপ হত ওদের। হাডসন নদীর পাশে দাঁড়িয়ে নীলিমা বলেছিল “আমাদের কোপাই অনেক সুন্দর– না রে?” (Short Story)

কয়েকবছর বাদে শাম্বর জন্ম।
দেশে যাতায়াত করবার সময় বেশ কিছু রেকর্ড আর ক্যাসেট এনেছিল ওরা। রবি ঠাকুরের গানে ওরা খুঁজত নিজেদের শৈশব। 
এই অপরিচিত দেশের জল, আকাশ, সাগর, নদী আস্তে আস্তে চিনল ওরা। জীবন বড় গতিময়। সম্পর্কগুলোও সেই গতিময়তার বাইরে নয়। 
সুবীরের সঙ্গে আলাপটাই ধরা যাক। (Short Story)

জন হপকিন্সে এসেছিল সে গবেষণার কাজ নিয়ে। অন্য কিছু বন্ধু বান্ধবের এক পার্টিতে আলাপ ওদের। বয়সের ফারাক ছিল বটে, কিন্তু মানসিকভাবে সুবীর ছিল ভীষণ পরিণত। অরূপ এবং নীলিমার কাছে পুরনো হতে সময় লাগেনি। বাংলা গান, নাটক, সাহিত্য তার ভালবাসার জায়গা। জ্ঞানগম্যিও কম নয়। অনেকদিন এই দেশে থেকে কীরকম যেন একটা দমবন্ধ করা পরিবেশের মধ্যে পড়েছিল নীলিমা। তার জগতটা ঘুরে মরছিল দৈনন্দিন পাকচক্রে। অরূপ ব্যস্ত তাঁর কাজকম্ম নিয়ে। এখন তার অনেক অনেক ব্যস্ততা। পূর্বপল্লীর রোমিও জুলিয়েট ব্যালকনি এখনও ভেসে বেড়ায় নীলিমার স্বপ্নে। একটা বিশাল অমলতাস গাছ, ছায়া দিত; হলুদ ফুলের থোকা হাত দিয়ে ধরা যেত বারান্দা থেকে। অরূপ আর সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিত এখানে। কখনও কখনও আসত পারমিতা আর অমিত। ওরা তখন কলাভবনের ছাত্র-ছাত্রী। (Short Story)

“হঠাৎ নীলিমার বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল। একরাশ হাওয়া এসে জুড়িয়ে দিল শরীর। সেদিন সুবীরের কাছে উন্মুক্ত হ’ল সে।”

সময়ের সাথে সাথে সেই ছবি মলিন হয়েছে। অরূপ আর নীলিমার সযত্নে বাঁচিয়ে রাখা স্বপ্নগুলো শুকনো পাতার মত কবেই ঝরে পড়ে গেছে কেজো জীবনের আনাচে কানাচে। শাম্বর জন্মের পর জীবনটা যেন আরও কেমন গতানুগতিক হয়ে গেল। সকাল হলেই অরূপের অফিস, শাম্বর স্কুল। তারপর একটা লম্বা অবসর। তারপরে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে বাজার– টেলিভিশন সেটের দিকে চ্যানেল বদলানো– কখনও কখনও বইয়ের দোকান। আর সপ্তাহান্তে বঙ্গ সন্তানদের আড্ডা আসর। (Short Story)

সুবীরের উপস্থিতিটা ক্রমশ পেয়ে বসল নীলিমাকে। অদ্ভুত একটা আকর্ষণ ওর কথাবার্তায়, ব্যবহারে। মার্কিন মুলুকে আসা তার নেহাতই পড়াশুনো করে ডিগ্রি পাওয়ার তাগিদে। জীবনের সুখ আনন্দের খোঁজে সে দেশে ফিরে যেতে চায়। (Short Story)

“বুঝলে– এসব দেশে বেশি দিন থাকা মানে নিজেকে যন্তর মন্তর ঘরে তালা বন্ধ করে রাখা”
অরূপ পারবে– ও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে সাহেবদের সঙ্গে। আমার দ্বারা হবে না।
এক সন্ধ্যায়, সুবীর এসেছিল বারকশায়র ড্রাইভের পুরনো বাড়িতে। তখনও সন্ধ্যে হয়নি। একটা অদ্ভুত মায়াবী আলো চারিদিকে। পিছনের এক চিলতে লনে কফি টেবিলের দু’দিকে– সুবীর আর নীলিমা দু’পেয়ালা গরম কফি হাতে। হঠাৎ নীলিমার বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল। একরাশ হাওয়া এসে জুড়িয়ে দিল শরীর। সেদিন সুবীরের কাছে উন্মুক্ত হ’ল সে। (Short Story)

আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের অনুভবে অশরীরী

‘দূরে কোথায় দূরে দূরে– আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে’ বেজে উঠল অরূপের ফোনে। বহুদিন আগে, এই গানটা রিংটোন করেছিল সে। নীলিমার খুব প্রিয় গান। পূর্বপল্লীর বাড়ির ছাদে, খুব ভোরে অথবা গোধূলি বেলায় খোয়াইয়ের দিগন্তে দেখা যেত রঙের খেলা। সত্যিই অচিনপুরের দেশ মনে হত। (Short Story)

 অভীকদার ফোন। বল অভিকদা– রওনা হবে তো। কিছুতেই পাচ্ছিলাম না তোমার লাইন– ওদিকের কী খবর? 
এখানে তো সব ঠিকই আছে। তুই পৌঁছবি কখন? পরশু বেলাবেলি চলে আসব। কেমন ঠাণ্ডা পড়েছে? মেলা তো আজ শুরু তাই না?
হ্যাঁ– এই তো যাব খানিক বাদে। আর বাড়ির ব্যাপারটা?
তুই চিন্তা করিস না– মোটামুটি কথা এগিয়েছে। কলকাতায় ডাক্তারি করেন ভদ্রলোক। মনে তো হয় পছন্দ হয়েছে। পৌষমেলা উপলক্ষ্যে এসেছেন। তুই পৌঁছলেই বলেছি ফোন করব– পরের প্রশ্নটা করবার আগে অরূপ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। (Short Story)

“অভীকদা– আর ও?”
হ্যাঁ– আসবে বলেছে। তাহলে রাখি রে– তুই কিন্তু সাবধানে আসিস। মহাদেব থাকবে এয়ারপোর্টে– দেখবি সাদা রঙের গাড়ি। 
ওকে বাই– অভীকদা দেখা হচ্ছে। পারমিতা আর অমিতকে বোলো– আমি আসছি। (Short Story)

“দরজাটা টেনে বন্ধ করল অরূপ। চাবি বন্ধ করার পালা। বাংলাতে লেখা “চিলেকোঠা”। বোর্ডটা জ্বলজ্বল করছে কালো বার্নিশ করা দরজার ওপর। নামটা নীলিমার দেওয়া– বোর্ডটা উড কাটিং করে বানিয়ে দিয়েছিল অমিত নিজে হাতে।”

ফোনটা টুক্‌ করে কেটে গেল। নিঃশব্দে কাটল কয়েকটা মিনিট। সামনের পার্কে কয়েকটা বাচ্চা ছেলে একটা ফুটবল নিয়ে দাপাদাপি করছে। শাম্বর জন্য মনটা খারাপ হল। কিছু জামাকাপড় আর বই কিনেছি ওর জন্য। কে জানে পছন্দ হবে কী না, ছেলের। আর এক ঘণ্টা বাদেই যাত্রা শুরু। খুব কেজো জীবনের মাঝে এধরণের অবকাশ– একটা দ্বীপের মতোই। জীবনের রূপ রং গন্ধের মাঝে নীলিমা আর সে তৈরি করেছিল এক ভালবাসার সাতমহলা। অঙ্গীকার বদ্ধ ছিল নিজেদের কাছে– আর একটা স্বপ্নের কাছে। সব কীরকম অদ্ভুতভাবে ভেঙে পড়ল একদিন। (Short Story)

শাম্বর জন্মদিন ছিল সেদিন। অনেক বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সুবীরও আমন্ত্রিত। কথায় কথায় রাত বাড়ে– পরের দিন রবিবার, অতএব ছুটি। একটু বেশি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল সুবীর সে রাতে। 

আজ রাতে আর বাড়ি ফেরাটা বোধহয় ঠিক হবে না সুবীর– থেকে যাও– মৃদু আলোয় মোড়া বৈঠকখানা ঘরের মধ্যে তিনটি মানুষ। বলছ? ঠিক আছে– যাব না। তবে নীলিমা– গান শোনাতে হবে কিন্তু। 

নীলিমা খানিকটা অন্যমনস্ক ছিল। “নীলিমা– কী বলছে সুবীর তোকে, শুনতে পেয়েছিস?” একটা ঘোরের মধ্যে ছিল নীলিমা। অরূপের কথায় তার সম্বিৎ ফিরল। মৃদু হেসে বলল– কী রে বল, সুবীর– সে সব কবে চুকেবুকে গেছে। সুবীর হুইস্কির গ্লাসটা হাতে নিয়ে নীলিমার পাশে এসে বসল তারপর উদাত্ত কণ্ঠে বলে উঠল। যে নদীর দুদিকে দুটো মুখ। এক মুখে সে আমাকে আসছি বলে দাঁড় করিয়ে রেখে, অন্য মুখে ছুটতে ছুটতে চলে গেল। আর যেতে যেতে বুঝিয়ে দিল, আমি অমনি করেই আসি অমনি করে যাই। বুঝিয়ে দিল, আমি থেকেও নেই, না থেকেও আছি। এ কবিতা এখনও মনে আছে তোমার? নীলিমা নরম গলায় প্রশ্ন করল। আছেই তো– দরকার মতো সব মনে পড়ে। তোমারও আছে– একবার ধরে ফেল দেখবে স্রোতস্বিনী হয়ে দুকুল ছাপিয়ে যাবে। সত্যি সে রাতটা অন্যরকম ছিল। যখন ভোর হল– অরূপ তার বিছানায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন– শাম্ব তার ঘরে স্বপ্নে কার সাথে খেলা করছে। নীলিমা বুঝল সুবীরের সঙ্গে এক অদৃশ্য টানে সে বাঁধা পড়েছে। অরূপ তার কাছ থেকে মানসিকভাবে অনেকটা দূরে। এর একমাস পরেই অরূপকে জানাল কথাটা নীলিমা। (Short Story)

“কলকাতা এয়ারপোর্টের বাইরে এসে মহাদেবকে খুঁজে পেতে দেরি হল না। গাড়ি ছুটে চলেছে বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে নিবেদিতা সেতুর দিকে। আবোল তাবোল। আওয়াজ দিন।”

কথাটা শুনে নিজের কানকে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারল না অরূপ। তোর কী হয়েছে নিলি? হঠাৎ এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস? শাম্বর কথা ভেবেছিস একবার? Let’s talk it out না অরূপ। আমি দেশে ফিরতে চাই। এবং শাম্বসহ। শাম্ব দেশে চলে যাবে? কী বলছিস? হ্যাঁ– সুবীর দেশে ফিরে যাচ্ছে– and I want to settle there…। (Short Story)

আমি চাই না শাম্ব আমাকে ছাড়া এই দেশে থাকুক– বড় হোক।
-আমার দিকটা ভেবে দেখেছিস? বাবা হিসেবে ওর ওপর তো আমার কিছু দাবি থাকতে পারে?
থাকতে পারে আর আছের মধ্যে বিস্তর ফারাক। (Short Story)

Short Story

দরজাটা টেনে বন্ধ করল অরূপ। চাবি বন্ধ করার পালা। বাংলাতে লেখা “চিলেকোঠা”। বোর্ডটা জ্বলজ্বল করছে কালো বার্নিশ করা দরজার ওপর। নামটা নীলিমার দেওয়া– বোর্ডটা উড কাটিং করে বানিয়ে দিয়েছিল অমিত নিজে হাতে। হলুদরঙা  ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়েছিল গেটের কাছেই। হাড় কাঁপানো হাওয়া এখনও চলেছে। চাকাওয়ালা সুটকেসখানা টানতে টানতে ট্যাক্সির কাছে এগুতেই– ড্রাইভার এসে গাড়ির ট্রাঙ্ক খুলে দিল। বেশ ভারী হয়েছে সুটকেসটা। সেটাকে ড্রাইভার ভেতরে তুলে দেওয়ায়, অরূপ দরজা খুলে গাড়িতে বসল। To the airport– through Howard street please… গাড়ি ছুটে চলল। শাম্বর বয়স এখন প্রায় বারো। কলকাতা ফিরে গিয়ে নীলিমা ওকে ভর্তি করেছিল শান্তিনিকেতন পাঠভবনে। দায়িত্ব নিয়েছিলেন অভীকদা। খবরটা শুনে অভীকদা কষ্ট পেয়েছিলেন। কী জানিস নীলিমা– তোদের মধ্যে যে দেওয়ালটা তৈরি হয়েছে– কেন তার শাস্তি এই শিশুটা পাবে– সেটা আমি বুঝতে পারছি না। ও তো কোনও দোষ করেনি। (Short Story)

-কিন্তু, আমি তো অনেক আগেই চেয়েছিলাম শাম্ব এখানে পড়াশুনা করুক, বলল নীলিমা।
-তার তো অন্য রাস্তাও ছিল। সব ছেড়েছুড়ে
–অরূপের সঙ্গে সম্পর্কটাকে এভাবে ভেঙেচুড়ে আসতে হবে। নিশ্চয়ই এটা ঠিক মনে করেছিস, তাই করেছিস।
-তোমার কাছ থেকে তো পাওয়ার শেষ নেই আমার– এবার শাম্বও পাক– তোমায় ওর local guardian হতে হবে। (Short Story)

আরও পড়ুন: কাটরা মসজিদ: তিনশ বছরেও নবীন

-সে না হয় হল–। কিন্তু ছেলেটাকে একবারও জিজ্ঞেস করেছিস ও কী চায়? নীলিমা চোখ ভরা জল নিয়ে তাকিয়ে থাকে বাগানের দিকে। কথা বলে না। কলকাতা এয়ারপোর্টের বাইরে এসে মহাদেবকে খুঁজে পেতে দেরি হল না। গাড়ি ছুটে চলেছে বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে নিবেদিতা সেতুর দিকে। আবোল তাবোল। আওয়াজ দিন। ময়ূখ লিখেছে “কী রে নেমেছিস- কতদূরে?” অরূপ তার কলকাতার সিম থেকে এবার ফোন করল ময়ূখকে। কী রে, কেমন আছিস? কখন পৌঁছলি তুই? (Short Story)

কাল রাতে– তোর কতক্ষণ লাগবে? শোন, আজ পারমিতা-অমিতের ওখানে night stay আমাদের। হ্যাঁ হ্যাঁ– ঠিক আছে রে বাবা। তুই জিনিসপত্র অভীকদার ওখানে রেখে বিকেল বিকেল মেলার মাঠে চলে আসিস। ওখান থেকেই আমরা চলে যাব। আর কী খবর? (Short Story)

(ক্রমশ)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

Author Saptarshi Roy Bardhan

সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধানের নেশায় মশগুল। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন- "রূপকথার মতো- স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়", "খেয়ালের খেরোখাতা" এবং "চব্য চোষ্য লেহ্য পেয়"।

Picture of সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধানের নেশায় মশগুল। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন- "রূপকথার মতো- স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়", "খেয়ালের খেরোখাতা" এবং "চব্য চোষ্য লেহ্য পেয়"।
Picture of সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

সপ্তর্ষি রায় বর্ধন

সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধানের নেশায় মশগুল। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন- "রূপকথার মতো- স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়", "খেয়ালের খেরোখাতা" এবং "চব্য চোষ্য লেহ্য পেয়"।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সপ্তর্ষি রায় বর্ধন
অভিরূপ মুখোপাধ্যায়
সৌরভ হাওলাদার

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
শমিতা হালদার
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

রমেশ দাস
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com